• ক্রিকেট

বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আগামীর পথচলা: ভবিষ্যৎ পঞ্চপান্ডব

পোস্টটি ৭৫০৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৯৯৯ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পর নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে, বয়কট-শেবাগ-সিধু দের 'নিন্দা' শুনে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন হয়ে উঠেছে 'সমীহ জাগানিয়া' এক দল। এই সময়ের মাঝে আমরা যেমন পার করেছি ২০০১-২০০৫ এর অন্ধকার যুগ, তেমনই ২০০৭ বিশ্বকাপে আওয়াজ দিয়েছি মাথা তুলে দাঁড়ানোর। ২০১৪ তে হেরেছি একের পর এক ক্রিকেটীয় ভাষায় 'ক্লোজ ম্যাচ'। সেই সময় আমরা খাদের কিনারে ছিলাম কিংবা বলা যায় খাদে পড়েই গেছিলাম। সেই খাদ থেকে উঠে দাঁড়াতে একটা 'মরণ কামড়' দেয়া ছিল বড্ড জরুরী, আর তা আমরা দিয়েছিলামও। 'টাইগার্স বাইট' সে সময় হজম করেছিল টেলর, মাসাকাদজা, সিবান্দা, রাজার সাজানো জিম্বাবুয়ে আর তা মোটেও 'লাভ বাইট' ছিল না।

সেই হল শুরু। এরপর একে একে 'টাইগার্স বাইট' খেয়েছে পাকিস্তান, ভারত, এমনকি সাউথ আফ্রিকাও। শ্রীলংকায় জেতা শততম টেস্ট যেমন আমাদের 'বেটার এব্রোড প্লেইং কোয়ালিটি' প্রমাণ করে তেমন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ড কে হারানো ক্রিকেট বিশ্বকে বিশ্বাস কর‍তে বাধ্য করে 'বিগ ম্যাচ' এর হাফ চান্স কে আমরা আনতে পারি আমাদের পক্ষে।

লেখার এ পর্যায়ে এসে শিরোনামের সাথে মূল লেখার 'কানেকশান' খুঁজতে গিয়ে কি ধন্ধে পড়ে গেলেন? তা তাতে আপনাকে দোষ দেয়া যায় না মোটেই। আবার উপরের লেখাটুকুকে আমি 'শিবের গীত' বলতেও রাজি নই। বাংলাদেশ ক্রিকেট এর আগামীর পথচলার গল্প বলব আর তাতে অতীত স্মরণ করব না- তা কি হয় বলুন?

আমি আজকে লিখতে বসেছি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামীর পথচলা নিয়ে। এখন পর্যন্ত আমরা যে কয়টি জয় পেয়েছি তাতে ৭০ শতাংশের বেশি অবদান ছিল সিনিয়র প্লেয়ারদের। এবং শুধু তাই নয়, অন্ধকার ঠেলে, খাদ থেকে উঠে দাঁড়াতে সিনিয়ররা এতটা বেশি অবদান রেখেছেন যে আদর করে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ কে আমরা বলি 'পঞ্চ পান্ডব'। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে আস্তে আস্তে পরাশক্তি হয়ে উঠছে তার পেছনেও দলের এই নিউক্লিয়াস, এই 'লীডারশিপ গ্রুপ'। দলে যে কাপ্তান একজন দুজন নয়, আছেন পাঁচ পাঁচ জন। তা ২০১৫ তে জুনিওররা আমাদের কিছু ম্যাচ জেতালেও সেখানে এই পাঁচজনের পারফর্ম্যান্স ও ফেলনা ছিল না মোটেও। ব্যাস, সেই শেষ। এরপর মূলত ১১ জনের ভার বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই ৫ জনকেই। তা সময় তো বহমান, প্রকৃতির নিয়ম মেনে আমরা না চাইলেও এই পাঁচজন একদিন অবসরে যাবেন। তখন দলের লিডারশীপ গ্রুপ কি হবে? লঙ্কান ক্রিকেটের মত আমরাও কি পড়ে যাব কঠিন সময়ে? দলের শক্তিশালী নিউক্লিয়াস কি আর থাকবে না? এই বিশ্লেষণটাই আমি করতে চাই। এবং করার আগে এও বলে নিতে চাই, এটুকু নিশ্চিত হোন, জুনিওররা পারফর্ম করেননি মানে করবেন না মোটেও তা নয়।

