ঘরের ছেলে খাজাই এখন পাকিস্তানের 'শত্রু'!
প্রায় পঁচিশ বছর হলো আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। শুধু চেহারাতেই ভিনদেশি ছাপটা থেকে গেছে। রাজ্য দল কুইন্সল্যান্ডের অধিনায়ক তিনি, দেশের হয়েও ২০ টেস্ট খেলে ফেলেছেন। কিন্তু এসবের পরেও অনেক সময়েই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় উসমান খাজাকে। গতকালের কথাই ধরুন। ব্রিসবেনের মাঠের এক মহিলা কর্মী তাঁকে পাকিস্তানি ক্রিকেটার ভেবে ভুল করেছিলেন, “আমি লকার রুম খোলার অপেক্ষায় নীচে বসে ছিলাম। একজন মহিলা এসে জিজ্ঞাসা করল আমি ভেতরে যাব কি না। আমি হ্যাঁ বলায় সে পাকিস্তানি রুম খুলে দিতে লাগল! আমি তাঁকে বললাম, আমার রাস্তা অন্য দিকে!”বোঝাই যায়, ভিনদেশে পাড়ি জমালেও জন্মভূমি তাঁর পিছু ছাড়েনি। যেই পাকিস্তান ছেড়ে চলে এসেছিলেন, সেই জন্মভূমির বিপক্ষে খেলতে নামাটা কি খানিকটা হলেও কঠিন হবে না?
কঠিন হবে বৈকি! চাইলেই তো আর জন্মভূমিকে ভোলা যায়না। এর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন, তবে টেস্ট খেলা হয়নি। তবে খাজা মনে করেন, নিজের চেয়ে তাঁর পরিবারের কাছে ব্যাপারটি অনেক বড়, “তাদের জন্ম পাকিস্তানে, সেখানে তাঁরা বহু বছর ছিল। আমিও সেখানে জন্ম নিয়েছি, তাই এটা আমার হৃদয়ের অনেক কাছের। সংস্কৃতি অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমার পরিবার অস্ট্রেলিয়ান কিন্তু এখনো তাঁরা অনেকখানি পাকিস্তানি!”
বড় হয়েছেন সিডনিতে, বন্ধু-বান্ধব সবাই এখানকারই। নিজেকে পুরোদস্তুর ‘অজি’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সবসময়ই, “যখন আমি ভেঙ্গে পড়ি অথবা আবেগ প্রকাশ করি, সেটা পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ান হয়। তবে আমার কিছু অংশ এখনো পাকিস্তানি, যেমন পরিবারের সাথে কথা বোলার সময়ে মাঝে সাঝে উর্দু বলি। আমার পরিবার কিন্তু শতভাগ অস্ট্রেলিয়ান। তাঁরা পাকিস্তানকে সমর্থন করেন না। তাঁরা চান আমি অস্ট্রেলিয়ার হলেই ভালো খেলি। এখানে জন্মভূমির সাথে দ্বন্দ্বের কোন বিষয় নেই।”
সাড়ে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় নিজ দেশ পাকিস্তান ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তারিক খাজা এবং ফোজিয়া তারিক। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় পঁচিশ বছর। সিডনিতে এখন ভালোমতোই থিতু খাজা পরিবার। সেই ছোট্ট ছেলেটিও আজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।মা বাবাও অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে ছেলের পারফরম্যান্সে খুশি, ম্যাচও দেখতে যান নিয়মিতই।
এদিকে পাকিস্তানের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মিকি আর্থার। এই আর্থারের অস্ট্রেলিয়ার কোচ থাকাকালীন ভারতের বিপক্ষে সিরিজের মাথপথেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন খাজা। তবে ওসব পুরনো ব্যাপার মনে রাখতে চান না, “আমি প্রতিশোধপ্রবণ নই। মিকি দারুণ একজন মানুষ। আমাদের অনেক সাহায্যও করেছেন। ওটা অনেক বছর আগের ঘটনা। যদিও ব্যাপারটা কঠিন ছিল তবুও সেটা খুব বড় কিছু না। আমি রাগ ধরে রাখতে পছন্দ করিনা। আমি নিশ্চিত মিকিও এসব নিয়ে ভাববে না।”