• ক্রিকেট

মাহমুদউল্লাহর কাছে খোলা চিঠি

পোস্টটি ৬০৮৭১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রিয় মাহমুদউল্লাহ,

আপনাকে চিঠি লিখছি, ব্যাপারটা একটু আশ্চর্যের মনে হতে পারে। প্রথমে একটু ভূমিকা বলে নেই। আমি আদ্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমী। ‘৯৭ থেকে বাংলাদেশে ক্রিকেটের জোয়ার শুরুর পরে, টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি পরবর্তী সময়টা থেকে আমাদের প্রজন্মের একটা বড় অংশ খুব নিষ্ঠার সাথে ক্রিকেট দেখে গেছে। কত স্বপ্নের জাল বুনেছি আবার সেগুলো ভেঙেছিও। অন্তত বাংলাদেশ দল বিষয়ক যেকোন তথ্য আমি জানি, এই ধরনের একটা গর্ব করতাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে যে আমরা ২০০২-০৪ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ দলকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। এবং আন্তর্জাতিক মণ্ডলেও সে দলটার প্রতিভা নিয়ে ধারভাষ্যকারেরা বেশ কথা বলতেন। আমরা ভাবতাম বুলবুল, আকরামদের প্রজন্ম ক্রিকেটটাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এখন আশরাফুল, মাশরাফিরা পরের ধাপেই আমাদের সেরা কাতারে নিয়ে যাবে। তার উপর ২০০৪ অনুর্ধ্ব বিশ্বকাপ হয়েছিলো বাংলাদেশে। সেবারের বয়সভিত্তিক দলের, সেই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের নামগুলো আমাদের মুখে মুখে ফিরত! ২০০৪ এর অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে আশরাফুল আর মাশরাফি খেলেননি বয়সের ফেরে কিছুদিনের ব্যবধানের কারণে। কিন্তু তারা তো সেই প্রজন্মেরই ছিল। তো আমরা আশা দেখতাম তুষার ইমরান থেকে। তারপর নাফিস ইকবাল, শাহরিয়ার নাফিস, আশরাফুল, আফতাব, অলক, এনাম জুনিয়র, মাশরাফি, তালহা জুবায়ের- সবাইকে নিয়ে! এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন এক ব্যাচের এতোজন আশা জাগানিয়া খেলোয়াড় এক বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসেননি! অথচ কেউই আশা ধরে রাখতে পারেননি। দুই নাফিসের কেউই পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেননি। আফতাব, অলক ব্যাটিংয়ের চিরন্তন আক্ষেপ হয়ে আছে; দেশসেরা বাঁহাতি কোয়ালিটি স্পিনার এনাম জুনিয়র উপেক্ষিত থেকে গেছেন বহুদিন। এন্ডি রবার্টসের চোখে সেরা প্রতিভা তালহাও হারিয়ে গেছেন। আশরাফুল অন্ধকার জগতে পা দিয়েছেন। এক মাশরাফি টিকে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি শুধু ইনজুরির কারণে ফুল হয়ে উঠতে পারেননি। এক অনন্ত আক্ষেপের প্রজন্ম হয়ে আছে সেই প্রজন্মটা!

নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছেন? সেই পুরনো কাসুন্দি আবার ঘাঁটা কেন? ওই যে বললাম আমি বাংলাদেশ দলের মনোযোগী দর্শক। সব তথ্য জানতাম বলে গর্ব করতাম। ২০১৬ এর অনুর্ধ্ব বিশ্বকাপের কথা। কোন একটা রিপোর্টে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ থেকে আসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের একটা তালিকা দেখাচ্ছিলো! আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে সেখানে “মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের” নাম আছে! অবাক হয়ে ক্রিকইনফো ঘেঁটে আবিষ্কার করলাম সেই ২০০৪ এর বিশ্বকাপ দলে আপনি ছিলেন! দুটো ম্যাচ খেলেছিলেনও! মনে পড়ল বর্তমান দলে মাশরাফি সবার বড় ভাই। শুধু আপনিই মাশরাফিকে “ম্যাশ” ডাকেন। আমি হলফ করে বলতে পারি আমরা যারা ২০০০ এর শুরুতে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, যেসব স্টার খেলোয়াড় আমাদের, মিডিয়ার লাইমলাইটে ছিল সেখানে কখনোই আপনার নাম ছিল না। আমরা কতবার আফতাব, অলক, এনাম, তালহা, নাফিসদের নাম নিয়েছি আর কয়বার রিয়াদের নাম নিয়েছি? একবারও আপনার নাম সেসময় পত্রিকার পাতায় এসেছে বলেও মনে করতে পারি না। অথচ আজ সেই প্রজন্ম থেকে জাতীয় দলে টিকে আছেন শুধু মাহমুদউল্লাহই! (মাশরাফি বাদে)।

