• ক্রিকেট

পাঁচালীর পাঠ

পোস্টটি ১৪৫৮১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে কোথায় দেখতে চান? এমন প্রশ্ন যদি দেশের তাবৎ ক্রিকেটপ্রেমীদের করে বসি, 'সিলিং ফাংশন' এ ১০০% ই হয়তো উত্তর দেবেন বেগুণী মঞ্চের 'চ্যাম্পিয়ন' লেখা ব্যানারের পেছনে!

ক্রিকেটপ্রেমী ছাড়িয়ে আরেকটু গভীরে যদি ক্রিকেটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তবে সৌজন্যের খাতিরে তারা যাই-ই উত্তর দিক না কেন এবারের বিশ্বকাপ অন্তত বাংলাদেশ শুধুই খেলতে যাচ্ছে না এটুকু নিশ্চিতভাবেই তারা মনে আর প্রাণে দুইয়েই বিশ্বাস করেন।

তা ব্যানারের পেছনে দাঁড়াতে টিম বাংলাদেশ কতটা তৈরি? বেগুনী মঞ্চে ওঠার ম্যাচ অব্দি পৌছাতে বাংলাদেশ কতটা শক্তপোক্ত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে? দলের লাইনআপই বা কতটা ঠিক হল?

এই গত কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ দলের প্রথম ও প্রধান সমস্যা ছিল 'তামিমের ওপেনিং সঙ্গী' নির্বাচন! ২০১৫ সালের পর থেকে সবথেকে বেশি ডিপেন্ডেবল মিডল অর্ডার যে দলটার সেই দলটার টপ অর্ডার যেন শুধুই একজন তামিম ইকবাল। বন্ধুর একাকীত্বে বান্ধবী চাই, বন্ধু হলেও ক্ষতি নাই। তা বান্ধবীর যোগান দেওয়া সম্ভব নয়, তাই টপ অর্ডারে তামিমের 'সঙ্গী' বনে গেলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তামিম নামবেন কাকে নিয়ে? একে তাকে বাছাই করা হল, এবং প্রত্যেকেই ব্যার্থ হল। শেষ অব্দি এক বিশ্বকাপ দিয়ে বাদ পড়ে আরেক বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় খেলানো হল আনামুল হক বিজয়কে! তা অবস্থা সেই তথৈবচ!

তবে ওপেনিং স্লটের সেই সমস্যা দূর হয়ে ফিশন বিক্রিয়ার মত নতুন এক 'ওপেনিং সমস্যার' জন্ম দিয়ে গেছে। তবে এইবারের সমস্যা টিম বাংলাদেশের নয়, টিম বাংলাদেশ যারা নির্বাচন করেন তাদের।
একই সাথে চার ওপেনার সেরা ফর্মে থাকলে কপালে যে ঘাম বিন্দু বিন্দু জমেই!

ওপেনিং স্লটে এখন পাঁচজন অপশন হলেন-
১/ তামিম ইকবাল
২/ ইমরুল কায়েস
৩/ লিটন কুমার দাস
৪/ সৌম্য সরকার
৫/ নাজমুল হোসেন শান্ত

এখন 'কথা' হল দুইটা! প্রথমত, বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া একটা দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাফ-সেঞ্চুরির বন্যা বইয়ে দিলে তাকে বিশ্বকাপের জন্যে ফাইনাল তো করা যায়ই না, এমনকি 'সেমি-ফাইনাল' করাটাও পাপের শামিল!

ইংলিশ সামারে ইমরুল কায়েস টেন্ডাই চাতারাকে পাবেন না, লিটন দাসকে একের পর এক লেগ সাইডে ডেলিভারি দেওয়া হবে না, সৌম্য সরকার ডাউন দ্যা ট্রাকে বারবারই উঠে আসতে পারবেন না। তাই এই তিনজনের মধ্যে থেকে কাউকে নির্বাচন করে ফেলতে হলে আমাদের অন্তত উইন্ডিজ সিরিজ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!

পাঁচ অপশনের মধ্যে তামিম ইকবাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাচ্ছেন। তিনি থাকছেন। বাকি স্লটটার জন্যে প্রতিযোগী ৪ জন।
লিটন কুমার দাসকে যদি একান্তই সুযোগ পেতে হয় তবে তাকে প্রথম এবং একমাত্র শর্ত হিসেবে ধারাবাহিক হতে হবে। রশিদ খান, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, বিলি স্ট্যানলেক কে সামলাতে পারবেন কিনা সে প্রশ্নে লিটনকে অন্তত গ্রেস দিয়ে হলেও এ প্লাস দেওয়া যায়, কিন্তু ধারাবাহিকতার প্রশ্নে লিটন যোজন যোজন পিছিয়ে যাবেন। কেননা এক বিশ্বকাপের মাত্র একটি ম্যাচ খেলার জন্যে লিটনকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে না।

ইমরুল কায়েস আছেন ধারাবাহিকতার প্রশ্নে বেশ এগিয়ে। চলতি সিরিজে রেকর্ড করে নিজের দাবিটা ভালভাবেই জানিয়ে রেখেছেন তিনি। পরিশ্রমী এই ক্রিকেটার স্পিন টা ভাল খেলেন বলে বেশ শুনাম আছে! কিন্তু জিম্বাবুয়ে বদলে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড হলে তাকে সামলাতে হবে টেন্ডাই চাতারার বদলে মার্ক উড, মিচেল স্টার্ক বা ট্রেন্ট বোল্ট কে! তার জন্যে ইমরুল কতটা তৈরি? উত্তরটা উইন্ডিজ সিরিজেই অনেক খানি পাওয়া যাবে!

