কিক অফের আগেঃ শুরুর রোমাঞ্চে আছে রাজনীতিও
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। তবে সেই তুলনায় লুঝনিকি স্টেডিয়ামের রাশিয়া-সৌদি আরব ম্যাচ আলো কাড়ছে কমই। বিশ্বকাপে ফিফা র্যাংকিংয়ের সবশেষ দুই দলের ম্যাচ নিয়ে মাতামাতি কম হওয়াই স্বাভাবিক। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঝলমলে আলোর দেখা নাও মিলতে পারে এই ম্যাচে। তবে দুই দলের লড়াই নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের উৎসাহে ভাটা পড়ছে না একটুও। দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা আবার এই ম্যাচে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। সেটা ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে মতের ঘোর বিরোধ শুরু। রাশিয়ার সমর্থন বাশার আল-আসাদকে, সৌদির সহমর্মিতা সিরিয়ার বৈপ্লবিক জনগণের সাথে। গত বছর আবারও পুতিন এবং সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে সুদিনের আশ্বাস দিলেও এখনও কিছুটা থমথমেই বলা চলে রাশিয়া এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক। শুরুর খেলায় তাই থাকছে কিছুটা রাজনীতিও।
তাহারা বলেন
ফিফা র্যাংকিংয়ে রাশিয়ার অবস্থান নামতে নামতে ৭০ এ গিয়ে ঠেকেছে। নিজ দেশের সমর্থকেরাও হতাশ তাতে। শেষ অনুশীলনে সমর্থকদের দুয়োও শুনতে হয়েছে রাশিয়ান ফুটবলারদের। খেলার মাঠে জবাব দেওয়াটা তাই জরুরীই হয়ে গেছে স্বাগতিকদের জন্য। তবে প্রতিপক্ষ যখন সৌদি আরব তখন জয়ের আশাতেই বুক বেধেছেন রাশিয়ানরা। কোচ স্তানিশ্লাভ চেরচেশভও বিশ্বকাপের আগে দলকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছেন, "মানুষের চিন্তা-ভাবনা আমরা বদলাতে পারব না। আমরা প্রথম দিন থেকেই নিজেদের প্রতিপক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। এটা বিশ্বকাপ, এখানে সবাই নিজের সেরাটা দিতেই আসে। 'দুর্বল' বলে কোনো শব্দই এখানেই নেই।"
প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন তিনি, "প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়াটা খুবই দরকার। এটাই পুরো টুর্নামেন্টের ছন্দ তুলতে সাহায্য করবে। আমরা আমাদের সেরা চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। এখনকার যুগে সমালোচিত হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে প্রতিদিনই অনুশীলনে নিজেদের সেরাটা দিয়ে উন্নতি করে যাওয়া।"
এই ম্যাচ দিয়েই প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে মুখোমুখি হচ্ছে রাশিয়া এবং সৌদি আরব। ১৯৯৩ সালে অবশ্য এক প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল তারা। সেবার ৪-২ গোলে জয় পেয়েছিল সৌদি আরব। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে আজ উদ্বোধনী ম্যাচের আগে সেই সুখস্মৃতিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগিয়ে মাঠে নামবে হুয়ান আন্তোনিও পিজ্জির দল। চিলিকে ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকা জেতানো আর্জেন্টাইন এই কোচ সৌদি আরবের দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র কয়েকদিন আগে। এরপর বেশকিছু প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন, তবে সেভাবে এখনও গুছিয়ে উঠতে পেরেছেন কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পিজ্জি অবশ্য প্রতিপক্ষ কোচের মতো সরাসরি কিছু বলেননি, নিজেদের প্রত্যাশার কথা একটু ঘুরিয়েই বলেছেন তিনি, "আমার খেলোয়াড়েরা জানে তাদের কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা কী। আর এখান থেকে তারা কি পেতে পারে সেটা সম্পর্কেও অবগত তারা। তাই বিশ্বকাপে আমরা কোনো ভয়-ডর ছাড়াই যাচ্ছি।"
ভয়টা আসলে রাশিয়ারই, শঙ্কা সবকিছু হারানোর। রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতবে তাদের কাছে এমন আবদার নেই, তবে নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে না যেতে পারলে সেটা হবে হতাশারই। স্বাগতিক সমর্থকেরা তো এইটুকু আশা দেখতেই পারেন! তবে সাবেক রুশ উইঙ্গার আন্দ্রেই কানচেলকিসের কথা আশার পালে হওয়া যোগাচ্ছে না, এবারের রাশিয়ার স্কোয়াড তার দেখার সবচেয়ে দূর্বল। দলের স্ট্রাইকার আর্টেম জুবাও বাস্তববাদীদের দলেই। ম্যাচের আগে তার কথাতেও একই সুর। তবে দেশের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছেন তিনি। "আমরা সবাই-ই বাস্তববাদী। আমরা বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য রাখি না, কিন্তু আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে অন্তত গ্রুপর্ব পেরুনোর চেষ্টা করব। নিজেদের মাঠে খেলা বলে আমরা কিছুটা লাভবান হব, আর দেশবাসীর থেকে যথার্থ সমর্থন পেলে আমরা ভাল কিছু উপহার দিতে পারব বলেই আমি মনে করি।"
দলের খবর
অন্তত দল বাছাইয়ের দিক দিয়ে দুই কোচের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দু'দলের ২৩-জনের স্কোয়াডের সবাই-ই সম্পূর্ণ ফিট। তবে দুই দলের দুশ্চিন্তার কারণ দুইরকম। ভালো ফিনিশের অভাবে শেষ প্রীতি ম্যাচে জার্মানিকে চমকে দেওয়া হয়নি সৌদি আরবের। আর রাশিয়ার চিন্তা রক্ষণে। তাই জাগোয়েভ-স্মোলোভ-গলোভিনরা জ্বলে উঠলে জয়ের হাসি নিয়েই মাঠ ছাড়ার কথা রাশিয়ার।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
রাশিয়া (৪-১-৪-১): আকিনফেভ; কুদ্রাশভ, ইগ্নাশেভিচ, গ্রানাত, ফার্নান্দেজ; জিরকভ; কুজায়েভ, গলোভিন, সামেদভ, মিরানচুক; স্মোলভ
সৌদি আরব (৪-২-৩-১): আল-মায়ুফ; আল-বুরাক, ওসামা, ওমর, শাহরানী; আতিফ, ফরজ; দাওসারি, জাসাম, শেহরি; মুওয়াল্লাদ
সংখ্যায় সংখ্যায়
নিজেদের সবশেষ ৬ ম্যাচে মাত্র দু'বার জয়ের মুখ দেখেছে সৌদি আরব (৪ হার)। আর শেষ ৯ ম্যাচের ৭টিতেই গোলের দেখা পায়নি তারা। তবে রাশিয়ার রেকর্ডও এর চেয়ে খুব বেশি ভালো না! অক্টোবরের পর থেকে জয়হীন তারা। আর বিশ্বকাপে তো নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচেও জয়হীন রাশিয়া। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রত্যেক স্বাগতিক দলই পার হয়েছে গ্রুপপর্বের খড়্গ। রাশিয়াও না সেই দলে যোগ দেয়!