• কিক অফের আগে
  • " />

     

    কিক অফের আগেঃ 'হেক্সা' মিশনের প্রথম পরীক্ষা সুইজারল্যান্ড

    কিক অফের আগেঃ 'হেক্সা' মিশনের প্রথম পরীক্ষা সুইজারল্যান্ড    

    'হেক্সা' মিশনের প্রথম পরীক্ষা সুইজারল্যান্ড

    ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড; গ্রুপ 'ই'; রস্তোভ অ্যারেনা; ১৭(১৮) জুন, রাত ১২টা; টেন ২/৩

    ব্রাজিল, বিশ্বকাপ। শব্দ দুটি এখন শুনলেই চোখের সামনে ভাসে চার বছর আগে বেলো হরিজন্তের সেই ভয়াল রাত। বর্ষীয়ান সমর্থক ক্লোভিস ফার্নান্দেজের রেপ্লিকা বিশ্বকাপ জড়িয়ে কান্নার ছবি এখনও ঘোরে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্লোভিস অন্যলোকে চলে গেলেও এবার ব্রাজিলের সমর্থনে গলা ফাটাবেন তার দুই ছেলে ফ্রাঙ্কো এবং গুস্তাভোর মাঝে। আর মাঠে লড়বে তিতের অধীনে 'নতুন' ব্রাজিল। সুইসদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ রাশিয়ায় 'হেক্সা' মিশনে শুরু করছে 'সেলেসাও'রা। 

    তাহারা বলেনঃ

    স্পেন, আর্জেন্টিনার মত বড় দলগুলো জিততে পারেনি। ধুঁকতে হয়েছে ফ্রান্সকেও। রাশিয়া বিশ্বকাপে 'ফেভারিট'দের এমন বেহাল দশা দেখে তাই কোনো ম্যাচই হালকাভাবে নিচ্ছেন না ব্রাজিল কোচ তিতে, "সুইজারল্যান্ড গত কয়েক বছর ধরেই দারুণ খেলছে। তাদের মূল শক্তি রক্ষণ। প্রচন্ড গোছানো একটা দল তারা। মাঝমাঠের সাথে রক্ষণ এবং আক্রমণ- দু'বিভাগের বোঝাপড়াও দারুণ। আর সেটপিস থেকেও তারা বেশ কার্যকরী। গ্রুপে আমাদের প্রতিওক্ষদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী তারাই। কোনোভাবেই তাদের খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।" প্রীতি ম্যাচগুলোতে গোল করলেও তিতে জানিয়েছেন; এখনও সম্পূর্ণ ফিট নন নেইমার, "অস্ট্রিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করেছে সে। খেলেছেও দারুণ। কিন্তু ওর ইনজুরিটা বেশ গুরুতর ছিল। আর ও যে এত কম সময়ে ফিরে এসেছে, এটাই একটা বিস্ময়। কিন্তু সত্যি বলতে ও এখনও সম্পূর্ণরূপে ফিট নয়।" কোচের সাথে সুইসদের ব্যাপারে একমত লেফটব্যাক মার্সেলো, "আমরা ওদের (সুইজারল্যান্ড) শক্তি, দুর্বলতার ব্যাপারে বেশ ভালমত হোমওয়ার্ক করেছি। প্রত্যেক বিভাগেই ওদের দারুণ কিছু ফুটবলার আছে। এই পর্যায়ে এসে কাউকে খাট করে দেখার সুযোগ নেই। তবে কাল আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।"



     

    তার অধীনে সুইসদের জয়ের দক্ষতা বেড়েছে অনেকগুণ। গত ২ বছরে খেলা ২২ প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছে তারা। আজও তাই ব্রাজিলকে অতিরিক্ত শ্রদ্ধার চেয়ে জয়ের দৃঢ়প্রতিজ্ঞাই ঝরল সুইস কোচ ভ্লাদিমির পেটকোভিচের কণ্ঠে, "প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, আমাদের মূল লক্ষ্য সবসময়ই থাকে ম্যাচ জেতা। কালও এই একই দর্শনে মাঠে নামছি আমরা। সুন্দর খেলে হারের চেয়ে খারাপ খেলে জয় ছিনিয়ে আনাটাই আমার লক্ষ্য।" কোচের সাথে সংবাদ সম্মেলনে আসা অধিনায়ক স্টিফেন লিচস্টেইনারও বলছেন একই কথা, "বাছাইপর্বের রেশটা তারা প্রীতি ম্যাচেও ধরে রেখেছে। হেসুস, কুতিনিয়ো সহ একাধিক দুর্দান্ত ফুটবলার আছে তাদের। তবে আমাদের রক্ষণও বেশ ভাল। আশা করি নেইমারদের দমিয়ে রাখতে পারব"।

