কিক অফের আগে : গ্রুপপর্বেই পোল্যান্ড-কলম্বিয়া 'ফাইনাল'?
গ্রুপপর্বেই পোল্যান্ড-কলম্বিয়া 'ফাইনাল'?
পোল্যান্ড বনাম কলম্বিয়া; গ্রুপ ‘এইচ’; ২৪(২৫) জুন রাত ১২টা; কাজান; টেন ২/৩
প্রথম ম্যাচে হেরেছে দু’দলই। বিশ্বকাপের আগে ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলতে যাওয়ার জন্য পোল্যান্ড এবং কলম্বিয়ার পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু গ্রুপে নিজেদের ২য় ম্যাচের আগেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের। আজও জিততে না পারলে শেষ ষোলর আশার প্রদীপটা হয়ত জ্বলবে, তবে তা-ও থাকবে নিভু নিভু অবস্থায়।
তাহারা বলেন
প্রথম ম্যাচ হেরে আত্মবিশ্বাসে টান পড়েছে কলম্বিয়ার। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজেই স্বীকার করেছেন কোচ হোসে পেকারম্যান, “বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হেরে ঘুরে দাঁড়ানোটা বেশ কষ্টকর। জাপানের বিপক্ষে লাল কার্ডটা না পেলে হয়ত ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত। তবে অতীত নিয়ে এখন আর আমরা ভাবছি না। আজকের ম্যাচের আগে অবশ্যই আমাদের পুরনো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, রাশিয়া আসার সময় যেটি আমাদের সঙ্গী ছিল। সবাইকে এক হয়ে দেশের জন্য লড়তে হবে একসাথে।”
প্রথম ম্যাচে সেনেগালের কাছে হারটা কিছুটা অপ্রত্যাশিতই ছিল, চাপা ক্ষোভটাও যায়নি পোল্যান্ডের। সেই জেদটাই আজ অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস পোল্যান্ড কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকার, “প্রথম ম্যাচের হারটা নিয়ে আমরা এখনও বেশি ক্ষুব্ধও। এই রাগটাই আমাদের অনুপ্রেরণা। এই ক্ষোভের কারণে ছেলেদের মাঝে জয়ের ভূত ভর করেছে যেন। আমরা কঠিন এবং দারুণ এক ম্যাচ প্রত্যাশা করছি কলম্বিয়ার থেকে। তবে এটুকু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কাল আমরাই জিতব।”
দলের খবর
প্রথম ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় পোল্যান্ডের বিপক্ষে থাকছেন না কলম্বিয়ার মিডফিল্ডার কার্লোস সানচেজ। অনুশীলনে ফিরলেও পোল্যান্ডের ডিফেন্ডার কামিল গ্লিকের খেলা নিয়ে আছে যথেষ্ট সংশয়। দু'দলই খেলছে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। মূল পোলিশ অস্ত্র লেভানডফস্কিকে আটকানোর দায়িত্বটা থাকবে কলম্বিয়ার অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান জাপাতার ওপর। বায়ার্নের স্ট্রাইকারকে আটকে দিতে পারলে পোল্যান্ডের আক্রমণভাগ মিইয়ে যাবে অনেকটাই। দু'দলের দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জুটির ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। প্রথম ম্যাচে সেনেগালের আক্রমণ রুখে দিয়ে গোলও করেছিলেন ক্রিচোউইয়াক। 'সেটপিস'-এ তাকে কড়া মার্কিংয়েই রাখতে হবে কলম্বিয়াকে। সানচেজের বদলে কাল কলম্বিয়ার মাঝমাঠে নামার সম্ভাবনা বেশি আগিলারের। জাপাতা-মুরিয়কে রক্ষণে সাহায্য করে হামেস-ফালকাওদের বল যোগানের কাজটাও করতে হবে তাকে, সঙ্গে থাকবেন আরেক মিডফিল্ডার জেফারসন লের্মা। ক্লাবে দীর্ঘদিন একসাথে খেলায় হামেস-ফালকাওয়ের বোঝাপড়াটাও দারুণ। তাদের কড়া মার্কিংয়ে রাখতে পারলে কলম্বিয়ার আক্রমণকেও নিরস্ত্র করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দুই সেন্টারব্যাক পাজদান এবং চিওনেকের দায়িত্ব থাকবে এই জুটির বোঝাপড়া রুখে দেওয়া।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
পোল্যান্ড (৪-২-৩-১) শেজনি; পিজচেক, পাজদান, চিওনেক, রিবাস; ক্রিচোউইয়াক, লিনেত্তি; মিলিক, জিয়েলিন্সকি, গ্রোশিকি; লেভানডফস্কি
