• ক্রিকেট

আইরিশ আড়ালে

পোস্টটি ২৮৩২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দল আয়ারল্যান্ডে পৌছেছে বেশিদিন হয়নি। আয়ারল্যান্ড যাওয়ার আগে জল্পনা কল্পনাও কম হয়নি। তবে সব জল্পনার উর্ধ্বে এখন শুধুই ভাবনার একটিমাত্র কেন্দ্র- আর তা হল মাঠের ক্রিকেট! আর সেই মাঠের ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় মঞ্চে প্রবেশ করতেও বেশিদিন বাকি নেই! আর তার জন্যে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজটির গুরুত্বও কম নয়! 

নেতিবাচক শব্দে বেশ খানিকটা ইতিবাচক কথা লিখে ফেললাম৷ তাতে অবশ্য কথার গুরুত্ব কমছে না। পারতপক্ষেই আয়ারল্যান্ড সিরিজের গুরুত্ব বিশ্বকাপের জন্যে অনেক বেশি৷ এটুকু পড়েই চট করে কেউ আন্দাজ করে ফেলতে পারেন, আমি মনে হয় নতুন কারো সুযোগের কথা বলছি৷ নাহ, সেরকম নয়৷ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যে ১৫ জনকে চূড়ান্ত করা আছে, আমি তাদের নিয়েই যথেষ্ট আশাবাদী৷ আয়ারল্যান্ড ট্যুরের গুরুত্ব আসলে অন্যখানে৷ বিশ্বকাপে আমাদের কম্বিনেশন অনেকাংশেই এই ট্যুরটাই ঠিক করে দেবে বলে মনে হচ্ছে। ইংলিশ সামারের শিক্ষাটাও পেসাররা এখান থেকে নিতে পারে বলে মনে করছি। 

ওপেনিং পেয়ারে তামিমের সঙ্গী সৌম্য নাকি লিটন,  এ জায়গাটাতে খানিকটা সংশয় রয়েছে৷ যদিও দীর্ঘ পরিকল্পনা আর ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন চিন্তা করলে তামিমের সাথে আপাতত লিটনই চূড়ান্ত আছেন। চাইলে যে কেউ পরিসংখ্যান দেখাতে পারেন, ফর্ম দেখাতে পারেন... কিন্তু নিজের দিনে লিটন একাই ম্যাচ জেতাতে পারেন- এ বাস্তবতা তাতে পাল্টাচ্ছে না। তবে লিটনসহ আমাদের সকলেরই দুর্ভাগ্য যে এমন 'দিন' দেখার সৌভাগ্য খুব বেশি হয়নি। তবে বিশ্বকাপেই যে হবে না, কে বলতে পারে? আশায় বাঁচে মানুষ!

৩ নং এ বিশ্বকাপে কাকে খেলানো হবে সেটাও আয়ারল্যান্ডেই চূড়ান্ত হবে৷ সৌম্য সরকার নিজের খেলা শেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন৷ লিস্ট-এ ক্রিকেটের যেকোন ম্যাচেই একটি ডাবল সেঞ্চুরির গুরুত্ব অসীম,  সেটি ইন্টারন্যাশনাল হোক আর ডমেস্টিক হোক৷ আয়ারল্যান্ডের বিমানে যে তিনি ভরপুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে উঠেছেন, সে কথাও তাই বলে দিতে হচ্ছে না। তবে এই ডাবল সেঞ্চুরির আগ পর্যন্ত ৩ নম্বরে সাকিবকে ফিরিয়ে আনার কথা শোনা যাচ্ছিল৷ এমনটাও শোনা গেছিল, সাকিব আল হাসান নিজেই নাকি ৩ নং এ খেলতে চান৷ সে সিদ্ধান্তও খারাপ নয়৷ ৩ নং এ সাকিব সফলই ছিলেন বলা যায়।  তবে এই দুইয়ের মধ্যে থেকে সৌম্য আর সাকিব যেকোন একজনকে ৩ নং এর জন্যে বেছে নিলে অন্যখানেও কম্বিনেশন ঠিক করতে হয়....