এই ব্যাপারটা একটা জিনিস প্রমাণ করেন আপনি বরাবরই লাইমলাইটের বাইরে ছিলেন, আছেন। কিন্তু আশেপাশের খ্যাতি পাওয়া-না পাওয়া; এগুলোকে পাশ কাটিয়ে আপনি টিকে থাকতে পারেন, নিজের অবস্থানটা জানান দিতে পারেন। শুধুমাত্র স্টারডম আর ঝলকানির প্রতিভা নয়; সত্যিকারের পরিশ্রম আর ধৈর্য্য যে একজন মানুষকে কত দূর নিয়ে যেতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আপনি। প্রতিভা আর সামর্থ্য থাকলে পৃথিবী আপনার দিকে তাকাবেই। কথাটা আপনিই বলেছিলেন ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অভিষেক টেস্টের পরে। সেবারই প্রথম মনে হয় আপনার একটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট পাবার পরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আপনি বললেন, “আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখে! জানান দেবার দরকার পড়ে না।” আপনার ক্ষেত্রে সবসময় তা হয়নি। আপনি ভালো খেলেছেন দিনের পর দিন কিন্তু কেউ দেখেনি। তবু আপনি অবিচল থেকেছেন আপনার লক্ষ্যে, নিজের কাজটা করে গেছেন দায়িত্ব নিয়ে। দলের প্রয়োজনের ব্যাপারে কখনো কোথাও উচ্চবাচ্য করেননি। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটিং টেকনিকের অধিকারী হয়েও আট নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০১০ এ ভারতের সাথে আপনার ব্যাটিং দেখে সুনীল গাভাস্কার অবাক হয়ে বললেন, “এ বিশ্বের সেরা আট নাম্বার ব্যাটসম্যান।” এমন টেকনিকের একজন ব্যাটসম্যান কেন আট নাম্বারে ব্যাটিং করবে। তবু আপনি কখনোই আলোতে আসেননি। বাংলাদেশের ইনিংসের যেকোন দুর্যোগে আপনি ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন, জয় এনে দিয়েছেন। কৃতিত্ব চলে গিয়েছে অন্যজনের কাছে। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ৮ উইকেটের পরে পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক যখন আশা হারিয়ে ফেললো। তখন আপনি শফিউলকে সাহস দিয়ে একপ্রান্ত আগলে রাখলেন। জয়সূচক রানটা আপনার ব্যাট থেকে আসলো। শফিউল বীরত্বে আপনি চাপা পড়ে গেলেন। পরেরবারের এশিয়া কাপের কথাই মনে করুন। ভারতের সাথে জয়ের পরেও ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছিল শ্রীলংকার সাথে জয়ের পরে। বৃষ্টিতে ১০ ওভারে মাত্র ২১ রান টার্গেট কমায় সবাই যখন চিন্তিত; সাকিবের আউটে যখন ১৩৫/৫, তখন আপনি নেমে ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করলেন। জয় নিশ্চিত করলেন ৩৩ বলে ৩২ করে। অথচ সেখানেও নায়ক হয়ে গেলেন সাকিব আর নাসির। অথচ স্কোরকার্ড বলেন আর খেলা দেখার কথা বলেন; কোথাও আপনি নাসিরের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না ওই ম্যাচে। তবু আপনি আলোয় আসলেন না। ফিনিশার নামটা আপনি পাননি। সেই এশিয়া কাপের ফাইনালে সাকিব মুশফিকের জড়িয়ে ধরে কান্না নিয়ে যত কথা হয়েছে, তার দশমিক ভগ্নাংশও কি ম্যাচ হারের পরে পিচ ছাড়তে ছাড়তে আপনার কান্না নিয়ে হয়েছে? আপনি পরে দুঃখ করে বলেছিলেন যে, মাঠে থাকার কারণে আপনার দুঃখটাই সবচেয়ে বেশি ছিল। সেই দুঃখ আপনি ভোলেননি। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানোর পরে ওই ঘটনার কথা আবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন!বুকে পুষে রাখা স্পৃহা, অভিমান, দৃঢ়প্রতিজ্ঞতা আপনার শক্ত মানসিকতাকেই জানান দেয়। এমনকি ইংল্যান্ডের সাথে ২০১৬ ওয়ানডে সিরিজের ২ নাম্বার ম্যাচটা আমরা জিততাম না আপনার শক্ত ব্যাটে বিপর্যয় সামাল না দিলে। সেবার মাশরাফি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়ে গেলেন। আপনি পার্শ্ব চরিত্রেই থাকলেন। বহু সময় আপনি ভালো খেলেছেন। আপনি না থাকলে আমাদের জয় আসতো না, এমন হয়েছে বহুবার! তবু আপনি বারেবার ঢাকা পড়েছেন আপনার সহখেলোয়াড়ের আড়ালে। কখনো সাকিব, কখনো তামিম, কখনো মাশরাফি আলোটা কেড়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ দলের ডার্ক নাইট হয়ে, বিপর্যয়ে অবিচল থাকার কাজটা করেছেন আপনিই।

একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলি। আপনি বিয়ে করেছিলেন অনেক আগে। আপনার স্ত্রী সূত্রে অধিনায়ক মুশফিক বিয়ে করেছেন আপনারই শ্যালিকার সাথে। আমাদের সামাজিক সম্পর্ক বলে মুশফিকই ভায়রা হয়েছেন। অথচ মুশফিকের আত্মীয়তার সূত্রে দলে সুযোগ পান বলে আপনার নামে যাচ্ছেতাই বলেছে মানুষ। আপনি খারাপ ফর্মের জন্য বাদ পড়েছিলেন। আবার ফিরে এসেছেন আপনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই। আপনার জন্য কোন মিডিয়াও কলম ধরেনি। আশরাফুল বাদ পড়লে যেমন আমরা দেখতাম যে পত্রিকায় আশরাফুল মহাকাব্য লেখা হতো, নির্বাচকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হতো; এমন কিছু আপনার ক্ষেত্রে হয়নি। আপনি আবার পারফর্ম করেই দলে ফিরেছিলেন। আপনি জানেন যে দলে জায়গা পাওয়া সহজ নয়। আপনার কাজটা সম্পূর্ণ আপনাকেই করতে হবে। এজন্য হাল ছেড়ে দিয়ে পরিশ্রম ছাড়া চলবে না। ওই যে শুরুতে আপনার সমবয়সী তারকাদের নাম করছিলাম। তাদের মধ্যে অনেকেই বয়সের দোহাই দিয়ে ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে ঘরোয়া লীগে খেলেন, কিন্তু ফিরে আসার স্পৃহাটা দেখা যায় না। যেকোন পেশারই হোক না কেন; “আপাত বঞ্চিত” মনে হওয়া মানুষদের জন্যআপনি যে এক বিশাল অনুপ্রেরণা সেটা কী আপনি জানেন?

আপনি আলোতে আসলেন ২০১৫ বিশ্বকাপের সময়। যেই আলো সেরকম কোন কিছু না করেই আপনারই সমবয়সী প্রজন্মের স্টার খেলোয়াড়রা পেয়ে গিয়েছিলো; সেই আলো পেলেন বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে। আপনি হয়ে গেলেন রবিন জ্যাকম্যানের “ম্যামাডুল্যা”! ২০১৬ এর এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানোর গল্প তো উপরে বললামই। এমনকি সেই এশিয়া কাপের ফাইনালেও যখন দলের রান ১০০ পেরুবে কিনা সন্দেহ হচ্ছিলো, তখন আপনি নেমে ১৩ বলে ৩৩ রান করে পুরো দৃশ্যটাই বদলে দিলেন। বাংলাদেশ হেরেছিল বলে আপনাকে নিয়ে কথা হলো না। তবে সেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেও তো আরব আমিরাতের সাথে হারার সম্ভাবনাও ছিল। আপনার ব্যাটে চড়ে আমরা একটা সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে পেরেছিলাম।

শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে কথা বলব? ঘরোয়া লিগে আপনার অধিনায়কত্ব বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। দল যাই হোক না কেন, প্রাইম ব্যাংক, আবাহনী বা ডিওএইচএস; আপনি দলকে চ্যাম্পিয়নই করেছেন। আপনার ছোঁয়ায় অধিনায়কত্ব সাফল্যের পরশ পাথর হয়েছে। এমনকি বিপিএল এরও ফাইনালিস্ট হয়েছেন দুইবার। একেবারেই সাধারণ দল নিয়ে শুধুমাত্র টীম স্পিরিটের জোরে টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে গেছেন। তবু আপনার অধিনায়কত্বের গুণ নিয়ে মিডিয়া আলোচনা করেনি কখনোই! সাধারণ মানুষ যখন বিপিএল দেখতে বসলো তখন আপনার ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের পরিচয় পেলো! এ জায়গায় অবশ্য আপনার প্রতি আমার অভিযোগ আছে। আপনার এই মস্তিষ্কের ব্যবহার কেন আপনি মাঠের অধিনায়কদের সাথে কথা বলার সময় ব্যবহার করেন না? আপনার অধিনায়কত্ব নিয়েও সেরকম কারও উচ্চবাচ্য নেই। অথচ সিনিয়রিটি কিংবা অন ফিল্ডের নেতৃত্ব হিসেবে মাশরাফির পরে আপনার নামই আসা উচিত ছিল। কখনো আসে না, এটার সাথে তো আপনি অভ্যস্তই। আপনার অধিনায়কত্বকে নিয়েও কেউ প্রশ্নই তুলতে পারবে না।