কলম্বিয়া (৪-২-৩-১) ওসপিনা; আরিয়াস, জাপাতা, মুরিয়ো, মোহিকা; আগিলার, লের্মা; কুয়াদ্রাদো, রড্রিগেজ, কুইন্তেরো; ফালকাও
সংখ্যায় সংখ্যায়
- ২০০৬ সালে এক প্রীতি ম্যাচ খেললেও এবারই প্রথম প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে পোল্যান্ড এবং কলম্বিয়া।
- ইউরোপের দলগুলোর বিপক্ষে বিশ্বকাপে খেলা ৯ ম্যাচের মাত্র ২টিতে জয় পেয়েছে কলম্বিয়া (হার ৫টি)।
- বিশ্বকাপে শেষ ৯ ম্যাচের ৭টিতেই হেরেছে পোল্যান্ড।
- বিশ্বকাপে খেলা ১৯ ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল করেছে কলম্বিয়া।
আজই শেষ ষোল নিশ্চিত করতে পারে ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ড বনাম পানামা; গ্রুপ ‘জি’; ২৪ জুন, সন্ধ্যা ৬টা; নিঝনি নভগোরদ; টেন ২/৩
প্রথম ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে হ্যারি কেইনের অতিরিক্ত সময়ের গোলে জয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ঠিকই ৩ পয়েন্ট পেয়েছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। আজ পানামার বিপক্ষে জয় পেলেই শেষ ষোল নিশ্চিত ‘থ্রি লায়ন্স’দের। বেলজিয়ামের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচই তখন ঠিক করবে, কে হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং রানার-আপে।
তাহারা বলেন
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে পানামা। প্রথম ম্যাচও হেরেছে বড় ব্যবধানেই। তবে তাদের বিপক্ষে ঝুঁকি নিতে একেবারেই নারাজ সাউথগেট, “এই টুর্নামেন্টে প্রত্যেক বড় দলকে ঘাম ঝড়িয়েই জিততে হয়েছে। এমনকি তিউনিসিয়ার বিপক্ষে আমাদেরও একই অবস্থা হয়েছে। তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ভেবে আমরা ম্যাচটি যদি হালকাভাবে নেই, তাহলে বড় বোকামিই হবে। এমনটা আমরা কখনোই করব না। প্রতিপক্ষকে প্রাপ্য সম্মানটাই দিচ্ছি আমরা। আশা করছি আগামীকাল ভাল খেলেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করব। আমরা সবাইকে দেখাতে চাই যে ইংল্যান্ড গতানুগতিক ছাড়াও অন্য ধারার ফুটবলেও সমান পারদর্শী।” কোচের সাথে গলা মিলিয়েছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন, “আত্মতুষ্টিতে ভোগার প্রশ্নই আসে না। পানামা নিজেদের প্রমাণ করেই বিশ্বকাপে এসেছে। তবে হ্যাঁ, আমাদের সামর্থ্যের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আছে দলের। সমর্থকদের নিরাশ করব না আমরা।”
প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম নয়, বরং ইংল্যান্ডকেই এই গ্রুপের ‘ফেভারিট’ মানছেন পানামা কোচ হার্নান দারিও গোমেজ, “তারা এই গ্রুপের সেরা দল। আগামীকালের ম্যাচটিই গ্রুপপর্বে আমাদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। হয় আমরা প্রথম ম্যাচের ব্যবধানে হারব, বা তার চেয়েও বেশি গোলে। ইংল্যান্ড এবার অনেক দূর যাবে বলেই আমার প্রত্যাশা।”
দলের খবর
প্রথম ম্যাচের ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরলেও নিশ্চিত নয় মিডফিল্ডার ড্যালে আলির খেলা। সামনের কথা চিন্তা করেই হয়ত আলিকে নামানোর ঝুঁকিটা নেবেন না সাউথগেট। তার জায়গায় নামতে পারেন আরেক তরুণ মিডফিল্ডার রুবেন লফটাস-চিক। নিজেরই ঘোষণা করা সবচেয়ে কঠিন ম্যাচের আগে পূর্ণ স্কোয়াডই পাচ্ছেন গোমেজ।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
ইংল্যান্ড (৩-৪-৩) পিকফোর্ড; স্টোনস, ম্যাগুইয়ার, ওয়াকার; ট্রিপিয়ের, লিনগার্ড, ডায়ার, লফটাস-চিক, ইয়ং; রাশফোর্ড, কেইন, ভার্ডি
পানামা (৪-৫-১) পেনেদো; মুরিও, এস্কোবার, তোরেস, ডেভিস; গোমেজ, গোদোয়, কুপার, দিয়াজ, বার্সেনাস; তেহেদা
সংখ্যায় সংখ্যায়
- এবারই প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।