যদি সৌম্য  ৩ নং এ খেলেন,  সেক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান খেলবেন ৫ নং এ!  ৫ নং এ গত সিরিজে ছিলেন মোহাম্মদ মিথুন,  সফল ছিলেন৷ নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে যে দুটি ইনিংস তিনি খেলেছেন তার গুরুত্ব কম নয়৷ কিন্তু সেই গুরুত্ব সাকিব আল হাসান এর চেয়েও বড় নয়৷ চার নং এ খেলবেন মুশফিক, ৫ নং এ সাকিব, ৬ নং এ রিয়াদ।  ৭ নং এ সাব্বিরের জায়গায় তবে মিথুনকে খেলানো যেতে পারে কিনা সে প্রশ্ন যদি উঠে যায়, '৭ নং পজিশন' এ অবশ্যই মিথুন সাব্বির রহমানের ভাল বিকল্প হবেন না! আবার নিজের খেলা শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচেই ঐ নিউজিল্যান্ডেই তো সাব্বির সেঞ্চুরি করেছেন৷  সৌম্যকে ৩ এ ফেরাতে তাই মোহাম্মদ মিথুনকে হয়ত বাদ পড়তে হবে। 

 

যদি সাকিব আল হাসান ৩ নং এ খেলেন সেক্ষেত্রে সৌম্য সরকারকে মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলানোর পরামর্শ হয়ত অনেকেই দিতে পারেন। কিন্তু অতীত পরিসংখ্যান আর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, ভার্সেটাইল করে সৌম্যকে নিচের দিকে শিফট করানো হলে সেটা খুব বেশি কাজে দেয়না। এছাড়া মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিথুনের গুরুত্ব সাকিব আল হাসানের চাইতে কম হলেও, অবশ্যই সৌম্য সরকারের চেয়ে বেশি৷ তিন নং এ সুযোগ না হলে সৌম্যকে বেঞ্চে রাখাই হয়তো সেক্ষেত্রে ভাল হবে!

ফ্রন্টলাইন পেস বোলিং এ মাশরাফি আর মুস্তাফিজ থাকছেন। ধরা যাক ১০ আর ১১ নং খেলোয়াড় ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা আর মুস্তাফিজুর রহমান৷  ৭ নং পর্যন্ত সাব্বির রহমান খেলবেন। পুরোদস্তুর ব্যাটিং কোটা এ অব্দিই শেষ৷ এরপর ৮ নং মেহেদি হাসান মিরাজ আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের যেকোন একজন কন্ডিশন আর ম্যাচ বিবেচনায় খেলবেন। ৯ নং এ সাইফুদ্দিন আর রুবেলের যেকোন একজনকে হয়তো নেওয়া হবে৷ মেঘলা আকাশে আবু জায়েদ রাহীর সম্ভাবনাই আবার বেশি। কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে আমি রুবেলকেই বেশিরভাগ সময় চাইব।  মাঝের দিকে রুবেলের বিকল্প রাহী কিংবা সাইফুদ্দিন কেউই ভাল হবেন না৷ ইংলিশ সামারে রুবেলকে বসিয়ে রাখাও খুব বেশি ঝুঁকি হবে কিনা সে আলোচনাও জোরেশোরেই করা যায়। দলে এমনিতেই দ্রুত গতির বোলার নেই, সবেধন নীলমণি রুবেল হোসেন। স্লগ ওভারে সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ করলেও মাঝের দিকে যথেষ্টই ভাল বোলিং করেছেন৷ আবার এদিকে রুবেলের জায়গায় সাইফুদ্দিনকে নিলে একাদশের গভীরতা বাড়ে, ব্যাটিং লাইনআপ লম্বা হয়৷ গত ডিপিএলএও সাইফুদ্দিন নজরকাড়া বোলিং করেছেন। তবুও তিনি মাঝের দিকে রুবেলের চেয়ে ভাল বিকল্প হবেন কিনা, নিশ্চিতভাবে বলা যায়না৷  যা হোক,  চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে!

যদি রুবেল, মুস্তাফিজ, মাশরাফি কে রেখেও সাইফুদ্দিন কে খেলাতে হয় সেক্ষেত্রে আবার ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। একাদশে চার পেসার রাখাটা খুব বেশি খারাপও হবে না৷ সেক্ষেত্রে মিরাজ বা মোসাদ্দেকের জায়গাটিতে সাইফুদ্দিন কে খেলানো যেতে পারে? 

