• ক্রিকেট

'একদিন আমরাও....''

পোস্টটি ৩১৩৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

স্পোর্টস আমাদের দেয়, স্পোর্টস আমাদের থেকে কেড়েও নেয়। আইভরি কোস্টের গৃহযুদ্ধ থামিয়ে দেয় দিদিয়ের দ্রগবা, ক্রিশ্চিয়ানোর গোলের ধারাবিবরণী শুনে কোমা থেকেও বেঁচে ফিরে আসে রোগী। ক্রমাগত চলতে থাকা অস্থিতিশীল, খুন-হামলা, প্রতিহিংসা তে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের প্রতেকটি মানুষ কাল অন্তত তিন ঘন্টার জন্য হলেও এক হয়ে গিয়েছিলেন, গলা ফাটিয়েছিলেন 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ' বলে। এবং শেষে? সবাই কেঁদেছেন। 'এক জাতি' হিসেবে শেষ কবে প্রিয় বাংলাদেশের সবাই এক সাথে দু:খ পেয়েছিলেন তা কি কেউ মনে করতে পারবে?

 

ক্রিকেট আমাদের অনেকের কাছে শুধু একটি খেলাই না। প্রতিহিংসার অন্তরালে হারিয়ে যেতে বসা দেশপ্রেম আমরা খুজতে থাকি সাকিব মুস্তাফিজদের জন্য জয়োল্লাস করে। জানি, এ জয়োল্লাস দিয়ে দেশপ্রেম এক্সপোজ করা হয় না,  তবুও, দেশের জন্য এটুকু জয়োল্লাস, দেশের জন্য প্রার্থনা, এটুকু তো ক্রিকেটেই খুঁজে পাই আমরা।

 

ক্রিকেট যদি শুধুমাত্র খেলাই হত ওয়ার্ল্ড কাপ ম্যাচে ইন্ডিয়ার পুরো গ্যালারি 'বন্দে মা তরম' গেয়ে উঠত না, গ্রায়েম স্মিথ বিধ্বংসী মিচেল জনসনের সামনে ভাঙ্গা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নেমে পড়তেন না,  আফ্রিদির ক্যাচ ফেলে দিলে মরণ--যন্ত্রণার মত আহাজারি করে উঠতেন না একঝাঁক তরুণী,  কাল শোয়েব আলী এমন করে চেয়ে থাকতেন না। 

 

'খেলা' টা কে শুধু খেলাই ভেবে বসলে জাতীয় সংগীতের সময় মাশরাফি, মাবিয়া রা চোখের জলে বুক ভাসাতেন না।

 

তাই ছোট হলেও সকল ব্যাবধান ভুলে এই যে দেশের জন্য প্রার্থনা, দোয়া- ক্রিকেট ছাড়া প্রিয় বাংলাদেশে কোথায় পাবেন আপনি? 

 

কালকের ম্যাচে সবাই কেঁদেছেন, কেঁদেছি আমিও। কিন্তু প্লেয়ারদের কাউকে আমার ব্লেমড মনে হয়নি। রুবেল শেষ ওভারে তার প্রথম বলটা ইয়র্কারই দিয়েছিলেন, দীনেশ শুধুমাত্র তাঁর এক্সপেরিয়েন্সের জোরেই সেটা এগিয়ে এসে লো ফুলটস বানিয়ে নিলেন। দীনেশ যেহেতু ক্রিজের বাইরে ছিলেন, রুবেল এবার আরেকটু চালাকি করলেন, আগেরবার এর চেয়ে আরেকটু নিচে বল ফেললেন, দীনেশের পজিশনের তুলনায় তা অন্তত যেন ফুলার লেন্থ মনে হয়, কিন্তু হায়! দীনেশের অভিজ্ঞতা এবারও হারিয়ে দিল।  ম্যাচের এমন সময়ে পরপর দুই বলে বাউন্ডারি খেয়ে যেকোন বোলার খেই হারিয়ে ফেলেন, সেখানে আমি বলব রুবেল শেষ তিন বল যথেষ্ট ভাল করেছেন। তা বল তিনি যেমনই করুক, এক ওভার কাউকে জাজ করতে যথেষ্ট নয়। রুবেল ইজ স্টিল আওয়ার বেস্ট চয়েস ইন ডেথ ওভারস। 

 

শেষ ওভার করতে আসলেন সৌম্য। বিশ্বের যেকোন ফায়ার-আর্ম পেস বোলারের কাছেই শেষ ওভারে ১২ ডিফেন্ড করা কষ্টের। সেখানে সৌম্যর অভিজ্ঞতার পুঁজি কত? তবুও সৌম্য যে বলটা করলেন, সেটা তাকে আগামী দিনের পেস বোলিং অলরাউন্ডার হতে সাহায্য করবে। শেষ বলটার কথা বলছেন সবাই, ওই সময় ওয়াইডিশ ইয়র্কার ছাড়া কিই বা ট্রাই করতে পারতেন তিনি? বাউন্সার দিলে দীনেশ ইজিলি পিক করতেন, লেগ দিয়ে ছয় হয়ে যেত,  স্লোয়ার দিলেও তাই। তাই এসময় বেস্ট অপশান যেটা ছিল সৌম্য করেছেন সেটাই। আর ১ বলে যখন পাঁচ রান লাগে তখন বোলিং টিমের জেতার চান্স থাকে সব থেকে বেশি। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় হয় নি। কোনরকমে সীমানা পার করা বলটা ব্যাটে নাও লাগতে পারত, কিংবা এক ড্রপ দিয়ে চারও হতে পারত।  ডেল স্টেইন অব্দি ২ বলে ৫ ডিফেন্ড করতে পারেন নি, সেখানে সৌম্য তো সবে বোলিং করছে। তবুও আগের তিন ওভারে 'উইকেট টু উইকেট' বল করে যে একুরিসি দেখিয়েছেন তিনি, আমরা আশাবাদী হতেই পারি 'বাংলাদেশ পথ হারাবে না'।  