সৌম্য সরকার যে ধরণের পিচে রান করতে ভালবাসেন ঠিক সে ধরণের পিচ তিনি বিশ্বকাপে পাবেন। তাহলে কি সৌম্যকেই তামিমের সাথে পাঠিয়ে দেব? না, তেমনটি হচ্ছে না। চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচে যে ধরণের পিচে সৌম্য সেঞ্চুরি করেছেন সে ধরণের পিচে একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে আউট না হওয়ার চেয়ে আউট হওয়াটাই বেশি কষ্টকর! ফুটওয়ার্কে উন্নতি করা সৌম্যকে তাই এখনও নিজেকে প্রমাণ করার বাকি আছে। মুফতে অন্তত কাউকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হবে না!

নাজমুল হোসেন শান্তর পেছনে বিসিবির বিনিয়োগ প্রচুর। হাইপারফর্ম্যান্স দলের হয়ে তিনি ইংল্যান্ড সফরে গেছেন বেশ কয়েকবার। এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে তাকে হঠাৎ সুযোগ দেয়া হলেও তিনি ব্যার্থ হয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছন্দ খুঁজে পেলে তিনিও পারেন দাবি তুলতে। বহু সাধের শান্ত যে বিসিবির পরিকল্পনাতেও আছে, ছিল বিগত সিরিজগুলোতেও!

৩ নং পজিশানে সাকিব আল হাসান খেলছেন, ৪ নং এ মুশফিকুর রহিম আর ৬ নং এ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ টিমকে এই ৩ টি জায়গা নিয়ে অন্তত চিন্তা না করলেও চলছে। তিনজন চ্যাম্পিওন পারফর্মার নিজেদের কাজটা ৩,৪ আর ৬ এ ঠিকই করে দেবেন। গোল বাঁধবে ৫ নং পজিশন নিয়ে।

আপাতত এই জায়গাটি দেয়া হয়েছে মোহাম্মদ মিথুনকে এবং তিনি তার দায়িত্ব ভালভাবেই সামলাচ্ছেন। ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ৫ নং জায়গাটি তিনিই পাচ্ছেন এতে অন্তত কোন সন্দেহ নেই। তবে তার ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলবার লোকও কম নয়। আরিফুল হক এবং ওপেনিং এ সুযোগ না পেলে সৌম্য সরকারও হতে পারেন মিথুনের প্রতিদ্বন্দ্বী! দুর্দান্ত একটি বিপিএল কাটিয়ে দিলে বিগ হিটার সাব্বির রহমানকেও আপনি কোনভাবেই হিসেবের বাইরে রাখতে পারবেন না।

৭ নং পজিশনে টিম ম্যানেজমেন্টের বহুদিনের চাওয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডারের চাহিদা পূর্ণ হয়েছে। ৩ ম্যাচ সিরিজে সাইফুদ্দিন ভালভাবেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ডেথ ওভারে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে প্রচুর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তবে এটুকুতেই তাকে ৭ নং পজিশন দিয়ে দেবার সম্ভাবনা কম। সামনের সিরিজগুলোতেও তাকে ব্যাটে বলে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।

৮ নং পজিশনে মিরাজকে মোটামুটি নিশ্চিত ধরে ফেলা যায়। বাঁহাতি অর্থোডক্স, কাটার, কুইকি, একুরেট এর সাথে একজন অফ স্পিনার বোলিং লাইন আপ এ যোগ দিলে বৈচিত্র‍্য কোথায় গিয়ে ঠেকে তা কি আন্দাজ করা যাচ্ছে? তাছাড়া মিরাজ দলে থাকতে পারেন তার অলরাউন্ড সামর্থ্যের কারণেও!

৯, ১০ নং এ ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফি বিন মুর্তজা আর সাতক্ষীরা সায়ানাইড মুস্তাফিজুর রহমানকে নিশ্চিত ধরে ফেলা যায়! ধুম্রজাল তৈরি হবে ১১ নং পজিশন নিয়ে! একাদশে চার পেসার নিয়ে খেললে এই ১১ নং এর প্রধান প্রার্থী রুবেল হোসেন। এশিয়া কাপে দুর্দান্ত বোলিং করা রুবেলের বিশ্বকাপ একাদশ অনেকটাই নিশ্চিত। তবে মাঝেমধ্যে লাইন লেংথ হারিয়ে ফেলা রুবেলকে এখন থেকে বেশ সতর্ক থাকতে হচ্ছে। আবু হায়দার রনিও যে বেশ জোরেশোরেই আওয়াজ তুলছেন। ১১ নং পজিশনে আরো দুইজন ঢুকে পড়তে পারেন, ইংলিশ কন্ডিশনে যাদের গতির কথা মাথায় রাখা হতে পারে- তাসকিন আহমেদ, খালেদ আহমেদ!

একাদশে যদি তিন পেসার খেলে তবে একাদশের আরেকজন হতে পারেন কোন ব্যাটসম্যান! তাতে ৫ নং পজিশনের আরেকজন প্রার্থী হয়ত সাইফুদ্দিনকে ৮ এ ঠেলে দিয়ে নিজে ঢুকে পড়তে পারেন ৭ নং এ। তবে তার সম্ভাবনা অল্পই!

বিশ্বকাপের ৭ মাস আগে বিশ্বকাপ একাদশ বলে দেওয়া চরম বোকামী। আপনাদেরকে তাই পাঁচালীর পাঠ পড়াবার জন্যে মাফ করবেন!