• ক্রিকেট

'দ্য বেস্ট ভিউ অব ক্রিকেট'

পোস্টটি ১৫০৮৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

রফিক ভাইয়ের আলাদা একটা স্ট্যান্ড ছিল। বাঁশের ভিত, উপরে একটা মাচাইয়ের মতো কাঠের পাটাতন। বেশ কসরৎ করে উঠতেন, নামতেন। সময় লাগতো না বেশী। রফিক ভাই আমাদের দিনাজপুরের নামকরা ধারাভাষ্যকার, তাঁর ধারাভাষ্য ছাড়া বড়মাঠের ক্রিকেট দেখা আর ‘নুন ছাড়া তরকারি’ কাছাকাছি পর্যায়ের। রফিক ভাইয়ের সেই স্ট্যান্ডের পাশঘেঁষেই দাঁড়াতাম, উনি থাকতেন পিচ বরাবর, আমাদের থাকতে হতো একটু সরে। সেরা ‘ভিউ’টা তিনিই পেতেন, যদি আম্পায়ারের কথা বাদ দেয়া যায়। এরকম একটা জায়গা থেকে ক্রিকেট দেখার লোভটা বরাবর আছে আমার।

তবে মিরপুরে ড্রেসিংরুমের পাশের দুইটা স্ট্যান্ড টানতো বরাবর। বেশ খোলামেলা। প্রতিবার সামর্থ্য মিলিয়ে টিকেট কাটি, আর আশায় থাকি, এইবার বোধহয় সেই স্ট্যান্ডটা পাবো। নর্দার্ন গ্যালারি, স্পেশাল এনক্লোজার। ক্লাব হাউস। দুই বন্ধুতে মিলে আশায় থাকি, গেট দিয়ে ঢুকে এইবার ঠিকঠিক পৌঁছে যাব সেখানে। হতাশ হই প্রত্যেকবার। টেস্টে টিকেটের দাম কম, টেস্টে এই ‘টেস্ট’টা করতাম। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ। টিকেটের দাম মোটামুটি, নতুন একটা গ্যালারি, নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারি’। মনে হলো, যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল, সেহেতু ওইটা হতে পারে, ‘ইন্টারন্যাশনাল’ মানুষদেরকেই তো এমন খোলামেলা, স্বাধীনতা দেয়া হয়! তখন ব্যাগ কাঁধে, ছাতা-টাতা নিয়েই শের-ই-বাংলায় ঢোকা যেতো। যদি কোনো ক্রিকেটারের নাগাল পেয়ে যাই, এই ভেবে কয়েকটা মার্কার পেন আর খাতা-টাতা নিয়ে গেলাম। বেরসিক সিকিউরিটি মাঠে ঢোকার আগে মুষ্ঠি বেঁধে আমার ড্রয়িংয়ের সব মার্কার রেখে দিল! ‘ইন্টারন্যাশনাল-ফিন্টারন্যাশনাল’ কিছু বলেই পার পেলাম না!

সেই খোলামেলা পরিবেশে খেলা দেখার সুযোগ সেবারও পেলাম না, কিন্তু হঠাৎ করে রফিক ভাইয়ের ভিউ পেয়ে গেলাম। সাইটস্ক্রিনের ঠিক উপরে। কড়া রোদ, ভ্যাপসা গরম, কিন্তু সেখান থেকে খেলা দেখার অনুভূতি অন্যরকমের! সে ম্যাচে আবার সাকিব ব্যাট হাতে তেড়ে এসেছিলেন, আমাদের গ্যালারির নীচ বরাবর। কী হয়েছিল? সেটা অনেকেই জানেন। সাকিবের ভয়েই কিনা, সঙ্গে থাকা ছাতাও বন্ধ করে দিলাম!

অনেক পরে জেনেছি, আমাদের কাংক্ষিত ওই খোলামেলা স্ট্যান্ডটা আসলে ‘গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড’। আমার ধারণা ছিল, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড হলো ওই কাঁচঘেরা গ্যালারি। ভুল ভাঙ্গার পর জানলাম, সেই খোলামেলা ‘আসন যুক্ত’ স্ট্যান্ডে বসার ইচ্ছা বাদ দিতে হবে আপাতত, সামর্থ্য নেই যে! শের-ই-বাংলায় তখনও ‘স্থায়ী-চেয়ার’ ছিল সে স্ট্যান্ডেই। তবে ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারির খোঁজ পাওয়ার পর ‘গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে’ যাওয়ার ইচ্ছা হয়নি আর।

সে ইচ্ছার মতো শের-ই-বাংলাও এরপর দূরে সরে যেতে লাগলো ক্রমেই। গ্রামীণফোন সেন্টারে আগে সুন্দর গিয়ে টিকেট কেটে আনতাম, গ্রামীণফোন চলে গেল, টিকেটও নাগালের বাইরে। টিকেট নিয়ে এতো ‘ক্যাচাল’ কে করবে! টেস্টও হয় কম, সুযোগও মেলে কম। দীর্ঘদিন তাই স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা বন্ধ। শেষ গত পাকিস্তান সিরিজে ঢাকা টেস্টের একদিন গেলাম। তাও লাঞ্চের পর। ততোদিনে ব্যাগ কেন, ইয়ারফোন নিয়েও স্টেডিয়ামে ঢোকা নিষিদ্ধ! আমি জানিই না!

