কিক-অফের আগে: বেলজিয়াম-ইংল্যান্ডের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে কে?
বেলজিয়াম বনাম ইংল্যান্ড, গ্রুপ জি, রাত ১২টা, কালিনিনগ্রাদ
১৯৫৪। গ্রুপ-পর্বে মুখোমুখি বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড, দুই দলের মুখোমুখি লড়াই সেই প্রথমবার। ৪-৪ গোলের রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল দুই দল।
২০১৮। গ্রুপ-পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড। দুই দলেরই পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত, বাকি শুধু গ্রুপে অবস্থানটা ঠিক করা। আরেকটি রোমাঞ্চ দেখবে বিশ্বকাপ?
একদিকে হ্যারি কেইন, আরেকদিকে রোমেলু লুকাকু। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা মুখোমুখি হচ্ছেন এবার। দুই দলই দিয়েছে আটটি করে গোল, দুই দলই হজম করেছে দুইটি করে। ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম মুখোমুখি হচ্ছে এমন ‘সমানে-সমান’ থেকেই। ‘হাই-ভোল্টেজ’ ম্যাচটি কার্যত এখন শুধুই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ হওয়ার লড়াই। এই ম্যাচও ড্র হলে তাই গ্রুপের এক নম্বর দল ঠিক করতে আশ্রয় নিতে হবে “ফেয়ার প্লে”-র। ম্যাচ শুরুর আগে সেখানে অবশ্য খানিকটা এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড।
অবশ্য এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বেলজিয়ামই। একই কথা খাটবে বেলজিয়ামের ক্ষেত্রেও। পরের রাউন্ডে এ ম্যাচের পারফরম্যান্সই হতে পারে দুই দলের জন্য বড় টোটকা।
অন্য ম্যাচে মুখোমুখি পানামা-তিউনিসিয়া বাদ পড়েছে আগেই। তাদের ম্যাচটাও তাই নিয়মরক্ষার। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপ চমকে ঠাসা, আপাত গুরুত্বপূর্ণহীন এই দুই ম্যাচেও যদি বসে নাটকের পসরা, তাহলে অবাক হবেন না যেন!
মোমেন্টামে বিশ্বাসী সাউথগেট, মার্টিনেজের “উদযাপনের উপলক্ষ্য”
বাঁচা-মরার ম্যাচ নয়, তবে ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও মোমেন্টাবে দারুণভাবেই বিশ্বাস করেন। তবে নক-আউট পর্বে প্রয়োজন পড়তে পারে, এমন বেশ কয়েকজনকে এ ম্যাচে বাজিয়ে দেখার সুযোগটাও হাতছাড়া করতে চান না তিনি। হ্যারি কেইনকেও বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে, এমন আলোচনা হলেও সাউথগেট জানিয়েছেন, ফ্রন্টলাইনের তিনজনকে বদলাতে চাননা তিনি।
অবশ্য সাউথগেটের চেয়ে একটু ভিন্ন মনোভাব রবার্তো মার্টিনেজের। তিনি আগে থেকেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, দলে পরিবর্তন আনার। প্রতিটি ম্যাচকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও মূল খেলোয়াড়দের একটু বিশ্রাম দেওয়ার পক্ষে বেলজিয়াম বস। তার কাছে এই ম্যাচটা তাই “উদযাপনের উপলক্ষ্য”।
দলের খবর
রুবেন লফটাস-চিক ও কাইল ওয়াকার, দুজনের ওপরই ঝুলছে হলুদ কার্ডের খাঁড়া। ড্যানি রোজ, ভিনসেন্ট কোম্পানিরা তাই থাকতে পারেন শুরু থেকেই। নামতে পারেন এরিক ডায়ারও।
আর ৩-৪-২-১ ফর্মেশনেই ভরসা রাখবেন মার্টিনেজ। বেশ বড় পরিবর্তনই আনতে পারেন তিনি দলে, থমাস ভারমালেনের সঙ্গে ইনজুরিতে থাকা রোমেলু লুকাকুর জায়গায় আসতে পারেন মিখি বাতসুয়াই।
সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ড
পিকফোর্ড, জোনস, স্টোনস, কেহিল, আলেকজান্ডার-আরনল্ড, লফটাস-চিক, ডায়ার, লিনগার্ড, রোজ, র্যাশফোর্ড, কেইন।
বেলজিয়াম
কোর্তোয়া, ভারমালেন, বোয়াটা, অলডারউইয়ারেল্ড, ডেমবেলে, ফেলাইনি, চাডলি, থরগান হ্যাজার্ড, টিলেমানস, এডেন হ্যাজার্ড, বাতসুয়াই।
সংখ্যায় সংখ্যায়
- প্রথম দুই ম্যাচেই জোড়া গোল করেছেন হ্যারি কেইন ও রোমেলু লুকাকু। এর আগে এমন কীর্তি আছে শুধু দুইজনের- ১৯৫৪ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির সানদোর কচসিস ও ১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনার গিলের্মো স্তাবিলের। দুই দলই গিয়েছিল ফাইনালে।
- প্রথম দুই ম্যাচে দুইটি হলুদ কার্ড দেখেছে ইংল্যান্ড, তিনটি দেখেছে বেলজিয়াম।
আবারও সেনেগাল রূপকথা?
