• আন্তর্জাতিক ফুটবল
  • " />

     

    গার্দিওলা, ক্লপ না হাউয়ি: কে হচ্ছেন ইংল্যান্ডের নতুন ম্যানেজার?

    গার্দিওলা, ক্লপ না হাউয়ি: কে হচ্ছেন ইংল্যান্ডের নতুন ম্যানেজার?    

    আরেকটি ইউরো ফাইনালে পরাজয়ের পর এবার স্বেচ্ছায় ইংল্যান্ড কোচের দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন গ্যারেথ সাউদগেট। তার আট বছরের দীর্ঘ সময়কালে একটি বিশ্বকাপে সেমি (২০১৮), একটিতে কোয়ার্টার (২০২২) ও দুটি ইউরোতে রানার আপ (২০২০, ২০২৪) হয়েছে ইংল্যান্ড। একই সাথে সফল ও বিতর্কিত একটি টেনিউর শেষ করা সাউদগেটের উত্তরসূরি হতে যাচ্ছেন কে? ভালো ইংলিশ ম্যানেজারের ‘আকালে’ কি এবার বিদেশী ম্যানেজার নিয়োগ দিবে ইংলিশ এফএ? 

    বড় ফুটবলীং রাষ্ট্রগুলোর মতো ইংল্যান্ডও জাতীয় দলের কোচ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বদেশী ম্যানেজারদেরকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ পর্যায়ে ইংলিশ ম্যানেজারের অভাব দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ইংলিশ ম্যানেজারই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিততে পারেননি। জাতীয় দলের সর্বশেষ চার ইংলিশ ম্যানেজার – গ্যারেথ সাউদগেট, স্যাম অ্যালাডাইস, রয় হজসন, স্টিভ ম্যাকল্যারেন – কেউই কোনো শীর্ষ ক্লাবে সফল হতে পারেননি। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের শীর্ষ ছয় ক্লাবের সবার ম্যানেজার ছিলেন বিদেশী কেউ। এক নিউক্যাসল ব্যতীত লিগের শীর্ষ ১০ ক্লাবের একটিতেও এখন ইংলিশ ম্যানেজার নেই। যে কারণে এই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছেই, ইংল্যান্ডের প্রতিভাবান এই দলকে ম্যানেজ করার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য কি কোনো ইংলিশ ম্যানেজারের আদৌ আছে? এছাড়া ইয়ুর্গেন ক্লপ, পেপ গার্দিওলা, মরিসিও পচেত্তিনোর মতো বাঘা বাঘা অনেক বিদেশী ম্যানেজারই এখন এভেইলেবল আছেন, বা এক বছরের মধ্যে হবেন। 

    ম্যানেজারের সর্টলিস্ট 

    বিবিসি, টেলিগ্রাফ, অ্যাথলেটিক ইউকের মতো নির্ভরযোগ্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে সম্ভাব্য ইংল্যান্ড ম্যানেজারের একটি সর্টলিস্ট তৈরি করেছে প্যাভিলিয়ন- 

    লি কার্সলি 

    ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের কোচ লি কার্সলিকেই অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হবে জানাচ্ছে স্থায়ী গণমাধ্যমগুলো। আট বছর আগে, সাউদগেটকেও এভাবেই নিয়োগ দিয়েছিল এফএ (ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন)। অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার হিসেবে চার ম্যাচের দুটিতে জয় ও দুটিতে ড্র এনে দিয়েছিলেন সাউদগেট। এতেই তাকে পার্মানেন্ট ম্যানেজারের চুক্তি দেয় এফএ। কার্সলিকেও একইভাবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই এফএ’র অধীনে কাজ করছেন কার্সলি। তার অনূর্ধ্ব-২১ দল বয়সভিত্তিক ইউরোও জিতেছে গতবছর। 

    এডি হাউয়ি 

    যদি স্বদেশী কোচই খোঁজে ইংল্যান্ড, তাহলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় নাম নিউক্যাসল ম্যানেজার এডি হাউয়ি। পূর্বে বোর্নমাউথের মতো ক্লাবে ভালো করেছেন, সৌদি মালিকানায় আসার পর নিউক্যাসলকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন পর ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করিয়েছেন, গত মৌসুমে শীর্ষ চারে শেষ করতে না পারলেও ইউরোপিয়ান ফুটবল নিশ্চিত করেছে নিউক্যাসল। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে, বর্তমানে ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হাউয়ি, গত গ্রীষ্মেই নবায়ন করেছেন চুক্তি। এমতাবস্থায় ইংল্যান্ড হাউয়িকে ‘কেড়ে’ নিতে চাইলে কমপেনসেশন ফি চাইবে নিউক্যাসল, যেটা হয়তো ম্যানেজারের কয়েক বছরের বেতনের সমান হবে। 

