• অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান
  • " />

     

    বছরের সেরা টেস্ট?

    বছরের সেরা টেস্ট?    

    টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য বোধহয় এখানেই। যেই দল প্রথম ইনিংস শেষে ফলো-অনে শঙ্কায় ছিল, সেই দলই শেষ দিনে এসে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল! অসম্ভব এক লক্ষ্যকে তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানি ব্যাটিংয়ের লেজকে নিয়ে আসাদ শফিক আজ যেমনটি খেলেছেন, এরকমটা সচরাচর দেখা যায় না। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান হেরে গেলেও তাদের এই অভাবনীয় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। শেষ দুই দিনের খেলার ধরনে তাই অনেকেই বলছেন, ব্রিসবেন টেস্টই এই বছরের সেরা!

    রোমাঞ্চে ভরপুর এই টেস্ট শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণটা ছিল অজিদের হাতেই। প্রথম ইনিংসে স্মিথ,হ্যান্ডসকম্বের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪২৯ রানের বড় সংগ্রহ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাজে ব্যাটিং করে মাত্র ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায় মিসবাহর দল। দলের মাত্র ৪ জন ব্যাটসম্যানই দুই অংকের মুখ দেখেছিলেন। এক সরফরাজ আহমেদ ছাড়া কাউকেই ক্রিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা যায়নি।

    পাকিস্তান ফলো-অনে পড়লেও স্মিথ আবারো ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন। দ্রুত রান তুলে তৃতীয় দিনের মাঝামাঝি সময়েই ইনিংস ঘোষণা করেন স্মিথ। এতে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। প্রায় ৭ সেশন বাকি থাকতেই কেন ডিক্লেয়ার করলেন অজি অধিনায়ক? স্মিথের ভাবনায় হয়তো ছিল দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনটি। ঐ দুই ঘণ্টায়ই পাকিস্তানের ব্যাটিং ধস নামে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আশাতেই হয়তো ফ্লাডলাইটের নীচে আরও বেশি সময় ব্যাটিং করতে বাধ্য করেছিলেন পাকিস্তানকে।

     

    কিন্তু এতেই ঘটেছে বিপত্তি। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা এভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, সেটা হয়তো কল্পনাতেও আসেনি কারো। আজহার আলির পর আসাদ শফিককের প্রতিরোধ দলকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছিল জয়ের দিকে। পাকিস্তানের লেজ গত দুইদিন অতিমানবীয়ও রূপ ধারন করেছিল। মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, ইয়াসির আলীরা দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন স্টার্ক, হ্যাজলউডদের সামনে। স্মিথের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ ক্রমশ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে অজিরা।

     

    ম্যাচ হারলেও পাকিস্তানের লড়াই মন জয় করে নিয়েছে সবার। সাবেক ক্রিকেটাররা শফিকদের এই দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনার ভূয়সী প্রশংসা করে ম্যাচটিকে বছরের সেরা টেস্টের স্বীকৃতিও দিচ্ছেন। সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক, মুশতাক আহমেদরা বলছেন, এটাই বছরের সেরা ম্যাচ। ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান, শোয়েব আখতার, মাইকেল ক্লার্করাও পাকিস্তানের লড়াকু মনোভাবের দারুণ প্রশংসাই করেছেন।

    'টেস্ট ক্রিকেট মারা যাচ্ছে', উক্তিটি গত কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ধীর গতির ক্রিকেট কতদিন দর্শক ধরে রাখতে পারবে সেটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তবে ব্রিসবেন টেস্টের শেষ দুই দিন আবারো প্রমাণ করে দিয়েছে, টেস্ট ক্রিকেট সগৌরবেই টিকে থাকবে।