মেঘের কোলে আফগান হাসে......
পোস্টটি ৩০৪১ বার পঠিত হয়েছে''মেঘের কোলে আফগান হাসে,
টাইগার ফেরে বাড়ি...
আজ তাহাদের ভোজ হবে ভাই
তাঁরা বেজায় খুশি ''
লম্বা শিকারভ্রমণের 'শেষকৃত্যে' শিকারকে হাতের নাগালে এনে ফসকে গিয়ে 'শিকার' দ্বারাই শিকার হওয়ার 'হৃদয়ংদেহী' যন্ত্রণার পর কেটে গেছে কয়েক মাস। বাঘেরা, বাঘশাবকেরা চর্মযন্ত্রণার উপশম তো করিয়েছে, কিন্তু 'মন:যন্ত্রণা' র উপশম টা ঠিকমত হয়েছে কিনা তা ঠিকমত বলতে পারিনে আমিও। তা মন:যন্ত্রণার উপশম হোক বা না হোক, চর্মযন্ত্রণায় বাঘেদের 'হালকা ব্যাথা' থাকুক বা না থাকুক, বাঘেদের নেমে পড়তে হচ্ছে 'কচি শিকার' এ।
এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন বলছি আফগানিস্তান এর কথা, আফগানিস্তান সিরিজের কথা। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলকে আমি প্রথম বড় মঞ্চে দেখেছিলাম ২০১২ সালে, শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় টি-২০ বিশ্বকাপে। সে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে আফগানিস্তানের 'ফাইটিং মেন্টালিটি' আমাকে মুগ্ধ করেছিল। স্পেশালি টিম ইন্ডিয়ার শক্তপোক্ত টপ ইর্ডারকে সে সময়কার শাপুর জাদরানের বলে যেভাবে 'ডিসকমফোর্ট' লাগছিল, আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এটাতেও। এমন বড় মঞ্চে এমন ছোট একটি দেশের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মনোভাবও আমাকে অবাক করেছিল।
কিন্তু মুগ্ধতার কলি চারপোয়া হয়ে আসতে সময় নিল না বেশি। সময় যত বাড়ল, মুগ্ধতা কমতে শুরু করল, এখন সেখানে আমি সত্যি বলতে 'হেটার' ছাড়া কিছুই নই। অনেকে বলতে পারেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের এমন ক্রিকেটোন্নতিতে আমি হেটার হয়ে আসলে নিজেই নিজেকে জোকার বানাচ্ছি কিনা। উত্তর হল- না। কারণ এই জায়গাটাতে আমার দেশের কথা এসে যায়।
ক্রিকেট শুধু ব্যাট দিয়ে বলে ছক্কা হাঁকানোর খেলা না। খেলাটা জেন্টলম্যানের। বাংলাদেশ কে কখনও ১৯৮৫ সালে বা ১৯৯৯ পরবর্তী সময়ে ভারত, সাউথ আফ্রিকা এমনকি জিম্বাবুয়েকে ট্রল করতে দেখেছেন? ইভেন ভারতও কি তার প্রথম দিককার সময়তে অস্ট্রেলিয়া টিম কে এমনভাবে ট্রল করত? না... সেখানে আফগানরা বাংলাদেশ কে নিয়ে ট্রল করেছে ২০১৪ তে। শুধু তাই নয়, সিলেকশন রাউন্ডের এক ম্যাচে সাকিবের সাথে ঝামেলা অব্দি পাকিয়েছে। (ধরণী দ্বিধা হও, ২০১৪ এর আফগানিস্তান চোখ তুলে তাকিয়েছে সাকিবের দিকে?) এর সাথে বাংলাদেশ ম্যাচের আগে 'আমাদের দলে ১১ জনই অলরাউন্ডার' বলাটা আমাকে আফগানিস্তানের জাতিগত সমস্যাটাই মনে করিয়ে দেয় (আফগান কাপ্তান মেইবি জানতেন না যে উইকেট কিপার বল করেন না!)