সেনেগাল বনাম কলম্বিয়া, গ্রুপ এইচ, রাত ৮টা, সামারা
সেনেগাল মানেই যেন ২০০২ বিশ্বকাপের সেই অবিশ্বাস্য যাত্রা। ১৬ বছর পর আফ্রিকান দেশটির সামনে আবারও হাতছানি দিচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন। পোল্যান্ডকে হারিয়ে ও জাপানের সাথে ড্র করে শেষ ১৬তে ওঠার দ্বারপ্রান্তে আছে সেনেগাল। আজ কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করলেই পরের রাউন্ডে চলে যাবে তারা। অন্যদিকে শেষ ১৬তে যেতে হলে কলম্বিয়ার চাই জয়, ড্র হলেও আশা বেঁচে থাকবে, যদি জাপানকে হারিয়ে দেয় পোল্যান্ড।
আশা ছাড়ছে না কলম্বিয়া
জাপানের কাছে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ। পরের ম্যাচেই অবসস পোল্যান্ডকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল কলম্বিয়া। কোচ হোসে পেকারম্যান বলছেন, আগের ম্যাচের আত্মবিশ্বাসই জেতাবে দলকে, ‘গত ম্যাচে সবাই দুর্দান্ত খেলেছে। নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতেই আছে। জয় ছাড়া আসলে অন্যকিছু ভাবার সুযোগও নেই। আশা করি জিতেই পরের রাউন্ডে যাবো।’
আগের ম্যাচে পয়েন্ট হারানো নিয়ে খানিকটা চিন্তায় আছেন সেনেগাল কোচ আলিও সিসে, ‘আমরা আসলে আগের ম্যাচে খুব ভালো খেলিনি। জাপান অনেক ভালো খেলেছে। শেষ ম্যাচে অনেক উন্নতি করতে হবে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া স্বপ্নের মতো, সেটা পূরণ করতে চায় দলের সবাই।’
দলের খবর
দুই দলেই নেই কোনো ইনজুরি শঙ্কা। আগের ম্যাচে লাল কার্ডের জন্য খেলতে না পারা কার্লোস সানচেজ ফিরতে পারেন কলম্বিয়া একাদশে।
সম্ভাব্য একাদশ
কলম্বিয়া- ওসপিনা; আরিয়াস, জাপাতা, মুরিয়ো, মোহিকা;সানচেজ, লের্মা; কুয়াদ্রাদো, রড্রিগেজ, কুইন্তেরো; ফালকাও
সেনেগাল-চিক এন’দিয়াই; ওয়াগ, সানে, কুলিবালি, সাবালি, সার; গায়, আলফ্রেড এন’দিয়াই; সানে, সার, দিউফ; নিয়াং।
সংখ্যায় সংখ্যায়
দুই দলের দেখা হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৪ সালের সেই ম্যাচ হয়েছিল ২-২ গোলে ড্র। লাতিন আমেরিকার একটি মাত্র দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপে খেলেছে সেনেগাল। উরুগুয়ের বিপক্ষে ২০০২ সালে ৩-৩ গোলে ড্র করেছিল তারা।
জিতেই পরের রাউন্ডে যাবে জাপান?
জাপান বনাম পোল্যান্ড, গ্রুপ এইচ, রাত ৮টা, ভলগোগ্রাদ
জাপানের ভাগ্যটা আছে নিজের হাতেই। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখন গ্রুপের শীর্ষে থাকা জাপানিজদের প্রয়োজন ১ পয়েন্ট। দুই ম্যাচের দুটিতেই হারা পোল্যান্ডের বিপক্ষে তাই তারাই ফেভারিট। অন্যদিকে মর্যাদার লড়াইয়ে ঘরের ফেরার আগে অন্তত একটা পয়েন্ট পেতে চায় পোলিশরা।
পোল্যান্ডকে হালকাভাবে নিচ্ছে না জাপান
শেষ ১৬ তে যাওয়ার রাস্তা সহজ মনে হলেও পোল্যান্ড সেটাকে কঠিন করে তুলতে পারে বলেই ধারণা জাপান কোচ আকিরা নিশিনোর, ‘মূল্যহীন ম্যাচ বলে বিশ্বকাপে কিছু নেই। আমি নিশ্চিত পোল্যান্ড মর্যাদার জন্য সবটুকু উজাড় করেই খেলবে। নিজেদের ভাগ্য আমাদের হাতেই আছে, ড্রয়ের জন্য খেলার প্রশ্নই আসে না। আমরা জয় নিয়েই পরের রাউন্ডে যাওয়া ব্যাপারে আশাবাদী।’
বিশ্বকাপটা ভালো কিছু করে শেষ করতে চায় পোল্যান্ড, জানালেন কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা, ‘গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া হতাশার। কিন্তু একটা পয়েন্ট হলেও পেতে চাই আমরা। শেষটা ভালো করে ঘরে ফিরতে চায় দলের সবাই।’
দলের খবর
দুই দলের একাদশেই আসতে পারে পরিবর্তন। আগের ম্যাচে গোল পাওয়া কিসুকে হোন্ডাকে দেখা যেতে পারে একাদশে। পোল্যান্ডের হয়ে ম্যাচ শুরু করতে পারেন কামিল গ্লিক।
সম্ভাব্য একাদশ
জাপান- কাওয়াশিমা; সাকাই, ইয়োশিদা, শোজি, নাগাতোমো; শিবাসাকি, হাসিবি, হারাগুচি, কাগাওয়া,হোন্ডা; ওসাকো।
পোল্যান্ড- শেজনি; পিজচেক, পাজদান, চিওনেক, গ্লিক; ক্রিচোউইয়াক, লিনেত্তি; মিলিক, জিয়েলিন্সকি, গ্রোশিকি; লেভানডফস্কি।
সংখ্যায় সংখ্যায়
আগের দুই দেখায় দুইবারই পোল্যান্ডকে হারিয়েছে জাপান। প্রথম ইউরোপিয়ান দল হিসেবে এবার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে পোল্যান্ড।