গায়ানাতে বাংলার রাজত্ব
পোস্টটি ২৭৩৪ বার পঠিত হয়েছে২০০৭ বিশ্বকাপের জন্য গায়ানার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামটা তৈরি করা হয়েছিল বিরানভূমির মাঝে, এখন মনে হচ্ছে স্টেডিয়ামটা যেন বাংলাদেশের উৎসবের জন্যই বানানো! উইকেটটা ঠিক ক্যারিবীয় ফ্লেভারের নয়, তার থেকে বল যেন আসে একটু থেমে, চাইলে জিরিয়েও নেয়া যায়, ঠিক যেন সাগরিকা-মিরপুর! এই ধরনের উইকেটই যেন সবচেয়ে প্রিয় বাংলাদেশ দলের, ট্রু ব্যাটিং উইকেটের থেকে এই স্লো উইকেটেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য মাশরাফীর ব্রিগেডের! আফগানিস্তান সিরিজ আর এই সফরের শুরুতেই টেস্টের বিভীষিকা যে আমাদের ওয়ানডে সামর্থ্যে এতটুকুও মরচে ধরাতে পারেনি, বরঞ্চ বিপর্যয়টা কাটিয়ে বাংলাদেশ ফিরল প্রবল প্রতাপে, উইন্ডিজকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েই!
মাশরাফীকে দেখলে মনে হয় লোকটার বয়স যেন দিনদিন কমছেই! কেন তিনি টেস্টে খেলবেননা, সেটা নিয়ে বোধহয় আন্দোলনের সময় এসে পড়েছে। দুই মাস ঠিকমত প্র্যাকটিসই করেননি, আর এখানে আসাটাই তো ছিল অনিশ্চিত। স্ত্রীর অসুস্থতায় নিজেও খুব একটা চাইছিলেননা আসতে, কিন্তু শেষমেশ আসলেন, দেখলেন, উড়িয়ে দিলেন! তাঁর এই মানসিক দৃঢ়তা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। চার উইকেট নিয়েছেন, এরমধ্যে তিনজন কিনা একাই ক্লিন হিট করে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। লুইসের উইকেট নিয়েছেন স্লোয়ারে, চাপে একদম পিষে ফেলে। স্লোয়ার কাটারে মাশরাফী সেরা, আর সেটার এক দারুন প্রদর্শনীই যেন চলল প্রভিডেন্সে। ছক্কা খেয়েও সেই স্লোয়ারেই তুলে নিয়েছেন হোল্ডারকে, আর সবচেয়ে দামি উইকেটটা যেন নিখুঁত পরিকল্পনারই ফসল। রাসেল হিট করছিলেন, কিন্তু অফ কাটারে কাটা পড়লেন, কোথায়? সেই লং অনেই! লাইন, লেংথ, ভ্যারিয়েশন- ম্যাশ অনন্য!
মাশরাফীর সাথে সাকিব, কাপ্তান আর ভাইস কাপ্তান যেন নেতৃত্বটা দিলেন সামনে থেকেই। সাকিব যেকোন ফর্ম্যাটে আমাদের সেরা, বিশ্বসেরাও। ওয়ানডাউনে নেমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বটাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়ই যেন সুপারম্যান! সেঞ্চুরি মিস করেছেন, কিন্তু তাতে যেন সাকিবের বীরত্ব আরো বেড়েই যাচ্ছে। চাইলেই সেঞ্চুরিটা করতে পারতেন, কিন্তু সাকিব খেলেন দেশের জন্য। ২০১২ র খুলনা টেস্টে এই উইন্ডিজের সাথেই ৯৭ তে কাটা পড়েছিলেন, শেষ বিকেলে কিসের ভূত চেপেছিল তাঁর মাথায় কে জানে! আবার সেই ৯৭, আফসোসের, গর্বের!
সাকিবের সেরা ইনিংস নয়, কিন্তু অন্যতম কার্যকর অবশ্যই। নিজের সহজাত স্ট্রোক প্লে থেকে সংযত ছিলেন শুরুতে, কিন্তু স্ট্রাইক রেটটা ঠিকই আশির উপরে। শৈল্পিক ইনিংস নয় অবশ্যই, শ্রমিকের ঘামে তিলে তিলেই গড়ে তুলেছেন এক মহাকাব্য। এই উইকেটে বল ব্যাটে আসতেই চায়না, সেখানে স্ট্রাইক রোটেটের কোন বিকল্পই নেই। সাকিব সেই কাজটা করেছেন দারুনভাবেই, তামিমের সাথে জুটিটা আমাদের ওয়ানডে ইতিহাসের সেরাগুলোর কাতারেই থাকবে। তিনে যখন নেমেছিলেন তখন শংকা ছিল, বিজয় যে শুরুতেই ফিরে গিয়েছিল। হোল্ডারের সুইং আর রাসেলের বুক ধেয়ে আসা বল বেশ ভালভাবেই সামলেছেন, মাঝের ওভারগুলোতে নার্সের বলও কিন্তু শার্পলি টার্ন করছিল। সাকিব লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে, কিন্তু মাত্র তিনের আফসোসটা থেকেই যাবে।
খান সাহেবের কথা আসছে একদম শেষে, কিন্তু সেঞ্চুরি করে তো তার ম্যাচের নায়কই বনে যাওয়ার কথা। কিন্তু চল্লিশ ওভারের পরেও স্লগ করতে না পারা, তামিম ঠিক সাহসী ক্রিকেটটা খেলতে পারেননা এখন আর। উইকেট স্লো, তার উপর ৪৩ রানে ভূত!শুরুর দিকে তামিমের অ্যাপ্রোচ নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠবেনা, পরিস্থিতি বিবেচনায় তামিমের স্থিতধী ক্রিকেট হাততালিই পাবে। তামিমের এই ইনিংসটা হয়ত সেরার কাতারে থাকবেনা কখনোই। কিন্তু যেই একাগ্রতা আর পরিশ্রম, সেটা অবশ্যই মনে রাখতেই হবে। আর মুশফিকের আন্ডাররেটেড হিটিং অ্যাবিলিটির কথা কি বলবেন, শেষ তিন ওভারে যেই ঝড় সেটাতেইতো লন্ডভন্ড গায়ানা! ক্লিন হিটের চূড়ান্ত এক উদাহরন, ছোট মরিচের যে কি ঝাল!
এবার পালা সিরিজ জয়ের, হয়ে যাক গায়ানাতেই!
- 0 মন্তব্য