    দলের খবরঃ

    নেইমারকে ছাড়া দলের সবাই-ই ফিট আছে ব্রাজিলের। আর সুইসরা দলে পাচ্ছে না উইঙ্গার আদমির মেহমেদীকে। ব্রাজিলের দুর্দান্ত আক্রমণভাগে নেইমার-হেসুসদের দমিয়ে রাখার দায়িত্বটা পড়বে শার-রড্রিগেজদের ওপর। এছাড়া মাঝমাঠে গ্রানিত শাকার মূল লক্ষ্য হবে ব্রাজিলের মাঝমাঠ এবং আক্রমণের মাঝের বোঝাপড়া রুখে দেওয়া। নেইমারের বিপক্ষে ৩৫-বছর বয়সী লিচস্টাইনার কেমন করেন; তা-ই দেখার বিষয়। আর থিয়াগো সিলভাদের মূল লক্ষ্য থাকবে সেফেরোভিচ, শাকিরিদের পকেটবন্দি করা। মার্সেলোর সাথে শাকিরির লড়াইটাও বেশ উপভোগ্যই হবে বলা চলে।

    সম্ভাব্য মূল একাদশঃ

    ব্রাজিল (৪-৩-৩): অ্যালিসন; দানিলো, সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো; কাসেমিরো, কুতিনিয়ো, পাওলিনিয়ো; উইলিয়ান, হেসুস, নেইমার

    সুইজারল্যান্ড (৪-২-৩-১): বুর্কি; লিচস্টেইনার, শার, আকাঙ্কি, রড্রিগেজ; ফ্রলার, শাকা; শাকিরি, জেমাইলি, জুবার; সেফেরোভিচ।

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ

    বিশ্বকাপে দু'দলের শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৫০ সালে, ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল ম্যাচটি। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ১২ গ্রুপপর্বের ম্যাচে অপরাজিত ব্রাজিল। তবে 'হেড টু হেড'-এ 'সেলেসাও'দের ৩ জয়ের বিপরীতে সুইসদের জয় ২টি। নিজেদের শেষ ৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত সুইজারল্যান্ড (২ জয়, ২ ড্র)।

     

    শিরোপা ধরে রাখার মিশনের প্রথম বাধা মেক্সিকো

    জার্মানি বনাম মেক্সিকো; গ্রুপ 'এফ'; লুঝনিকি স্টেডিয়াম; ১৭ জুন, রাত ৯টা; টেন ২/৩

    যোগ করা সময়ে আন্দ্রে শুর্লের ক্রসে মারিও গোটজের সেই গোল। মারাকানা জয়, সাথে গত বছর প্রায় 'বি' টিম নিয়ে কনফেডারেশনস কাপের শিরোপা- স্বাভাবিকভাবে এবারও 'ফেভারিট'দের তালিকায় শুরুর দিকেই আছেন জোয়াকিম লো'র দল। ব্রাজিলের সমান পাঁঁচবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশনে জার্মানদের প্রথম প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, যাদের হারিয়েই গত বছর কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে গিয়েছিল জার্মানরা।

     

    তাহারা বলেনঃ

    চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে চাপটা একটু বেশিই থাকে অন্যদের চেয়ে। কিন্তু এমনটা মানতে নারাজ লো, "ব্রাজিলের শিরোপার কোনোভাবেই আমাদের এবার জয়ের জন্য চাপে ফেলতে পারবে না। আগে কী হয়েছে না হয়েছে সেটা এখন দেখার বিষয় নয়। আমরা যে চাপে আছি সেটা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের চাপ যা সব দলের থাকে। সবাই-ই চায় প্রথম ম্যাচটি জিতে নিতে, যাতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে অনেকগুণ। আমরা আগের বিশ্বকাপগুলোর প্রথম ম্যাচ জিতেছি প্রায় প্রতিবার। কারণ ছেলেদের আত্মবিশ্বাস এবং অনুপ্রেরণা থাকে তুঙ্গে। এবারও এমন কিছুই করতে চাচ্ছি আমরা।" লো'র সাথে একমত উইঙ্গার জুলিয়ান ড্র‍্যাক্সলার, "গত বছর কী হয়েছে সেই স্মৃতি হাতড়ে কোনো লাভ নেই। বিশ্বকাপে যে কোনো দল যে কাউকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মেক্সিকো দলগতভাবে দারুণ। চিচারিতো সহ তাদের বিশ্বমানের ফুটবলার আছে কয়েকজন। আমাদের বেশ সতর্ক থাকা উচিত।"

    বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিওক্ষে মাঠে নামার আগে আশা ছেড়ে দিচ্ছেন না মেক্সিকো কোচ হুয়ান কার্লোস অসোরিও, "জার্মান দলটি তরুণ হতে পারে, কিন্তু তারা বেশ অভিজ্ঞ। প্রায় সবারই সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কনফেডারেশনস কাপ থেকে এই দলটি বেশ আলাদা। গত বছর তারা রক্ষণে ৩ জন নিয়ে খেলেছিল, এবার ৪জন। কিন্তু প্রতি আক্রমণে তাদের নাড়িয়ে দেওয়া যায়। আমাদের চেয়ে শক্তিমত্তায় ঢের এগিয়ে থাকলেও আমার বিশ্বাস, তাদের হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে।" 

     