উদ্ধার পেলাম প্রেসবক্সের এক মানুষের বদৌলতে। তাঁর গলায় ঝোলানো কার্ডটার দাপট আছে। সাংবাদিক বলে কথা! গুরুকে সেদিন অবশ্য মূল্লুক ঘুরে আসতে হয়েছিল, প্রেসবক্স আর ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারি যে ঠিক ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত! সেদিনের আগেই আরও একটা মুশকিলে পড়েছিলাম। তাঁর সাথেই দেখা করতে যাব, নির্দেশনা হলো, ‘স্টেডিয়ামের মূল গেট, মানে দুই নম্বর গেটে চলে আয়।’ দশ নম্বরে নেমে হাঁটা দিই, তখন মনেও নেই, দুই নম্বর গেট আসলে কোনটা। সবসময় ঢুকেছি এদিকের গেট দিয়েই, তখনও তো শের-ই-বাংলার চত্বরের সীমানা ছিল না, ছিল শুধু ফার্নিচারের দোকান! গিয়ে দেখি সব বদলে গেছে, চার নম্বর গেট আছে, তিন নম্বর আছে। দুই তো নাই! আবার ফোন। ‘বিসিবির মূল গেট চিনস না, আর তুই হবি সাংবাদিক!’ পরে অবশ্য ঠিকঠাক গেলাম।

স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গেলেই শুধু মাঠ না, চারপাশে তাকাই। আম্পায়ার সংকেত দিলে স্কোরারের যে লাইটটা জ্বলে ওঠে, সেটা খেয়াল করি, থার্ড আম্পায়ারের চারটা ক্যামেরা খেয়াল করি, আর ওইদিকে, কাঁচঘেরা জায়গায় রফিক ভাইয়ের ভিউ পায় যাঁরা, তাঁদের আবয়ব দেখি। ওখানে গুরু থাকেন, ওখানে সব নামজাদা সাংবাদিকরা থাকেন, যাঁদের লেখা পড়ে বড় হয়েছি। অবশ্য প্রথম আলোতে কাজ করতে গিয়ে সেই দূরের মানুষদের কয়েকজন সীমিত দূরত্বে চলে এসেছিলেন। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। অনেক আগে, লর্ডসের প্রেসবক্সের একটা ছবি দেখেছিলাম। গ্যালারির মতোই সারি সারি আসন, সামনে ল্যাপটপ গেঁড়ে সামনে চেয়ে আছেন নাম না জানা মানুষরা। ওই দেখা যাচ্ছে পিচ। ছবিতেও কতো স্পষ্ট!

মিরপুরের প্রেসবক্সের এমন ছবি দেখিনি। তবে দেখেছি তো বটেই। ফেসবুকে যে কজন সাংবাদিক আছেন, তাঁদের বদৌলতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যে ক্যানভাস লাগানো হয়েছিল, সেটা এখনও সরানো হয়নি। ফেসবুকে যখন দেখেছি তখনও না, নিজে যখন গেলাম, তখনও না।

যেভাবে হুট করে প্রেসবক্স চলে এলো কথার মধ্যে, আমার প্রেসবক্সে যাওয়াটাও সেভাবেই। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের জন্য অপেক্ষাটা অবশ্য দীর্ঘ ছিল বেশ! সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজারের সাথে দেখা করা, আর অপেক্ষা করা। বিসিবি অফিসের সামনেই সেই গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড, মাঠের দু-চারটে ছবি তুলি, গ্রাউন্ডসম্যানদের কাজ দেখি। সিরিজ শুরুর তোরজোর সবখানে। ব্রডকাস্টারদের মেশিন ঠিক করা দেখি। সাদা টি-শার্ট, ট্রাউজারস, আর মাথায় সাদা হ্যাট পরা গামিনি ডি সিলভাকে দেখি। মিরপুরের কিউরেটরের হাতে ফোন থাকে, আর থাকে ইয়ারফোন। কী কী নির্দেশনা দেন।

