স্বপ্নচূড়ায় উনিশ (পর্ব-২)
পোস্টটি ৪৯৩৬ বার পঠিত হয়েছেসাকিবের কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন মিরাজ। মিরাজকে এখন খুঁজতে হবে সৈকতকে। সাকিব বলে দিয়েছেন মিরাজ আর সৈকতকে নিয়ে বসতে চান তিনি। হোটেল লবিতে চলে এলেন মিরাজ, চোখ খুঁজে ফিরছে সৈকতকে । একটু দূরে দেখা গেল সৌম্য, লিটন আর শান্তকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে যাচ্ছেন তামিম।
পরিকল্পনাটা বুঝতে পারছে না মিরাজ। বুঝবেই বা কি করে? দলের লিডারশীপ গ্রুপের পরিকল্পনা দলের সবাইকে বলে দিলে আবার চলে নাকি?
মূল ঘটনা জানতে ১ দিন পেছন ফেরা যাক। ১৩ ই জুলাই, ২০১৯। সন্ধ্যা ছয়টা বেজে বারো! অধিনায়ক মাশরাফির ঘরে জড়ো হয়েছেন সাকিব, রিয়াদ, মুশফিক আর তামিম।
'কি ব্যাপার মাশরাফি ভাই? টিম মিটিং বাদেও আলাদা করে ডাকলেন.. ' হাসিহাসি মুখ করে বললেন রিয়াদ!
'দাঁড়া বলছি...' বলে থামলেন মাশরাফি।
আচার্যের কথা বলার জন্যে পরিবেশ দরকার হয়। হঠাৎ তৃতীয় তলার খোলা জানালা দিয়ে সাঁই সাঁই করে বাতাস ঢুকতে আরম্ভ করল। প্রকৃতি বড় অদ্ভূত, বিনম্র চাওয়া মাঝে মাঝে প্রকৃতিই পূরণ করে দেয়। বাতাস কি তবে অধিনায়ককে শুরু করবার অনুমতি দিয়ে দিল?
'শোন.. একটা ফাইনাল জিততে সব থেকে বেশি দরকার হয় মানসিকতা, শক্ত মানসিকতা। ফাইনালে যে দুইটি দল রোল করে তারা প্রায় সমান অবস্থায় থাকে। এখন সেই দলই জিতবে যে দলটা বেশি বিশ্বাস করে, একদম সাকিবীয় বিশ্বাস..' সহ অধিনায়কের সাথে খুনশুটি করবার লোভ সামলাতে পারলেন না মাশরাফি!
মাশরাফি বসেছেন খাটের উপর! দূরে সোফাতে নড়েচড়ে বসলেন রিয়াদ আর মুশি । সাকিব তামিম দূরের একটা কাউচ টেনে নিয়ে এসে বসেছেন।
সকলেই চুপ। সবাই জানে মাশরাফির বক্তব্য শেষ হয়নি। তিনি এটা বলতেও ওদের ডাকেননি। পরবর্তী বক্তব্যের অপেক্ষা করতে লাগল সবাই। আরেকবার জোর বাতাস!
'তাই আমার মনে হয় আমরা নতুন একটি কাজ করে ফেলি। বলা যায়, পলিক্যাপ্টেন্সি!'
'পলিক্যাপ্টেন্সি?' ঠিক যেন বুঝতে পারলেন না সাকিব। সামনে ঝুঁকে এলেন। বাকি সবাইও ঠিকঠাক বুঝতে পারছেন না। কোন ক্রিকেটীয় টার্মেই এমন শব্দ খুঁজে পায়নি তারা!
'হ্যা, মানে হল আমরা প্রত্যেকেই দলের অধিনায়ক'
হেসে উঠলেন তামিম, 'সে তো এমনিতেও প্রায় হয় মাশরাফি ভাই'
বলে চললেন মাশরাফি, 'ব্যাপারটা খোলাসা করি। কাল সকালে আমরা পুরো দলটাকে নিয়ে কয়েকটাভাগে ভাগ হয়ে যাব। সবাই নিজের নিজের সেক্টর নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করব! যেমন ধর তামিম আলোচনা করবে লিটন, সৌম্য আর নাজমুলকে নিয়ে। সাকিব বসবে মিরাজ আর সৈকতকে নিয়ে। স্পেশালি মিরাজকে শক্ত করাটা খুব দরকার। বলতে পারিস, ফাইনাল ম্যাচের 'কি' রোলটা আমরা ঠেলে দিচ্ছি মিরাজের দিকে। জেসন রয়কে আগে ফেরানোটা সবথেকে জরুরী, এতে মুশিরও লাভ... হা হা ' বলে হেসে উঠলেন তিনি!
