• আইসিসি মেয়েদের বিশ্বকাপ
  • " />

     

    মেয়েদের বিশ্বকাপ ২০২২: যা যা জানা দরকার আপনার

    মেয়েদের বিশ্বকাপ ২০২২: যা যা জানা দরকার আপনার    

    কোভিডের জন্য এক বছর দেরিতে পর্দা উঠতে যাচ্ছে আইসিসি মেয়েদের বিশ্বকাপের। আগামী ৪ মার্চ উদ্বোধনী ম্যাচে মাউন্ট মঙ্গানুইতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মেয়েদের বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর মাঠে গড়ানোর আগে জেনে নিন টুর্নামেন্টের কিছু টুকিটাকি। 

     

    কয় দল খেলছে?

    এবারের টুর্নামেন্টে খেলবে ৮ দল। আয়োজক হওয়ায় নিউজিল্যান্ড মূলপর্বের টিকেট পেয়েছে নিয়মানুসারে। ২০১৭-২০২১ পর্যন্ত নারীদের ওয়ানডে চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ পাঁচে থেকে জায়গা নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। বাকি তিন দল বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খেলতে হয়েছে বাছাইপর্ব। 


    ৮ দল চূড়ান্ত হয়েছে কীভাবে?

    গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়েতে শুরু হয়েছিল নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। কিন্তু করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতির সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে যায় মাঝপথেই। বাকি থাকা ৩ দল আইসিসি বাছাই করেছে ওয়ানডে র‍্যাংকিং দেখে। শীর্ষ আটে থাকায় পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে প্রথমবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড। 

     

    আলাদা করে নজর রাখবেন কোন কোন ম্যাচে?

    ৬ মার্চ দিবারাত্রির ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। এর একদিন আগে ৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ১৩ মার্চ ট্রান্স তাসমান দ্বৈরথে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ২৮ মার্চ। সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে ভারতের বিপক্ষে। দুই সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ও ৩১ মার্চ। ৩ এপ্রিল ফাইনালের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামবে বিশ্বকাপের। 

    দুই সেমিফাইনাল ও ফাইনালে থাকছে রিজার্ভ ডে। কোনো কারণে রিজার্ভ ডে’তেও ফাইনাল অনুষ্ঠিত না হলে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হবে দুই ফাইনালিস্ট। 


    কোন ফরম্যাটে খেলা হবে? 

    ২০১৯ পুরুষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো মেয়েদের এই বিশ্বকাপও হবে রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে। প্রতিটি দলই বাকি সাত দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে একবার করে। সেখান থেকে সেরা চার দল চলে যাবে সেমিফাইনালে। প্রথম সেমিফাইনালে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল খেলবে চতুর্থ দলের সাথে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল খেলবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। 

     

    পয়েন্ট বণ্টন হবে কীভাবে? 

    প্রতি জয়ের জন্য দলগুলো পাবে ২ পয়েন্ট। টাই হলে দুই দল পাবে ১ পয়েন্ট করে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে থাকছে না কোনো সুপার ওভার। রাউন্ড রবিন পর্বের পর যেকোনো দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে নেট রানরেটের হিসেবে এগিয়ে থাকা দল যাবে পরের রাউন্ডে। যদি দুই দলের নেট রানরেটও সমান থাকে? সেইক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে হেড টু হেডে দুই দলের ম্যাচের ফলাফল। 

    সেমিফাইনাল ও ফাইনাল টাই হলে নিষ্পত্তি হবে সুপার ওভারে। ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হলে বাউন্ডারির হিসেব করা হবে না। টাই ম্যাচের ক্ষেত্রে নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি থাকছে অফুরন্ত সুপার ওভার খেলার সুযোগ। 


    কোন কোন ভেন্যুতে খেলা হবে?

    ইডেন পার্ক, অকল্যান্ড। হ্যাগলি ওভাল, ক্রাইস্টচার্চ। ইউনিভার্সিটি ওভাল, ডানেডিন। সেডুন পার্ক, হ্যামিলটন। বে ওভাল, মাউন্ট মঙ্গানুই। বেসিন রিজার্ভ, ওয়েলিংটন। নিউজিল্যান্ডের এই ৬ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে মোট ৩১টি ম্যাচ। প্রথম সেমিফাইনাল হবে ওয়েলিংটনে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পর ফাইনালের মহারণের মঞ্চও ক্রাইস্টচার্চ।

     

    ডিআরএস থাকছে কি?

    মেয়েদের বিশ্বকাপের এবারের আসরেও থাকছে ডিআরএস। এর আগে ২০১৭ সালের আসরে প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল এই প্রযুক্তি। যদিও সেবার সব ম্যাচে এই সুবিধা ছিল না। ইনিংসপ্রতি রিভিউও ছিল মাত্র একটি করে। তবে এবার সব ম্যাচেই থাকছে এই সুবিধা। প্রতি ইনিংসে সকল দলই পাবে দুইটি করে রিভিউ। 

     

    বায়ো বাবলের কেমন কড়াকড়ি? 

