কিক অফের আগে: আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ যখন আর্জেন্টিনা নিজেই
আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনাই
নাইজেরিয়া-আর্জেন্টিনা, গ্রুপ 'ডি' রাত ১২টা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, টেন ২
বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত আর্জেন্টিনার গল্পটা হতাশারই। সেই গল্পটা রঙিন হয়ে যেতে পারে একটা ম্যাচ জিতলেই। ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের সমীকরণের ওপরও নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার ভাগ্য। তবে আইসল্যান্ড যদি জিতে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি ব্যবধানে জিততে হবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
এক অর্থে কাজটা সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু আর্জেন্টিনার আগের দুই ম্যাচ সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে না মোটেই। আর বিশ্বকাপ চলাকালেই দলের টালমাটাল অবস্থাও স্বস্তি যোগাতে পারছে না তাদের। দলের করুণ অবস্থার দায় অধিনায়ক লিওনেল মেসিরও। গত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের পর এখনও গোলের দেখা পাননি। মাঠের খেলাতেও দেখা মিলছে না স্বভাবসুলভ মেসির। নাইজেরিয়াকে হারাতে হলে ঘুরে ফিরে সেই মেসিকেই করতে হবে অবিশ্বাস্য কিছু।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোচ হোর্হে সাম্পাওলিই দলের কৌশল ঠিক করবেন কি না সেটা নিয়েই আছে সন্দেহ। তবে সেটা সাম্পাওলির সিদ্ধান্তই হোক বা অন্য কারও, আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক পজিশনে বদল আসছে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। ফ্রাঙ্কো আর্মানি নাকি নাহুয়েল গুজমান, কে নামবেন- সেটা এখনও অজানাই। মিডফিল্ডেও পরিবর্তনটা দরকার।
নাইজেরিয়া আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ম্যাচ অবশ্য নিয়মিত ঘটনা। যে ছয়বার বিশ্বকাপে এসেছে নাইজেরিয়া, এই নিয়ে তার ৫ বারই আর্জেন্টিনার গ্রুপে তারা। আগের ৪ বারই হারলেও এবারের মতো ভঙ্গুর আর্জেন্টিনাকে কখনই পায়নি নাইজেরিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে এটাই তাই তাদের সেরা সুযোগ।
আর্জেন্টিনার হাই ডিফেন্সিভ লাইনের বিপরীতে খুবই কার্যকর হতে পারে নাইজেরিয়ার কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল। আগের দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষের কৌশলের কাছে নত হয়েছে আর্জেন্টিনা। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে নাকি অবশেষে আর্জেন্টিনা তাদের নিজেদের খেলটা খেলতে পারবে?
আর্জেন্টিনা বা নাইজেরিয়ার খেলা ফল যেটাই হোক, দুই দলকেই তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের আরেক ম্যাচের ফলের ওপর। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় দল নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রোয়েশিয়া কোচ ডালিভ। দলের গুরুত্বপুর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি নাইজেরিয়া অধিনায়ক জন ওবি মিকেল। ক্রোয়েশিয়াকে খেলোয়াড়সুলভ আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি!
দলের খরব (সম্ভাব্য একাদশ)
নাইজেরিয়াঃ উজহু, অমেরুও, একং, বালোগান, এবুয়েহি, উইলফ্রেড এনদিদি, ওবি মিকেল, এতেবো, মোসেস, ইহেনাচো, ইহেনাচো, মুসা
আর্জেন্টিনাঃ আর্মানি, সালভিও, মের্কাদো অটামেন্ডি, টালিয়াফিকো, বানেগা, মাসচেরানো, পেরেজ, ডি মারিয়া, হিগুয়াইন, মেসি
সংখ্যায় সংখ্যায়
বিশ্বকাপে এর আগে ৪ বার মুখোমুখি হয়েছিল দুইদল। প্রতিবারই আর্জেন্টিনা জিতেছে। তবে জয়ের ব্যবধান ছিল এক গোলে।
গত নভেম্বরে রাশিয়াতেই প্রীতি ম্যাচে নাইজেরিয়ার কাছে অপদস্থ হতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ৪-২ গোলে হেরেছিল হোর্হে সাম্পাওলির দল।
‘দ্বিতীয় সারির দল’ নিয়েই আইসল্যান্ডের মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া
আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া, গ্রুপ 'ডি', রাত ১২টা, রোস্তভ অ্যারিনা, টেন ২
লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচদের ছাড়াই দল নামাবেন ডালিচ। ক্রোয়েশিয়া কোচ নামাচ্ছেন না নিয়মিত গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচকেও। নতুন এক ক্রোয়েশিয়াকেই পাচ্ছে আইসল্যান্ড। ভাইকিংসরা আশা দেখতেই পারে! গত ইউরোতেও গ্রুপপর্ব পেরিয়েছিল তারা। অন্য ম্যাচের ফল বদলে দিতে পারে তাদের সমীকরণও। নাইজেরিয়া জিতে গেলে তাদের চেয়ে বড় ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে হবে। আর আর্জেন্টিনার জিতে গেলে সেই একই ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলেও প্রথমবার বিশ্বকাপে এসেই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া হবে আইসল্যান্ডের।
দলের খবর (সম্ভাব্য একাদশ)
আইসল্যান্ড
হালডারসন, সেভারসন, আর্নাসন, র্যাগনার সিগুর্ডসন, ম্যাগনাসন, গানারসন, হালফ্রেডসন, গুডমুন্ডসন, গিলফি সিগুর্ডসন, বিয়ার্নাসন, ফিনবোগাসন
ক্রোয়েশিয়া
লভরে কালিনিচ, জেদভা, করলুকা, ভিদা, পিভারিচ, বাদেল, কোভাসিচ, ব্রাদারিচ, পিয়াজা, ক্রামারিচ, পেরিসিচ
সংখ্যায় সংখ্যায়
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্লে অফ খেলেছিল দুই দল। প্রথম লেগ দশ জনের দল নিয়েও গোলশূন্য ড্র করলেও, পরের লেগে জাগরেবে ২-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপে যাওয়া হয়নি আইসল্যান্ডের।
২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে একই গ্রুপে ছিল আইসল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়াটোদের প্লে-অফে ঠেলে দিয়ে সরাসরি এই গ্রুপ থেকে বিশ্বকাপে বাছাই করেছে আইসল্যান্ড। দুই লেগের ম্যাচে দুই দলই জিতেছিল নিজেদের হোম ম্যাচটা।
হার এড়ালেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স
ফ্রান্স বনাম ডেনমার্ক; গ্রুপ ‘সি’; ২৬ জুন, রাত ৮টা; লুঝনিকি স্টেডিয়াম; টেন ২/৩
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অনেকের চোখেই ‘ফেভারিট’ ছিল তারা। গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতলেও এখনও ঠিক বিশ্বকাপের দাবিদার একটি দলের মত খেলতে পারেনি ফ্রান্স। অস্ট্রেলিয়া, পেরুকে হারালেও সমর্থকদের মন ভরাতে পারেননি এমবাপ্পে-গ্রিযমানরা। আজ ডেনমার্কের বিপক্ষে না হারলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলতে যাবে দিদিয়ের দেশমের দল। ফ্রান্সের মত হার এড়ালেই নিশ্চিত হবে ডেনমার্কের পরের রাউন্ডে যাত্রা।
পরের রাউন্ড নিশ্চিত, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। তবে এরপরও আজ ডেনমার্ককে কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ দেশম, “শেষ ষোল নিশ্চিত হয়েছে বলে এই ম্যাচ আমরা হালকাভাবে নেব- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ডেনমার্কের বিপক্ষে জয়ের জন্যই খেলব আমরা। কোচিং ক্যারিয়ারে কোনোদিন দলকে ড্র করার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামাইনি। এবং আমি নিশ্চিত তারাও (ডেনমার্ক) তা-ই করবে।” বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফ্রান্সকে ‘নিতান্তই সাধারণ এক দল’ বলেছিলেন ডেনিশ কোচ আগা হারিডা। আজকের ম্যাচের আগে স্বভাবতই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হল তাকে, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। যার যা ইচ্ছা সে সেটা বলতেই পারে। এর মানে এই না যে সেটাই সত্য। তবে তার (হারিডা) এমনটা বলা উচিত হয়নি। ফুটবলাররাও এ ব্যাপারে অবগত। তবে এসব নিয়ে আমরা একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছি না।” গতকালের সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎই এবার নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলার কথা বলে সবাইকেই কিছুটা চমকে দিয়েছিলেন পল পগবা। তবে দেশমের মতে, পগবার সময় ফুরিয়ে যায়নি এখনই, “ওর বয়স তো মাত্র ২৫। কাতার বিশ্বকাপের সময় হবে ২৯। ফ্রান্সের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার সে। আমার মনে হয় না এটা ওর শেষ বিশ্বকাপ।”
