• অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান
  • " />

     

    খেলা দেখতে এসে দ্বাদশ খেলোয়াড়!

    খেলা দেখতে এসে দ্বাদশ খেলোয়াড়!    

    ম্যাচের তখন একেবারেই অন্তিম মুহূর্ত, আর দুই উইকেট পেলেই সিরিজ জিতে যাবে অজিরা। নাথান লায়নের বল মোহাম্মদ আমির পয়েন্টে পাঠালেন, ঝাঁপিয়ে পড়ে মিকি এডওয়ার্ডস বল ধরার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড উল্লাসে ফেটে পড়ল। অধিকাংশ দর্শকই দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন, একই কাজ করলেন মিকির পাশে থাকা জ্যাকসন বার্ডও। ঝাঁকড়া চুলের মিকির দিকে তাকিয়ে অজি অধিনায়ক স্মিথের মুখেও ছিল মুচকি হাসি।

    একটু খটকা লাগছে? লাগারই কথা। মিকি এডওয়ার্ডস নামে তো অস্ট্রেলিয়া দলে কেউ নেই! তাহলে কীভাবে মিকি ব্যাগি গ্রিন মাথায় দিয়ে মাঠে নামলেন? এর পেছনের কাহিনীটা দারুণ অবাক করার মতো। ২২ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার মিকি কিন্তু আজকে একরকম দর্শক হিসেবেই এসেছিলেন সিডনির মাঠে!

    মিকির বেড়ে ওঠা এই সিডনিতেই, খেলার হাতেখড়িও এখানেই। সিডনি টেস্টের শেষ দিনের খেলা উপভোগ করার জন্যই এসেছিলেন। স্থানীয় ক্রিকেটার হওয়ায় মাঠের ক্রিকেটারদের জন্য দিনের শুরুতে কয়েকবার পানিও বহন করেছেন। কিন্তু দিনের শেষভাগে কী হতে যাচ্ছে, সেটা হয়তো মাথাতেই আসেনি মিকির।

    এখন ভাবতে পারেন, তাকে হুট করে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হলো কেন? আসলে ডেভিড ওয়ার্নার মাঠের বাইরে চলে গেলে বদলি হিসেবে আসার মতো কেউ ছিল না। কারণ রেনশ'র বদলে আগে থেকেই মাঠে ছিলেন জ্যাকসন বার্ড। তখনই স্থানীয় তরুণ মিকিকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাঠে নামার সাথে সাথেই বড় স্ক্রিনে তার চেহারা ভেসে ওঠে। দর্শকের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে কিছু সময় লাগলেও পরে তারা বুঝতে পারে, আরে এ তো আমাদের মিকি!

     

    বুঝে ওঠার পর থেকেই মিকি যতবারই বল ধরছিলেন, ততবারই করতালিতে মুখর হয়ে উঠছিল পুরো স্টেডিয়াম। মিকিও ব্যাপারটি ভালো উপভোগ করছিলেন। এ তো রীতিমতো স্বপ্নপূরণ!

    ‘স্বপ্নপূরণ’ শব্দটিও হয়তো কম হয়ে যাবে মিকির ক্ষেত্রে। গত বছরের শেষে দিকে নিউ সাউথ ওয়েলসের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাক পেয়েছেন। বন্ধুদের সাথে নিয়ে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া বক্সিং ডে টেস্টের খেলাও দেখতে দিয়েছিলেন! স্মিথ, খাজাদের ব্যাটিং দেখে হাততালিও দিয়েছিলেন। তখন কি ভেবেছিলেন মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই তাদের সাথেই ফিল্ডিং করবেন?

    নাহ, মিকি সেটা একেবারেই ভাবেননি, “আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল! যাদের খেলা দেখে এতদিন মুগ্ধ ছিলাম তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করাটা দারুণ এক অনুভূতি!” মুগ্ধ কিন্তু শুধু তিনি একাই হননি, ধারাভাষ্য কক্ষে বসা সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘সার্ফার ফিল্ডার’ ডাকনামটাও জুটে গিয়েছে।

     

    মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য মাঠে নেমে এরই মাঝে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন মিকি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে দর্শকের টুইটার, সবখানেই এখন তাঁর ফিল্ডিংয়ের ভিডিও! তাকে অস্ট্রেলিয়ার 'কাল্ট হিরো' নামেও ডাকছেন অনেকে।

    তবে এতকিছুর মাঝেও মিকি তার আসল লক্ষ্যটা ভুলে যাননি। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ‘বদলি ফিল্ডার’ নয়, মূল দলেই খেলতে চান তিনি। আর অভিষেক সিডনির মাঠে হলে তো কথাই নেই!