• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    আফগানিস্তান সিরিজ কি বার্তা দিল তামিম-মাহমুদউল্লাহকে?

    আফগানিস্তান সিরিজ কি বার্তা দিল তামিম-মাহমুদউল্লাহকে?    

    টেস্ট বা টি-টোয়েন্টিতে যেমনই হোক, ওয়ানডে এলেই বাংলাদেশ কমবেশি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেই। ওয়ানডে যে বাংলাদেশের প্রিয় ফরম্যাট, সেই সত্যও মোটামুটি স্বীকার করে নিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাই। আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথম দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলাটা সম্ভবত তার  আরেকটা প্রমাণ। শেষ ওয়ানডে হারে যদিও সেই পথে খানিকটা হোঁচট খেতে হয়েছে। সেই সঙ্গে একটা বার্তাও পেয়েছে, এই ফরম্যাটেও সম্ভবত দলে কিছু কাঁটাছেড়া করার সময় এসেছে। অন্তত ২০২৩ বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে ম্যানেজমেন্ট সেরকম চিন্তা করতেই পারে।

    একটা দিক দিয়ে অবশ্য এই সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তাও বটে। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে এই সিরিজ শেষে প্রশ্ন উঠবে নিশ্চিতভাবেই, বিশেষ করে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহর দিকে। তামিম এই সিরিজে রান পাননি, তিন ম্যাচ মিলে করেছেন মোটে ৩১ রান। তবে রান না পাওয়ার চেয়েও বড় চিন্তা সম্ভবত তার আউট হওয়ার ধরন। তিন ম্যাচেই পেসার ফাজালহাক ফারুকীর বলে লাইনের আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। প্রথম দুই ম্যাচে এলবিডব্লু, আর শেষ ম্যাচে বোল্ড। বোঝাই যাচ্ছে, ভেতরের দিকে ঢোকা বলে তামিম ভালোই অস্বস্তিতে আছেন। জাতীয় দলের জার্সিতে এই সিরিজ দিয়েই অনেক দিন পর ফিরেছেন তামিম। সেই ফেরাটা তামিম যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে হয়নি মোটেই। টি-টোয়েন্টিও খেলছেন না আপাতত, তামিমে রঙিন পোশাকে এখন শুধু ওয়ানডেই আছে। তবে এই সিরিজে রানখরাটা টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য দুশ্চিন্তার হবে অবশ্যই। লিটন দাস ভালো করলেও ওপেনিং পজিশনে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে ভালো কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের। তবে তামিম যদি দক্ষিণ আফ্রিকায়ও রান না পান, সেক্ষেত্রে তার ওপর চাপটা আরও বাড়বেই।

    তামিমকে নিয়ে প্রশ্ন জোরেশোরে না উঠলেও আরেকজনকে নিয়ে উঠেই যাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহকে এই মুহূর্তে জাতীয় দলের জন্য ছয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, কিন্তু এই সিরিজ শেষে তার পারফরম্যান্স আবারও কাঠগড়ায় উঠবে। প্রথম ওয়ানডেতে ১৭ বল খেলে করেছিলেন ৮ রান। সেই ম্যাচে অবশ্য আফিফ-মিরাজ ছাড়া বাকি সব ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ। কিন্তু পরের ম্যাচে শেষদিকে নেমে দল যখন তার কাছ থেকে দ্রুত কিছু রান চাইছিল, সে সময় তিনি ৯ বলে করলেন ৬ রান। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন পুরোপুরি।

    শেষ ওয়ানডেতে এসে অবশেষে কিছুটা রান পেয়েছেন। কিন্তু এই ম্যাচে তার ব্যাটিং নিয়েও আছে প্রশ্ন। ৫৩ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন, কিন্তু তার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন তিন জন। শেষ দিকে টেল এন্ডারদের আগলে নিজে আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন কি না সেটা নিয়ে উঠতে পারে প্রশ্ন। তার নামার পর রানের চাকাও হয়ে গিয়েছিল স্লথ। পুরো সিরিজে ৭৯ বল খেলে চার মেরেছেন মাত্র একটি, স্ট্রাইক রেট ৫০ এর কাছাকাছি। ছয় নম্বরে নামা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য একটু বেশিই দৃষ্টিকটু।

    মাহমুদউল্লাহর হতশ্রী পারফরম্যান্স শুধু এখানেই শেষ নয়। আজকে গুরবাজের সহজ একটা ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন, বোঝাই যাচ্ছিল ঠিক নিজের সেরা অবস্থায় নেই। একটা সময় টপ অর্ডারে ব্যাট করলেও এখন মূলত ছয় নম্বরের জন্যই ভাবা হচ্ছে তাকে। প্রথম ম্যাচে যদিও বল থেকে একটা ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু বোলিং খুব একটা করেননি। এই সিরিজের আগে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও কোনো ফিফটি ছিল না। যদিও তার আগে শ্রীলংকা সিরিজে রান পেয়েছিলেন প্রতি ম্যাচেই, করেছিলেন ফিফটি। রান পেয়েছিলেন তার আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও। কিন্তু এরপর দীর্ঘ একটা সময় গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি, এর পর পাকিস্তান সিরিজে খাবি খাওয়ার পর এই ফরম্যাটে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আরেকটা সুযোগ পাবেন কি না, সেটা বলে দেবে সময়। তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় দলে তার জায়গাটা এখন কিছুটা নড়বড়েই।

    ওয়ানডের সুপার লিগ হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের জন্য প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ অবশ্য টেবিলের, কিন্তু সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ১৮ মার্চ থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু, যেখানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তাদের মাঠে এই ফরম্যাটে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। এরপর আয়ারল্যান্ডের মাঠে সিরিজ,। তারপর লম্বা বিরতি দিয়ে সামনের বছর ইংল্যান্ড আসবে বাংলাদেশে।

    এখনো অনেকটা সময় আছে, তবে ওয়ানডে প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের ভাবনায় নিশ্চিতভাবেই থাকবে ২০২৩ বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে চেনা কন্ডিশনে বাংলাদেশের আশা থাকবে বড় কিছুই। সেই বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নতুন কাউকে ছয়ের জন্য তৈরি করবে কি না, সেই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে মুশফিকুর রহিম বাদে বাকি সিনিয়রদের ছাড়াই জিতেছিল বাংলাদেশ। লিটনরা যে সিনিয়র হয়ে উঠছেন, সেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আর আফিফ-মিরাজরাও জানান দিচ্ছেন, তাদের কাঁধও চওড়া হচ্ছে।

    তামিম-মাহমুদউল্লাহরা ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেলে তাই প্রশ্ন উঠবেই।