• ক্রিকেট

উনিশের পঞ্চদশ

পোস্টটি ৫২৯৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এক অবিচিত্র দিনে ঠেকিবে এখনই / মিলে যাবে অচিহ্নিত কালের পর্যায়ে

 

বিশ্বকাপে পুরো বিশ্বটাই কাঁপতে সময় খুব বেশি বাকি নেই। কাঁপাকাপির এই ঘটনা যারা ঘটাবেন তাদেরও বাছবিচার করতে দলগুলোর নির্বাচকদের মাথার ঘাম টেবিলে ফেলার জোগাড়! নতুন বাংলা বছরের শুরুতেই তাই কেউ 'অবিচিত্র দিনে' সুখবর পাবেন, কেউবা কালের পর্যায়ে পাবেন 'অচিহ্নিত দু:সংবাদ'! সময় কিন্তু খুব বাকি নেই......

 

সূচাগ্র সূচনাতেই তোমায়  / রেখে দেব অনড় পঞ্জিকায়....

 

যে কাজই আপনি করতে যাবেন না কেন, সূচনা তাতে একটা বড়সড় অবদান রাখবে৷ বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়৷ টপ অর্ডারের ৩ জনকে বাছাই করতে হলে তাই বিচক্ষণতার পরিচয় না দিলে হবে না। ৩ জনের ১ জন অটোমেটিক চয়েস, তামিম ইকবাল! আরো ২ টা জায়গার জন্যে ৩ জন প্রার্থী,

১/ লিটন কুমার দাস
২/ সৌম্য সরকার
৩/ আনামুল হক বিজয়

ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন আর দীর্ঘদিনের বিশ্বকাপ পরিকল্পনাতে লিটন কুমার দাস টিকে যাচ্ছেন৷ ১ সপ্তাহ আগেও সৌম্য সরকারের টিকে যাওয়া নিয়েও ভাবনার কিছু ছিল না। কিন্তু ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে ৭ ম্যাচে একবারও পঞ্চাশ ছুতে না পারা সৌম্যকে নিয়ে ফিসফাস শোনা যাচ্ছে যথেষ্টই৷ যদিও এসব কিছু ধোপে টিকবে বলে মনে হয়না, ইংল্যান্ডের পিচ আর ক্লিন হিটিং এর সামর্থ্য বিবেচনায় আনলে বিজয়ের চেয়ে সৌম্যই হবেন বড় পছন্দ! রান তাড়া তো করতে হবে ৩০০ এর ওপরে......

 

ভরসা কোন শব্দ নয় /  এ এক ত্যাগ / জ্বলন্ত মহিমায় সমর্পণের আনন্দ...

 

ক্রিকেটে ভরসা- নির্ভরতা জাতীয় কোন শব্দ যদি লাগাতে হয় তবে তা যাবে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সাথেই৷ গত ২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার আমাদের। টপ অর্ডারের দুর্দিনে তা না হলে অবশ্য আমাদের চলতও না! সেই মিডল অর্ডারে ৪ নম্বরে মুশফিক খেলবেন নিশ্চিত! ৫ এ খেলবেন সাকিব! অটোমেটিক চয়েস মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ আদর্শ কম্বিনেশন আর পর্যাপ্ত বিকল্পের বিবেচনায় এই ক্যাটাগরিতে নেওয়া হবে আরো ৩ জন খেলোয়াড়! এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড সিরিজ সবখানেই মাথা ঠান্ডা রেখে ইনিংস বিল্ড আপের মুন্সিয়ানা দেখানো মোহাম্মদ মিথুনও থাকছেন এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। বাকি থাকল ২ টা জায়গা৷ ডিপিএলে ব্যাট ঠিকঠাক কথা বলছে না ক্লিন হিটার সাব্বির রহমানের। তবুও অধিনায়কের আস্থা এবং নিজেদের খেলা সর্বশেষ ওয়ানডেতেই নিজের ডেব্যু সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া সাব্বির রহমানকে বাদ দেওয়ার চিন্তা এই মুহুর্তে নির্বাচকদের মাথায় আসবে না৷ সাব্বির রহমানকে 'কনফার্মড' ধরে নিলে মিডল অর্ডারে আর ১ টা জায়গার জন্যে সম্ভাব্য পছন্দ ২ জন-

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত
ইয়াসির আলী রাব্বি

সাব্বিরের বিকল্প হিসেবে একাদশ বিবেচনায় ইয়াসির আলী রাব্বি আলোচনায় এসেছিলেন মূলত তার স্ট্রাইক রেটের কারণে৷ কিন্তু ডিপিএলে চরম চাপের মুহুর্তে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপ পঞ্চদশে নিজের জায়গা একরকম পাকা করে নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত৷ এর সাথে সৈকত এগিয়ে থাকবেন ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার অভিজ্ঞতা আর কার্যকরী অকেশনাল অফ স্পিনের কারণে!

 

শেষ হয়েও হইল না শেষ....

