• ক্রিকেট

দ্যা মিস্ট্রি অফ বাংলাদেশ ওপেনিং

পোস্টটি ১২২৭৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

'মর্নিং শোজ দ্যা ডে' - চিরাচরিত প্রবাদ৷ সবার জন্যে সত্য। এবং পুরোপুরি সত্য। তবে.... বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যে আংশিক সত্য৷ গত ৬ বছরে শুধুমাত্র ২০১৫ সাল বাদ দিলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ এর 'মর্নিং' এ তাকালে পুরো দিনটা কাটানোর ইচ্ছে কর্পূরের মত উবে যাওয়ার কথা!

কিন্তু তা হয়নি, এশিয়া কাপেই পুরো গ্রুপ স্টেজ ও ফাইনাল ছাড়া নকআউট এ 'টপ অর্ডার গিফট' করেও আমরা ফাইনালে উঠেছি৷ তবে এইবার কিছুটা ভাবতে হচ্ছে বৈকি! উপমহাদেশীয় শিরোপা আর বিশ্বকাপকে এক কোণে ফেললে তো পাপ হয়ে যাবে!

GettyImages-691109230

তামিম ইকবাল আছেন৷ তামিম জিতলে জিতে যায় বাংলাদেশ । কিন্তু এক তামিম ইকবাল কি আর ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন? যে দলটির টপ অর্ডারের ৩ জনের ভার একজন নেবে, সেই দলটির বিশ্বকাপে তথৈবচ অবস্থা হবে না তো কার হবে?

তামিমের সহকারী বর্তমানে লিটন দাস। এশিয়া কাপ থেকেই এই পজিশনে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।বড় শট খেলার সামর্থ্য, পাওয়ারপ্লে ব্যাবহার, প্রচুর ট্যালেন্ট আর ডানহাতি হওয়ায় অধিনায়ক নির্বাচকদের মন গলানো গেছে৷ সাথে বাকিদের অফ ফর্ম তো ছিলই। লিটন দাসের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর৷ ঘরোয়া ক্রিকেটে রানকে ডালভাত বানিয়ে ফেলা লিটন কিন্তু তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যার্থ। সর্বশেষ নমুনা নিউজিল্যান্ড সফর!

0_2_065806_album

এশিয়া কাপে ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছিলেন। পরের সিরিজে জায়গা পাকা হয়েছিল৷ সুযোগও ছিল, হয়নি কেবল সদ্ব্যবহার। ওপেনিং এ লিটন দাস খেলে ফেলেছেন ১৭ ম্যাচ, করেছেন সাকল্যে ৩৬৪ , এভারেজ ২১.৪১, স্ট্রাইকরেট ৭৯.৬৫৷ এই ৩৬৪ রানের মধ্যে এক ম্যাচেই করেছেন ১২১, বাকি ১৬ ম্যাচের ১৬ ইনিংসে ২৪৩.... গড় ১৫.১৮৭৫!

এই পরিসংখ্যান যতটা বাজে, তারচেয়েও বাজে ছিল লিটন দাস যেভাবে এই ১৬ ম্যাচে আউট হয়েছেন। কখনও লফটেড স্ট্রেইট ড্রাইভ নাকি ডাউন দ্যা উইকেট নাকি এরও মাঝামাঝি কোন শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, কখনও উইকেটে নেমেই টেলএন্ডারদের মত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করেছেন, কখনও বা 'কিছু না করেই ' বোল্ড হয়েছেন। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট টিভিতে সম্প্রচারিত হয় না, যদি হত, আমি নিশ্চিত ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখা লিটনের সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের লিটন দাসকে মেলাতে যে কারোরই বেগ পেতে হত!

বিশ্বকাপের আর বাকি আছে ২ মাসের কিছু বেশি৷ সময়টা খুব বেশি নয়৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সময়ের সবচেয়ে সেরা দলে এই লিটন দাস তার আন্তর্জাতিক ফর্মকে বহাল তবিয়তে চালু রাখলে সকালকে 'সকাল সকাল' ই দেখে ফেলতে হবে সে কথা আর বলার বাকি থাকছে না!