দেশমের মতই প্রতিপক্ষকে এক চুল ছাড় দিতে নারাজ হারিডা, “আমাদের পরের রাউন্ডে যাওয়াটা নিশ্চিত নয় এখনও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জেতা উচিত ছিল। অনেকবার মাঝমাঠে বল হারিয়েছি আমরা। আক্রমণভাগেও বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল চোখে পড়ার মত। আশা করি কাল ফ্রান্সের বিপক্ষে এসবের পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা জয়ের জন্যই খেলব, ড্র করার জন্য নয়।”
দলের খবর
ইনজুরির কারণে ফ্রান্সের হয়ে আজ থাকছেন না ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি। তবে শেষ ষোল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় একাধিক সূত্রের মতে মূল একাদশে একঝাঁক পরিবর্তন আনবেন দিদিয়ের দেশম। এমবাপ্পে, মাতুইদি, পগবাদের বদলে ফেকির, এন’জঞ্জি এবং ডেম্বেলের নামার সম্ভাবনা প্রবল। ইনজুরির কারণে ডেনিশদের হয়ে থাকছেন না মিডফিল্ডার উইলিয়াম কেভিস্ট। আর বহিষ্কারাদেশের কারণে খেলবেন না স্ট্রাইকার ইউসেফ পলসন।
সম্ভাব্য একাদশ:
ফ্রান্স (৪-২-৩-১): লরিস; সিদিবে, ভারান, কিম্পেম্বে, লুকাস; কান্তে, এনজঞ্জি; ডেম্বেলে, গ্রিযমান, ফেকির; জিরু
ডেনমার্ক (৪-২-৩-১): স্মেইকেল; ডালসগার্ড, কিয়ার, ক্রিস্টেনসেন, লারসেন; শোন, ডেলাইনি; ব্র্যাথওয়েট, এরিকসেন, সিস্টো; ইয়োর্গেনসন
সংখ্যায় সংখ্যায়
বিশ্বকাপে এর আগে দু’বার দেখা হয়েছে ডেনমার্ক এবং ফ্রান্সের। ১বার করে জয় পেয়েছে তারা। ডেনিশদের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৭ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছে ফ্রান্স। ইউরোপের দেশগুলোর বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচের ৪টিতেই হেরেছে ডেনমার্ক।
‘ক্ষীণ’ আশাই ভরসা অস্ট্রেলিয়ার
অস্ট্রেলিয়া বনাম পেরু; গ্রুপ ‘সি’; ২৬ জুন, রাত ৮টা; সোচি; টেন ২/৩
গ্রুপপর্বের ২ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট ১। তবে এরপরও শেষ হয়ে যায়নি অস্ট্রেলিয়ার শেষ ষোলতে উঠার সম্ভাবনা। আজ ফ্রান্স ডেনমার্ককে হারালে এবং পেরুর বিপক্ষে ‘সকারু’রা বড় ব্যবধানে জিতে গেলে, পরের রাউন্ডে হয়ত যাবে অস্ট্রেলিয়াই। তাই পেরুর বিপক্ষে আজ জয়ের বিকল্প নেই তাদের।
শেষ ম্যাচের আগে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সেই ক্ষীণ আশাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া কোচ বার্ট ফন মারউইক, “ডেনমার্ক বা আমরা- শেষ ষোলতে কে যাবে, তা নিশ্চিত নয় এখনও। পেরুর বিপক্ষে আমরা ভাল ব্যবধানে জিতলে আর ফ্রান্স, ডেনমার্ককে হারিয়ে দিলে আমরাই হব রানার-আপ। তাই এই ম্যাচে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়েই চেষ্টা করব। অন্য কিছু মাথায় আনছি না আমরা।”
৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসলেও প্রথম দুই ম্যাচ হেরে এরই মাঝে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে পেরুর। তবে অন্তত শেষ ম্যাচটা সমর্থকদের স্মরণীয় কিছু উপহার দিতে চাচ্ছেন কোচ রিকার্ডো গারেচা, “টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তারা আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন। হারলেও সমর্থনে টান পড়েনি এতটুকু। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে না পারায় আমরা তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তাই আজ অন্তত শেষ ম্যাচটায় ভাল কিছু উপহার দিতে চাই।”
দলের খবর
ইনজুরির কারণে ম্যাচটি মিস করবেন অস্ট্রেলিয়ার আন্দ্রে নাবুত এবং পেরুর জেফারসন ফারফান। এছাড়া দু’দলের বাকি সবাই ফিট আছেন।
সম্ভাব্য একাদশ
অস্ট্রেলিয়া (৪-৪-১-১): রায়ান; রিসডন, সেইন্সবুরি, মিলিগান, বেহিচ; লেকি, মুই, জেডিনাক, ক্রুস; রোগিচ; জুরিচ
পেরু (৪-২-৩-১): গালিসি; আদভিঙ্কুলা, সান্তামারিয়া, রামোস, ট্রাউকো; আকিনো, ইয়োতুন, ফ্লোরেস, কুয়েভা, কারিও; গুরেরো
সংখ্যায় সংখ্যায়
এবারই প্রথম একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এবং পেরু। বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার দলগুলোর বিপক্ষে খেলা ৩ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি অস্ট্রেলিয়া (২ হার, ১ ড্র)। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ১৫ ম্যাচে মাত্র ১বার ক্লিনশিট রেখেছে ‘সকারু’রা।