• কিক অফের আগে
  • " />

     

    কিক অফের আগে : স্পেনের ‘শেষকৃত্যে’ পর্তুগালের উৎসব?

    কিক অফের আগে : স্পেনের ‘শেষকৃত্যে’ পর্তুগালের উৎসব?    

    স্পেনের ‘শেষকৃত্যে’ পর্তুগালের উৎসব?

    স্পেন বনাম পর্তুগাল; গ্রুপ ‘বি’; সোচি; ১৫ (১৬) জুন, রাত ১২ঃ০০টা; টেন ২/৩

    ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বনাম সার্জিও রামোস। বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন বনাম সাবেক ইউরো চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এতকিছুর পরও এখন পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে ‘হাই-ভোল্টেজ’ ম্যাচের উত্তাপটা মাঠের চেয়ে বেশি মাঠের বাইরেই। দু’দিনের মাঝে ‘হুলেন লোপেতেগি ঝড়’ রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছে স্প্যানিশ ক্যাম্পকে। বিশ্বকাপের দু’দিন আগে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরদিনই তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় স্প্যানিশ ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্তের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘণ্টাখানেকের মাঝেই রিয়ালেরই এক কিংবদন্তী ফার্নান্দো হিয়েরোকে বিশ্বকাপের জন্য কোচের দায়িত্ব দেয় ‘লা রোহা’রা। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট থেকে দু’দিনের মাঝে এতকিছুর পর তাই মূল আসরে স্পেন ঠিক কেমন করবে- সেটা আন্দাজ করাই কঠিন। আর প্রতিপক্ষের ‘গৃহযুদ্ধে’ অন্তত মানসিক দিক দিয়ে হলেও কিছুটা এগিয়ে আছে রোনালদোর দল। দল হিসেবে স্পেন যতই পর্তুগালের চেয়ে ভালো মানের হোক না কেন, সেই হিসাব এখন অকেজো হয়ে পড়েছে।

    গতকাল বিশ্বকাপ শুরু হলেও, 'আসল খেলা' আসলে আজ।

    তাহারা বলেন

    ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই গত দু’দিনের ঘটনাচক্র নিয়েই অধিকাংশ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল স্প্যানিশ অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে। কিছুটা হতাশ হলেও রামোসের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দরাজ কণ্ঠের নিচে চাপা পড়ে গেছে সেটা, “হ্যাঁ এটা সত্যি যে লোপেতেগির পুরো ব্যাপারটাই বেশ আকস্মিক ছিল। তার শেখানো ট্যাকটিকস, ফর্মেশনেই আমরা এগুচ্ছিলাম এবং আমাদের ফলাফল তার এবং আমাদের পক্ষে কথা বলে। স্বভাবতই দলের অনেকেই হতাশ এবং বিস্মিত এমন সিদ্ধান্তে। মনে হচ্ছে যেন কারো শেষকৃত্য চলছে। যাই হোক, এসব নিয়ে আমরা এই মুহূর্তে আর মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাদের মূল লক্ষ্য জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করা। আমার চোখে হিয়েরোই তার (লোপেতেগি) সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরি।" অধিনায়কের মতই ম্যাচের দিকেই পুরো নজরটা রাখছেন হিয়েরো, “যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের চলবে না। ছেলেদের আমি বলে দিয়েছি যে এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল আমরা এবং আমাদের সামনে বিশ্বজয়ের এক দারুণ সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। সব ভুলে এখন আমাদের গোটা ধ্যান-জ্ঞান ১৫ জুলাই লুঝনিকিতে ফাইনাল খেলা নিয়েই।"

    মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া এতকিছুর কোনোটিই টলাতে পারবে না ২০১০-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের; এমনটা মনে করেন পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোসও, “স্পেন গত ১০ বছর ধরেই একই ঘরানার ফুটবল খেলে আসছে। কোচের পরিবর্তন তাদের খেলায় তেমন প্রভাব ফেলবে না। পুরো ব্যাপারটাই এখন ইতিহাস। কোচের কারণে স্পেন খর্বশক্তির দল হয়ে গেছে, এমন ভুল করতে যাচ্ছি না আমরা।" কোচের সাথে সুর মিলিয়েছেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার হোয়াও মুতিনিয়ো, “আমার মনে হয় না স্পেনের মানসিকতায় কোনো প্রভাব ফেলবে (কোচের ঘটনা)। তারা এখনও এই টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট। কাল (আজ) বিশ্বকাপের অন্যতম কঠিন মিশনে নামছি আমরা।"