লিডারশিপ গ্রুপের দুই সক্রিয় সদস্য হবেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (আজকের মাশরাফি সাকিবের সাথে মেলাতে পারেন)। শুধুমাত্র জাতীয় দলই না, বয়সভিত্তিক খেলারও যারা একটু-আধটু খোঁজ খবর রাখেন তারা বুঝবেন- পটেনশিয়ালিটির মাপকাঠিতে এই দুজনকে নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এর সাথে আমি যা জানতে পেরেছি মেহেদী মিরাজের 'ক্যাপ্টেন্সি লেভেল' মাশরাফি দর্শনেই বিশ্বাসী। মাশরাফির মতই মিশুক প্রকৃতির, দল অন্ত:প্রাণ, পারেন দলের সাথে মিশে যেতে। শুধু তাই না, সতীর্থকে অনুপ্রেরণা দিয়ে তার কাছ থেকে 'বেস্ট' টা বের করে আনতেও নাকি তিনি পারদর্শী। ক্যাপ্টেন মিরাজ একজন অধিনায়কের হওয়ার আগে একজন নেতা- এসবই আমি জেনেছি অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপ ২০১৬ তে মিরাজ বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেন থাকার সময়ই।

মিরাজের পাশাপাশি 'ক্যাপ্টেন্সি কোয়ালিটি' তে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবেন না 'হার্ড ক্যারেক্টার' মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। খোদ মাশরাফিই তো সৈকত কে ভবিষ্যত বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেন মনে করে। একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে এবং বাংলাদেশী অলরাউন্ডার হিসেবে সৈকতের আইডল সাকিব আল হাসান তা বলাই বাহুল্য। এবং শুধু মাঠের খেলাতেই না, ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি সহ সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন 'গেম' এ তিনি সাইকোলজিক্যালি সাকিবকেই ফলো করেন- ইংল্যান্ডের সাথে এক টেস্টের আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। ধীরস্থির কিন্তু শক্ত স্বভাবের এই সৈকত যে লীডারশিপ গ্রুপের মধ্যেই থাকবেন সে কথা আর বলতে বাকি থাকে!

লীডারশিপ গ্রুপে টর্নেডো তামিমের জায়গাটা খুব সম্ভবত নিয়ে নেবেন বাঘকুমার সৌম্য। এগ্রেসিভনেস, মাইন্ডসেটআপ, পটেনশিয়ালিটি সব কিছুতেই তিনি আমাদের নেক্সট 'টর্নেডো' হচ্ছেন এ বিষয়ে আর বলতে বাকি রাখে না, এবং মাঠের ভেতর ভীষণ সক্রিয় সৌম্য লীডারশিপ গ্রুপের অন্যতম 'একটিভেটিং এজেন্ট' হবেন তাতে আর সন্দেহ কি!

লীডারশিপ গ্রুপে মুশির জায়গাটা এজ আ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিয়ে নেবেন নুরুল হাসান সোহান। দারুণ রিফ্লেক্স আর নিখাদ মনোযোগে ইতোমধ্যেই তিনি দেশসেরা উইকেট কিপারের তকমা পেয়ে গেছেন, এবং সেই সাথে ক্রমাগত নিজের ব্যাটিং এরও উন্নতি করে চলেছেন যার প্রমাণ আমরা ডিপিএল এই দেখেছি- নিদাহাস ট্রফিতে যাবার আগে ডিপিএল এর সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনিই। 'দলের জন্য খেলা' সোহান তাই হবেন দল অন্ত:প্রাণ, লীডারশিপ গ্রুপের এগ্রেসিভ এজেন্ট।

লীডারশিপ গ্রুপের আরেক সদস্য হবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মাশরাফি যাকে শেষ ডিপিএলের শেষ ম্যাচের শেষে বলেছেন 'লম্বা রেসের ঘোড়া '। শুধু তাই না, এত এত সিনিয়র থাকার পরও হাইপারফরম্যান্স টিমের ক্যাপ্টেন কে জানেন? নাজমুল শান্তই। আগে থেকেই 'ক্যাপ্টেন শান্ত ' কে তৈরির প্রক্রিয়া আরকি!

পাঁচজনের কথা বলে ফেললাম। তবে এই লীডারশিপ গ্রুপে ভবিষ্যতে সাইফ, আনামুল, লিটন যোগ হয়ে 'সুপার সিক্স', 'লাকি সেভেন' কিংবা 'সুপার এইট' হবেন না তাই বা কে বলতে পারে? তবে যেমনই হোক, একইসাথে এত গুলো ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটীয় শার্প মস্তিষ্ক থাকা........ আখেরে লাভটা তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে যাবে তা কি কেউ আন্দাজ করতে পারছে?