কিক অফের আগে : আর্জেন্টিনার পক্ষে ইতিহাস, ফ্রান্সের বাস্তবতা
আর্জেন্টিনার পক্ষে ইতিহাস, ফ্রান্সের বাস্তবতা
ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা, শেষ ষোল, কাজান, রাত ৮টা, টেন টু
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে আসা, তারপর অনেকটা ভাগ্যের জোরেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন তবুও বেঁচে আছে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের নড়বড়ে অবস্থা তাদেরকে দ্বিতীয় রাউন্ডেই আবার ফেলে দিয়েছে কঠিন এক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি। ফ্রান্সের আর আর্জেন্টিনার ম্যাচ দিয়েই কাজানে শুরু হবে বিশ্বকাপের শেষ ষোলর খেলা।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে দেখা গিয়েছিল নতুন এক আর্জেন্টিনাকে। তবে ওই প্রথম ৪৫ মিনিটই। এরপরই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে আর্জেন্টাইনদের ফিরে আসার লড়াই। দলটা তাই এখনও ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে না। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্নটা তাই শেষ হতে পারে বড় সড় আরেকটা ধাক্কা খেয়ে।
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা অবশ্য কিছুটা অনুপ্রাণিত হতে পারে ইতিহাস থেকে। বিশ্বকাপে এর আগে দুইবার ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছে তারা। দুইবারই জিতেছে লা আলবিসেলেস্তেরা। ১৯৩০ আর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে একবার হয়েছে রানার আপ, আরেকবার বিশ্বকাপই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স কাগজে কলমে শক্তিশালী হলেও মাঠের খেলা দিয়ে এখনও মন ভরাতে পারেনি তারা। বিশেষ করে গ্রুপপর্বে ফ্রান্সের এলোমেলো ফুটবল বিরক্তির কারণ হয়েছে খোদ ফ্রেঞ্চদেরই। দলের শক্তিমত্তাটা এখানেই এগিয়ে রাখছে ফ্রান্সকে। এমবাপ্পে, গ্রিযমান, পগবারা যে কেউই একটা মুহুর্তেই বদলে দিতে পারেন খেলার ভাগ্য। দলের ভারসাম্যও ঈর্ষণীয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে থেকেই নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে চাইবেন কোচ দিদিয়ের দেশম। তবে বাস্তবতা বলছে আর্জেন্টিনাকে হারাতে হলে গ্রুপপর্বের খেলাটাই যথেষ্ট হবে তাদের। তাই আলাদা কোনো চাপেও নেই তারা।
বাস্তবতা তাই বলছে কাজটা আর্জেন্টিনার জন্য প্রায় অসাধ্য সাধনের মতই। তাই আরও একবার সেই লিওনেল মেসির দিকেই তাকিয়ে তারা। কিন্তু সেখানেও স্বস্তি নেই, বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে মেসির গোল করার রেকর্ডই নেই।
সবকিছুর বিপরীতে গিয়ে ফ্রান্সকে যদি আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত হারিয়েই দেয়, সেটা হবে বড় এক আপসেটই। গ্রুপপর্বে বাজে খেলার পরও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পেরে স্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক, কোচ। দর্শকদের সঙ্গে উদযাপনেও মিশে ছিল আবেগ। কিন্তু গ্রুপপর্বের খেলার পুনরাবৃত্তি ঘটলে এই ফ্রান্সকে হারানো অসম্ভবই আর্জেন্টিনার জন্য।
দলের খবর
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে নামানো ৪-৩-৩ ফর্মেশনটাই আবার খেলানোর কথা হোর্হে সাম্পাওলির। এনজো পেরেজের ইনজুরি নিয়ে সংশয় ছিল খানিকটা। তবে ম্যাচের আগে তাকে ফিট ঘোষণা করা হয়েছে বলেই জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম। আরও একটা পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছে তারা। গঞ্জালো হিগুয়াইন বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় নামছেন বোকা জুনিয়র্সের ক্রিশ্চিয়ান পাভন। অর্থাৎ কোনো স্ট্রাইকার ছাড়াই ফ্রান্সের বিপক্ষে নামতে পারে আর্জেন্টিনা।
ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে পরিবর্তন এনেছিলেন দলে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলে ফিরবেন নিয়মিত একাদশের সবাই। সম্ভাব্য শক্তিশালী দলটা নিয়েই মাঠে নামছে তারা। লেফটব্যাক পজিশনে বেঞ্জামিন মেন্ডিকে অবশ্য পাচ্ছেন না ইনজুরির কারণে। লুকাস হার্নান্দেজ অবশ্য তার অভাবটা বুঝতে দেননি আগের ম্যাচগুলোতে। তাই খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই দেশমের।
সম্ভাব্য একাদশ