    দলের খবর

    গ্রুপপর্বে নিজেদের সবচেয়ে বড় ম্যাচের আগে পূর্ণশক্তির স্কোয়াডই পাচ্ছেন সান্তোস। আর স্পেনের একমাত্র সংশয় দানি কারভাহালের খেলা নিয়ে। ইনজুরি কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরলেও হয়ত তার জায়গায় তরুণ রাইটব্যাক আলভারো ওদ্রিওজোলাকেই দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তার মূল দায়িত্ব হবে আরেক তরুণ পর্তুগিজ উইঙ্গার গঞ্জালো গুইদেসকে রুখে দেওয়া। বাঁ-প্রান্তে আলবা-বের্নার্দোর লড়াইটাও হবে দেখার মত। আর দু’দলের দুই ‘ডেস্ট্রয়ার’ বুস্কেটস এবং কারভালহোর দক্ষতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছেন রামোস-পেপেরা। ডিয়েগো কস্তা এবং পেপের লড়াইটা সেই রিয়াল-অ্যাটলেটিকোর দিনগুলোর কথাই যেন মনে করিয়ে দেবে আজ। দুজনের একজন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ম্যাচের উত্তাপ বাড়তে পারে আরও।



     

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশঃ

    পর্তুগাল (৪-১-৪-১): প্যাট্রিসিও; পেরেইরা, পেপে, ফন্ট, গুরেরো; কারভালহো; বের্নার্দো, মুতিনিয়ো, মারিও, গুইদেস; রোনালদো

    স্পেন (৪-৩-৩): ডি গেয়া; ওদ্রিওজোলা, পিকে, রামোস, আলবা; বুস্কেটস, ইনিয়েস্তা, থিয়াগো; সিলভা, কস্তা, ইস্কো

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    আজকের আগে ৩৫ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে স্পেন-পর্তুগাল। স্পেনের জয় ১৩টিতে, পর্তুগাল জিতেছে মাত্র ৬টিতে। ২০১০ সালে এই পর্তুগালকে শেষ ১৬-তে বিদায় করেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়েছিল স্পেন। এবারের বাছাইপর্বের সেরা রক্ষণভাগ রামোস-পিকেদের (১০ ম্যাচে ৩ গোল হজম)। তবে স্প্যানিশদের এই রক্ষণভাগকে ভেদ করতে পর্তুগিজদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রোনালদো। ইউরোপের বাছাইপর্বের সবচেয়ে বেশি গোলে সরাসরি অবদান ছিল তার (১৫ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট)। আর নিজেদের শেষ ৯ গ্রুপপর্বের ম্যাচে মাত্র ১ বারই হেরেছে পর্তুগিজরা। রোনালদোদের আরও আশা জাগাচ্ছে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে স্পেনের হতাশাজনক রেকর্ড (১২ ম্যাচে ২ জয়, ৩ ড্র, ৭ হার)।

     

    ফিট সালাহই স্বপ্ন দেখাচ্ছে মিশরকে

    উরুগুয়ে বনাম মিশর; গ্রুপ ‘এ’; ইয়েকাতেরিনবুর্গ; ১৫ জুন, সন্ধ্যা ৬টা; টেন ২/৩

    চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের প্রথমার্ধে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন বিশ্বকাপে তার খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। কিন্তু অলৌকিকভাবে মাত্র সপ্তাহ দুয়েক বাদেই পুরোদমে অনুশীলনে ফিরেছেন মোহাম্মদ সালাহ। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসা মিশরকে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গ্রুপপর্বের খড়গ পেরুনোর আশা দেখাচ্ছেন তিনিই। ২৬তম জন্মদিনেই নামছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে। জয় দিয়ে জন্মদিন এবং ম্যাচটি অবশ্যই স্মরণীয় করে রাখতেই চাইবেন সালাহ।

     

    তাহারা বলেন

    দলের মূল তারকাকে ফিরে পেয়ে স্বভাবতই উছ্বসিত মিশর কোচ হেক্টর কুপার, “আমি প্রায় শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি যে আগামীকাল (আজ) সে (সালাহ) শুরু থেকেই খেলবে। সালাহকে পেয়ে দলের বাকিরাও বেশ অনুপ্রাণিত। খুব কম সময়েই দারুণভাবে সেরে উঠেছে সে। এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা তারকা সালাহ। উরুগুয়ে বেশ কঠিন এক প্রতিপক্ষ। সুয়ারেজ-কাভানিদের ভালমত রুখে দিতে হবে। তবে আশা করি দারুণ কিছুই উপহার দিতে পারব মিশরবাসীকে, যারা ২৮ বছর এই মুহূর্তের অপেক্ষা করেছিলেন।" সালাহ এবং মিশরকে সমীহই করছেন উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজ, “মিশর প্রচন্ড গতিশীল এবং দারুণ একটি দল। তারা যেকোনো সময়েই আমাদের ঝামেলায় ফেলতে পারে। আর সালাহর ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। আশা করি কাল (আজ) ৩ পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে পারব আমরা।" এই বিশ্বকাপের কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন (প্রায় ১ যুগ) একই দলের দায়িত্বে আছেন তাবারেজ।

