• ক্রিকেট

২০১৯ বিশ্বকাপ - শুভকামনা প্রিয় বাংলাদেশ

পোস্টটি ৩৮০১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে প্যাভিলিয়নের ব্লগে দশ দলের স্কোয়াড, একাদশের শক্তিমত্তা-দুর্বলতা এবং দলের কী প্লেয়ার নিয়ে আমার লেখা শেষ পর্বে প্রিয় বাংলাদেশ। 

বিশ্বকাপের পর্দা উঠার বাকি আর মাত্র তিনদিন। দশ দলের লড়াইয়ে কে হবে এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সে বিচারে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়ে? প্রথমবার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের শিরোপা জয়। এই জয়ের পথ দিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন অনেক বড় হবারই কথা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডের প্রত্যেকেই। ২০১৫ বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে সক্ষম হয়। গতবারের তুলনায় এবারের বিশ্বকাপে দলে রয়েছে বেশ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ক্রিকেট বোদ্ধারা স্বীকার করছেন বিগত বিশ্বকাপ গুলোর স্কোয়াডের তুলনায় এবারের স্কোয়াড সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। শেষ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়া নড়াইল এক্সপ্রেস এবারো দলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন। ১৫ জনের বাংলাদেশ দলে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে আট জনের। এদের মধ্যে কয়েকজনের একাধিক বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। মোস্তাফিজ, মিরাজ, লিটন, মিঠুনদের মতো যারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন তাদের অভিজ্ঞতাও কম নয়। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই আগামী ৩০ এপ্রিল তারা দেশ ছাড়বেন। 

 

সমালোচনার প্রদীপ জ্বলে উঠতেই নিবে গেলো    

প্রথম বহুদলীয় সিরিজ জিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বাংলাদেশ। আগে যেখানে পঞ্চ পান্ডবদের উপর ম্যাচ জিতার ভরসা নিয়ে থাকতে হতো তা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে উড়িয়ে দিয়েছেন সৌম্য-মোসাদ্দেকরা। অবশ্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে কম সমালোচিত হয়নি এই দুইজন ক্রিকেটার। একই কাতারে ছিলেন বিসিবির চমক হিসেবে আবু জায়েদ রাহী। টপ অর্ডারে তামিম ইকবালের সাথে সৌম্য সরকার এবং লিটন দাসের উপর ভরসা রেখেছে বিসিবি। গুটিকয়েক সমর্থক সেখানে ইমরুল কায়েসকে যোগ্য মনে করে সমালোচনার ঝড় তোলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। এইতো গেলো টপ অর্ডার। মিডল অর্ডারে মোসাদ্দেককে দলে দেখে অনেকেই ছিলেন নারাজ। কিছু করতেই পারবে না বিশ্বকাপের মঞ্চে এমন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে তাসকিন আহমেদের কান্নার ভেসে যায় ইন্টারনেট দুনিয়া। কারন, তাসকিনের ফিট না হয়ে উঠার অজুহাতে স্কোয়াডে জায়গা করে নেয় কোনো এক দিনের আন্তজার্তিক ম্যাচ না খেলা (স্কোয়াড ঘোষণার পর ত্রিদেশীয় সিরিজে অভিষেক হয়) আবু জাহেদ রাহীর।  

তাহলে এই তিনটা পজিশন নিয়েই তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। ত্রিদেশীয় সিরিজের পরে এখন কোনো সমালোচনা বাতাস বইছে না। কি আশ্চর্যজনক! সমালোচনার প্রদীপ জ্বালিয়ে যেন আবার নিভিয়ে দিল। ৩০ মে দেশ ছাড়ার আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের বিপক্ষে আবাহনীর হয়ে ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন। যা বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এরপর আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ টানা তিনটি ম্যাচে অর্ধশতক রান করে প্রমাণ করে দেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গার জন্য তিনি যোগ্য। অন্যদিকে সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে সাকিবের ইঞ্জুরির সুবাদে দলে মি. অলরাউন্ডারের চাপ সামলাতে খেলানো হয় মোসাদ্দেককে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ডিএল মেথডে দলের ফাইনাল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ যখন চাপের মুখে তখনই আবির্ভাব ঘটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। মাত্র ২৩ বলে দুর্দান্ত হাফ-সেঞ্জুরি রান করে ইতিহাস গড়া ফাইনাল জিতে নেয় বাংলাদেশ। নায়ক হয়ে যান মোসাদ্দেক। অন্যদিকে বিসিবির চমক আবু জাহেদ রাহীর শুরুর দিন ভালো হয়নি সৌম্য-মোসাদ্দেকের মতো। ত্রিদেশীয় সিরিজে ও. ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে শুন্য হাতে ফিরতে হয়। কিন্তু বাজিমাত করেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে। ৫৮ রানের খরচায় ৫ উইকেট শিকার করে নেন নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। বিশ্বকাপে যাওয়ার যৌক্তিকতা খোঁজার আর কোনো কারন নেই।                        

images (19)

          বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াডঃ-  মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুশফিকুর রহীম, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ চৌধুরী।

