কোচ নাটকের ইতিবৃত্ত
পোস্টটি ১১২০৩ বার পঠিত হয়েছে''দিগন্তে যদিবা দিয়াছে ডাক/ খালেদ দিয়া চলিয়া যাক/ খালেদ ভাইয়ের বিদায়-ওয়াশ/ কোচের জুতায় কোর্টনি ওয়ালশ/ কোর্টনি তে ভালই যাচ্ছে কেটে/ সভাপতি মশাই সবুর বসে''
চাইলে গত সাত মাস নিয়ে এমন একটা কবিতা লিখেই ফেলা যায়। বিশেষ করে গত এক দেড় মাস ছাড়া প্রথম তিন মাসে কোচ নিয়ে বিসিবির বিজ্ঞ পরিচালকদের কাউকে কি তেমন 'তটস্থ' থাকতে দেখা গেছে? সবার মধ্যেই কি 'যাচ্ছে তো চলুক না' ভাব দেখা যায় নি?
ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়। বারংবার সাফল্য দেয়া বিতর্কিত চন্ডিকার মনে হল 'টাইগারদের জন্যে আর কিছুই দেবার নেই'। সেই সিরিজেই শোরগোল উঠল তামিম ইকবালের সাথে চন্ডিকার ব্যাট ছোড়াছুড়ির রমরমা গল্প। তা সেই গল্প ডালপালা মেলবার আগেই তামিম ইঞ্জুরিতে পড়ে দেশে, এবং সবিশেষে এয়ারপোর্টের প্রেস 'কনফারেন্স'- এ তামিম দ্বারাই এ গল্পের মূলৎপাটন।
তো সে গল্প সত্যি না হলেও গুরুর পদ ছেড়ে দেবার মূল সময়টা যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরই তাতে এদ্দিন পর অন্তত সন্দেহ থাকবার অবকাশ নেই। মূল সময়ের 'কেন্দ্রবিন্দু' দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। জানা গেছে, সদা কঠোর চন্ডিকা এই ম্যাচে পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছিলেন সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপরে এবং এরপরই বিসিবি কে মেইল করে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
দেশে ফিরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুখসময়ের কারিগর ভাবা চন্ডিকার পদত্যাগ। জল্পনা কল্পনার জল বহুদূর গড়াবার পূর্বেই অপেক্ষাকৃত কম বেতনে চন্ডিকার শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে কোচের চাকরি গ্রহণ। ব্যাস! শেষ তবে তাই চন্ডিকা অধ্যায়।
চন্ডিকার বিদায়ের পর বিসিবি কর্তারা এমন 'দৌড়ঝাপ' শুরু করলেন যেন আজ বাদে কালই কোচ আসল বলে। বিপিএল এর মধ্যেই দুই কোচ এলেন, পরিকল্পনা দিলেন, সাকিব তামিম দের পছন্দ হল না বলে পত্রপাঠ দেশও ছাড়লেন।
ততদিনে কোচ খুজে না পেয়ে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে 'টেকনিক্যাল ডিরেক্টর' নামধারী কোচের আসন বর্তানো হল ঘরোয়া ক্রিকেটে অফিসিয়াল কার্যাবলির 'সাকিব আল হাসান' বনে যাওয়া খালেদ মাহমুদ সুজন এর উপর। প্রথম দুই ম্যাচ পর 'সাকিব আল হাসান' সাহেব নিজের চাকরি পাকা করার কথা ভেবেছিলেন কিনা ঠিক বলতে পারিনা, তবে ভেবে যদিও বা থেকে থাকেন... রাত ফুরিয়ে সকাল দেখতে তার সময় লাগল না মোটেও। শেষ তিন ম্যাচের একটিতে 'হারতে হারতে জিতে যাওয়া' আর শেষ দুটিতে 'নিরঙ্কুশ' পরাজয় অন্তত তাই প্রমাণ করে।
তা এরপর তিনি নিজেও আর এ পদে থাকতে চাননি, বলাই বাহুল্য বিসিবিও তাকে আর এ পদ দেয় নি। 'বিদেশী কোচং আস্থা অর্জনং' মন্ত্র পাঠ করে বিদেশী তকমা ধারী কোর্টনি ওয়ালশ কে দেয়া হল কোচিং এর গুরুর পদ। তা 'ক্যাপ্টেন মাইন্ডেড' ওয়ালশ যে অনেক বেশি খারাপ করেছেন তা তো বলা যাবেই না.... বরং অনেক বেশি ভাল ফলই এনে দিয়েছেন। ঘরের মাঠে হোয়াইট ওয়াশ হওয়া টাইগাররা যে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শ্রীলঙ্কাকেই হারিয়ে ফাইনাল খেলে 'জিততে জিততে হেরে' যাবে তা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল?
