'কিলার মিলার' ও 'অধিনায়ক' রশিদের আতশবাজিতে চেন্নাইকে স্তব্ধ করে গুজরাটের জয়
গুজরাট-চেন্নাই, পুনে (টস-গুজরাট/ফিল্ডিং)
চেন্নাই সুপার কিংস- ১৬৯/৫, ২০ ওভার (গায়কোয়াড় ৭৩, রায়ুডু ৪৬, জাদেজা ২২*, জোসেফ ২/৩৪, শামি ১/২০, দয়াল ১/৪০)
গুজরাট টাইটান্স- ১৭৩/৭, ২০ ওভার (মিলার ৯৪*, রশিদ ৪০, মনোহর ১২, ব্রাভো ৩/২৩, থিকশানা ২/২৪, মুকেশ ১/১৮)
ফলাফল: গুজরাট ৩ উইকেটে জয়ী
উইকেটে যখন এলেন ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে গুজরাট। নিজের তো সময়টা ব্যাট হাত খুব একটা ভালো যাচ্ছে না; ২০১৬ সালের আইপিএল থেকে এবারের মৌসুম পর্যন্ত তখন পর্যন্ত পেয়েছেন মোটে দুটো ফিফটি। তার ওপর দলের নিয়মিত অধিনায়ক ও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হার্দিক পান্ডিয়াও নেই দলে। পরিস্থিতি যখন প্রতিকুলে তখনই তো জ্বলে ওঠেন ডেভিড মিলার, হলও ঠিক তাই। যেই ম্যাচ ছিল চেন্নাইয়ের হাতের মুঠোয়, অকল্পনীয় এক ইনিংস খেলে সেখানেই জয় ছিনিয়ে এনে আরও একবার প্রমাণ করলেন কেন তাকে ডাকা হয় মিলার ‘দ্যা কিলার’। সাথে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রশিদ খান যে আজ বাউন্ডারির আতশবাজি ছুটিয়েছিলেন তারও অবদান কম নেই বৈকি। রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের রানে ফেরা বা ডোয়াইন ব্রাভোর বুড়ো হারের ভেল্কি সবই তাই নস্যি ‘কিলার’-এর কাছে।
ডেভিড ‘কিলার’ মিলার; রাজকীয় রশিদ
৮৭ রানে যখন রাহুল তেওয়াতিয়া পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে বিদায় নিলেন তখন খরচ হয়ে গিয়েছে ১২.৪ ওভার। নেই কোনও স্বীকৃত ব্যাটার। তবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে রশিদ খান বোধহয় চেয়েছিলেন এরকম কিছুই যেখানে বিশেষ কিছু করে নজর কাড়বেন। মঞ্চ যখন প্রস্তুত রশিদও তখন জেগে উঠলেন। স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে মিলারি তখন সামলাচ্ছিলেন। তেওয়াতিয়াকে ফেরানো ব্রাভোর ওই উইকেট মেইডেনের আগের ওভারে জাদেজাকে টানা ২ ছয়ের পর চার মেরে ২৮ বলে ছুঁয়েছিলেন ফিফটি; আক্রমণের পাশাপাশি বোলার হিসেব করে খেলার দায়িত্বটাও তখন মিলারের কাঁধেই। ব্রাভোর করা ১৭তম ওভারে মিলার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে বল আকাশে তুলে দিয়েছেন, তবে ডিপ মিড উইকেটে থাকা শিভাম দুবে সেটা ফ্লাডলাইটের আলোয় বুঝতেই পারেননি। তার ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ব্রাভো-জাদেজা তখন খেপে আগুন, সাথে সাথে তাকে সরিয়েও দেওয়া হল। অন্য প্রান্তে থাকা রশিদের ক্ষুরধার মস্তিষ্কও যেন ধরে ফেলল চেন্নাই ক্রমেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। ঠিক পরের ওভারেই ক্রিস জর্ডানকে তুলোধোনা করে মারলেন টানা দুই ছয়, এক চার ও এক ছয়; ওভারে এলো ২৫ রান! পরের ওভারেই টানা দুই বলে ব্রাভো ফেরান ২১ বলে ৪০ রান করা রশিদ ও আলজারি জোসেফকে। তবে মিলার যখন এতদূর নিয়ে এসেছেন তখন কি আর তীরে এসে তরি ডুবতে দেবেন! শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন হলে সেখানেও আবার নাটক! তৃতীয় বলে মিলার ছয় মারার পরের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলেন মিলার; কিন্তু বিধি বাম! কোমরের ওপর নো বলে বেঁচে তো গেলেনই, ফ্রি হিটে পরের বলে মারলেন চার। জর্ডানের দুঃসহ রাতে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে মাটিতে ঝাপিয়ে দুই রান সম্পন্ন করে বুনো চিৎকারে মিলার জানালেন, চেন্নাই স্বপ্ন সমাহিত করেছেন তিনি।
গায়কোয়াড়ের রানে ফেরা; রায়ুডু-জাদেজার সময়োপযোগী অবদান
এবারের আসরটা এক কথায় দুর্বিষহই যাচ্ছিল গত মৌসুমের অরেঞ্জ ক্যাপ জয়ীর জন্য। তবে চ্যাম্পিয়নদের যে বেশিদিন আটকে রাখা যায় না সেটার প্রমাণ দিতে গায়কোয়াড় বেছে নিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গুজরাটকেই। রবিন উথাপ্পা শুরুতেই ফিরে গেলে মোহাম্মদ শামিদের যোগ্য সম্মান দিয়ে মাটি কামড়ে পরে থাকেন গায়কোয়াড়। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মঈন আলীও ফিরলে চেন্নাই তুলতে পারে মোটে ৩৯ রান, যার ৩০ রানই এসেছিল গায়কোয়াড়ের ব্যাট থেকে। প্রান্ত বদল করার পাশাপাশি নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে নিয়ে এরপর ৩৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। অন্য প্রান্তে আম্বাতি রায়ুডুও ছিলেন সপ্রতিভ। ১২তম ওভারে দুজনে মিলে ইয়াশ দয়ালের ওপর চড়াও হয়ে ১৯ রান নিয়ে পূর্ণ করেন দলের শত রান। ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসে জোসেফের শিকার হয়ে থেমেছিল রায়ুডুর ৩১ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। এক ওভার পরে সেই চাপেই ওই দয়ালকেই উইকেট দিয়ে ৪৮ বলে ৭৩ রান করে থেমেছিলেন গায়কোয়াড়। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ১২ বলে ২২* রানের ক্যামিওতে এরপর যেই পুঁজি পেয়েছিল চেন্নাই তা তো নায়কের বেশেই তাড়া করলেন মিলার।