কিক অফের আগেঃ মিশরের 'বাঁচা-মরার' দিনে ফিরছেন সালাহ
মিশরের 'বাঁচা-মরার' দিনে ফিরছেন সালাহ
রাশিয়া বনাম মিশর; ১৯ জুন, রাত ১২টা; সেইন্ট পিটার্সবুর্গ; গ্রুপ 'এ'; টেন ২/৩
ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও প্রথম ম্যাচে তাকে খেলানোর ঝুঁকি নেননি মিশর কোচ হেক্টর কুপার। ম্যাচের মিনিট দুয়েক বাকি থাকতেও আর্জেন্টাইন এই কোচের 'জুয়া'টাই মনে হচ্ছিল সঠিক। কিন্তু উরুগুয়ের বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তে গোল খেয়ে খালি হাতে ফেরায় পালটে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাশিয়ার বিপক্ষে আজ তাই হারলেই হয়ত বেজে উঠবে সালাহ এবং মিশরের বিদায়ঘণ্টা।নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচের আগে তাই পর্বতসম এক অগ্নিপরীক্ষায় নামছেন 'মিশরীয় মেসি'। সালাহর নৈপুণ্যের ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে মিশরের বিশ্বকাপ ভাগ্য
তাহারা বলেনঃ
প্রথম ম্যাচে দল জিতেছে ৫-০ গোলে। স্বভাবতই কিছুটা ফুরফুরে মেজাজেই আছেন রাশিয়ার কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেশভ। প্রতিপক্ষ যখন মিশর, ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই সালাহকে নিয়েই বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল তাকে। তবে সালাহকে আটকানোর টোটকাটা প্রস্তুতই আছে তার দলে; এমনটাই জানালেন আত্মবিশ্বাসী চেরচেশভ, "সালাহ নিঃসন্দেহে অসাধারণ একজন ফুটবলার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাকে থামানোর সামর্থ্য আমাদের আছে এবং আমরা তা ঠিকই করে দেখাবো। তবে শুধু সালাহকে নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে না, মিশরের অন্যদের ব্যাপারেও আমরা ভালমত প্রস্তুতি নিয়েছি।" চেরিশভ যদি আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিয়ে থাকেন, তাহলে রীতিমত কথার ঝড়ই তুলেছেন প্রথম ম্যাচে দুই গোল করা উইঙ্গার ডেনিস চেরিশেভের বাবা এবং সাবেক রাশিয়ান ফুটবলার দিমিত্রি চেরিশেভ সালাহকে বিশ্বমানের একজন ফুটবলার মানতেই নারাজ, "হ্যাঁ সালাহ গত বছরখানেক বেশ ভাল খেলেছে, কিন্তু সে এখনও বিশ্বসেরা কেউ না। মেসি, রোনালদোদের মতো তো নয়-ই। এবারের আসরের গোল্ডেন বুটের দৌড়ে কখনোই সে শুরুর দিকে থাকবে না। "
প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ায় আজ বলতে গেলে জয়ের বিকল্প নেই মিশরের। তবে 'বাঁচা-মরার' লড়াইয়ে সালাহকে পাওয়ায় কিছুটা হলেও নির্ভার কুপার, "সে শতভাগ ফিট। আজ নিশ্চিতভাবেই শুরু থেকেই খেলবে। সে আমাদের মূল ভরসা। আমার মতে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার সে। একজন ভাল মানুষও বটে। রাশিয়া কেবল সালাহর প্রতি মনোনিবেশ করলে ব্যাপারটা কিন্তু আমাদের জন্যই ভাল। আশা করছি আজ জয় নিয়েই ফিরতে পারব।" কোচের সাথে গলা মিলিয়েছেন মিডফিল্ডার মোহাম্মদ এল নেনি, "তাদের হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। এটা দলের সবাই-ই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছি। তারা নিজেদের মাঠে, নিজ সমর্থকদের সামনে খেলায় কিছুটা হলেও আমরাই চাপে থাকব। তবে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েই এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকার চেষ্টা করব আমরা।"
দলের খবরঃ
রাশিয়ার হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন উইঙ্গার অ্যালান জাগোয়েভ। এছাড়া সবাই-আছেন ফিট। সালাহ ফেরায় পূর্ণশক্তির একাদশই নামাতে পারবেন কুপার।
সম্ভাব্য মূল একাদশঃ
রাশিয়া (৪-২-৩-১): আকিনফেভ; ফার্নান্দেজ, ইগ্নাশেভিচ, কুতেপভ, জিরকভ; গাজিন্সকি, জবনিন; সামেদভ, চেরিশেভ, গোলোভিন; স্মোলভ
মিশর (৪-২-৩-১): এল শেনাউই; ইব্রাহীম, গাবর, হেগাজী, শাফি; এলনেনি, মোর্সি; সালাহ, আল সাঈদ, ত্রেজেগে; মোহসেন
সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ
এবারই প্রথম একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে দু'দল। শেষ তিন বিশ্বকাপের কোনোটিতেই পরের রাউন্ডে যেতে পারেননি রাশিয়া। বিশ্বকাপের মূলপর্বে কখনও জয়ের মুখ দেখেনি মিশর। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ৩ ম্যাচে গোলও পায়নি সালাহরা।
মানে না লেভানডফস্কি?