দলে এমনিতেই অফ স্পিনার নেই, রিয়াদ নিয়মিত বোলিং করেন না৷ মিরাজ/মোসাদ্দেককে বাদ দিলে তাই দল অবধারিতভাবেই বোলিং বৈচিত্র‍্য হারায়৷ মিরাজ অথবা মোসাদ্দেকের যেকোন একজনকে তাই রাখতে হবে৷ সেক্ষেত্রে মিথুন আর সৌম্য দুইজনকেই বেঞ্চে রেখে,  সাইফুদ্দিনকে খেলানো যেতে পারে! এক্ষেত্রেও কথা একই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট! 

 

আয়ারল্যান্ডে তাই কয়েকটি বিষয়ে দলকে সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে-

•  তিন নং এ কাকে খেলানো হবে

• পাঁচ এ কে খেলবে

• রুবেল নিয়মিত পছন্দ হবেন কিনা

 

এবার খানিকটা ব্যাক্তিগত বাহাদুরি দেখাই৷ বাহাদুরিটা বাড়াবাড়ি হবে বলে এটাকে শুধুই ব্যাক্তিগত মত হিসেবে নেবার অনুরোধ রইল৷ তিনে সৌম্য আর সাকিবকে পাঁচে খেলানোর বাজি ধরলে হয়তোবা ভাল হবে৷ মোহাম্মদ মিথুনকে গত সিরিজের পর একাদশের বাইরে রাখা কঠিন সিদ্ধান্ত হবে জানা কথা । কিন্তু ইংল্যান্ডে দ্রুত রান তুলতে হবে,  তামিম ইকবালকেও আবার ৪০ ওভার পর্যন্ত পিচ আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে৷ ২ আর ৩ নং এ তাই লিটন আর সৌম্য থাকলে মাঠের তামিম ইকবাল আর ড্রেসিং রুমের গোটা দলও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। 

আবার মিডল অর্ডারে সাকিব আল হাসানের মত কেউ থাকা বড় ভরসা দেয়৷ ব্যাটিং বিপর্যয়ে তিনি, মুশফিক আর রিয়াদ মিলে বহুবার মিডল অর্ডারে থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন৷ এই তিনজন একসঙ্গে বহুবছর ধরে মিডল অর্ডার সামলেছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতে কি করতে হয় এই তিনজন সবচেয়ে ভাল জানেন, বিশ্বের সবচেয়ে ডিপেন্ডেবল মিডল অর্ডার বাংলাদেশের দখলে এই তিনজন একসঙ্গে মিডল অর্ডারে খেলেছেন বলেই! মিডল অর্ডারের এই তিন সেনানীকে আমি তাই ওলটপালট করতে চাইব না!   

রুবেলের কেন নিয়মিত পছন্দ হওয়া উচিত সেটা একটু আগেই বলেছি। এসবের বাইরেও অভিজ্ঞতার মূল্য অমূল্য! দুটি বিশ্বকাপ খেলা রুবেলের উপর তাই দল আস্থা রাখতেই পারে। মাঝের দিকের ওভারে তিনিই হতে পারেন বড় ভরসা৷ তবে বেশিরভাগ সময়ে লাইন লেংথে গুলিয়ে ফেলা রুবেলকেও সাবধান থাকতে হবে৷ দলে নিজেকে অবশ্যই সিনিয়র ভাবতে হবে এবং সেই দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে তুলে নিতে হবে। আখেরে লাভ তো তবে বাংলাদেশেরই! 

এই যে এতগুলো সম্ভাব্য পজিশনের খেলোয়াড়ের কথা বললাম,  মনে রাখতে হবে এগুলো শুধুই সম্ভাবনা৷ ম্যাচভেদে পরিকল্পনা পাল্টাবে, ফর্মভেদে খেলোয়াড়ও বদলাবে৷ নিজেকে প্রমাণে আবারও ব্যার্থ হলে লিটন বাদ যাবেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেনে আনতে ব্যার্থ হলে সৌম্যও বেঞ্চে থাকবেন। শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে ব্যার্থ হলে সাব্বিরের জন্যেও দল বিকল্প চিন্তা করবে৷

 

 সফরটা বড়,  স্বপ্নটা সফরের থেকেও বড়.............