• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    সংখ্যায় সংখ্যায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কামব্যাকের গল্প

    সংখ্যায় সংখ্যায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কামব্যাকের গল্প    

    সুনাম কিংবা দুর্নাম যাই বলেন, নিরীহ ম্যাচেও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের তা আছে। এইতো কদিন আগে এক টেস্টে বৃষ্টিতে আড়াই দিনের মতো শেষ হয়ে গেল, তারপরও পাকিস্তানের বিপক্ষে সে টেস্টে বাংলাদেশের হেরে যাওয়া কী ভুলে গেলেন! আফগানিস্তানের বিপক্ষে এ ম্যাচটাও হওয়া উচিত ছিল পানসে এক ম্যাচ। কিন্ত ২১৫ রানের পুঁজি নিয়ে নেমে ফারুকি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সে ম্যাচটাকেই জায়গা করিয়ে দিলেন ইতিহাসেই। ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বড় ফিরে আসার গল্পটা লেখা হলো আফিফ ও মিরাজ নামের দুই তরুণের হাত ধরে। যে ম্যাচটা বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়গুলোর মধ্যেই জায়গা করে নেবে নিঃসন্দেহে। সেটিতে বাংলাদেশের হয়ে অনেক রেকর্ড ঘটেছে যেমন, বিশ্বরেকর্ডও ঘটেনি কম। সেসবই দেখে নেওয়া যাক সংখ্যায় সংখ্যায়… 

    ১৭৪ - স্কোরবোর্ডে পঞ্চাশ রান উঠবার আগেই ষষ্ট উইকেট হারিয়ে ফেলার পর এর চাইতে বেশি রানের পার্টনারশিপ দেখেনি বিশ্ব। ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মিরাজ ও আফিফের সপ্তম উইকেট জুটিতে আজ রান উঠেছে ১৭৪। এমন অবস্থায় এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ইরফান পাঠান ও জয় প্রকাশ যাদবের নবম উইকেটে ১১৮ রানের জুটি। সেদিনও ২১৬ রানের লক্ষ্যেই নেমেছিল ভারত ব্যাটিংয়ে। কিন্ত ইরফান ও প্রকাশে সে জুটি শেষ পর্যন্ত জয়ের কারণ হতে পারেনি। রান তাড়ায় নেমে পঞ্চাশ রানের কমে ছয় উইকেট হারানোর পর আসলে মিরাজ-আফিফের আগে শতরানের কোন জুটি জেতাতে পারেনি কখনোই। 

    ২ - ৪৫ বা তার কম রানে ছয় উইকেট হারানোর পর শতরানের বড় জুটির দেখা মিলেছে এর আগেও। তবে সংখ্যাটা মাত্র দুই। ইরফান ও প্রকাশের ১১৮ রানের ওই জুটির সূচনা হয় যখন, তখন ভারতের স্কোর ৮/৪৪। ২০০৬ সালে সপ্তম উইকেটে জ্যাকব ওরাম ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি গড়েছিলেন ১০৩ রানের এক জুটি। পঞ্চাশ রানের কমে ছয় উইকেট যাওয়ার পর শতরানের বড় জুটির দেখা মিলেছে অবশ্য এর আগে পাঁচটি। যদিও দলের জয়ে অবদান রাখতে পারেনি তার কোনটিই। আর সেসবের কোন জুটিই দেড়শোর রানের বড়ও হতে পারেনি। এই প্রথম মিরাজ-আফিফের জুটিতে রান দেড়শো পেরিয়েছে। মিরাজ-আফিফের আগে পঞ্চাশের কমে ষষ্ট উইকেট হারিয়ে ফেলার পর, বাংলাদেশের আরও একটি জুটিও শতরানের হয়েছিল। ২০১০ সালে মুশফিকুর রহিম ও নাঈম ইসলাম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন সপ্তম উইকেটে ১০১ রানের পার্টনারশিপ। 

    ২২৫ - ১২তম ওভারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহ প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার পর আফিফের সঙ্গ বাঁধেন মিরাজ। বাংলাদেশ তখন ৪৫ রানেই খুইয়ে ফেলেছে ছয় উইকেট, সেখান থেকেই ১৭৪ রানের জুটি গড়তে দুজনে খেলেন ২২৫ বল! ৪৫ বা তার কম রানে ছয়টি উইকেট হারানোর পর আর কোন জুটি এত বেশি বল খেলে ক্রিজে টিকে থাকতে পারেনি। ঘটনাটা এতটাই বিরল যে ঘুরে ফিরে আসে সেই ইরফান-প্রকাশের জুটিটাই, তবে ইরফান-প্রকাশ জুটি মিরাজ-আফিফের থেকে খেলেছিল ৮২ বল কম। চতুর্থ স্থানে আছে ওরাম-ভেট্টোরির ১০৩ রানের ওই জুটি, যেটিতে তারা খেলেছিলেন ১২৫ বল। আর তৃতীয় স্থানে আছে ১৯৯৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দিলশান ও ভাসের ১৩০ বলে ৪৩ রানের পার্টনারশিপটা। 

    ১ - রান তাড়ায় নেমে ত্রিশ রান করার আগেই নেই পাঁচ উইকেট, এমন অবস্থায় থেকেও আজকের ম্যাচের আগে জেতার ঘটনা ছিল আর মাত্রই একটি। সেটিতে অবশ্য ভুক্তভোগী দলের নাম ছিল বাংলাদেশই। ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলংকাকে ১৫৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছয় রানেই লংকান পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ২৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর আফিফ-মিরাজের ব্যাটে যখন আজ বাংলাদেশ জেতার পথে এগুচ্ছিল, তখন ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা ফারভেজ মাহরুফের স্মৃতি কি ফিরিয়ে নিয়েছিল তাকে ওই ম্যাচে? সাঙ্গাকারার ফিফটির পর তাঁর ৩৮ ও মুরালিধরনের ৩৩ রানের ইনিংসেই যে সেদিন জিতেছিল শ্রীলংকা। 

    ৮১ - সফল রান তাড়ায় আট বা এর পরে ব্যাটিংয়ে নেমে মিরাজের ৮১ রানের ইনিংসটি সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিথ স্ট্রিকের ৭৯ রানের ইনিংসের পর তৃতীয় স্থানেও আছেন আরেক বাংলাদেশি। নাঈম ইসলাম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচে ২০০৯ সালে আটে নেমে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলে জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সফল লক্ষ্যতাড়ায় সাত বা এর পরে ব্যাটিংয়ে নেমে আফিফের ৯৩ রানের ইনিংসটি চতুর্থ সর্বোচ্চ।

    ১ - বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেটে এর আগে সর্বোচ্চ যে জুটি ছিল, সেটিতে ইমরুল ও সাইফুদ্দিন মিলে রান তুলেছেন ১২৭। আফিফ-মিরাজ আজ সে রেকর্ডটা তাদের করে নিয়েছেন বহু আগেই, এরপর সপ্তম উইকেটে বিশ্বরেকর্ডও তাদের হাতের নাগালেই ছিল। কিন্ত করার মতো রানই যে আর ছিল না বাকি! এক রানের প্রয়োজনের সময় আফিফ তবু চার মেরে ১৭৪ রানে নিয়ে গেছেন তাদের জুটি, যা হয়ে গেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেরা জুটি থেকে তারা মাত্র ৩ রান দূরেই থেমেছেন। জস বাটলার ও আদিল রশিদ ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। এই জুটিসহ মিরাজ ও আফিফের জুটি, এই দুটি বাদে সপ্তম উইকেটের আর কোন জুটিই দেড়শো রানের বড় হতে পারেনি।