গম্ভীর কথাবার্তার মাঝে এমন সরল কিছু ঢুকিয়ে দিলে আলোচনা জমতে বাধ্য। মাশরাফি এটা প্রায়ই করেন।
বলে চললেন ক্যাপ্টেন, 'জেসন এই টুর্নামেন্টে দুইটি সেঞ্চুরি করেছে। প্রত্যেকটাতেই শুরুর থেকে আক্রমণে গিয়ে! প্রথম পর্বে ইংল্যান্ড যে ম্যাচটা হেরেছে সে ম্যাচটাতে ভারতের কুলদ্বীপ প্রথমেই জেসনের উইকেট তুলে নেয়। শ্রীলঙ্কার সাথে যে ম্যাচটাতে ইংল্যান্ড হারতে হারতে জিতল সেটাতেও সান্দাকান আর্লি উইকেট তুলে নেয় জেসনের। রুটের জন্যে এই বিশ্বকাপটা ভাল যাচ্ছে না! আমাদের তাই ফেরাতে হবে জেসনকে!'
'সান্দাকাল বা কূলদ্বীপ দুজনই চায়নাম্যান! আমাদের দলে কিন্তু চায়নাম্যান নেই। মিরাজ কি কাজটা সামাল দিতে পারবে?' রিয়াদের জিজ্ঞাসা!
'আমার মনে হয় কাজটা খুব ভালভাবেই সে পারবে। আমার ধারণা মিরাজ সান্দাকান থেকেও বড় মাপের বোলার। মিরাজের পক্ষে কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব হবে না। ' উত্তর দিলেন সাকিব!
'প্লেয়িং ইলেভেন কি চূড়ান্ত হয়েছে?' মুশি জিজ্ঞাসা করলেন।
'৭নং পজিশন নিয়ে দ্বিধাতে আছি আমি। সৈকত নাকি সাইফুদ্দিন কাকে খেলাব ঠিক করিনি' অধিনায়কের জবাব!
'দুজনকেই খেলানো যাবে না, আরিফুলকে আমাদের লাগবে!' কথা বাতলে দিলেন মুশি!
'মিরাজ যেহেতু আছে, এক্সট্রা অফ স্পিনার হিসেবে তাই সৈকতকে অনেক বেশি দরকার নেই। আমরা সাইফুদ্দিনের দিকে যেতে পারি । কিন্তু আরিফুলকে পেস বোলার ধরলে তাহলে সাইফুদ্দিনসহ দলে পেস বোলার হয়ে যায় ৫ জন! এখানেই দ্বিধা। সৈকত আর সাইফুদ্দিন দুজনকেই অবশ্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উইকেট দেখে একজন কে নেব!' বললেন সহ-অধিনায়ক।
'এখন তো সৌম্যও বোলিং করে প্রায়। সে হিসেবে তাহলে দলে পেস বোলার কিন্তু ৬ টা অপশন হয়ে যায়। স্পিনে ওদিকে আবার সাকিব মিরাজ আর রিয়াদ! তবে?' তামিমের জিজ্ঞাসা!
অধিনায়ক ভাবছেন। ঘাড় বাঁকিয়ে ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে একেবারে 'মাশরাফীয় ভঙ্গি' যাকে বলে! অধিনায়ক ভাবছেন আর সবাই তাকিয়ে আছে। এই মানুষটার উপর সকলের অগাধ বিশ্বাস। সবার মধ্যে কোথাও একটা জায়গায় এই বিশ্বাস আসন গেড়ে বসেছে যে অধিনায়ক ভুল করবেন না। প্রান্তর মরু পাড়ি দিয়ে হলেও তিনি একটি উপায় ঠিকই বাতলে দেবেন। হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে সাকিবের দিকে ফিরলেন তিনি। চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এক মূহুর্ত কেউ কিছু বুঝতে পারলেন না! পরক্ষণেই বাকি তিনজনের ঠোটে হালকা হাসির ঝিলিক দেখা গেল!
- 0 মন্তব্য