আর চলে আমার অপেক্ষা। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যা হঠাৎ আটকে গিয়েছিল। কার্ড পেয়ে যখন ফিরছি, মধ্যরাত প্রায়! পরদিন আমার ‘অভিষেক’। আবার গুরুকে ফোন। কোন গেট দিয়ে ঢুকতে হবে। এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকি, মিডিয়া সেন্টার লেখাটা চোখে পড়ে। ‘সিকিউরিটি-চেক’ পেরিয়ে যাই। লিফটের জন্য অপেক্ষা না করে সিঁড়ি ভাঙ্গি। করিডোরটা পেরিয়ে দরজা ভেজিয়ে ঢুকি, অন্যরকমের এক গ্যালারিতে! গুরু তাঁর পাশে ‘আসন’ রেখেছেন। ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে চার্জার প্লাগে লাগাতে গিয়ে দেখি, কাজ সেরেছে! ল্যাপটপসহ আর যা যা লাগে, প্যাভিলিয়ন থেকে ভাইয়েরা গুছিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু একটা জিনিসের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি! ল্যাপটপের চার্জার ‘থ্রি-পিন’ এর, কিন্তু আমি যেখানে বসবো, সেখানকার কানেকশন ‘টু-পিন’!

যথারীতি গুরুর একটা ধমক খেলাম। তারপর বলে দিলেন, কোথায় গেলে পাওয়া যাবে। ওখানে না গেলে কোথায়, সেটাও। আবার ছুটলাম। পূর্ণিমা থেকে স্টেডিয়ামের ওইদিকের রাস্তা বন্ধ, দর্শকদের আনাগোনা বাড়ছে। ভাগ্য ভালো, স্টেডিয়ামের সামনেই ইলেকট্রিকের দোকানে পেয়ে গেলাম ‘কনভার্টার’। আবার মিডিয়া সেন্টার, আবার সিকিউরিটি।

এরপর প্রেসবক্সে বসা। গুরুর তাড়া, লাঞ্চে যেতে হবে। আমাকে লাঞ্চ কুপন দেয়া হবে কিনা, সেটা নিয়েও দোটানায় ভুগছিলেন মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি। প্রেসবক্সে আমার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটা যে একটু আলাদা! পরে দিয়েছেন, এরপর নিজে থেকে এসেই দিয়ে গেছেন বারবার! ঠিক ‘সাংবাদিক’ না হয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে মিশে গেলাম তাই!

আগের দিনও বৃষ্টি হয়েছে, প্রায় পুরো মাঠ ঢাকা ছিল কাভারে। এদিন ঝকঝকে রোদ। ছবি তুলি, প্রেসবক্সের ভেতর থেকে। শূন্য গ্যালারি ভরে উঠতে থাকে। গর্জন বাড়ে। এদিক ওদিক তাকাই। খেলা চলে। খেলার এই দিক, ওই দিক নিয়ে কথা হয়। বাবু ভাই বা মনি ভাইয়ের কোনো কথাতে হাসির রোল পড়ে। যে দেবু দা ফোন ধরেন না, ফেসবুকে মেসেজের জবাব দেন না, সেই দেবু দার সাথেও দেখা হয়ে যায় অনায়াসেই! ইসাম ভাই সিরিয়াসলি কাজ করেন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মজা করে যান। গুরু পাল্লা দেন ইসাম ভাইয়ের সাথে। আর মাঝে মাঝেই লাগান ধমক। কতো রান হবে, কতো রানে জিতবে বাংলাদেশ, ‘প্রেডিক্ট’ করেন তা। একটাও কাজে লাগে না! তবে কখন সাকিব বোলিংয়ে আসবেন, কখন উইকেট পড়বে, ম্যাশ এরপর কী করবেন, ঠিকঠিক তা বলতে পারেন!

রহমত শাহ আর হাসমতুল্লাহ শাহিদির জুটিটা তখন জমে উঠেছে। কী একটা কাজ করছি, হঠাৎ পিঠে পড়লো একটা ‘থাবড়’। রীতিমতো চমকে গেলাম, এমনিতেই গুরুকে ভয় পাই। ‘তুই কুফা লাগাইছোস। প্রথম দিন আইসা বাংলাদেশকে হারায়া যাবি!’ আমি হতভম্ব। খানিক বাদেই একটা উইকেট পড়ে, ‘এবার। কন, কী কইবেন।’ গুরুর সহজ সরল উত্তর, ‘মাইর দিয়া কুফা কাটাইলাম।’ আমিও বলি, ‘তাহলে আরেকটা দেন! আরও উইকেট পড়ুক!’ এবং সত্যিই তাই, আরেকটা থাপ্পড় খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আরেকটা উইকেট পড়ে! নিজে থাপ্পড় খেয়ে আফগানদের হারিয়ে দিয়েছি, আফগানরা যদি এই কথাটা জানতো!