পোল্যান্ড বনাম সেনেগাল; ১৯ জুন, রাত ৯টা; গ্রুপ 'এইচ'; স্পার্টাক; টেন ২/৩
২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'-এর ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় রূপকথার ১৬ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের মূল আসরে সেনেগাল। যেকোনো বিশ্বকাপ (পুরুষ, মহিলা, বিচ ফুটবল)- কোনোবারই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ যায়নি তারা। সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখার মিশনেই আজ মাঠে নামছে তেরেঙ্গার সিংহরা। প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড, রবার্ট লেভানডফস্কিতে সওয়ার হয়ে যারা স্বপ্ন দেখছে দারুণ কিছু করার।
তাহারা বলেনঃ
১৬ বছর আগে রূপকথার দলটির অধিনায়ক ছিলেন তিনিই। সেনেগালে ফিরেছে বিশ্বকাপে, ফিরেছেন তিনিও। কিন্তু এবার কোচ হয়ে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে স্বভাবতই কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন সেনেগাল কোচ আলিউ সিসে, "সেবার (২০০২ বিশ্বকাপ) আমরা প্রথম ম্যাচেই ফ্রান্সকে হারিয়েছিলাম। বিশ্বকাপ আমার কাছে একেবারেই অন্যরকম কিছু, যার কোনো তুলনা নেই। তবে স্মৃতিকাতর হতে এখানে আসিনি আমরা। এসেছি নিজেদের প্রমাণ করতে। সেনেগালের এই প্রজন্মটা দারুণ। অনেকে মনে করে, আমরা পুরোপুরি সাদিওর (মানে) ওপর নির্ভরশীল। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে এই ধারণা ভাঙ্গতে চাই আমরা। অবশ্যই সে আমাদের সেরা ফুটবলার। কিন্তু আমরা দলগতভাবেও বেশ কার্যকরী। এই বিশ্বকাপেই আশা করি এটি প্রমাণ করে ছাড়বো।"
সিসের মত একই সমস্যায়ই পড়েছেন পোল্যান্ড কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা। এই বিশ্বকাপ দিয়েই লেভানডফস্কি নির্ভর দল পোল্যান্ড- এই ধারণা ভাঙ্গতে চান তিনি, "ইউরোপের বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা রবার্ট। অভিষেকের পর থেকেই সে আমাদের সেরা ফুটবলার। কিন্তু আমাদের দল কোনোভাবেই কেবল ওর ওপর নির্ভরশীল নয়। সে আমাদের মূল ভরসা এবং অধিনায়ক। 'ওয়ান ম্যান টিম' বললে রবার্টের ওপর একটা মানসিক চাপও সৃষ্টি হয়, যেটা আমরা কখনোই চাইবো না। কামিল, জ্যাকবরাও বিশ্বমানের ফুটবলার। দলগত ঐক্যটাও আমাদের দারুণ। তবে আমাদের গ্রুপটা বেশ কঠিন। সবাই-ই পরের রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। আশা করি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে যেতে পারব।"
দলের খবরঃ
পোল্যন্ডের হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন সেন্টারব্যাক কামিল গ্লিক। কাঁধের ইনজুরি কাটিয়ে এখনও শতভাগ ফিট নন তিনি। সেনেগালের হয়ে থাকছেন না না লেফটব্যাক সালিউ সিসে।
সম্ভাব্য মূল একাদশঃ
পোল্যান্ড (৪-২-৩-১): শেজনি; পিজচেক, পাজদান, বেদনারেক, রিবাস; গোরালস্কি, ক্রিচোউইয়াক; ব্লাশিকওস্কি, জিয়েলিন্সকি, গ্রোশিকি; লেভানডফস্কি
সেনেগাল (৪-৩-৩): এন'দিয়ায়ে; গাসামা, এম্বোজি, কুলিবালি, সাবালি; এন'দিয়ায়ে, কুইয়াতে, গাই; বালদে, নিয়াং, মানে
সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ
বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দু'দলের। আফ্রিকান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৩ ম্যাচে অপরাজিত আছে পোল্যান্ড। ১২ বছর পর বিশ্বকাপের মূলপর্বে ফিরেছে পোলিশরা। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ৮ ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছে তারা। বিশ্বকাপের মূলপর্বের নিজেদের প্রথম ম্যাচে রেকর্ডটা সুবিধার না নাওয়ালকার দলের, ৭ ম্যাচে জয় এসেছে মাত্র ১টিতে। শেষ যেবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলেছিল সেনেগাল, অপরাজিত থেকেই কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল তেরেঙ্গার সিংহরা।
