• ক্রিকেট

ডাম্বুলা ম্যাচ ও পরিকল্পনার গল্প

পোস্টটি ১৩৮১৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

travel 2010

আজকের বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার ম্যাচটি হচ্ছে ডাম্বুলার রাংগিরি মাঠে। সিরিজের ২য় ম্যাচটিও এখানে। এই মাঠে।  সময়ে ফিরে গেলে এ মাঠে আমাদের সর্বশেষ ম্যাচটি এবং সাকুল্যে তিনটি ম্যাচেরই ফলাফল উতসাহব্যঞ্জক নয়। তিনটি ম্যাচই হয়েছিল ২০১০ এশিয়া কাপে। ১৬, ১৮ ও ২১শে জুনে হওয়া কোন ম্যাচেই ন্যুনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি আমাদের দল। এ পর্যন্ত পড়ে হতোদ্যম হওয়ার কিছু নেই। এটা আমাদের আগের দিনের কাহিনী, আর এখন অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। তবে সেই ২০১০ ট্যুরে লক্ষ্য করার, শেখার একটা বিশাল ব্যাপার আছে!
.
একটু ফিরে চলুন ২০১০-এ সেই এশিয়া কাপে। খেয়াল করুন সময়টা ছিল ২০১০, আমাদের উত্থানে আরেকটি প্রণোদনাময় বছর। তামিম সাকিবের পিক-একটি বছর।সাথে এই এশিয়া কাপ স্কোয়াডে ছিলেন মুশফিক, মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, আশরাফুল, নাইম,  বোলিং-এ শফিউল, সৈয়দ রাসেল, সোহরাওয়ার্দী শুভ। একটা ড্রিম স্কোয়াডই বলা চলে। ওয়ানডেতেও গো-হারা দল ততদিনে নই আমরা। ইতোমধ্যে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি ঘরের মাঠে, এবছরই ঠিক পরের সিরিজে ইংল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারাবো। অথচ এই (২০১০) এশিয়া কাপে পারফরম্যান্স নবিস দলের মত। আমাদের কাছাকাছি কন্ডিশনে প্রথম দুই ম্যাচে ২০০-র নিচে অল আউট, বা প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৩০০+ (৩১৩ ও ৩৮৫) করে ফেলা বল বা ব্যাটে কোন অংশেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারছিল না। অথচ আমাদের সেরা স্কোয়াড সেরা সময়ে খেলছিল। একটু কি অবাক করার বিষয় নয়?
.
দলের রেকর্ড, পরিসংখ্যানে যা কোনদিন লেখা থাকবে না পরিচালক, প্ল্যানারদের পারফরমেন্স কেমন ছিল; কেমন প্রভাব ফেলে তা এই মাঠের রেকর্ডে। এই ট্যুরটি (২০১০) ছিল ব্যক্তিগতভাবে আমার দেখা সবচেয়ে বাজে প্ল্যানিং - ন্যূনতম সুবিবেচনা দিলেও এমন হতে পারতো না, কিংবা পরিমার্জন করা যেত।
এশিয়া কাপ ২০১০ শ্রীলংকা ট্যুরটিকে দেখতে হবে ২০১০ ইংল্যান্ড-ট্যুর এর সাথে মিলিয়ে; আক্ষরিক অর্থেই দুটো ট্যুর মিলেমিশে একাকার। তবে মাহাত্ম্য আরো বাড়ে যদি একে বাড়িয়ে কন্ডিশনক ও খেলার ভার্সনকেও গোণায় ধরেন। আসুন সফর(দু)টি ফলো করি:


১.
ইংলিশ সামারের শুরুতেই মে মাসের শুরুতে আমাদের দল ইংল্যান্ডে। সুন্দরমত টেস্টের উদ্দেশ্যে লন্ডনের আশেপাশে ৯ই মে থেকে ২১শে মে পর্যন্ত তিনটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ প্রস্ততি হিসেবে খেলে ফেললাম।
২৭-৩১শে মে আমাদের প্রথম টেস্টটি হল লর্ড'স-এ। এর পরে উত্তরে ৪ঠা জুন থেকে শুরু হওয়া ২য় ম্যাচটি ম্যানচেস্টারের স্যাঁতস্যাঁতে সিমিং কন্ডিশনে তিনদিনেই শেষ হয়ে গেল। এরই মাঝে তামিম দুটি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন।

