অগ্নিঝড়া তামিম, অন্ধকারেই বাংলাদেশ!
পোস্টটি ২২৫১ বার পঠিত হয়েছেনির্ঘুম ভোররাতটা কি দারুনভাবেই সার্থক করে দিলেন তামিম ইকবাল খান, চার টেস্ট বাদে ফেরার মঞ্চটায় হ্যামিল্টনের সকালে একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিলেন কিউইদের। কি অবিশ্বাস্য, বিদ্ধংসী এক ইনিংস খেললেন, শুরুতে মোমেন্টামটা এনে দিয়েছিলেন দলকে, কিন্তু পথভ্রষ্ট সতীর্থরা সেটা আর ধরে রাখতে পারলেন কই! এমন একটা ইনিংস অন্ধকার তাসমান সফরে আলোর সন্ধান দিয়েও দেয়নি দলকে, দিতে দেননি সৌম্য মিথুন মাহমুদুল্লাহরা!
যেরকম গ্রিন টপে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, শুরুর সুইংয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার ভয়টা ছিলই। কিন্তু আদতে দারুন এক ব্যাটিং উইকেট, বাউন্সের সাথে মানিয়ে নিতে পারলে যে এখানে ব্যাটিংটা উপভোগ করা যায়, সেটাতো তামিমই করে দেখিয়েছেন। সাউদি বোল্টরা শুরুতে ফুল লেংথে সুইং করাতে চেয়ে বেদম মার খেয়েছেন তামিমের কাছে, নতুন বলে যেখানে সাউদি বোল্টদের আগুন ঝড়ানোর কথা, সেখানে সাহসী সুন্দর ব্যাটিংয়ে রীতিমতো সাইক্লোন বইয়ে দিয়েছেন তামিম। একের পর এক ফুলার লেংথ বল দিয়েছেন সাউদিরা, সেখানে এতটুকু ছাড় দেননি তামিম। নব্বুইয়ের আগে ওয়াগন হুইলে কাভার ড্রাইভের ছড়াছড়ি, ওয়াগনাররা এরপর হাজির শর্ট বল নিয়ে, সেঞ্চুরি এসেছে দারুন এক পুল শটের বাউন্ডারিতে। শুরুতে কাভার ড্রাইভে শাসিয়েছেন বোলারদের, সেঞ্চুরির পরে মুগ্ধ করেছেন দুর্দান্ত টাইমিংয়ে দারুন সব পুল আর হুকে।
মাত্র ১২৮ বলে ১২৬, হ্যামিল্টনের সকালে তামিম ফিরিয়ে এনেছিলেন নয় বছর আগের দারুন সব স্মৃতিগুলো, লর্ডস, ম্যানচেস্টার কিংবা মিরপুরে ইন্ডিয়ার সাথে দেড়শ রানের ইনিংসগুলোতে এমনইতো আগুন ঝাড়িয়েছিলেন! একটা সময় মনে হচ্ছিল লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাবেন, কিন্তু গ্র্যান্ডহোমকে একটু দেখেশুনে খেলতে গিয়ে সেটা আর হয়নি। আউটটাও হয়েছেন এই কলিনের বলেই, যেভাবে খেলছিলেন ডাবলটা পেতেই পারতেন। স্টিল আ ম্যাগ্নিফিসিয়েন্ট নক ফ্রম হিম, কংগ্রাচুলেশনস!
তামিম যেটা খুব সহজেই করেছেন, সেটাই যেন একেবারেই অসম্ভব বানিয়ে ছেড়েছেন বাকিরা। সাদমান,মুমিনুলরা সেট হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, সাদমান ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই ধরা পড়েছেন শর্ট বলে। এমন ট্রু ব্যাটিং উইকেটে ধৈর্য নামের জিনিসটা ছিটেফোঁটাও ছিলনা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে, শর্ট বলে মারার লোভটা সামলাতে পারেননি কেউই। সাকিব, মুশফিক থাকলে হয়তবা ৪০০ র উপর একটা টোটাল পাওয়া যেত, এই উইকেটে ২৩৪ রীতিমতো খড়কুটো!
এবাদত আর রাহী যেভাবে শুরু করেছেন, সাথে খালেদ এসে দারুনভাবে ছন্দটা ধরে রেখেছেন, তাতে এই পেসত্রয়ী নিয়ে বেশ বড় সম্ভাবনাই দেখছি আমি। হয়ত উইকেট পাননি, কিন্তু একেবারে শুরুতে সৌম্য স্লিপে এভাবে ক্যাচটা না ছাড়লে চিত্রটা ভিন্ন হতেও পারত! দারুন সুইং পেয়েছেন পেসাররা, শর্ট বলেও ভুগিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। শুরুর বোলিংটা নিউজিল্যান্ডের থেকে অনেক ভাল হয়েছে আমাদের, কিন্তু ধৈর্য্য ধরাটা কে শিখাবে আমাদের ব্যাটসম্যানদের! তামিম-মুমিনুলের পার্টনারশিপটা বড় একটা আশা দেখাচ্ছিল, সেখান থেকে দিনশেষে এখন ইনিংস পরাজয় এড়ানোর ছক আঁকতে হচ্ছে!
বড্ড অবিচার হয়ে গেল তামিমের এমন ইনিংসটার প্রতি..
- 0 মন্তব্য