চার বছর আগের রূপকথাই অনুপ্রেরণা কলম্বিয়ার
কলম্বিয়া বনাম জাপান; ১৯ জুন, সন্ধ্যা ৬টা; সারানস্ক; গ্রুপ 'এইচ'; টেন ২/৩
চার বছর আগের বিশ্বকাপে হুট করে তাদের খেলা দেখলে মনে হত, যেন কলম্বিয়া নয়; খেলছে ব্রাজিলই। জার্সিতে সাদৃশ্যের সাথে ব্রাজিলের মতই সুন্দর এবং আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গিয়েছিল হোসে পেকারম্যানের দল। ব্রাজিলের কাছেই শেষ আটে হারের পর হামেস রড্রিগেজের সেই কান্না এখনও নাড়া দেয় ফুটবল অনুরাগীদের। চার বছর পর আবারও বিশ্বকাপ, এবারও মূলপর্বে দারুণ কিছু উপহার দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামছে কলম্বিয়ানরা।
তাহারা বলেনঃ
আগেরবারের সাফল্যের পর এবারও কলম্বিয়ার হটসিটে আছেন আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারম্যানই। এই জাপানকে হারিয়েই ২০১৪-তে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছিল কলম্বিয়া। তবে পুরনো স্মৃতি আঁকড়ে স্মৃতিকাতর হচ্ছেন না পেকারম্যান, "ব্রাজিলে যা হয়েছে তার পর দু'দলেই অনেক পরিবর্তন এসেছে। জাপান এখন আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের দারুণ মিশেল তাদের সাথে। তবে বাছাইপর্বে প্রমাণ করেছি, যে কাউকেই হারানোর সামর্থ্য রাখি আমরা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে যাওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য।"
বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে হঠাৎই দলের দায়িত্ব পেয়ে যান জাপানের বর্তমান কোচ আকিরা নিশিনো। ম্যাচের আগেরদিনই হঠাৎ খবর পেলেন, তার প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে ৩ জন, আহত হয়েছে শতাধিক। ম্যাচের আগে তার দেশের ভয়াবহ অবস্থায়ই উদ্বিগ্ন ছিলেন নিশিনো, "এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ছেলেরা বেশ চিন্তিত। তবে আমরা ম্যাচ নিয়েই ভাবছি আজ। কলম্বিয়া অন্ত্যন্ত শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষ। কিন্তু এই বিশ্বকাপে অন্তত ফেভারিট বলে কিছু নেই। আর আমরা ফেভারিট হতেও চাই না কোনো ম্যাচের। প্রত্যেক ম্যাচ হিসেবে এগিয়েই পরের রাউন্ড বা তারও সামনের পথ পাড়ি দিতে চাই।"
দলের খবরঃ
ম্যাচের মাত্র একদিন আগে বোমাটা ফাটিয়েছেন কলম্বিয়া দলের চিকিৎসকেরা। আজ জাপানের বিপক্ষে ইনজুরির কারণে না-ও খেলতে পারেন কলম্বিয়ার মূল ভরসা হামেস। একই কারণে জাপানের হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন স্ট্রাইকার শিনজো ওকাঝাকি।
সম্ভাব্য মূল একাদশঃ
জাপান (৪-২-৩-১): কাওয়াশিমা; সাকাই, ইয়োশিদা, মাকিনো, নাগাতোমো; হাসিবি, ইয়ামাগুচি; হারাগুচি, কাগাওয়া, হোন্ডা; ওসাকো
কলম্বিয়া (৪-২-৩-১): ওসপিনা; আরিয়াস, সানচেজ, মিনা, ফাব্রা; সানচেজ, উরিবে; কুয়াদ্রাদো, হামেস, কার্দোনা; ফালকাও
সংখ্যায় সংখ্যায়ঃ
জাপানের বিপক্ষে কখনোই হারেনি কলম্বিয়া (২ জয়, ১ ড্র)। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ৪ ম্যাচে অপরাজিত কলম্বিয়া (১ ড্র, ৩ হার)। ২০১৪ সালে গ্রুপপর্বেই দেখা হয়েছিল দু'দলের। সাবেক স্ট্রাইকার জ্যাকসন মার্টিনেজের জোড়া গোলে ৪-১ গোলের রেকর্ড পেয়েছিল জাপান।