। সে যা হোক, আপনি যতক্ষণ লড়াকু মনোভাব এক্সপোজ করবেন আমি আপনাকে বাহবা দেব, কিন্তু একটা সহযোগী দেশ হয়ে আপনি যখন আমার টেস্ট প্লেয়িং দেশকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করবেন, আপনার জন্যে আমার আর কোন সিম্প্যাথি নেই, সে আপনারা 'যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ' হলেও নেই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আমাদের দেশে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র মনে হয় থাকবেন রশিদ খান। সত্যি বলতে, রশিদ খান ইজ গুড, বাট নট দ্যাট মাচ এজ হি ইজ প্রেসেন্টেড। রশিদ খান র্যাংকিং এ ১ নং এ উঠেছে, কাদের সাথে খেলে? ভারত? সাউথ আফ্রিকা? মাইটি অস্ট্রেলিয়া? থ্রি লায়নস? ইভেন বাংলাদেশ? না.... আয়ারল্যান্ড স্কটল্যান্ড আর মাঝেসাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়ে। আর রশিদ খান আসলেই 'টু মাচ বেটার' কিনা তা আসলে বোঝা যাবে বড় দলগুলোর এগেইন্সট এ, ফাইনালি টেস্ট ম্যাচে এবং সবিশেষে বড় কোন মঞ্চে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, ২০ ওভারি ফরমেটের ঘরোয়া একটা টি-২০ লীগ একজন বোলারকে জাজ করবার জন্যে যথেষ্ট নয়, তাকে 'টু মাচ বেটার' বলতে তো একদম নয়ই।
'পরের ঘরের আলোচনা' বাদ দিয়ে কিছুটা 'বাঘ - ডেরা' য় ফেরা যাক। এই সিরিজটা যদি ওয়ানডে ফরমেটে হত, মজাটা অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত। টাইগার ওয়ানডে দলের সাথে ওডিআই ম্যাচ জেতার মত যোগ্যতা কিংবা টেম্পার কোনটাই এখনও স্টানিকজাই এর দল অর্জন করতে পারেনি। তাই টি-২০ ফরম্যাটের সিরিজটা আমাদের জন্যে হবে দারুণ উপভোগ্য, ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্কে টিম টাইগারদের জন্যে হবে দারুণ চ্যালেঞ্জিং।
আমার মনে হয়, এই সিরিজটা সাব্বির এর জন্যে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। 'দেশসেরা টি-২০ প্লেয়ার' তকমাটা তিনি একটু আধটু পুনরুদ্ধারের আভাস দিয়েছিলেন নিদাহাস ট্রফির শেষ ম্যাচে। তাই এই সিরিজটা হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ সাব্বিরের নিজেকে চেনানোর মঞ্চ। আর সাব্বিরকে ব্যাট করতে পাঠানো উচিত ৩ নং এ। সাকিব যদি ৩ নং এ ব্যাট করে, মিডল অর্ডারটা একটু বেশিই দুর্বল হয়ে যায়। এরচেয়ে ইনফর্ম সাব্বির আর তামিম সম্বলিত আগুনে টপ অর্ডার আর পরপর মুশি-সাকিব-রিয়াদ সংবলিত ডিপেন্ডেবল মিডল অর্ডারই আমার বেশি পছন্দ। অবশ্যি ক্যাপ্টেন সাকিব সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবেন বলে আমি আশা রাখি।
তামিমের ওপেনিং সঙ্গী কে? এই স্লটে আমি বেশ কনফিউজড। লিটন নাকি সৌম্য। টি-২০ ফরম্যাটে এই দুই ছাড়া ওপেনিং এ আর কাউকে পাঠানোর পক্ষে নই আমি। আর এই দুইয়ের মধ্যে দলে কে থাকবে? আমার মনে হয় দুইজনেরই দলে থাকাটা প্রাপ্য। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান সিরিজে সৌম্যকে ৪/৫ এ ব্যাট করতে পাঠিয়ে দলে পুরোটা পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলানো যায়।
আমার মনে হয়, সাইফুদ্দিন কে আরেকবার সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। অন্তত আফগানিস্তানের সাথে। কেননা নেক্সট বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে। আমাদের অবস্থাটা হবে এমন, এখন পেস বোলিং অলরাউন্ডার গুরুত্ব দিচ্ছি না, আবার বিশ্বকাপের আগে এরই জন্যে মাথা ঠুকে মরব! (অবশ্যি বিসিবির পরিকল্পনায় ২০১৯ বিশ্বকাপ ভাবনা বলতে আদৌ কিছু আছে কিনা কে জানে!)
'সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে' নেক্সট দুই সিরিজে আমাদের কোচের জুতায় পুনর্বার পা গলাবেন কোর্টনি ওয়ালশ (যদিও শেষ অব্দি কারস্টেন উইন্ডিজ সফরের জন্য একজন কোচ চূড়ান্ত করে ফেললেও ফেলতে পারেন)। তবে 'বর্ন ক্যাপ্টেন' ওয়ালশ এর হেড কোচিং নিয়ে অবশ্যি আমার অতটা অস্বস্তি নেই যতটা আছে, এক বছর ধরে ব্যাটিং কোচ শূন্যতা আর অকার্যকর স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশীকে নিয়ে। সবচেয়ে বড় অস্বস্তি, উনিশ বিশ্বকাপ নিয়ে বিসিবির আলসেমি নিয়ে । যদিও আমি বিশ্বাস করি, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। এট লিস্ট, 'সময় গেলে সাধন হবে না' যে বিসিবি সভাপতিও জানেন।
পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে সবিশেষ সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। ওয়ানডে ফরম্যাটের পেস বোলিং লাইন আপ যদিও বা খুঁজে পাওয়া গেছে, 'বাংলাদেশী ব্রান্ড অফ টি-২০ ক্রিকেট' এর পেস বোলার যেন সাকল্যে দুইজনের বেশি খুজে পাওয়াই ভার হয়ে যাচ্ছে। যদিও এর জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের কিছুটা দায় দেখি আমি। 'পরিণত' রনি কিংবা উইকেটের দুইপাশেই সুইং করানোর ক্ষমতায় দেশসেরা পেসার রাহীকে অন্তত কনসিকিউটিভ কয়েকটা ম্যাচে সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। কে জানে, আন্তর্জাতিক ম্যাচের আবহের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজের সেরাটা তারা দিলেও দিয়ে দিতে পারতেন।
আফগান ঘটনার বাঘডেরায় সর্বশেষ বড় খবর প্রায় এক বছর পর রঙিন পোশাকে দলে সুযোগ পেয়েছেন ক্লাসিক্যাল মোসাদ্দেক সৈকত। সৈকতের এবিলিটি নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু মিরাজ দলে থাকলে সৈকত আসলে কোন রোল টা প্লে করবেন? ফরম্যাট যখন টি-২০ তখন ফিনিশিং এ সৈকত থেকে আরিফুল অন্তত বেশি চান্স ডিসার্ভ করে। এটিও অবশ্যি আমার নিজস্ব মত, আস্থা পুরোটাই ক্যাপ্টেন সাকিবের উপরে।
এতসব সমস্যা কাটিয়ে কি জেতা সম্ভব? উত্তর অবশ্যই সম্ভব। মাঠে খেলবেন প্লেয়াররাই। তাই এইসব মাইনর সমস্যা কাটিয়ে ইলিটারেট আফগানদের ভরাডুবি দেখতে আমাদেরও কোন সমস্যা হবার কথা না । তবে বড় প্রশ্ন হল, আফগান-ভোজে টাইগারদেরর পেট ভরবে তো? পেট ভরলে ঠিক তৃপ্তি পাবে তো?...... উত্তর সময়ই বলে দেবে।
- 0 মন্তব্য