লিটন ঝলকের পর পথ হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ
৩য় ওয়ানডে, চট্টগ্রাম (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ- ১৯২, ৪৬.৫ ওভার (লিটন ৮৬, সাকিব ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২৯*, রশিদ ৩৭/৩, নবি ২৯/২)
আফগানিস্তান-১৯৩/৩, ৪০.১ ওভার (গুরবাজ ১০৬*, রহমত ৪৭, রিয়াজ ৩৫, মিরাজ ৩৬/২, সাকিব ৪৩/১)
ফলাফল: আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ রিপোর্টের ওপরে লিটনের যে ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন, আজ সেটাই হয়ে রইল বাংলাদেশের প্রতীকী চিত্র। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে একাই লড়েছেন তিনি। ব্যাট-বল আর ফিল্ডিংয়ের নির্লিপ্ত এই দিনে বাংলাদেশের একমাত্র পারফর্মার লিটনই।
সিরিজ নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। সেটা আর হলো কই? দিক হারানো ব্যাটিংয়ের পর নির্বিষ বোলিংয়ে উল্টো ম্যাচটাই হেরে বসলেন তামিম ইকবালরা। ৭ উইকেটের এই জয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি করে নেতৃত্ব দিয়েছেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তাকে ম্যাচের উইনিং শটটা নেয়ার সুযোগ করে দিতে ৪০তম ওভারের শেষ তিনটা বল টানা ডট দিয়ে যান নাজিবউল্লাহ জাদরান। সেই সুযোগটাও কাজে লাগিয়েছেন ঠান্ডা মাথায়।
এর আগে বাংলাদেশের বোলাররা ইনিংসজুড়ে আজ ছিলেন নির্বিষ। দুই বাঁহাতি শরীফুল-মোস্তাফিজের সাথে তাসকিনের বলেও আজ বিশেষ কিছু ছিল না। তাদের বেশ স্বাচ্ছ্যন্দ্যেই খেলেছেন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। এরপরও সুযোগ যা এসেছে সেটাও ক্যাচ মিসের মহড়ায় আর কাজে লাগেনি।
শরীফুলকে অবশ্য দুর্ভাগা বলাই যায়। তার বলেই গুরবাজের ক্যাচই পড়েছে তিনবার। প্রথমে ফেলেছেন মুশফিক। দ্বিতীয়বার লং লেগে তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মাহমুদউল্লাহ। তৃতীয় ক্যাচটা অবশ্য বেশ কঠিনই ছিল মুশফিকের জন্য। লাফিয়ে উঠে বলটা প্রায় গ্লাভসবন্দী করেই ফেলেছিলেন এই উইকেটরক্ষক। তিনবার জীবন পেয়ে সুযোগগুলো দারুণ কাজে লাগিয়েছেন গুরবাজ।
শুরুতে কয়েক ওভার দেখে শুনে খেললেও সপ্তম ওভারে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন দুই আফগান ওপেনার। দুজন মিলে প্রথম দশ ওভারে তোলেন ৫৭ রান। ওভারপ্রতি রানরেটও ছিল প্রায় ৬ ছুঁইছুঁই। এরপর ৭৯ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন সাকিব। তার টার্নিং ডেলিভারি সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ওপেনার রিয়াজ হাসান। অবশ্য দুইবারের চেষ্টায় উইকেট ভাঙেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। তবে খেই হারায়নি আফগানিস্তান।
রিয়াজ যেখানে থেমেছেন রহমত শাহ সেখান থেকেই শুরু করেছেন। নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করে গুরবাজের সঙ্গে সাবলীলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন আফগানদের ইনিংস। মিরাজের জোড়া আঘাতে রহমত শাহর পর হাশমতউল্লাহ ফিরলেও বাকি পথ আফগানিস্তান পাড়ি দিয়েছে গুরবাজের ব্যাটে চড়েই।
এর আগে লিটনের সাবলীল ব্যাটিং সত্ত্বেও নড়বড়ে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় দুইশো পেরোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যর্থতার মিছিলের প্রথম নাম তামিম ইকবাল। আগের দুই ম্যাচের মতোই তামিম আউট হয়েছেন ফজলহক ফারুকির ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে। প্রথম দুই ম্যাচে এলবিডব্লিউ হলেও তামিম আজ বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই পেসারের বলেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সদ্য পা রাখা আনকোরা এক পেসার মাত্র তিন ম্যাচেই দেখিয়ে দিলেন তামিমের দুর্বলতা কোথায়।
এরপর লিটনের সাথে জুটি গড়েন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে আসে ৬৩ রান। দলও বড় সংগ্রহের আশায় ছিল। কিন্তু দলীয় ১০৪ রানে সাকিবের বিদায়ে স্লথ হয়ে যায় রানের চাকা। ওমরজাইকে থার্ড ম্যানে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন তিনি।
মুশফিক-ইয়াসিরকে ফিরিয়েছেন লেগ স্পিনার রশিদ। মিডল অর্ডারে ভাঙনও তখনই ধরেছে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন থেমেছেন ৮৬ রানে। নবিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাইবের হাতে ক্যাচ দেন ডানহাতি এই ওপেনার। প্রথম ওয়ানডে জয়ের দুই নায়ক আফিফ- মিরাজও সুবিধা করতে পারেননি। দুজনই আউট হয়েছেন সিংগেল ডিজিটে। মিরাজ কাটা পড়েছেন রান আউটে। শরীফুল -মোস্তাফিজও ফিরেছেন একইভাবে। এই তিন ব্যাটারের অপর প্রান্তের সঙ্গী ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তার সাথে ভুল বোঝাবুঝিতেই রান আউট হয়েছেন তারা।
এসব ছাপিয়ে চোখে পড়েছে মাহমুদউল্লাহর অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিংয়ের ধরন। নিজে খেলেছেন প্রচুর ডট বল। শেষদিকে টেলএন্ডারদেরও স্ট্রাইক দিয়েছেন। উইকেট পড়ার হিড়িকেও হাত খুলে খেলতে দেখা যায়নি তাকে। ৫৩ বল খেলেও পাননি কোনো বাউন্ডারির দেখা।