 

শেষের আগে লোয়ার মিডল অর্ডারে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আর একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার থাকছে৷ স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজের বিকল্প আপাতত কেউ নেই৷ অঘটন না ঘটলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সাইফুদ্দিনই থাকছেন৷ তবে আলোচনা যেটুকু হচ্ছে তা বিপিএল থেকে ফরহাদ রেজার দুর্দান্ত ফর্মের কারণে! তা যেটাই হোক, কোচ স্টিভ রোডসের আস্থাভাজন সাইফুদ্দিন ফরহাদ রেজার সম্ভাবনা নাকচ করে দেবে সে কথা বলাই বাহুল্য.... এছাড়া সাইফুদ্দিন গত সিরিজেই বলের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও আস্থার অন্য নাম হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন!

 

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে...

 

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তুরুপের তাস হবেন পেসাররা। প্রত্যেক দলই পেস ইউনিট বাছাইয়ে ভাবনা চিন্তার কোনরকম অভাব রাখবে না৷ বাংলাদেশের চিফ সিলেক্টররাও বিপথে যাবেন না৷ পেস ইউনিটের সম্ভাব্য সংখ্যা পাঁচ। সাইফুদ্দিন কে 'কনফার্মড' ধরে নিলে আর লাগবে চারজন পেসার, গুরুত্ব পাবে জোরে বল করতে পারার সক্ষমতা৷ চারটি জায়গার মধ্যে দুইটি জায়গা অটোমেটিক চয়েস৷ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। বাকি থাকল দুইটি পজিশন। দুইটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চারজন-

১/ রুবেল হোসেন
২/ শফিউল ইসলাম
৩/ তাসকিন আহমেদ
৪/ আবু জায়েদ রাহী

সাম্প্রতিক সময়ে স্লগ ওভারে রান প্রসবা রুবেল হোসেন 'অটোমেটিক চয়েস' হতে পারতেন যদি তার ডেথ ওভারের সক্ষমতা বজায় থাকত৷ তবুও এশিয়া কাপের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স কি আর দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা ভুলে যাবেন? জোরে বল করতে পারা পেসারের বিকল্পও যে প্রচুর রয়েছে এমন নয়। রুবেল তাই গ্রেস দিয়ে হলেও টিকে যাবেন৷ বাকি একটি পজিশনের জন্যে ৩ জন সম্ভাব্য পেসার৷

শফিউল ইসলাম শুরুর দিকে আলোচনায় আসলেও এখন বিশ্বকাপ দলে আসার রেসে অনেকটাই পিছিয়ে৷ চলতি ডিপিএলেও নজরকাড়া কিছু করেননি তিনি। ৮ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ১২, ইকোনমি রেট ৬ এর সামান্য উপরে, উইকেট প্রতি রান খরচ ৩০.৪১, একেকটি উইকেট পেতে বল করতে হয়েছে ৫ ওভার! মূলত ডিপিএল সেরা বোলারদের ২৬ নম্বরে থাকা শফিউলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ডিপিএলে শুরু হয়ে ডিপিএলেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে৷

এখনও ডেব্যু না হওয়া আবু জায়েদ রাহীর চেয়ে এগিয়ে থাকবেন তাসকিনই৷ মূলত ম্যাচ ফিট হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে ইংল্যান্ডগামী বিমানে মাশরাফির সঙ্গী হবেন তাসকিন। তাসকিনকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার কারণ হিসেবে যুক্তিও দেওয়া যায় যথেষ্ট৷ মূলত যেকোন একটি ক্রিকেট ম্যাচ আপনাকে ইন্ডিভিজুয়াল পারফর্মারদের চেয়ে ইমপ্যাক্টফুল ক্রিকেটাররাই জেতাবে৷ তাসকিন সেরকমই একজন ইমপ্যাক্টফুল ক্রিকেটার। তাসকিন যদি ফর্মে থাকেন এবং ম্যাচ ফিট থাকেন তবে যেকোন একটি ম্যাচে তিনি যথেষ্টই ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারেন। কিছুটা রান খরুচে হলেও বিনিময়ে প্রতিপক্ষের 'বিগ ফিশ' টা ধরতে পারেন বলেই তাসকিনকে নেওয়ার প্রশ্নটা উঠছে।

 

সম্ভাব্য বিশ্বকাপ স্কোয়াড সেক্ষেত্রে দাঁড়ালঃ

টপ অর্ডার

১/ তামিম ইকবাল
২/ লিটন দাস
৩/ সৌম্য সরকার

মিডল অর্ডার

৪/ মুশফিকুর রহিম
৫/ মোহাম্মদ মিথুন
৬/ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
৭/ সাব্বির রহমান
৮/ মোসাদ্দেক হোসেন
৯/ সাকিব আল হাসান

লোয়ার মিডল অর্ডার

১০/ মেহেদি মিরাজ
১১/ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

পেস বোলিং ইউনিট

১২/ মাশরাফি বিন মর্তুজা ©
১৩/ মুস্তাফিজুর রহমান
১৪/ রুবেল হোসেন
১৫/ তাসকিন আহমেদ