- বিশ্বকাপে কনক্যাকাফের দলগুলোর বিপক্ষে খেলা ৪ ম্যাচের কোনোটিই হারেনি ইংল্যান্ড।
- ২০০৬-এর পর বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ জেতেনি ‘থ্রি লায়ন্স’।
দুই 'ডার্ক হর্স'-এর লড়াইটা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার
জাপান বনাম সেনেগাল; গ্রুপ ‘এইচ’; ২৪ জুন, রাত ৯টা; ইয়েকাতেরিনবুর্গ; টেন ২/৩
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘ফেভারিট’ ছিল না কোনো দলই। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপ যে অনিশ্চয়তার এক অপূর্ব নিদর্শন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন! সেই নিদর্শনের রঙটা আরও বর্ণীল করে দিয়েছে কলম্বিয়ার বিপক্ষে জাপানের এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেনেগালের জয়। খাতা-কলমে হয়ত প্রথম ম্যাচের দুই প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল তারা, কিন্তু আজ গ্রুপের শীর্ষ দুই দল হয়েই দ্বিতীয়বার মাঠে নামছে জাপান এবং সেনেগাল। আজ জিতলেই শেষ ষোলর পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে- এমন সমীকরণেরই সামনে দাঁড়িয়ে দু’দল।
তাহারা বলেন
টুর্নামেন্টের আগে সেনেগাল সম্পর্কিত যেকোনো আলোচনায়ই তার নামটা আসত সবার আগে। কিন্তু জাপান কোচ আকিরা নিশিনোর মতে, সেনেগালের মূল ভরসা সাদিও মানেকে আটকানো অসম্ভব নয়, “অবশ্যই মানে একজন দুর্দান্ত ফুটবলার। লিভারপুল এবং সেনেগালের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ সে। তবে তাকে আটকালেই সেনেগাল থেমে যাবে- এই ধারণাটি প্রথম ম্যাচেই ভুল প্রমাণ করেছে তারা। অবশ্যই তাকে রুখে দেওয়ার ছক সাজাবো আমরা। তবে সাকো, কুইয়াতেদের ব্যাপারেও সমান সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। প্রথম ম্যাচের কথা আমরা ভুলে গেছি এরই মাঝে। আজকের জয়ই আমাদের মূল চিন্তা।”
এর আগে কোনো দলেরই হেড কোচ ছিলেন না। তাই ২০০২ বিশ্বকাপের রূপকথার সেনেগালের অধিনায়ক আলিউ সিসেকে যখন মূল দলের দায়িত্ব দেওয়া হল, তখন কপাল কুঁচকেছিলেন অনেকেই। তবে কোচ হিসেবে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই পোল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছেন সিসে, “দায়িত্ব নেওয়ার সময় অনেকেই আমাকে বিদ্রুপ করেছিলেন। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নিজের এবং দলের ওপর। প্রথম ম্যাচ জিতে আমরা নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছি। বিশ্ব আমাদের গর্জন শুনেছে। আমরা ২০০২-এর দলটার মত বা তার চেয়েও ভাল করতে চাই। আমাদের দলে অভিজ্ঞতার কোনো অভাব নেই। প্রায় সবাই বড় দলে খেলছে। এই অভিজ্ঞতাই আমাদের মূল শক্তি।”
দলের খবর
দু’দলের সবাই সম্পূর্ণ ফিট। ইনজুরির কোনো ঝামেলা নেই। প্রথম ম্যাচে জাপানের গোলদাতা ইয়ুইয়ু ওসাকো দিন দুয়েক আগে অনুশীলন মিস করলেও তিনি খেলছেন- এমনটা নিশ্চিত করেছেন নিশিনো।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
জাপান (৪-৫-১) কাওয়াশিমা; সাকাই, ইয়োশিদা, শোজি, নাগাতোমো; শিবাসাকি, হাসিবি, হারাগুচি, কাগাওয়া, ইনুই; ওসাকো।
সেনেগাল (৪-২-৩-১) চিক এন’দিয়াই; ওয়াগ, সানে, কুলিবালি, সাবালি, সার; গায়, আলফ্রেড এন’দিয়াই; সানে, সার, দিউফ; নিয়াং।
সংখ্যায় সংখ্যায়
- এর আগে তিনবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে জাপান এবং সেনেগাল, দু’বার জিতেছে তেরেঙ্গার সিংহরা, অন্যটি ড্র।
- আফ্রিকার দলগুলোর বিপক্ষে বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচের ২ টিতেই জিতেছে জাপান।
- বিশ্বকাপের ইতিহাসে কখনোই এশিয়ার কোনো দল নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জেতেনি।