ওয়ানডে জয়ের অন্তরালে
পোস্টটি ২৮৮০ বার পঠিত হয়েছেসাদা চোখে উইন্ডিজকে ২-১ এ সিরিজে হারানো দারুন একটা অর্জন মনে হতে পারে, কিন্তু এই সিরিজে আমরা কি খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পেরেছি? আমার মনেহয়না আমরা আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পারফর্ম করতে পেরেছি, বরঞ্চ সিরিজ জয়টা এসেছে মোটামুটি মানের ক্রিকেট খেলেই। তামিম অবশ্যই দূর্দান্ত ছিলেন, কিন্তু তারপরেও তাঁর যেই ক্যাপাবিলিটি, সেটার পুরোটা কিন্তু দেখতে পারিনি আমরা। সাকিবকে দেখে মনে হয়েছে নিজের সামর্থ্যটাকে নিংড়ে দিতে পেরেছেন, কিন্তু তিনটি ইনিংসের মধ্যে অন্তত একটাতে সেঞ্চুরি না পাওয়াটা ব্যার্থতাই। দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব ম্যাচটা শেষ করে দিয়ে আসতে পারতেন, তৃতীয় ম্যাচে যথেস্ট সুযোগ ছিল ইনিংটা বড় করার। বোলিংয়ে তিন ম্যাচেই যথেস্ট ত্রাস সৃষ্টি করেছেন রাইটিদের বিপক্ষে, কিন্তু হেটমেয়ারের বিপক্ষে বেশ সাদামাটাই লেগেছে সাকিবকে। ব্যাটিংয়ের কাজটা বেশ ভালভাবে করলেও বোলিংটা ঠিক সাকিবসুলভ হয়নি, এটাও মাথায় রাখতে হবে ১০ ওভার বল করে প্রায় ওপেনিংয়ে নেমে যাওয়াটা শরীরের জন্য বেশ ধকলেরই।
ফিল্ডিংটা নিয়ে এখনো অনেক কাজ করার বাকি। ইংল্যান্ডের মাইনর কাউন্টির যেকোন দলের ফিল্ডিংয়ের মান আমাদের থেকে ভাল। এমনকি সাকিবের ফিন্ডিংয়ের মান আগের থেকে নিচে নেমে গিয়েছে, মাশরাফীও বেশ কিছু মিসফিল্ড করেছেন। দলের সেরাদের যখন এই অবস্থা তখন বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, ক্যাচিং সবকিছুর অবস্থাই জঘন্য। রায়ান কুককে ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কষ্ট করাতে হবে, আরো হার্ড ড্রিল নিশ্চয়ই তার নোটবুকে যোগ হয়ে গিয়েছে। শেষ ম্যাচটা দুটা ক্রুশিয়াল চান্স ফেলেছে রুবেল আর সাব্বির, এই লেভেলে এসে হাতের মুঠোয় এনে ড্রপ করা অপরাধই। এই দুটো ড্রপ আমাদের সিরিজ হারার কারন হতেই পারত, বাট শাই হোপের একটা ধন্যবাদ অবশ্যই পাওনা!!!!