দলে আপনার নিবেদন নিয়েও বোধহয় কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। আপনার বোলিংয়ের কথা নাই বলি। যখনি দরকার হয় আপনি হাত ঘোরান এবং দলের জন্য সাফল্য এনে দেন। অথচ কোন এক অদ্ভুত কারণে অধিনায়ক আপনাকে দিয়ে সেরকমভাবে হাত ঘুরান না। ব্যাটিংয়ের ব্যাপারে সম্মান রেখেই বলি, এমনকি মুশি, সাকিবদের নিয়েও মিডিয়ায় কিছু কথা শোনা গেছে। তারা ওপরে ব্যাট করতে চায় না। একজন বোলিং করে আরেকজন কিপিং করে। সুতরাং, রিয়াদকে পাঠাও! আপনি বিনা বাক্যে সব জায়গায় খেলেছেন। যখন প্রয়োজন হয়েছে ৮ নাম্বারে নেমেছেন, কখনো ৩ এ, কখনো ৪, ৫, ৬ এ। আবার টি টোয়েন্টিতে আপনাকে পুরো পরিবর্তন করতে বলা হলো। আপনি ধরে খেলে সেট হন, তারপর মারেন। অথচ সেই আপনি গায়ের মেদ ঝরিয়ে, ফিটনেস বাড়িয়ে একেবারে নেমেই মেরে খেলার মতো আদর্শ হিটার হয়ে গেলেন। চেষ্টায় মানুষ কী না পারে!

আপনি হয়তো ভাবছেন, হঠাৎ করে এমন চিঠি লিখছি কেন? আপনার প্রতি সমর্থন কেন? আমি বরাবরই সুন্দর ক্রিকেটের পূজারী। মার্ক ওয়াহর ফ্লিকের চেয়ে সুন্দর কিছু ক্রিকেটে ছিল বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না। ব্যাকফুটে আপনি যে পাঞ্চ খেলে কভার দিয়ে, অথবা আস্তে করে ফ্লিক করে দেন যেগুলোতে সেগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে না। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসের সুন্দর ব্যাটিং করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আপনার নামটা একেবারেই উপরের দিকে আসবে। এমন অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান, দলের নিবেদিত প্রাণ; চাইলেই নিজের খেলাটা পরিবর্তন করতে পারা একজন খেলোয়াড় আজ প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে, বিতর্কের মুখে! আপনার দলে থাকা না থাকা নিয়ে প্রচুর নাটক হয়েছে। এই ব্যাপারটাই আমি মানতে পারি না। শ্রীলংকার সাথে টেস্ট সিরিজে দলে ছিলেন। ১০০ তম টেস্টে একাদশে বাদ পড়েছিলেন, সেটা নিয়ে সম্ভবত আপনার নিজের মধ্যেও কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে তো স্কোয়াডে থাকতে পারতেন! আপনাকে স্কোয়াড থেকেই বের করে দেয়া হয়েছিলো! শততম টেস্টের ব্লেজার পর্যন্ত পড়তে পারেননি। কোন ইনজুরি ছাড়া এভাবে সিরিজের মাঝে স্কোয়াড থেকে বের করে দেইয়া এক দুর্লভ ঘটনা। আপনি যে আসলেই আলো থেকে দূরে থাকেন কোন এক অদ্ভুত কারণে, সেটার একটা উদাহরণও বোধহয় এই চিঠি। সেই শততম টেস্টের সময়েই আপনাকে নিয়ে লিখব বলে ভাবছিলাম। এর মধ্যে অনেক লিখেছি। শুধু আপনাকে নিয়ে লেখাটাই বাকি পড়ে যাচ্ছিলো। আজ মনে হলো ওয়ানডে সিরিজের আগে লিখি আপনাকে নিয়ে।

যাই হোক, চিঠিটা অনেক বড় করে ফেলছি। মাশরাফি বলেছেন আপনি বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। আপনি সেটা সত্যিই আগে পেরেছেন। আপনি ফিরে আসুন মাহমুদুল্লাহ! আপনার উপরে মিডিয়ার আলো থাকে না, সেটা তো আপনি জানেনই! আপনি নির্মোহ থাকতে পারেন। সব সমালোচনার জবাব দিয়ে আপনার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, নিবেদন, সততা, ধৈর্য, পরিশ্রম আর প্রতিভার মিশেলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম এক নিউক্লিয়াস হয়েই থাকুন! আপনার ব্যাটে আবারও দেখি সৌন্দর্যের ছটা, ধারভাষ্যে শুনি “ম্যামাডুল্লা”র পার্টি! আর সবচেয়ে বেশি যেটা সেটা হলো বাংলাদেশের প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে যাওয়া!

শুভকামনায়,
আপনার এক গুণমুগ্ধ ভক্ত