বিপর্যয়ের নেপথ্যে
পোস্টটি ৭৬৩২ বার পঠিত হয়েছেক্যাপ্টেন আর ভাইস ক্যাপ্টেনের ভাষ্য টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়াটা দলীয় সিদ্ধান্ত।
বোর্ড সভাপতি বলেছেন এটা ক্যাপ্টেনের নিজের সিদ্ধান্ত, শুধু তাই নয়, তিনি প্রমাণ দিয়ে দেখাতে পারবেন এমনটিও বলেছেন।
শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুঁড়ি। পাপন সাহেব ঝানু রাজনীতিবিদ, নিজের স্বার্থকে বাঁচানোর জন্য তিনি যা প্রয়োজন সেটা বলবেন, বাংলাদেশে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর কথা বিশ্বাস করার মত যুক্তি আমি পাইনি, তিনি যা বলেছেন সেটা খুব বেশি যৌক্তিক মনে হয়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২য় টেস্ট হারার পরে যা হয়েছিল, আবারো সেটার পুনরাবৃত্তি কোন সুস্থ ঘটনা নয়।
দলের উপর মুশফিকের নিয়ন্ত্রন নেই সেটা স্পষ্ট। সেটার জন্য দায় যতটুকু মুশফিকের, ঠিক ততটুকুই পাপন এবং হাথুরুকে নিতে হবে। বিসিবি হাথুরুকে লাগামহীন ক্ষমতা দিয়ে যেই ভয়াবহ ভুলটা করেছে, সেটা কুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। দলের ক্যাপ্টেনের কথাকেই যখন গুরুত্ব দেবেন না কোচ, সেটা দলের দলের খুবই বাজে একটা ব্যাপার। হাথুরু নিজের পছন্দের ক্রিকেটারদের বারবার ধরে রাখছেন দলে যেটা দলের পরিবেশকে নষ্ট করতে বাধ্য। আবার বিয়াদ, মুমিনুলদের প্রতি কোচের অবহেলা- পারফর্ম না করেও কেউ টিকে যাচ্ছেন, আবার দলকে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়ে যাওয়া ক্রিকেটাররা একটা দুইটা সিরিজ খারাপ খেললেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন এগুলো প্রত্যেকটা ক্রিকেটারের জন্যই অস্বস্তিদায়ক। দল ভাল করলে তাঁর কৃতিত্ব নিতে মিডিয়ার সামনে হাজির কোচ, কিন্তু এইযে দুটো বাজে ম্যাচ গেল, কোচ কি একবারও মিডিয়ার সামনে আসতে পারতেন না?
কোচের কাজ ক্যাপ্টেনকে সাহায্য করা। ক্রিকেটে একটা দল ক্যাপ্টেনের, কোচের নয়। ক্যাপ্টেনের ফিল্ডিং পজিশনটাও ঠিক করে দিচ্ছেন কোচ, প্রভাব খাটানোর এর থেকে বাজে উদাহরন কি আর হতে পারে হাথুরুর কাছ থেকে। কখন কে বোলিং করবেন, কিভাবে ফিল্ডিং সাজাবেন ক্যাপ্টেন, এগুলো সম্পূর্ন ক্যাপ্টেনের ব্যাপার। কোচ এবং আরো যারা আছেন, তাঁরা শুধু তাঁদের মতটা ক্যাপ্টেনকে জানাতে পারেন, কিন্তু ক্যাপ্টেন কি করবেন সেটা ক্যাপ্টেনের ব্যাপার। কিন্তু হাথুরুসিংহে এগুলোও যখন চাপিয়ে দিচ্ছেন মুশফিকের ওপর, তখন কীভাবে পুরো দায় আমরা ক্যাপ্টেনের ওপর চাপাই?
মুশফিকের উচিত ছিল নিজের মেরুদন্ডটাকে সোজা রেখে কোচের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। সেটা তিনি পারেননি বলে অবশ্যই দায় নিতে হবে তাঁকে। ক্যাপ্টেন যদি অপশক্তির কাছে হেরে যায়, তখন দলের বাকি সবাই কিভাবে ইতিবাচক চিন্তা করবে। মাশরাফী সময়ে সময়ে যেই ভূমিকাগুলো নিয়েছেন, সেরকম কিছু অবশ্যই একই দলের টেস্ট ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল, অন্তত মাশরাফিকে দেখেও কিছূ শিখতে পারতেন তিনি। কিন্তু পারেননি সেটা তিনি, বরং নেতৃত্বের লোভের কাছে হেরে গিয়েছে দেশের স্বার্থ। ২০১৩ তে নিজে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়ার পর তাঁকে ক্যাপ্টেন রেখে দেয়াটা বড় ভুল ছিল, যে কারনে এবার আর তাজটা ছাড়তে চাইছেন না তিনি!