    কোভিডের শঙ্কা থেকে বায়োবাবল থাকছে এই টুর্নামেন্টেও। তবে নিয়ম কানুনে দলগুলোর প্রতি একটু নমনীয় হয়েছে আইসিসি। প্রতিদিন করাতে হবে না করোনার পরীক্ষা। থাকতে হবে না তেমন বদ্ধ পরিবেশেও। 

    বিশ্বকাপের জন্য মাঠের খেলাতেও কিছু পরিবর্তন এনেছে আইসিসি। করোনাক্রান্ত হয়ে কোনো দল একাদশ সাজাতে যদি হিমশিম খায়, সেইক্ষেত্রে ৯ জন নিয়েও খেলতে পারবে সেই দল। প্রয়োজন হলে অনুমতি সাপেক্ষে কোচিং স্টাফ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের যেকোনো দুইজনও ফিল্ডিং করতে পারবেন সেই দলের হয়ে। এছাড়া মূল স্কোয়াডের ১৫ জনের সাথে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে আরো ৩ জনকেও রাখা যাবে দলের সাথে। 

     

    প্রাইজমানি কে কত পাচ্ছে?

    এবার চ্যাম্পিয়নের প্রাইজমানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শিরোপাজয়ী দল পাবে ১.৩২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। রানার আপ দল পাবে ৬ লাখ ইউএস ডলার। বাংলাদেশি মুদায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। ৩ লাখ ডলার করে পাবে সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া দুই দল। বাকি চার দলের জন্য থাকছে ৭০ হাজার ডলার করে। 


    গ্যালারিতে দর্শক থাকবে?

    টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ধারণক্ষমতার ১০ ভাগ দর্শক অনুমতি পাবেন গ্যালারিতে বসার। পরিস্থিতি পক্ষে থাকলে মাঝপথে ও শেষদিকে দর্শকসংখ্যা আরো বাড়বে। 

     

    কাদের ওপর নজর রাখবেন?

    বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন নিউজিল্যান্ডের অ্যামেলিয়া কার। সাধারণত ৫ নম্বরে ব্যাট করলেও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেমেছেন ৩ নম্বরে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে চওড়া হয়েছে তার ব্যাট। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩ ফিফটির সাথে করেছেন এক সেঞ্চুরিও। 

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিন্দ্রা ডট্টিনের ওপরও চোখ রাখতে পারেন। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।  

    রিচা ঘোষ ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। গত মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন দ্রুততম ফিফটি। মেয়েদের ক্রিকেটে সেটা সপ্তম দ্রততম ওয়ানডে ফিফটি। দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ডট ও ইংল্যান্ডের ট্যামি বুমন্টও থাকতে পারেন স্পটলাইটের আলোতে। 

    অস্ট্রেলিয়ার বেথ মুনি ও অ্যালেনা কিংও আলাদা করে নজর কাড়তে পারেন। পাকিস্তানের অধিনায়ক বিসমাহ মারুফও ফিরেছেন মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে। বিশেষভাবে আলোচনায় থাকতে পারেন নিউজিল্যান্ডের ফ্রান জোয়ান্স। ১৭ বছর ৩৩০ দিন বয়সী এই তরুণী এই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার। 

     

    শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে কারা?

    ২০১৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই এবার মাঠে নামছেন ন্যাট সিভাররা। নিউজিল্যান্ড ২০০০ সালের আসরে জিতেছিল তাদের একমাত্র বিশ্বকাপ। সেবারও স্বাগতিক ছিল দেশটি। ফেভারিট হলেও কখনো শিরোপা জেতা হয়নি ভারতের। ২০০৫ ও ২০১৭ সালের আসরে রানার আপ হয়েছিল দলটি।  

    শিরোপার দৌড়ে বেশ এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড আর সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সেও এগিয়ে আছে দলটি। ট্রফি ক্যাবিনেটে আছে ছয়টি বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের পর গড়েছিল অনন্য এক রেকর্ডও। টানা ২৬ ম্যাচ জিতেছিলেন অজি নারীরা। সেই জয়রথ থেমেছিল গত বছর ভারতের বিপক্ষে হেরে।

    দক্ষিণ আফ্রিকাও চ্যালেঞ্জ জানাবে বড় দলগুলোকে। যদিও অধিনায়ক ফন নিকার্ক বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন। অধিনায়কত্বের ভার উঠেছে সুনি লুসের কাঁধে।   

     

    বিশেষ কোনো রেকর্ডে চোখ রাখবেন কি?

    প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ভারতের অধিনায়ক মিতালি রাজ। বিশ্বকাপে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১৩৯ রান। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ডেবি হকলিকে ছুঁতে মিতালির প্রয়োজন আর ৩৬২ রান। মিতালির অধীনে ভারত আর তিন ম্যাচ খেললেই, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া অধিনায়ক হবেন তিনি। 

    আর চার উইকেট পেলেই ঝুলন গোস্বামী হবেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার লিন ফুলস্টনের আছে ৩৯ উইকেট।