 

বেন স্টোকস, ডেল স্টেইন, ইসুরু উদানা, সৌম্য সরকার- ইউ অল আর হিরো বয়েজ। ফ্যাক্ট ইজ- ব্যাটসমেন ওয়ার ইন টু গুড টাচ ইন দ্যাট ডে।

 

আর তাছাড়া ক্রিকেটদেবতার কাছে কার্তিকেরও তো কিছু দেনা-পাওনা ছিল।  ধোনীর লাইমলাইটে যিনি নিজের স্বর্ণসময়েও দলে খেলতে পারেননি, অনেক ভারতীয়র কাছে যিনি ধোনীর চেয়েও 'টু গুড ব্যাটসম্যান',  ক্রমাগত আরেকটু উন্নতির জন্য যিনি প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করেছেন, কার্তিকের পাওনা টা ক্রিকেটদেবতা দেবেন না? রবি শাস্ত্রী কার্তিকের আগেও বিজয় কে পাঠালেন, জবাব টা তিনি দেবেন না?. তিনি যদি নিয়মিত ব্যাটসম্যান হতেন এই জিদ হয়ত তার কাজ কর‍ত না, কে জানে ৮ বলে ২৯ ও হয়ত হত না।  কিন্তু ঐ যে, অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এক চুল ছাড় নয়। 

 

আমি বলব, আওয়ার বোলার ওয়াজ টু গুড।  চেজিং কে ডালভাত বানিয়ে ফেলা টিম ইন্ডিয়ার কাছে ১৭০ এর নিচে স্কোর তারা কঠিন করে তুলেছেন।  ম্যাচ শেষ বল পর্যন্ত যাবে কে ভাবতে পেরেছিল?  দে আর রিয়েলি হিরো।

 

মিরপুরের দায় রুবেল এডেলেইডে শোধ করেছিলেন, প্রেমাদাসার দায় হয়ত ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের লর্ডসে (সম্ভাব্য) শোধ করবেন। সৌম্য হয়ত বেন স্টোকসে মত স্ট্রংগার দ্যান এভার হয়ে ফিরে আসবেন, অন্তত ব্যাটিং এ- দায় যে সৌম্যর ও শোধের কাছে।  

 

তবু আক্ষেপ- আর্লি কিছু উইকেট না পরলে দলের রান আরো বেশি হত। কিন্তু ঐ যে বললাম ভাগ্য,  তামিমের উইকেটে বোলার ব্যাটসম্যানের চেয়েও ফিল্ডারের কৃতিত্বটাই ছিল বেশি। কি রিফ্লেক্সন যে ফিল্ডার দেখিয়েছেন!

 

লিটন যে বলে আউট হলেন, লাইফটাইমে কতশতবার এই শটে ছক্কা হাঁকিয়েছেন, শুধু এবার হয়নি। তার মানে যে আর হবে না তা তো নয়।

 

সাব্বির ওয়াজ মাইন্ডব্লোয়িং টুডে। চাপের মুখে যে নক তিনি খেলেছেন তা ক্লাস-স্ট্যান্ডার্ড ই বলব। মঞ্চ আজ সাব্বিরের জন্য সাজানোই ছিল, এমন সময়ে আসলেন আর ক্লাস চেনালেন। আর মিরাজ যে ট্রুলি অলরাউন্ডার তা দেখাল আজ। সময় দেন, আইসিসি আন্ডার নাইন্টিন ওয়ার্ল্ড কাপের সেরা প্লেয়ারের অনেক কিছু দেবার আছে।

 

স্টিল আই বিলিভ সৌম্য লিটন সাব্বির মিরাজ মুস্তাফিজ, আর হ্যা সৈকতেও। দ্যা ফিউচার অফ বাংলাদেশ ইজ টু মাচ বেটার।

 

আর ফাইনালে হার? কত হল এটা? ৫ নম্বর? তাতে কি? ইতিহাসের ও দায়শোধের দায় আছে। একদিন না একদিন জিতবই। মাহেলা সাঙ্গারা চার আইসিসি ইভেন্টে ফাইনাল হেরেছিলেন সেটাও ২০০৭-২০১২ এর মধ্যে। ইতিহাস তাদের দায় শোধ করেছে - এক মাসের ব্যাবধানে এশিয়া কাপ আর টি-২০ ওয়ার্ল্ড দিয়েছে। পাপমোচনের সুযোগ নাহয় ইতিহাস আমাদের আরো বড় কোন টুর্নামেন্টেই দেবে। এসব ছোটখাট নিদাহাস ট্রফিতে নয়। কে জানে? ২০১৯ বিশ্বকাপের লাস্ট ওভারে হয়ত ম্যাশ বল তুলে দেবেন সেই রুবেলের হাতে। তাঁর মনেও হয়ত প্রেমাদাসা জেগে উঠবে, যেমন জেগে উঠবে আমাদের মনে। প্রেমাদাসা ফিরিয়ে তিনি হয়ত স্টাইলিশ ইয়র্কারে স্ট্যাম্প উড়িয়ে আমাদের দেবেন একটা ট্রফি- ক্রিকেটের কাছে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক,  রিয়াদ, রুবেল এর যেটি বড্ড বেশি পাওনা।    

 

জিতলেও টাইগারদের সাথে আছি, হারলেও সাথে থাকব। ৫-১০-১৫ যা হোক, জয় একদিন হবেই.. 

 

কেননা দলের মূলমন্ত্রই যে... 

 

''আমরা করব জয় একদিন..........''