• ক্রিকেট

আমরা করবো জয়…

পোস্টটি ৫১২৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৯৯৯ সালের ৩১ মে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ চলছে। ক্লাস ওয়ানে পড়া ছেলেটি তাঁর বাবার সাথে সেই দুপুর থেকে টিভির সামনে বসে আছে। ধীরে ধীরে বাসায় পাড়া প্রতিবেশীরাও আসা শুরু করেছে। “ আজ কি হয়েই যাবে ভাই?” , “ আরে বেশি কথা বইলেন না তো মিয়া! খেলাটা শেষ হতে দেন।” কত কথা, কত দুশ্চিন্তা, কত প্রত্যাশা। কিন্তু সবার চোখেমুখেই অদ্ভুত একটা আশার আলো। আজ কি সত্যিই কিছু একটা হয়ে যাবে?

হ্যাঁ, সেদিন 'কিছু একটা' হয়েই গেলো! খালেদ মাসুদ পাইলট পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যানকে রান আউট করার সাথে সাথেই পুরো এলাকা প্রকম্পিত হলো জয়ের উল্লাসে। খুলনা শহরের দৌলতপুরে নামলো মিছিল, গভীর রাত পর্যন্ত চলল রঙ খেলা। পাড়ার বড় ভাইয়ারা  ক্লাস ওয়ানে পড়া ছেলেটিকে নিয়ে পুরো এলাকা চক্কর দিল। বাহারি রঙ্গে রঙ্গিন হওয়া সেই ছেলেটি হয়তো  বুঝতে পারেনি ওই জয়ের মাহাত্ত। কিন্তু একটা স্বপ্নের বীজ বুনন হয়েছিল নিশ্চিতভাবেই…

******

দিন যায়, স্বপ্নের বীজ থেকে চারাগাছ জন্মায়। ছেলেটির সাথে সাথে সেই চারাগাছও বড় হতে থাকে। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তিতে সেই চারাগাছ পায় সার,পানি। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডা, কেনিয়ার বিপক্ষে ‘লজ্জার’ পরাজয় চারাগাছের জন্য হয়ে ওঠে ‘কালবৈশাখী’।

ঝড়ে নুইয়ে পড়া গাছটি ধীরে ধীরে আবারো মাথা উচু করে দাঁড়ায়। ২০০৭ বিশ্বকাপে আসে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়। চারাগাছ আর ছোট্টটি থাকে না, লম্বা হয়ে ডালপালা ছড়ানো শুরু করে। সেই গাছে ফুল আসে, ফলও ধরে। একটু একটু করে বড় হতে থাকা ফলের দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি। কখন হাতে পাবে পরিপক্ক সুমিষ্ট ফল? কিন্তু বিধিবাম। ২০১১ বিশ্বকাপের সেই ৫৮ রানের লজ্জা ফুলে, ফলে ভরপুর গাছে লণ্ডভণ্ড করে দেয়।

 ডালপালা ভেঙ্গে যাওয়া গাছটির পরিচর্যা অবশ্য বন্ধ হয় না। অনেক বাধা বিপত্তি আসে, কিন্তু ছেলেটি হার মানতে রাজি হয়। গাছটা যে তাঁর অনেক স্বপ্নের, অনেক ভালোবাসার। দেখতে দেখতে চলে আসে ২০১৫ বিশ্বকাপ।  ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। ভার্সিটির ক্লাস ফেলে বাসার চলে আসে ছেলেটি। আজ কী কিছু একটা হবে?

হ্যাঁ, সেদিনও হয়েই গেলো! রুবেলের বলে উড়ল অ্যান্ডারসনের স্টাম্প। ১৬ বছর আগে খুলনা শহরের স্মৃতি ফিরে এলো ঢাকায়। চারিদিকে সাজ সাজ রব। স্বপ্নপুরনের একটা ধাপ তো পার হলও!

 ***

২০১৭ সালের ৯ জুন। অবিশ্বাস্য এক জুটিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কিউইদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের বারান্দায় অধিনায়ক মাশরাফির বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ছেলেটার চোখ খানিকটা ভিজিয়ে দেয়। ১৮ বছর ধরে দেখা সেই স্বপ্নের আরেকটু কাছে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দটা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।

বড় কোনো জয়ের পর ড্রেসিংরুমে সবাই গোল হয়ে ‘আমরা করবো জয়’ গানটা গাওয়া বাংলাদেশ দলের বহুদিনের অভ্যাস। এবারও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁরা কি জানেন, হাজার মাইল দূর থেকে সেই কোরাসে গলা মিলিয়েছে ছেলেটিও?