    গ্রাহাম পটার 

    কমপেনসেশন ফি না গুণে কোনো ইংলিশ ম্যানেজারকে নিয়োগ দিতে চাইলে সাবেক ব্রাইটন ম্যানেজারের দ্বারস্থ হতে পারে ইংল্যান্ড। ইংলিশ ফুটবল পিরামিডের একদম নিচের স্তর থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার লিগে এসে পৌঁছেছিলেন পটার। শুধু চেলসির সময়কালটা বাদ দিলে প্রতিটি ম্যানেজারিয়াল রোলেই প্রত্যাশা ছাপিয়ে ফলাফল এনেছেন। বর্তমানে এভেইলেবলও আছেন এই ৪৯ বছর বয়সী। 

    পেপ গার্দিওলা 

    ইংলিশ এফএ জানিয়েছে, কোচ বাছাইয়ে তারা বিদেশী ম্যানেজারদের উপরও নজর রাখবে। কোচের খোঁজে তাদের প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য কোচের ‘প্রিমিয়ার লিগে ভালো করার শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড থাকতে হবে’। যদি নতুন কোচের ‘ইংলিশ’ হওয়াটা জরুরী না হয়, তাহলে গার্দিওলার চেয়ে ভালো প্রার্থী আর পাবে না ইংল্যান্ড। প্রিমিয়ার লিগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তারচেয়ে শক্তিশালী রেকর্ড সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনো ম্যানেজারেরই নেই। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, বর্তমান ইংল্যান্ড দলের অনেক খেলোয়াড়ই তার অধীনে কাজ করছেন, বা ফুটবলের সঙ্গে ভালোভাবেই পরিচিত। ইংল্যান্ডের জন্য শাপেবর হতে পারে গার্দিওলার চুক্তির প্রসঙ্গও। ম্যান সিটিতে ২০২৫ সালে চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে তার। গত মৌসুমের শেষে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার চুক্তি নবায়ন না করার সম্ভাবনাই বেশি। এদিকে ইংলিশ এফএ’ও একজন অন্তর্বর্তীকালীনভাবে কারো হাতে দায়িত্ব দিতে চাইছে। তার মানে কি গার্দিওলার চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ইংল্যান্ড? দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারেন চাইলেই। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা গার্দিওলাই নেবেন। তিনি নিজে থেকে ইংল্যান্ডের ম্যানেজার হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে সেটা নাকচ হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। 

    ইয়ুর্গেন ক্লপ 

    গার্দিওলার ক্ষেত্রে যেসব কথা সত্য, তার সিংহভাগ ক্লপের ক্ষেত্রেও সত্য। বলতে পারেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলে এভেইলেবল সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ম্যানেজার; তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলও। কিন্তু এতে নাকচ করে দিয়েছেন ক্লপ। আপাতত একটা বছর বিশ্রাম নিতে চান তিনি। সেই বিশ্রাম শেষে তাকে নিয়োগ দিতে চাইলে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে এফএ’র, দায়িত্ব দিতে হবে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজারকে। প্রিমিয়ার লিগে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, সাফল্য, এবং ইংলিশ খেলোয়াড়দের সাথে পরিচিতি; ইংল্যান্ডের জন্য বেশ যুতসই ম্যানেজারই হবেন ক্লপ। তবে সামনের বছর তার দৌড়ে হয়তো থাকবে আরও বেশ কিছু জাতীয় দল ও ক্লাব। 

    মরিসিও পচেত্তিনো 

    আরেকজন হাই-প্রোফাইল ম্যানেজার এই মুহূর্তে এভেইলেবল আছেন। টটেনহাম, পিএসজি, চেলসির এই সাবেক ম্যানেজার ঠিক ক্লপ-গার্দিওলার পর্যায়ের না হলেও ইংলিশ ফুটবল সার্কিটে তিনি ভালোই সম্মানিত। লন্ডনে থাকেন, ইংল্যান্ডের ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গেও বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছেন পচেত্তিনো। মে মাসে চেলসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন সাথে সাথেই নতুন চাকরি খুঁজছেন এই আর্জেন্টাইন, ইংল্যান্ডের কোচের পদ নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

    অ্যাঞ্জ পস্তেকগলু 

    পূর্বে সফলতার সাথে একটি জাতীয় দল ম্যানেজ করেছেন (অস্ট্রেলিয়া)। এছাড়া ক্লাব ফুটবলেও, যেখানেই গিয়েছেন, সাফল্য এনেছেন। স্পার্স ম্যানেজার হিসেবে এক বছর পূর্ণ করা পস্তেকগলু ইংলিশ ফুটবলেও ভালোই মানিয়ে নিয়েছেন। টেলিগ্রাফসহ বেশ কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাকেও সর্টলিস্টে রেখেছে এফএ।  

    অন্যান্য প্রার্থী  

    সদ্য সাবেক বায়ার্ন ম্যানেজার টমাস টুখেল এই মুহূর্তে এভেইলেবল আছেন। তাকেও তালিকায় রাখতে পারে এফএ। আর তরুণ ইংলিশ কোচদের কাউকে নিয়োগ দিতে চাইলে ইপ্সুইচ সিটি ম্যানেজার কিরেন ম্যাকেনাকেও (৩৮) সুযোগ দিতে পারে এফএ।