ব্যাটিং - বোলিংয়ে বাংলাদেশের শক্তিমত্তা 

তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস। দুইজনের যেকোনো একজন টপ অর্ডারে দলের রানের ভিত্তি গড়ে দিবেন ড্যাশিং অপেনারের সাথে। তামিম-সৌম্য গড় ৪৪.৬১। আর তামিম-লিটন গড় ২৮। মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায় তামিম ইকবালের সাথে সৌম্য সরকারকে দেখা যাওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। তিনে ব্যাট হাতে নামবেন বাংলাদেশের অন্যতম একজন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের আগে সুখবর হিসেবে ৩৫৯ পয়েন্ট নিয়ে আফগানিস্তানের রশিদ খানকে হটিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের অলরাউন্ডার খেতাব ফিরে পেয়েছেন সাকিব। অতি স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে এই টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট অধিনায়কের উপর। তারপর চার ও পাঁচ নাম্বারে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ও মিথুনকে দেখা যেতে পারে। সাব্বির রহমানকে কত নাম্বার পজিশনে নামাবেন তা খেলা শুরু হবার আগেই বলা যাচ্ছে না। আর মিডল অর্ডার সামলাবেন বাংলাদেশ দলের বিপদের কান্ডারি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অন্যদিকে ব্যাটে-বলে বিশেষ অবদান রাখতে দেখা যাবে মোসাদ্দেক, মিরাজ ও সাইফুদ্দীনকে। 

অন্যদলের তুলনায় বাংলাদেশ পেস আক্রমণকে বলা যায় বেশ গড়পড়তা। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে রসদ বের করে মাশরাফি তার শেষ বিশ্বকাপে বড় কিছু করতে চাইবেন। রুবেল হোসেনের গতি, শর্ট বল আর রিভার্স স্যুয়িং করানোর সামর্থ্য দিয়ে প্রভাব ফেলতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে আশা সেই মোস্তাফিজুর রহমান কেমন করবেন তা নিয়ে আছে সংশয়। ইংলিশ কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কাটার মাষ্টার ছিলেন সাদামাটা। কারণ তার বল গ্রিপ করাতে যেমন উইকেট দরকার ইংল্যান্ডে শুরুর দিকে তা থাকবে না। কাজেই মোস্তাফিজের কাটার ভোঁতা হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। তাকে হয়ত উইকেট নেওয়ার চেয়ে রান আটকানোতে বেশি মন দিতে দেখা যেতে পারে। যতটুকুই কার্যকর হোন, ফিজের বিকল্প বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই। বোলিং ইউনিটে বড় আশা করা যায় অলরাউন্ডার বোলার মোহাম্মদ সাইফুদ্দীনের উপর। এছারা স্পিন শক্তিতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকবে। সাকিব আল হাসানের সাথে স্পিম ঘূর্ণি ধরাবেন মেহেদী মিরাজ, মোসাদ্দেক, মাহমুদউল্লাহ। আর মাঝেমধ্যে বল হাতে দেখা যেতে পারে সৌম্য সরকার এবং সাব্বির রহমানকে। 

অভিজ্ঞতায় ঠাসা এই দলটির রয়েছে একজন লেগ স্পিনারের অভাব। বিশ্বের যেকোনো দলের সাথে রয়েছেন একজন লেগি বোলার। পরিচর্যার অভাব বা দুর্ভাগা ভাগ্য নিয়ে বাংলাদেশের একজন লেগি জুবায়ের হোসেন লিখন ধারাবাহিক হতে পারেন নি দলে।       

images (18)

 অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ

এই বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতায় অন্যান্য দলে চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। দলে আছেন সিনিয়র এমন পাঁচ ক্রিকেটার যারা প্রত্যেকেই দশ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম খেলতে যাচ্ছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ। মাহমুদউল্লাহ খেলবেন তার তৃতীয় বিশ্বকাপে। এই পাঁচজনই যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের মূল চালিকাশক্তি হবেন, তা বহু আগে থেকেই চূড়ান্ত। মমনেপ্রাণে চাই পঞ্চ পান্ডবদের যুগে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে আসুক।            

 

প্লেয়ার্স টু ওয়াচ  

Tamim-Iqbal1

তামিম ইকবাল খান

বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি অন্যতম ড্যাশিং ওপেনার। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান আর সেঞ্চুরি তার দখলে। ২০০৭ সালে অভিষেক বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন শক্তিশালী ভারতীয় দলের বোলিং লাইন আপকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৩০ বছর বয়সী তামিম এখন পর্যন্ত ৩টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে সাকিবের ডেপুটি ছিলেন তিনি। তামিম বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন ১৮৯টি। মোট রান করেছেন ৬৪৬০ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ১১টি। হাফসেঞ্চুরি রয়েছে ৪৪টি।

5a8e61fe32004

সাকিব আল হাসান 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আর ৫ রান করলেই ১১,০০০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন মি. অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরসার নাম সাকিব আল হাসান। ৩২ বছরের এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। বাহাতি ব্যাটসম্যান আর অর্থডক্স স্পিনার সাকিব ইতোমধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এবারের বিশ্বকাপেও দলের কি প্লেয়ারের ভূমিকা পালন করতে পারেন সাকিব। ১৯৫টি ওয়ানডে ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে রান করেছেন ৫৫৭৭ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ৭টি। আর অর্ধশতক রয়েছে ৪০টি। বল হাতে সাকিব দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

tumblr_pqh9mh5yfM1v0orcl_1280

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ 

দলের বিপদের কান্ডারি তিনি। বড় মঞ্চ আসলেই যেন জ্বলে উঠেন এই সাইলেন্ট কিলার। দলের পঞ্চ পাণ্ডবের একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের কঠিন সময়ের হাল ধরতে তার জুড়ি নেই। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের জয়ে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ৩৩ বছর বয়সী দুর্দান্ত অলরাউন্ডারও। মাহমুদউল্লাহ দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১৭১টি ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৩৬৭৩ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ৩টি আর হাফসেঞ্চুরি রয়েছে ২০টি। বল হাতে মাহমুদউল্লাহ উইকেট নিয়েছেন ৭৬টি।