আর্জেন্টিনা : আর্মানি, মের্কাদো, অটামেন্ডি, রোহো, টালিয়াফিকো, মাসচেরানো, বানেগা, পেরেজ, পাভন, মেসি, ডি মারিয়া
ফ্রান্স : লরিস, পাভার্দ, ভারান, উমতিতি, হার্নান্দেজ, কান্তে, পগবা, গ্রিযমান, এমবাপ্পে, ডেম্বেলে, জিরু
সংখ্যায় সংখ্যায়
১৯৮৬ সালে ব্রাজিলের কাছে শেষবার গোল হজম করেছিল ফ্রান্স। এরপর ৭৫৭ মিনিট ধরে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দলের কাছে গোলই খায়নি লা ব্লুজরা।
টাইব্রেকার বাদ দিলে শেষ ১১ নক আউট ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে ফ্রান্স। সেটাও গতবছর কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে।
উত্তাপটা যেখানে ‘এল ক্লাসিকো’ এবং ‘মাদ্রিদ ডার্বি’কেও ছুঁয়ে যায়
শেষ ১৬; ফিশট অলিম্পিক স্টেডিয়াম; ৩০(১) জুলাই, রাত ১২টা; টেন ২/৩
ক্লাব ফুটবলে তাদের দ্বৈরথের দেখা মেলে প্রতি মৌসুমে অন্তত দু’বার। কিন্তু আজ রাশিয়া বিশ্বকাপে দেশের হয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন লুইস সুয়ারেজ এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ‘এ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা উরুগুয়ের করা ৫ গোলের ২টি এসেছে সুয়ারেজের পা থেকে। আর পর্তুগালের ৫ গোলের ৪টিই করেছেন রোনালদো। কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে আজ আবারও তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দু’দল।
গ্রুপপর্বের ৩ ম্যাচে ৩ জয়, গোল খায়নি ১টিও। কিন্তু এরপরও দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজ, “গ্রুপপর্বে প্রতিটি ম্যাচই আমরা জিতেছি কোনো গোল হজম না করে। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট নই। এর চেয়েও ভাল খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। এখন আর ভুলের সুযোগ নেই আমাদের হাতে। দলে ভারসাম্যের অভাবটা চোখে পড়েছে আমার। আশা করছি পর্তুগালের বিপক্ষে ভাল পরের রাউন্ডে যাব আমরা।”
তাবারেজের দলকে প্রাপ্য সম্মানটাই দিচ্ছেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস, “লাতিন আমেরিকার দলগুলোর মতই খেলে তারা (উরুগুয়ে)। তাদের রক্ষণভাগ শুধু এই বিশ্বকাপে নয়, গত বছর দুয়েক ধরেই দারুণ। দুই সেন্টার ব্যাক (গোডিন এবং হিমেনেজ) একই দলে খেলায় তাদের বেশ লাভই হয়েছে। আর আক্রমণে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই স্ট্রাইকার আছে তাদের (সুয়ারেজ এবং কাভানি)। তবে আমাদের পারফরম্যান্স এবং মানসিকতায় আমি সন্তুষ্ট। হার না মানার জেদটা ছেলেদের মধ্যে আছে। এর জোরেই ২০১৬ তে ইউরো জিতেছিলাম আমরা। আশা করি উরুগুয়েকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেব আমরা।”
দলের খবর
নকআউট পর্বে পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন দুই কোচ। দু’দলে নেই ইনজুরির ঝামেলা। সুয়ারেজকে আটকাতে সান্তোসের ভরসা হবেন পেপে। রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় তাদের দ্বৈরথটা ছিল দেখার মত। ‘এল ক্লাসিকোর’ পুনর্জীবিত এই উত্তাপে দু’জনের কেউ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না একেবারে। আবার গোডিন এবং হিমেনেজের সাথে রোনালদোর লড়াইয়ের ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। উরুগুয়ে-পর্তুগালের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিবে ‘মাদ্রিদ ডার্বি’র এই উত্তাপ। পুরো টুর্নামেন্টেই বেশ নিষ্প্রাণই লেগেছে উরুগুয়ের মাঝমাঠ। কারভালহো-মুতিনিয়োরা মাঝমাঠের দখলটা হাতে নিয়ে নিলে কিছুটা হলেও পর্তুগালের দিকেই ঝুঁকে পড়বে ম্যাচের ভাগ্য।
সম্ভাব্য একাদশ
উরুগুয়ে (৪-৪-২): মুসলেরা; ভারেলা, গোডিন, হিমেনেজ, কাসেরেস; তোরেইরা, ভেচিনো, বেন্টাঙ্কুর, নান্দেজ; সুয়ারেজ, কাভানি
পর্তুগাল (৪-৩-৩): রুই প্যাট্রিসিও; সেড্রিক, পেপে, ফন্টে, গুরেরো; কারভালহো, মুতিনিয়ো, মারিও; বের্নার্দো, রোনালদো, কারেসমা
সংখ্যায় সংখ্যায়
এর আগে দু’বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। পর্তুগাল জিতেছে ১টিতে, অন্যটি হয়েছে ড্র
নিজেদের শেষ ১৭ প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছে পর্তুগাল। আজ মাঠে নামলে ইউরো এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচের রেকর্ডে (বাস্তিয়ান শোয়েন্সটেইগার, ৩৮) ভাগ বসাবেন রোনালদো।