রোনালদোর হ্যাটট্রিকে ক্লাব বিশ্বকাপ রিয়ালের
সপ্তাহটা বোধ হয় এর চেয়ে আর ভালো হতে পারত না ক্রিশ্চিয়ানোর। কদিন আগেই ব্যালন ডি অর জিতেছেন, ৫০০ গোলের মাইলফলকও হয়ে গেছে। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গোল করেছেন। দুর্দান্ত এক বছরের শেষটাও হয়েছে স্বপ্নের মতো, ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জাপানের কাশিমা অ্যান্টলার্সের সঙ্গে করেছেন হ্যাটট্রিক। ৪-২ গোলে জিতে পঞ্চমবারের মতো শিরোপাটা নিজেদের করে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এমন একটা রাতের পরও কি একটু অস্বস্তির কাঁটা কি বিঁধছে রোনালদোর বুকে? এমন একটা জয়ের পরও যে মাদ্রিদের জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে।
নির্ধারিত সময়ের শেষদিকে যা হয়েছে, তাতে সেটা হতেই পারে। ম্যাচে তখন ২-২ গোলে সমতা, অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হবে প্রায়। কাশিমার এক খেলোয়াড় প্রতিআক্রমণে বল পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রামোস তাঁকে ফেলে দেন পেছন থেকে। সার্জিও রামোসের ওই ফাউলের জন্য নিশ্চিতভাবেই হলুদ কার্ড দেখার কথা। রেফারি পকেট থেকে কার্ড বেরও করছিলেন, কিন্তু কোনো এক অবিশ্বাস্য কারণে রেফারি আর কার্ড দেখাননি। কে জানে, তখন দশজনের দল হলে ম্যাচের চিত্রনাট্য অন্যরকমও হতে পারত।
আবার কে জানে, সেটা নাও হতে পারত। প্রথম এশিয়ান ক্লাব হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল কাশিমা। তাও মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নয়। স্বাগতিক হিসেবেই সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে বুঝিয়ে দিয়েছে, আসাটা মোটেই ফ্লুক ছিল না।
বেনজেমার গোলে মাত্র ৯ মিনিটে এগিয়ে যায় 'লস ব্লাঙ্কোস'রা। সবধরনের প্রতিযোগিতায় রিয়ালের শেষ ১০ গোলের ৫টিই আসলো বেনজেমার পা থেকে। কিন্তু এরপর সবাইকে চমকে দিয়ে গোল শোধ করে নেয় কাশিমা। ৪৩ মিনিটে শিবাসাকির গোলে মোক্ষম সময়ে সমতায় ফেরে জাপানের চ্যাম্পিয়নরা। ১-১ সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের মাত্র ৭ মিনিটেই আবারো সেই শিবাসাকির গোলে বিস্ময়করভাবে লিড নেয় কাশিমা। লিডটা অবশ্য ক্ষণস্থায়ীই ছিল। ভাজকেজকে অবৈধভাবে বক্সে ফেলে দেওয়ায় মাত্র ৮ মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় রিয়াল। ১২ গজ থেকে রিয়ালকে সমতায় ফেরান রোনালদো। কিন্তু এরপর দলকে লিড এনে দেওয়ার অন্তত তিন তিনটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন এই পর্তুগিজ অধিনায়ক। রিয়ালের ফরোয়ার্ডদের গোল করার ব্যর্থতায় জাপানের চ্যাম্পিয়নরা কাশিমা আবারো লিড নিয়েই ফেলেছিল। কিন্তু নাভাস ও রিয়ালের রক্ষণভাগের দক্ষতায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
২-২ গোলের সমতায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ক্লাব বিশ্বকাপ '১৬ এর ফাইনাল। অতিরিক্ত সময়ে স্বরূপে ফিরে নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দেন রোনালদো। প্রথম ১৫ মিনিটেই দু গোল করে হ্যাটট্রিকও পূরণ করেন 'সিআর৭'। ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড়ও বনে গেলেন রিয়ালের এই কিংবদন্তী। বেনজেমা, আনেলকা নন; রিয়ালের ক্লাব বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোই (৪)। এই জয়ে ৩ বছরের মাঝে নিজেদের ২য় ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলল রিয়াল। রিয়ালের ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে স্বপ্নের এক বছরের কাটালেন জিনেদিন জিদান। কিন্তু রেফারিংয়ের কালো ছায়া এই ম্যাচে তারপরও থেকে যাবে।