Sarkar

২ মাসের মধ্যে যদি ওপেনিং এ বদল আনতে হয়, কে হতে পারেন আদর্শ বিকল্প?
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওপেনিং এর সবচে সুসময়টা দেখা গেছে ২০১৫ তে । সে সময় তামিমের সঙ্গী ছিলেন সৌম্য সরকার৷ সৌম্য সরকারকে বিকল্প হিসেবে চিন্তা করা যায়৷ ওয়ানডেতে না পারলেও নিউজিল্যান্ডে টেস্টে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন৷ ওয়ানডেতেও প্রথম দুই ম্যাচে ভাল শুরু পেয়েছিলেন, পূর্ণতা দিতে পারেননি। ২০১৮ সালটাও সৌম্যর ভাল কেটেছে, ৬ ম্যাচে প্রায় ৪৩ গড়ে করেছেন ২৫৫ রান।সৌম্য সরকারের ক্ষেত্রে সবসময় যে ভিত্তিটা কাজ করে সেটি হল, দল ঠিক যেমন চায়, সরকার ঠিক তেমনই! আমরা সকলেই জানি, তামিম ইকবাল তার খেলার ধরণ সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলেছেন৷
সুতরাং অন্য পাশ থেকে অবশ্যই কাউকে রানের চাকায় বেগ দিতে হবে, আর তা সরকার বেশ ভালভাবেই পারেন৷ ২০১৬ সালের পুরোটাই ১০ এর নিচে এভারেজে থেকেও সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ৯৯, গড় ৩৪.৪৩! তবে উল্টোপিঠে সৌম্যকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগ টা শুনতে হয় সেটি তার ফুটওয়ার্ক নিয়ে৷ একজন পিঞ্চ হিটিং ওপেনার হিসেবে সৌম্য আত্মবিশ্বাসের সাথেই তার পিঞ্চ হিটিং এবিলিটি দিয়ে এই সীমাবদ্ধতা উতরে যেতে পারেন, কিন্তু গত জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই সরকারের ফুটওয়ার্কে দৃশ্যমান উন্নতি চোখে পড়েছে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনও সৌম্য যেমন চান, ঠিক তেমনই! সরকারকে তাই বিবেচনা করার সুযোগ থাকছেই!

GettyImages-1052677334

'ওপেনিং এর বিকল্প' কানে এলে আপনার কর্ণকুহরে ইমরুল কায়েসের নামটি ঢুকবে না, তা হবে না! এক সিরিজে ৩৪৯ রান করে রেকর্ডবই ওলটপালট করে দেওয়া ইমরুল যখন পরের সিরিজেই ওপেনিং থেকে বাদ, আর তার পরের সিরিজেই দল থেকে বাদ গেলেন, তা আলোচনার খোরাক ছিল৷ বলা বাহুল্য, খোরাক মিটেছে, আলোচনাও হয়েছে বিস্তর! কিন্তু কন্ডিশন যখন ইংলিশ গ্রীষ্ম , ইমরুল কায়েস কি আসলেই সুযোগ পান? ইংলিশ কন্ডিশনে ইমরুল কায়েস খেলেছেন ৫ ম্যাচ, ৫ বারই আউট হয়েছেন, করতে পেরেছেন ১১৯, স্ট্রাইক রেট ৬৩! এখানেও ফিরে যেতে হচ্ছে লিটন দাসের কাছে। ক্যারিয়ার এভারেজ ১৯.৫৪ নিয়ে লিটন দাস বহাল তবিয়তে টিকে গেলেও ইমরুল কায়েস কেন বাদ যাচ্ছেন? উত্তরটি সোজা! ক্রিকেটের উন্নতিতে ক্রমবর্ধমান পরিকল্পনা চাই, লিটন কুমার দাস সেই পরিকল্পনারই অংশ। একটা সময় তরুণ ইমরুল কায়েসকেও এই পরিকল্পনাতে খেলানো হয়েছে, কিন্তু তিনি তখন আত্মউন্নয়নে যথেষ্ট উদাসীন ছিলেন! ১২ বছরের বেশি সময় ক্রিকেট খেলে ফেলার পরও তার শট সিলেকশনের উন্নতি হয়েছে সবে ৩ বছর! অসময়ে তাই ইমরুলকে সুযোগ পেতে হলে বিরাট কিছুই করতে হবে এবং সেটি জিম্বাবুয়ের সাথে নয় (কর‍তে হত উইন্ডিজের সাথে) ৷ এছাড়া উইন্ডিজ সিরিজে পেস বোলিং এর বিপক্ষে তার নড়াচড়াও আশাবাদী করেনি৷

বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের সাথে ননস্ট্রাইকে যেই নামুক, অন্তত কয়েকটা ব্যাপার তাকে মাথায় রাখতেই হবে-

১/ প্রথম পাওয়ার প্লে এর সম্পূর্ণ ব্যাবহার
২/ রানের চাকায় বেগ দেওয়া
৩/ দ্রুত উইকেট না খোয়ানো
৪/ তামিম ইকবাল দ্রুত ফিরে গেলে লম্বা ইনিংসের নিশ্চয়তা দেওয়া
৫/ ইংলিশ সামারে পেস বোলিং খেলা

স্পষ্টতই, সৌম্য সরকার আর লিটন দাস ছাড়া অন্য বিকল্প এই মুহুর্তে পাওয়া সম্ভব নয়! লিটন দাসের পক্ষে আপাতত পরিসংখ্যান না গেলেও কিছুটা যুক্তি দেওয়া যায়। যেমনটা নিউজিল্যান্ড সিরিজের কথা বলছিলাম৷ ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডে মোটামুটি টপ অর্ডারের সবাই ব্যার্থ হয়েছে। তাই লিটন দাসকেই একমাত্র দুষলে কিছুটা অন্যায় কি হবে না? কিন্তু লিটন দাসের ক্ষেত্রে যেটা বলতে হবে, ঘরের মাঠের উইন্ডিজ সিরিজেও তো লিটন দাস ব্যার্থ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আরেকটি সুযোগ যদি লিটন দাস পেতে চান সেটি আয়ারল্যান্ডেই কি অন্তিম সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করা যায়?

এতসব গোলমেলে প্রশ্নের উত্তর সৌম্যকে দিতে হবে না৷ জিম্বাবুয়ে, উইন্ডিজ সব সিরিজেই তিনি সফল৷ নিউজিল্যান্ড সিরিজেও আগ্রাসী পেস বোলিং এ লিটনের তুলনায় সৌম্যকেই স্বচ্ছন্দ লেগেছে, টেস্টে নিখাদ সবুজ পিচে সেঞ্চুরিও করেছেন! তবে কি সৌম্য? কে জানে....৷

আবারও ফিরতে হবে লিটনের কাছে৷ ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে লিটন দাসের সামর্থ্য আছে। উন্নতির সূত্রে তাকে সুযোগ দেওয়ার পক্ষেও যথেষ্ট যুক্তি দেওয়া যাবে! কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই ব্যাক্তিগত উন্নতির সুযোগ কি আমরা তাকে বিশ্বকাপের মত আসরেই দেব? বলার অপেক্ষা রাখছে না, বিশ্বকাপের আসরে অবশ্যই পরীক্ষিত পারফর্মাররাই সুযোগের দাবিদার! সেক্ষেত্রে ক্রমাগত ব্যার্থ লিটন দাসকে আবারও বিশ্বকাপে ওপেনিং এ দেখা গেলে, ক্যাপ্টেন নির্বাচককে বড়সড় একটা বাজিই ধরতে হবে!