     

    দলের খবর

    স্বাভাবিকভাবেই সালাহর ফেরাটাই মিশরের জন্য সবচেয়ে ভাল খবর। সেই সাথে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন রামাদান সোভি এবং আলি সাবর। পূর্ণশক্তির দল পাচ্ছেন তাবারেজও। আজ মাঠে নামলেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী ফুটবলারের রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন মিশর গোলরক্ষক এসাম আল-হাদারি (৪৫)।

    সম্ভাব্য মূল একাদশঃ

    মিশর (৪-২-৩-১): আল হাদারি; ফাতি, হেগাজী, সাবর, শাফি; হামেদ, এলনেনি; সালাহ, সাঈদ, ত্রেজেগে; মোহসেন

    উরুগুয়ে (৪-৪-২): মুসলেরা; ভারেলা, গোডিন, হিমেনেজ, ক্যাসেরেস; আরাস্কায়েতা, বেন্টাঙ্কুর, ভেচিনো, নান্দেজ; সুয়ারেজ, কাভানি

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    এর আগে একবারই দেখা হয়েছিল দু’দলের। ২০০৬ সালের সে ম্যাচটা ২-০ গোলে জিতেছিল তাবারেজের উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের মূল আসরে আফ্রিকান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কখনও হারেনি উরুগুয়ে (২ জয়, ১ড্র)। বিশ্বকাপের মূলপর্বে কখনও জয়ের মুখ দেখেনি মিশর।

     

    লড়াইটা যখন জমাট দুই রক্ষণের

    মরক্কো বনাম ইরান; সেন্ট পিটার্সবাগ; ১৫ জুন, রাত ৯ঃ০০টা; টেন ২

    বিশ্বকাপের মূলপর্বে এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। ‘বি’ গ্রুপের পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থাকা এই দু’দলের লড়াইটা হবে রক্ষণ নিয়েই। বাছাইপর্বে একমাত্র দল হিসেবে কোনো গোল হজম না করে রাশিয়া যাত্রা নিশ্চিত করেছেন হার্ভি রেনার্ডের মরক্কো। কম যায়না কার্লোস কুইরোজের ইরানও। এশিয়ার বাছাইপর্বের চ্যাম্পিয়নরা টানা ৯ ম্যাচ ক্লিনশিট রেখে নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের মূল আসরে অংশগ্রহণ।

    স্পেন-পর্তুগাল দিয়ে গড়া গ্রুপে দুই দলের জন্যই জয়ের বাস্তবিক ম্যাচ এটিই। সেজন্যই শুরুটা ভাল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কার্লোস কুইরোজ, “প্রথম ম্যাচটি সবসময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জয় নিয়ে ফিরতে পারলে আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে পৌঁছাবে। কাল জয়ের প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামছি আমরা।" ওদিকে মরক্কো কোচ হার্ভি রেনার্ডও, “নিজের প্রথম বিশ্বকাপে এসেছি আমি। কার্লোস আছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে। কিন্তু আমরা এখানে অংশগ্রহণের জন্য আসিনি। এসেছি জিততে। গ্রুপের অন্য তিন দল র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের ওপরে। কিন্তু আমরা ছেড়ে কথা বলার পাত্র নই। তিন ম্যাচেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে সর্বোচ্চ দিয়ে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানো।"

     

    দলের খবর

    মরক্কোর নাবিল দিরার এবং ইরানের আশকান দেজাগাহর খেলা নিয়ে আছে সংশয়। হাঁটুর ইনজুরিতে ভুগছেন দুজনই।

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    ইরান (৪-২-৩-১): বিরানভান্ড; মোহাম্মদী, চেশমি, খানজাদেহ, রেজাই; সোজাই, হাসাফি; তারেমি, আনসারিফার্দ, জাহানবাখস; আজমুন

    মরক্কো (৪-১-৪-১): মুনির; হাকিমি, বেনাতিয়া, সাইস, বেনুন; এল আহমাদি; জিয়েচ, বুসাফা, বেলহান্দা, আম্রাবাত; বুতাইব

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    বিশ্বকাপের মূল আসরে এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ১৩ ম্যাচে মাত্র ২ জয় পেয়েছে মরক্কো। নিজেদের ইতিহাসে কখনোই নকআউট পর্বে যেতে পারেনি ইরান।