হঠাৎ আবার কুয়াশা আসে। প্রেসবক্সের সামনের কাঁচটা ঝাপসা হয়ে আসে, ঝাপসা হয়ে আসে ‘জীবন্ত’ ক্রিকেট! সে কুয়াশা মুছে দেয়া হয়।

ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে যাই। মিডিয়া সেন্টারের নীচ দিয়ে তখন মাঠে ঢোকা যায়, একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত। মিরপুরের ওই ঘাসগুলো আসলে কেমন, সেটা আমার কাছে একটা রহস্য হয়ে থেকেছে এতোদিন। সেই ঘাস, সেই মাঠে যখন হাঁটি, কিরকম একটা পরাবাস্তব অনুভূতি হয়। প্রেস কনফারেন্সে সাকিব আসেন। আগেও শুনেছি, সাকিব যেদিন ‘মুড’ এ থাকেন, সেদিন তাঁর প্রেস কনফারেন্স হয় সেরকম কিছু! ‘কী মনে করেছিলেন’ টাইপের প্রশ্ন শুনে উত্তর দেন, ‘আমাদের কাজ করে দেখানো, মনে করা নয়’। অথবা ‘তাইজুলকে কী পরামর্শ দিচ্ছিলেন’ এর জবাবে বলেন, ‘এ পর্যায়ে কেউ কাউকে পরামর্শ দিতে পারে না, সবাই পেশাদার। হয়তো কোনো আইডিয়া শেয়ার করছিলাম!’ তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় ‘অনেকদিন পর ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হলেন’ এর উত্তরটা, যেটা সাকিব হাসতে হাসতে বলেন ‘হ্যাঁ, মুস্তাফিজ নেই তো, তাই মনে হয়!’ সাকিব হাসেন, কনফারেন্স রুমে হাসির রোল ওঠে। সাকিব হাসেন, সাকিব হাসিয়ে যান। সাকিব সেদিন উইকেটসংখ্যায় বাংলাদেশের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, তিন ফরম্যাটেই। কিন্তু তিনি নির্লিপ্ত, ‘তিন ফরম্যাটেই হাইয়েস্ট রান-গেটার হলে বোধহয় ভাল লাগতো!’ আবার সবাই হাসে!

পরদিন প্রেস কনফারেন্স রুমের চেহারা বদলে যায়। মাশরাফি আসেন। মুশফিকের উইকেটকিপিং, দলের ব্যাটিং অথবা উইকেট, সবকিছু নিয়ে প্রশ্নবাণ ছুটে যায়। ম্যাশ সেসব সামলান, অধিনায়ক হতে হলে যে আরও কতোকিছু সামলাতে হয়!

সিরিজ জয়ের পর আবার আসেন মাশরাফি, সঙ্গে তামিম। তার আগে দলবেঁধে মাঠের এককোণায় দাঁড়ানো সব সাংবাদিক, কেউ জয় উদযাপন করছেন সেলফি তুলে, চলছে আড্ডা। এরই ফাঁকে হয়তো কেউ খুঁজছেন ‘স্টোরিলাইন’! মাশরাফিদের সংবাদ সম্মেলনের মাঝেই এসে বসেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক আর ম্যানেজার। মাশরাফি চলে যান, চলে যান অনেক সাংবাদিকই, তাঁর পিছু পিছু। বাড়তি কোনো কথা শোনা হবে, বাড়তি কিছু পাঠকদের যদি দেয়া যায়! প্রেস কনফারেন্সের রুম ফাঁকা হয়ে যায়। শুধু এদিন না, আফগানিস্তানের ম্যাচশেষের প্রেস কনফারেন্স মানেই এমন। আমার শুধু মনে হয়, আহা, সুমন ভাইদেরকেও মনে হয় এমন কিছুর মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছিল!

প্রেস কনফারেন্স শেষে আবার প্রেসবক্সে যেতে হয়। সামনে মাঠ ফাঁকা হয়ে আসে, ফ্লাডলাইট নিভে যায়। প্রেসবক্সে তখনও কিছু মানুষ থেকে যান, চলে কি-বোর্ডের খুটখাট। খেলা শেষ হওয়ার পরই যে প্রেসবক্সের মানুষগুলোর আসল কাজ শুরু হয়! আমি আরেকটা ছবি তুলি। আপাতত প্রেসবক্স অধ্যায় শেষ। কাঁচঘেরা বড় ঘরটা থেকে বেরিয়ে আসি।

শের-ই-বাংলায় আবার খেলা জমবে। প্রেসবক্স ভরে উঠবে। সেখানে কে আছে আর কে নেই, সেটা ভাবতে বয়েই গেছে প্রেসবক্সের!* 

*পূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত।