সিরিজ শেষ সমতায়:ফারুকী-ওমরজাইয়ের তোপের পর জাযাই-ঘনির ব্যাটে আফগানিস্তানের জয়
২য় টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ- ১১৫/৯, ২০ ওভার (মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২১, ফারুকী ৩/১৮, ওমরজাই ৩/২২, নবী ১/১৪)
আফগানিস্তান- ১২১/২, ১৭.৪ ওভার (জাযাই ৫৯, ঘনি ৪৭, রাসুলি ৯*, মাহমুদউল্লাহ ১/২, মাহেদী ১/১৯)
ফলাফল: আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
এবারও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা হল না বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের দৈন্যদশা আরেকবার উন্মোচন হয়েছে ফজলহক ফারুকী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বদৌলতে, তাতেই বাংলাদেশ থেমেছিল ১১৫ রানে। প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও আফগানদের ইনিংস শেষ হয়েছে ১৪ বল বাকি থাকতেই; তবে হযরতউল্লাহ জাযাই-উসমান ঘনির ৯৯ রানের জুটিতে এবার তারা পেয়েছে ৮ উইকেটের জয়।
আগুনে ফারুকী, বরফশীতল ওমরজাই
বাঁহাতি পেসে আবারও আগুন ঝরালেন ফারুকী। স্বভাবজাত সুইংয়ের পাশাপাশি দেখালেন ইয়র্কারের সক্ষমতা। আর ওমরজাই মেলে বসলেন স্লোয়ারের পসরা। তাতেই কাবু বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ নবীকে দিক্বিদিকশূন্য শট খেলতে গিয়ে ফিরেছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। এরপরই দৃশ্যপটে ওমরজাইয়ের আবির্ভাব। দিয়েছিলেন এক নিরীহ বল; তবে তাতেই পাওয়ারপ্লের আগে উইকেট দিয়ে ফিরলেন ফর্মে থাকা লিটন দাস। উইকেটে এসে ধুঁকতে থাকা সাকিব আল হাসানকে এরপর নাকাল করলেন খাটো লেংথের এক বলে। উইকেট নেওয়ার দৌড়ে এরপর যোগ দেন ফারুকী, বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে। দারুণ এক অফ কাটারে মুশফিককে তালুবন্দি করেন কাভারে থাকা নবীর। এক বল পরেই নিখুঁত ইয়র্কারে উড়িয়ে দেন মাহেদী হাসানের স্টাম্প। মাঝে লো ফুল টসে ওমরজাই পেয়ে যান নিজের তৃতীয় শিকার আফিফ হোসেন। নিজের শেষ ওভারে আবারও অসাধারণ এক ইয়র্কারে শরিফুল ইসলামের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন ফারুকী। দুজনের ৩টি করে পাওয়া উইকেটে বাংলাদেশ তাই তুলতে পারে মোটে ১১৫ রান।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর মাইফলক স্পর্শ ও সামান্য প্রতিরোধ
৪৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক নেমেছিলেন নিজের ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। তবে বাংলাদেশের জরাজীর্ণ ব্যাটিংয়ের মাঝে আশার আলো হয়ে আসা এই জুটি নিভে গিয়েছে ৪৩ রান করেই। রশিদ খানকে এক ওভারে দুই চার মেরে মাহমুদউল্লাহ যখন চোখ রাঙাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল শুরু থেকেই মেরে খেলার তার সেই প্রতিশ্রুতি ধরে রেখে আজ বড় কিছু করবেন। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে পূর্ণ করলেন ২০০০ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি রানের মাইলফলক। তবে তার কিছুক্ষণ পরেই ২১ রান করে সেই রশিদের বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর এক মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে মুশফিক স্পর্শ করেন আরও এক মাইলফলক: ৪র্থ বাংলাদশ হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৫০০০ রান। তবে মুশফিকও ওই মাইলফলক ছোঁয়ার কিছুক্ষণ পরেই ২৫ বলে ৩০ রান করে ফিরেন ফারুকীর শিকার হয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসও মুখ থুবড়ে পড়ে সেখান থেকেই।
জাযাই-ঘনির সময়োপযোগী জুটি
এদিনও শুরুতেই উইকেট হারাল আফগানিস্তান, হন্তারক এবার মাহেদী হাসান। তবে বাংলাদেশের বোলারদের এরপর চেপে বসার সুযোগ না দিয়ে স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস খেলতে থাকেন জাযাই, যোগ্য সঙ্গ দেন এই ম্যাচে নামা উসমান ঘনি। দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতে দলীয় সংগ্রহ নিয়ে যান ৩৪ রানে। দুজনের কেউই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যাননি। তবে একশো স্ট্রাইকরেটের নিচে খেলতে থাকা জাযাই এরপর কিছুটা হাত খুলে খেলেন। অন্য প্রান্তে ঘনি আবার পেয়েছেন সুযোগও; একবার ৪০ রানে, আরেকবার ৪১ রানে। সুযোগ যদিও কাজে লাগাতে পারেননি ঘনি, ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহর শিকার হয়ে ৪৭ রানে। তাতে অবশ্য কোনও ক্ষতিই হয়নি আফগানদের, ম্যাচ ততক্ষণে পকেটে। আগের ওভারেই সাকিবকে দুই ছয় মেরে ৩৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন জাযাই। নিজে এরপর অপরাজিত থেকে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন; আর তুলির শেষ আঁচড় টানেন দারউইশ রাসুলি, আগের ম্যাচের নায়ক নাসুমকে দারুণ এক ছয় মেরে।