ক্যাচ ফেলা ডালভাত, সেই সাথে গ্রাউন্ড ফিন্ডিং দেখায়াই পীড়াদায়ক। স্ট্যাম্পে থ্রোয়িংয়ের স্কিলে বড় রকমের চিড় ধরেছে, স্ট্যাম্পের থেকে দুই তিন মিটার দূরে এলোমেলো থ্রো মানার মত না। ফিল্ডিংয়ে চাইলেই বিশ্বমানের দল হয়ে ওঠা যায়, কিন্তু এজন্য অবশ্যই একাগ্রতা থাকা জরুরি। এমনকি থ্রোয়িংয়ের সময় স্ট্যাম্প এন্ডের ক্রিকেটার কিভাবে থাকবে সেটা নিয়েও স্পষ্টতার অভাব রয়েছে, আমাদের সেরা ক্রিকেটারদের অবস্থাও খুব একটা সুবিধের নয়।
ব্যাটিংয়ে সবকিছুই আছে আমাদের, শুধু ওপেনিংয়ে আর লোয়ার মিডলে ১৩০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে পারে নিয়মিত এমন দুইজন ব্যাটসম্যান খুবই দরকার। কোনদিন মাহমুদুল্লাহ, কোনদিন সাকিব হয়ত আচমকা আক্রমনে ম্যাচটা জিতিয়ে দিবেন, কিন্তু নিয়মিতভাবে ভাল করতে হলে অমন ব্যাটসম্যানের কোন বিকল্প নেই। বিজয় প্রমান করে দিয়েছে আমাদের ডোমেস্টিকের আসল মান কি, কেন তুষার, নাফিসরা দলের ঢুকতে পারেনা। বিজয়ের জন্য আপাতত কোন সুযোগ নেই আর, সে নিজের খেলার ধরন নিয়েই যথেস্ট দ্বিধান্বিত। এমন কনফিউজড ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করা ভুল।
বোলিংয়ে মাশরাফী চমকটা চলছেই। কিভাবে ব্যাটসম্যানকে রিড করতে হয়, এটার একটা মাস্টারপিসই ম্যাশ। কাটারে এই সিরিজে মুগ্ধই করেছেন ক্যাপ্টেন, তবে বাকি পেসারদের অবস্থা খুব একটা আশা দিবেনা। মুস্তাফিজ উইকেট পেলেও একেবারেই সাদামাটা বোলিং করেছেন, ১২৫-১২৯ পেসে কতটুকু কার্যকর হবেন সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ভ্যারিয়েশনের বেশ অভাব রয়েছে ফিজের মধ্যে, আগের মত ডেডলি ইয়র্কারটাও দেখা যায়না। ডেথে এই ইয়র্কারের তেমন কোন বিকল্প নেই, তবে এটার প্রয়োগটা কারোর কাছেই দেখা যায়নি। স্লোয়ারে বাজিমাত করেছেন ম্যাশ, তবে বাকিরা চেষ্টাই করেননি।
বোলিংয়ে একটা রিস্টস্পিনারের অভাবটা বেশ অনুভূত হচ্ছে, মিরাজ আর সাকিব মিলে কোনমতে পুষিয়ে দিতে পারলেও সেটা প্রতিপক্ষকে পিষে ফেলার মত না। সাকিবের কাছে ওয়ানডাউন সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে বোলিংয়েও মূল চরিত্র হয়ে ওঠার দাবি করাটা বাড়াবাড়ি, আর মিরাজের লাইন লেংথ সর্বস্ব বোলিং দিয়ে প্রতিদিন পার পাওয়াটা কঠিন। মিরাজ এই সিরিজে অবশ্যই প্রশংসা পাবার মতই বোলিং করেছে, কিন্তু ফিঙ্গারস্পিনারদের জন্য একা ম্যাচ জেতানো কঠিনই। তবে এই সিরিজে মিরাজ বাজিমাত করেছেন লাইন আর লেংথটা দিয়েই। গায়ানায় স্পিনারদের জন্য যথেষ্ট সাহায্য ছিল, সেখানে মিরাজের বোলিংয়ে রীতিমতো কেঁপেছেন গেইল। কিন্তু ব্যাসেতেরের ছোট মাঠেও দুরন্ত মিরাজ, শুকনো উইকেটেও দারুনভাবে আটকে রাখতে পেরেছেন গেইল লুইসকে।
এই সিরিজটা আমাদের অনেক দূর্বলতা এক্সপোজড করে দিয়েছে, এখন সময় এগুলো নিয়ে কাজ করার। যথেস্ট ফাকফোকর এখনই আছে, এশিয়া কাপের আগেই কাটিয়ে উঠতে হবে এগুলো।
চোখটা দুবাইতেই, এবার চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলে আর কবে?
- 0 মন্তব্য