স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ফিরে এল গত সফরের দুঃস্বপ্ন
১ম টেস্ট, নর্থ সাউন্ড (টস- ওয়েস্ট ইন্ডিজ/ বোলিং)
বাংলাদেশ- ১০৩ (সাকিব ৫১, তামিম ২৯, লিটন ১২, জোসেফ ৩/৩৩, সিলস ৩/৩৩, মেয়ার্স ২/১০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ৯৫/২, ৪৮ ওভার (ব্র্যাথওয়েট ৪২*, ক্যাম্পবেল ২৪, বনার ১২*, মোস্তাফিজ ১/১০ এবাদত ১/১৮)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ রানে পিছিয়ে
১ম দিন, স্টাম্পস
এই স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামেই ২০১৮ সালেও সফরের শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের। সেবার বাংলাদেশ গড়েছিল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের লজ্জার রেকর্ড; লজ্জার কমতি থাকল না এবারও। পার্থক্য শুধু দলীয় সংগ্রহে; ৪৩-এর বদলে এবার উঠল ১০৩ রান। তবে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা দুই টেস্টে ৬ জন ব্যাটার রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন। যেকোনো এক টেস্টে ইনিংসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যাটারের শুন্য রানে ফেরার এটাই রেকর্ড; যেটা টেস্ট ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে তিন বার করে দেখল বাংলাদেশ, যার প্রথমটা এসেছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ২০০২ সালে।
দুঃস্বপ্নের তৃতীয় প্রহরের শুরুটা দিনের প্রথম ওভারেই। আধো ঘাস, আধো বাদামি এক অদ্ভুতুড়ে পিচে ছিল না যুতসই গতি। কেমার রোচ তাই শুরু থেকেই বল ফেললেন ওপরে। প্রায় ফুল লেংথের এক বলেই পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের ওপর হালকা লাফিয়ে উঠলো, তাতেই তৃতীয় স্লিপে এনক্রুমাহ বনারের দারুণ এক ক্যাচের শিকার হয়ে গোল্ডেন ডাকের শিকার হলেন তিনি। রোচের পরের ওভারে স্টাম্প খুইয়ে ওই শূন্য রানেই ফিরলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সদ্য অধিনায়কত্ব ছাড়া মুমিনুল দেখলেন একই পথ; জেইডেন সিলসের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
তিন শূন্যের পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন তামিম ও লিটন। সেই চেষ্টার মাঝেই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৫০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম। দিনের অর্জন বলতে ততটুকুই। ৪১ রানের মাথায় ফিরলেন দুজনেই; দুজনেই ফিরলেন উইকেটের পিচে ক্যাচ দিয়ে, তামিম ফিরলেন জোসেফের কাছে আর লিটন সিলসের কাছে। আবারও অধিনায়ক হওয়া সাকিব ২২ গজের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করলেন এক মৃত্যুকূপের মাঝে যেখানে অন্য প্রান্তে হয় কেউ আত্মাহুতি দিচ্ছেন, নয় পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই মিলিয়ে যাচ্ছেন। যেমনটা হল নুরুল হাসান সোহানের ক্ষেত্রে; উইকেটে এসে দ্বিতীয় বলেই ভেতরে ঢোকা বলের ইয়ত্তা করতে না পেরে ছেড়ে দিলেন। বল প্যাডে লাগায় ওই শূন্য রানেই পড়লেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। মিরাজকে সঙ্গী করে এরপরে লাঞ্চে গিয়েছিলেন সাকিব।
লাঞ্চের ঠিক পরের ওভারেই সিলসের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পিচে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মিরাজ। সাকিবের উপায় রইল না তেড়েফুঁড়ে খেলা ছাড়া। তা তিনি খেললেন, সফলতার সাথেই। অন্য প্রান্তে মোস্তাফিজ ততক্ষণে পঞ্চম জন হিসেবে শূন্য রানে ফিরে গিয়েছেন। এবাদত হোসেনকে সঙ্গী করেই সাকিব পূর্ণ করলেন ২৮তম টেস্ট ফিফটি। তবে চড়াও হতে গিয়েই ৬৭ বলে ৫১ রান শেষে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন সাকিব। ওই ওভারেই শূন্য রানে খালেদ ফেরায় ১০৩ রানেই থমকে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
তবে শেষের বিভীষিকার কিছুটা রেষ পড়তে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরেও। মোস্তাফিজ ও খালেদের ওপেনিং স্পেলটা ছিল দুর্দান্ত। মোস্তাফিজ তো নিজের প্রথম চার ওভারেই দিয়েছিলেন মেইডেন। তবে বল ব্যাটে আসছে না এমন উইকেটে দুজনের গতি খুব একটা সহায়ক ছিল না নিজেদের জন্য। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট-জন ক্যাম্পবেলও তাই সুযোগ পেয়েছেন দেখে খেলার। তবে মাত্র ১ রান দেওয়া ওপেনিং স্পেলের পরে দিনের শেষার্ধে ফিরে ভেতরে ঢোকা বলে ক্যাম্পবেলের স্টাম্প ঠিকই উপড়ে ফেলেন মোস্তাফিজ। এবাদতের দারুণ এক বলে তার কিছুক্ষণ পরে উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রেইমন রেইফার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরও একবার পথ দেখাচ্ছেন ব্র্যাথওয়েট; বাংলাদেশের সংগ্রহের হাত ছোঁয়া দূরত্বে তিনি নিয়ে এসেছেন স্বাগতিকদের। কাল সকালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককে ফেরাতে না পারলে তাই আগামীকাল আরও একটা লম্বা দিনই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।