২.
ওল্ড ট্রাফোর্ড-এ ২য় টেস্টটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ই জুন (পঞ্চম দিন)। এদিকে ১৬ই জুন শ্রীলংকাতে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। যথারীতি স্কোয়াড উড়াল দিল ম্যানচেস্টার থেকে প্রায় সাড়ে পাচ হাজার মাইল দূরে ডাম্বুলার উদ্দেশ্যে, ওয়ানডে স্কোয়াডের অল্প কিছু সদস্য দেশ থেকে এসে যোগ দিলেন।
এখন ইংল্যান্ডে তখনো তুলনামূলক ঠান্ডা ও স্যাঁতস্যাঁতে। সেখান থেকে এসে পড়লেন ডাম্বুলার জুনের কাঠফাটা গরম ও আদ্রতাতে (সত্যিই সেবার তাপমাত্রা বেশ উপরে ছিল)।

৩.
এমন আবহাওয়ার পরিবর্তনে খাপ খাওয়ানোর সময় সপ্তাহখানেকেরও কম, বিজনেস ট্রিপ হলে বেশ মানানসই, আপনি খেলছেন মাঠে, আপনাকে আউটডোরে আপনার শারিরীক সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

সাথে সিমিং কন্ডিশন, টেস্টের মুড থেকে সরাসরি ওয়ানডের মুডে, একটি বহুজাতিক টুর্নামেন্টে। আপনার প্ল্যান, মাইন্ডসেট রিলোড করছেন। কিন্তু কোন প্রস্তুতি ম্যাচ নেই।
আপনি সরাসরি খেলতে নেমে গেলেন, প্রতিপক্ষ আরো আগেই এসে এখানে প্রস্তত ছিলেন, আর তিনটি দলই এই কন্ডিশনে বেশ দক্ষ। কন্ডিশন আপনারও জানা, তবে আপনি বিপরীত কন্ডিশন থেকে এসে হতচকিত, তাদের তুলনায় আপনার রেডিনেস বহু পেছনে, দক্ষতার পার্থক্য তখনো বেশ স্পষ্ট।

৪.
তো  ১৬, ১৮ ও ২১শে জুন বাংলাদেশের তিনটি খেলা হলো যথাক্রমে ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাথে। ২৪জুন ছিল ফাইনাল। যেমনটা দেখা গেল, রসদ থাকার পরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অনুপস্থিত।

৫.
এরপর আবার চমক: প্রায় সাড়ে পাচ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে লন্ডন পৌছালেন। ইংলিশ সামার পুরোদমে চলে এলেও তাপমাত্রা, আদ্রতা আর সূর্যালোকের পার্থক্য এখনো বলার মতো।
৩রা জুন আপনার প্রস্তুতি ম্যাচ এখানেই, ভাগ্য ভাল এবার ওয়ানডে থেকে ওয়ানডেতে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের পর তিন-ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ (ইংল্যান্ড আবার এ ব্যাপারে বেশ ভদ্র, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ম্যাচ এরা দেয়)। সাথে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস-এর সাথে চারটি একদিনের ম্যাচ দিয়ে ২০শে জুলাই এর সমাপ্তি।

ইংল্যান্ড সেই সিরিজে পেলেন ইংল্যান্ড-এর সাথে প্রথম জয় বেশ তুখোড় এক ম্যাচের পর। সিরিজটাও মন্দ হলো না ক্রিকেটীয় ভাবে।ধন্য আমাদের ক্রিকেটাররা শেষ পর্যন্ত মানিয়ে ফেললেন এমন হার্শ শিডিউলও। তবে এতে যদি এশিয়া কাপের কন্ডিশন থেকে ট্যুর করাটাকে ইতিবাচক অনুঘটক হিসেবে দেখা হয় তাহলেই ভুল - খারাপটা হচ্ছে এক্সট্রিম এফোর্ড দেয়ায় এর পরপরই এসোসিয়েটদের সাথে চার ম্যাচে দুটি হার ও একটিমাত্র জয় নিয়ে ফেরা। ঠিক ও কৌশলগত প্ল্যানিং কত গুরুত্বপূর্ণ তা চোখে আংুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আর বিশেষত উঠতি দলের জন্য ব্যাকস্ট্যাজের সাপোর্টটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৬.
আশার ব্যাপার মাঠে আমাদের দল অনেক দক্ষ যেমন, আমাদের ক্রিকেট প্রশাসনও আগের চাইতে বেশ ম্যাচিউরড, এ ধরনের বালখিল্যতার সম্ভাবনা কম। কিন্তু এটাও দৃশ্যমান যে এখনো ক্রিকেট-ভিশন ও ক্রিকেট-কূটনীতি ও প্রশাসন-মানসিকতায় অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ উদাহরণ তৈরি হয়েই যাচ্ছে। পরের ধাপে উত্তরণের জন্য মাঠের পারফরমেন্স-এর পূর্বশর্ত হিসেবে এখানে করার আছে অনেক কিছুই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য রইলো শুভকামনা।