• ক্রিকেট

ক্রিকেট মাঠে ভাইদের গল্প

পোস্টটি ১৮৮৯৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেট মাঠে একটি জাতীয় দলের এগারো জন শুধুই ক্রিকেটার নন, তারা প্রতিনিধিত্ব করেন একটা দেশের। ভারতের কথা ভাবুন, কেউ বাঙালি, কেউ মারাঠি, কেউ আবার পাঞ্জাবী। ধর্মেও আছে তফাত। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, পারসিক, পুরো দেশটার প্রতিনিধি মোটে এগারো জন। সন্দেহ নেই পুরো দেশ থেকে সেরা এগারো খুজে বার করা যথেষ্ট শক্ত কাজ।

 

সময়টা ১৯৯৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারারেতে টেস্ট খেলতে নেমেছে জিম্বাবুয়ে। টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাট করতে পাঠালেন স্টিভেন ফ্লেমিং। জিম্বাবুয়ে একাদশের তালিকায় চোখ পড়লে আটকে যেতে বাধ্য। ১২০ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কখনই এমনটা হয়নি। এগারোজনের ৬ জনই একে অপরের ভাই!! একাদশের আরেক সদস্য গাই হুইটাল, দ্বাদশ খেলোয়াড় অ্যান্ডি হুইটাল আবার তার ভাই।

 

জিম্বাবুয়ের হয়ে উদ্বোধন করলেন গ্যাভিন রেনি ও গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার। গ্যাভিনের ভাই জন রেনি নতুন বলে হিথ স্ট্রিকের সঙ্গি, আর গ্র্যান্ডের ভাই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। দলে স্পিন ডিপার্টমেন্টের নেতা পল স্ট্রাং, ভাই ব্রায়ান স্ট্রাং অলরাউন্ডার। গাই হুইটাল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

 

 

ইতিহাসে বিরল এই ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে ভোলেননি এসব ভাইয়েরা। চতুর্থ ইনিংসে ৪০৩ রানের টার্গেটে ২৯৬ রানেই ৮ উইকেট হারায় কিউয়িরা। ক্রিস কেয়ার্নস ও দশম ব্যাটসম্যান কন্নরের দৃঢ়তায় ম্যাচ বাঁচায় নিউজিল্যান্ড। দুই ইনিংসে ১০৪ ও ১৫১ রান করে ম্যাচ সেরা গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার। ম্যাচে ৫৯ রান ও ৩ উইকেট পল স্ট্রাংয়ের, ব্রায়ান নেন ৫ উইকেট। গ্যাভিন রেনি দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ারকে নিয়ে গড়েন ১৫৬ রানের জুটি, নিজে করেন ফিফটি। জন রেনি অবশ্য বল হাতে কোন উইকেট পাননি, ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসের ২২ রানই তার অবদান।

 

দ্বিতীয় টেস্টে বুলাওয়েতেও এমন অভিজ্ঞতা হতেই পারত, কিন্তু বাধ সাধলেন বেরসিক জিম্বাবুয়ে নির্বাচকরা। তিন জোড়া ভাইয়ের ফ্লাওয়ার ও স্ট্রাং জুটি ঠিক থাকলেও বাদ পড়লেন জন রেনি। তার জায়গায় দলে আসা পেইসার মাতাম্বাঞ্জো অবশ্য প্রথম ইনিংসে এগারো নম্বরে নেমে ৪৩ বল টিকে থেকে গাই হুইটালকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারেন নি। পুরো ম্যাচে ১৭ ওভার বল করে ছিলেন উইকেটশুন্য।

 

 

তবে ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের বেশিদিন অপেক্ষায় রাখেন নি নির্বাচকরা। ওই সফরে তিন ওয়ানডের সিরিজে তৃতীয় ওয়ানডেতে আবার দলে ফিরলেন তিন জোড়া ভাই। এদের সাথে গাই হুইটাল ও অ্যান্ডি হুইটালও সেদিন একাদশে। সব মিলিয়ে অধিনায়ক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, ডেভ হটন আর ক্রেইগ ইভান্স এই তিনজন সে ম্যাচে ছিলেন নিজেদের মাঝে রক্তের সম্পর্কের বাইরে। বাকি আটজন ছিলেন চার পরিবারের সদস্য। এমন ঘটনা ওয়ানডে ইতিহাসেও আর কোনদিনই দেখা যায়নি।

 

যদিও সেদিন মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারেন নি এসব ভাইয়েরা। সিরিজের প্রথম ম্যাচ টাই এবং দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোয় জিম্বাবুইয়ানদের সামনে সুযোগ ছিল ব্ল্যাক ক্যাপদের সিরিজ হারানোর। প্রথমে ব্যাট করে কেয়ার্ন্স, ফ্লেমিং ও ম্যাকমিলানের ফিফটিতে ২৯৪ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। ওপেনিংয়ে দুই ফ্লাওয়ার ৬৩ রান তুলে আশা জাগিয়েছিলেন। সর্বনাশের শুরু ৪৪ রান করা অ্যান্ডির রান আউটে। পরে আরও তিন রান আউটে জয়ের সম্ভাবনা শেষ জিম্বাবুয়ের। গাই হুইটাল করেন সর্বোচ্চ ৪৯ রান।

 

 

২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া দলে ছিলেন তিন ভাই কলিন্স, ডেভিড ও কেনেডি ওবুইয়া। সেই প্রথম কোন বিশ্বকাপ দলে তিন ভাইয়ের একসাথে উপস্থিতি। দলটির প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে পৌছানোর নায়ক ছিলেন কলিন্স ওবুইয়া। তার লেগস্পিনে ধরাশায়ী হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা। তবে এক অনাকাঙ্খিত রেকর্ডেও নাম আছে ওবুইয়া ভাইদের। ওই বিশ্বকাপে ব্রেট লি হ্যাটট্রিক করেন কেনিয়ার বিপক্ষে। তার প্রথম শিকার ছিলেন বড় ভাই কেনেডি আর শেষ উইকেট ছোট ভাই ডেভিড। ক্রিকেটে একই হ্যাটট্রিকে নাম আছে শুধু এই দুই ভাইয়েরই।

ক্রিকেটে পরিবারতন্ত্রের গল্প আছে আরও, একই ম্যাচে দেখা গেছে বাবা-ছেলেকেও। ছেলের লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা বাবা। সেসব কথা আরেক দিন বলব, আজ এটুকুই...