কিছুই মনে করতে পারছেন না শ্যাপোকোইন্সের নেতো
পরম করুণাময়ের ওপর তাঁর ছিল অগাধ বিশ্বাস। সবসময় নিজের সঙ্গে একটা কালো মলাটের বাইবেল রাখতেন। মেডেইনের পথে যাওয়ার সময় যখন বুঝতে পারলেন বিমানে কিছুটা একটা গড়বড় হয়েছে, সেই বাইবেলের শ্লোকেই নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। এরপর একটা বিকট বিস্ফোরণ, হঠাৎ করে যেন দুমড়ে মুচড়ে গেল সবকিছু। মুহূর্তের মধ্যে অতল অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল চোখে। সেই চোখজোড়া হয়তো চিরদিনের জন্যই মুদে যেতে পারত, অন্য প্রায় সব সতীর্থেরও তাই হয়েছিল। তবে হেলিও নেতোর বিশ্বাসটাই হয়তো তাঁকে জাগিয়ে রেখেছিল। দুই সপ্তাহ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন, এখনও আশঙ্কা কাটেনি পুরোপুরি। তবে কোমা থেকে ফেরার পর শ্যাপোকোইন্স ডিফেন্ডারের প্রথম কথা ছিল, “ওই ম্যাচের স্কোরলাইন কী ছিল?”
একটু ধন্দেই পড়ে যাওয়ার কথা। জ্ঞান ফেরার পর নেতোর তো সতীর্থেরা কেমন আছে, সেটাই আগে জানতে চাইবেন। কিন্তু নেতোর ধূসর নিউরন থেকে যে ওই দিনের স্মৃতি পুরোপুরি মুছে গেছে! ওই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা, ওই ধেয়ে আসতে থাকা আতঙ্ক, সবকিছু তছনছ করে দেওয়া ওই আঘাত- কোনো স্মৃতিই মনে নেই তাঁর। হাসপাতালের সফেদ বিছানায় কেন শুয়ে আছেন- সেটাও মনে করতে পারছেন না নেতো।
কিন্তু ডাক্তারেরা তাঁকে কী বলবেন? ১৯ জন সতীর্থকে চিরতরে হারিয়েছেন- এই খবর কীভাবে দেবেন এই ডিফেন্ডারকে? চিকিৎসক কার্লোস মেন্দোকা জানিয়েছেন, নেতোর এই অবস্থায় তাঁকে আর কিছুই জানানো হয়নি। এখনো মাত্র নিজের ফুসফুস দিয়ে নিশ্বাস নিতে পারছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা কাটার আগে কিছুই বলা যাবে না। এই অবস্থায় তাঁকে সেই খবরটা না জানানোটাই সমীচীন বলে মনে করছেন মনোবিদরা।
নেতোর নাম অবশ্য শ্যাপোকোইন্সের ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেই এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। যে বাইবেলটা আগলে রাখতেন সযতনে, সেটা কীভাবে যেন অনেকটাই অবিকৃত থেকে গিয়েছিল। সংঘর্ষের ঠিক আগে বাইবেলের কোন শ্লোক পড়ছিলেন, সেটাও দাগানো আছে সেখানে, “শয়নে স্বপনেও আমি তোমাকে স্মরণ করি, রাতের গভির অন্ধকারেও তোমাকে আমার মনে পড়ে। তুমিই আআম্র আশ্রয়, তোমার ডানাতেই আমি আস্থা খুঁজে পেতে চাই।”
পরম করুণাময়ের ওপর এতোটা বিশ্বাস ছিলেন বলেই নেতো আজ স্মৃতি হয়ে যায়নি। সেই দুর্ঘটনার স্মৃতিটাই শুধু মুছে গেছে।