    দলের খবরঃ

    প্রথম ম্যাচের আগে পূর্ণশক্তির স্কোয়াডই পাচ্ছেন লো এবং অসোরিও। জার্মান আক্রমণভাগের মূল দুই কান্ডারি টিমো ভার্নার এবং মার্কো রয়েসের গতি বেশ ঝামেলায় ফেলতে পারে মেক্সিকোকে। এক্ষেত্রে দুই ফুলব্যাক আয়ালা-সালসিদোর ওপর ভরসা করবে মেক্সিকো। মার্কেজ-হেরেরাদের সাথে ক্রুস-খেদিরার লড়াইটাও হবে দেখার মত। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দিয়ে নিজেদের ফরওয়ার্ডদের কে বেশি সাহায্য করতে পারে; তা-ই দেখার বিষয়। এছাড়া মেক্সিকোর মূল ভরসা চিচারিতোকে আটকানোর দায়িত্ব থাকবে বোয়াটেং-হামেলসের ওপর। মেক্সিকো দুই উইঙ্গার লোজানো-দস সান্তোসও কম যান না। গতি, ড্রিবলিং দিয়ে বিপাকে ফেলতে পারে যেকোনো দলকে। কিমিচ-হেক্টরকে তাই থাকতে হবে সদা সতর্ক।

    সম্ভাব্য মূল একাদশঃ

    জার্মানি (৪-২-৩-১): নয়্যার; কিমিচ, বোয়াটেং, হামেলস, হেক্টর; ক্রুস, খেদিরা; রয়েস, ওজিল, মুলার; ভার্নার

    মেক্সিকো (৪-২-৩-১): ওচোয়া; আয়ালা, মরেনো, মার্কেজ, সালসিদো; জনাথন, গুয়ার্দাদো; দস সান্তোস, ভেলা, লোজানো; চিচারিতো

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ

    ১১ দেখায় জার্মানদের মাত্র ১বার হারাতে পেরেছিল মেক্সিকো, তাও প্রায় ৩ দশক আগে। বিশ্বকাপে এর আগে ৩বার দেখা হয়েছে দু'দলের; তিনবারই জিতেছে 'ডি ম্যানশ্যাফট'রা। ১৯৯০-এর পর থেকে সব বিশ্বকাপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে গেছে জার্মানি, খেলেছে শেষ ৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ১৯৯৪- এর পর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারেনি মেক্সিকো।

     

    প্রথম দেখায় জিতবে কে?

    কোস্টারিকা বনাম সার্বিয়া; গ্রুপ 'ই'; সামারা অ্যারেনা; ১৭ জুন, সন্ধ্যা ৬টা; টেন ২/৩

    গত বারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় রূপকথার জন্ম দিয়েছিল কোস্টারিকা। ইতালি, ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে নিয়ে গড়া গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে গিয়েছিল তারা। কোয়ার্টারে যাত্রা শেষ হলেও ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেই সুখস্মৃতিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগিয়েই রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু করছে তারা।

     

    তাহারা বলেনঃ

    সার্বিয়ার 'প্রেসিং' ফুটবলই তাদের মূল অস্ত্র; এমনটাই মনে করেন কোচ অস্কার রামিরেজ, "বিশ্বকাপে প্রথন ম্যাচটি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সার্বিয়া বেশ শক্তিশালী দল। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার এক মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামে তারা। বিশেষ করে ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।" সার্বিয়া কোচ ম্লাদেন ক্রাস্টাইচও প্রতিপক্ষকে প্রাপ্য সম্মানটাই দিচ্ছেন, "কোস্টারিকা ২০১৪-এর অন্যতম সাফল্যের গল্প। তাদের লড়াকু মানসিকতা আসলেই প্রশংসনীয়। তবে আমরাও ছেড়ে কথা বলব না। ছেলেরা সবাই-ই জানে দলে কার কী ভূমিকা। জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছি আমরা"।

     

    দলের খবরঃ

    ইনজুরির কারণে ম্যাচটি। মিস করবেন কোস্টারিকার রনাল্ড মাতিরাতা। পূর্ণশক্তির একাদশই নামাতে পারবেন ক্রাস্টাইচ।

    সম্ভাব্য মূল একাদশঃ

    কোস্টারিকা (৪-৩-৩): নাভাস; দুয়ার্তে, গঞ্জালেজ, উমানা, গাম্বোয়া; বীর্হেস, তেহেদো, দিয়াজ; রুইজ, বোলানিওস, ক্যাম্পবেল।

    সার্বিয়া (৪-২-৩-১): স্টইকোভিচ; রুকাভিনা, ইভানোভিচ, নাস্তাসিচ, কোলারভ; মাতিচ, মিলিভোয়েভিচ; তাদিচ, মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ, লাজিচ; মিত্রোভিচ

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ

    এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দু'দলের। নিজেদের খেলা ৪ বিশ্বকাপে ২বার নকআউট পর্বে গিয়েছে তারা। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের সাথে অপরাজিত ছিল কোস্টারিকা (পেনাল্টি শুটআউট বাদে)। শেষ ৪ বিশ্বকাপের ৩বারই প্রথম ম্যাচ জিতেছে কোস্টারিকা। ওদিকে নিজেদের শেষ ২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হেরেছে সার্বিয়ানরা। ঐ ২বার গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে তারা।