এই ভরাডুবির অন্যতম কারন বাজে ক্যাপ্টেন্সি, কিন্তু অন্য কারনগুলোও আমাদের ক্রিকেটের দীনতার প্রতীক।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে অনেকদিনের ক্যাম্প হলো মিরপুরে আর চট্টগ্রামে। ফোকাস পুরোটাই ছিল অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দিকে, কিন্তু অবাক করার মত ব্যাপার, সেই সিরিজ শেষ হওয়ার ২০ দিন পরেই যেখানে দক্ষিন আফ্রিকার মত জায়গায় খেলা, সেটা নিয়ে কারোরই তেমন মাথাব্যাথা ছিলনা। ফল যা হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে, ভরাডুবি!
অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মত দলগুলোও দক্ষিন আফ্রিকায় গিয়ে খাবি খায়। বাংলাদেশ সেখানে গিয়ে রাতারাতি ম্যাচ জিতে যাবে সেটা খুবই কঠিন ছিল। ম্যাচ জেতা বা হারাটা মুখ্য নয়, দলের প্রসেসগুলো ঠিক থাকাটা তাঁর থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু সবচেয়ে বাজে ব্যাপার এটিই, অচেনা অপরিচিত কন্ডিশনে ভাল করার মত তেমন কোন এফোর্টই দেইনি আমরা। নিউল্যান্ডস, জোহানেসবার্গ কিংবা ডারবানের ভেন্যুগুলো যেখানে পেস, বাউন্স অনেক বেশি থাকে, সেখানে খারাপ করলেও হয়ত সেটা ভরাডুবি হতোনা। কিন্তু সেনওয়েস পার্ক আর মাংগুয়াং ওভাল সাউথ আফ্রিকার সবচেয়ে ফ্ল্যাট ট্র্যাকগুলোর মধ্যে অন্যতম, সেখানেই যখন স্টেইন- ফিল্যান্ডারহীন পেইস এটাক আমাদের গুঁড়িয়ে দেয়, সেটা অবশ্যই আমাদের সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
ব্যাটসম্যান বোলার, কারোর মধ্যেই জেতার ইচ্ছাটা দেখিনি এই দুই ম্যাচে। যতই ভয়াবহ হোক উইকেট, অন্তত এই ম্যাচে দুই দিনে দুইবার অল আউট হওয়ার মত কোন কারন ছিলনা। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা তাঁদের সামর্থ্যটাকেই দেখিয়ে দিলেন, আসলে তাঁদের দৌড় কতটুকু সেটা স্পষ্ট হল।
আহামরি কোন বোলিং দরকার নেই আমাদের গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য, মনের বাঘেই কাবু হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসব আমরা। যেভাবে বাইরের বলগুলো খোঁচা মেরে আউট হচ্ছে ব্যাটসম্যানেরা, সেটা তো সেই ১৭ বছর ধরেই চলে আসছে। মুশফিক আর লিটন প্রমাণ করে দিলেন, আমরা বল ছাড়তেও জানিনা। এইযে বল ছাড়তে গিয়েও আউট হওয়া, সেটার সবচেয়ে বড় কারন আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত নই এখনো।
সৌম্য দুই ইনিংসে যেভাবে আউট হলেন, একটা টেস্ট টিমের ওপেনারের এভাবে আউট হওয়াটা খুবই দৃষ্টিকটু! একবার লেগস্ট্যাম্পের বলে বোল্ড, আরেকবার নবিশের মত খোঁচা মেরে আউট- বলের লাইন বুঝতেই খাবি খাওয়া ব্যাটসম্যানকে টেস্ট খেলানো কি খুবই গুরুত্বপূর্ন?
ইমরুল, সাব্বির কারোর ব্যাটিংয়েই টেস্ট মেজাজটা দেখা যায়নি। শট সিলেকশনে এত ভুল এই লেভেলে মানা যায়না। অযাচিত শট খেলা টেস্টে কি দরকার সেটা বোধগম্য নয়। সাব্বির এখনো টেস্টের জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়নি। মুমিনুল হতাশ করেছেন। কিন্তু এত চাপের মধ্যে তিনি বড় স্কোর করবেন সেটা খুব সহজও ছিলনা। ওয়ানডে দলে আছেন, সুযোগ পেলে ভাল কিছু দেখতে চাইব তাঁর কাছ থেকে।
একটা ধাক্কা দরকার ছিল, আমরা কোথায় আছি সেটা বোঝার জন্য। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সামনের বিদেশ সফরগুলোতে ভাল করতে পারি, সেটা হবে অনেক বড় প্রাপ্তি।
কিম্বার্লি, পার্ল আর ইস্ট লন্ডনের উইকেট খুবই ফ্ল্যাট, ওয়ানডে সিরিজে ভাল কিছুই দেখতে চাই।
শুভকামনা মাশরাফী বাহিনীর জন্য!
- 0 মন্তব্য