তা এসব সাফল্য-টাফল্য দেখে বিসিবি কর্তারাও বোধ করি আমাদের মত মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছিলেন, নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের দু:খ ভুলে কোচ খোজার ফুরসত তাদের মেলেনি, যেমন আমরাও পারিনি ফাইনাল পরবর্তী সাতদিন ঠিকমত ঘুমুতে (আমাদের সাতদিন লাগলে ক্রিকেট-অন্তপ্রাণ বিসিবি কর্তাদের কতদিন লাগবে ভাবুন)!
এরপর যখন তারা কোচ খুজতে একান্তই লেগে গেলেন তখন বাধল দ্বিতীয় গোল। 'কোচদ্বিগেরা' আমাদের দেশে আসতে যদিও বা গাঁইগুই করে রাজি হন, বাঁধ সাধে তাদের পরিবারে।
এমত অবস্থায় কোচ-নাটকে আবির্ভাব গ্যারি কারস্টেনের। বেশ কয়েকদিনের সফরে তিনি কথা বলেছেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে- নি:সন্দেহে এটা খুব ভাল উদ্যোগ! আগে কখনও যাদের জন্যে গুরু ঠিক করা হবে তাদেরই মত চাওয়া হয়নি। বেশ বাছবিচার করে তিনি বিসিবি কে পরামর্শ দিলেন তিন ফরম্যাটে তিন কোচের। (একজন কোচই পাই না সাত মাস হল, একসাথে তিনজন কারস্টেন কোত্থেকে এনে দেবেন কে জানে!)
শেষ দৃশ্যে কারস্টেন চলে যাবার আগে বিসিবি কে বলে গেলেন কোচিং প্যানেলে একজন দেশী কোচ রাখার আর তার জন্য ভোট দিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অফিসিয়ালস এ 'সাকিব আল হাসান' কে নয়.. আসল সাকিব আল হাসানের প্রিয় গুরু সালাউদ্দিন স্যারকে। তবে এখানেও হাইফেন রাখতে হচ্ছে বৈকি... 'সাকিব আল হাসানের' বিচরণক্ষেত্রে তিনি বাদে সালাউদ্দিন ঢুকে যাবেন এ যে বিসিবি 'সুইসাইডাল এফেক্ট' এ হলেও হতে দেবে না তা কি আর বলে দিতে হয় মোদের!
সামনে উনিশ বিশ্বকাপ! দলের মধ্যে বিশ্বকাপ-পরিকল্পনা বলে কি আদৌ কিছু আছে? যার সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়েছে সবথেকে বেশি সেই বিসিবি বসও আনতে পারেননি একখানা কোচ। সাত মাসে দেশে শীর্ষ একজন নেত্রী জেলে গেলেন, ভেট্টরি রাজশাহী কিংসের দায়িত্ব নিলেন, কোটা আন্দোলন হল আর বাতিলও হল, ঘরোয়া ক্রিকেটে 'জাতীয় দল নয় আবাহনীই সৌভাগ্যংশয়ী' মেনে মোসাদ্দদেকও আবাহনীতে খেলে গেলেন, ক্রুশাল ম্যাচে আবহনী বহির্ভূত দুই খেলোয়াড় আবাহনীকে জিতিয়েও দিল..... আমরা শুধু একজন হেডকোচ পেলাম না।
শেষদৃশ্যে? এ নাটকের আবার শেষদৃশ্য আছে? কোচ খোজা চলছে.. চলছে তো চলুক না!
- 0 মন্তব্য