• ক্রিকেট

কিউই পাখির ছক

পোস্টটি ২৪২৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রথম ম্যাচটি ভালভাবেই জেতা গেছে, প্রত্যাশার পারদও চড়ে গেছে উপরে। সেমিফাইনালের লালিত স্বপ্নটা একটু একটু ডানা মেলতে চাইছে! তবে প্রজাপতির সাথে পঞ্চশরের বিরোধ এখনও ঢের৷ সেই বিরোধকে মিলোনাত্মক সূচনায় রূপ দিতে পারে আজকের ম্যাচে। নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচে। 

 

বাংলাদেশের জন্যে নিউজিল্যান্ড দলে থ্রেট আছেন তিনজন- •মার্টিন গাপটিল

•ট্রেন্ট বোল্ট

•কেন উইলিয়ামসন

 

মার্টিন গাপটিলের পয়া প্রতিপক্ষ আবার বাংলাদেশ। ক্রিকেটের খোজখবর যারা টুকটাক নিয়ে থাকেন তারা জানবেন, খারাপ সময় কাটিয়ে ফর্মে ফেরা কিংবা সাবলীল ফর্মকে উত্তুঙ্গে রূপ দেওয়া- সবসময়ই মার্টিন বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। আমাদের সাথে মার্টিনের এভারেজ ৬০.৮৯, স্ট্রাইক রেট ১০২.৪৩! এই ম্যাচ জিততে হলে মার্টিনকে নিয়ে তাই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে ভাবতে হবে, সমাধান বের করতে হবে। কে হতে পারে সম্ভাব্য সমাধান? সাকিব আল হাসান অথবা মুস্তাফিজুর রহমান৷ দ্রুত মার্টিনকে ফেরানোর দায়িত্বটা এই দুজনের একজনকে নিতেই হবে। 

 

ট্রেন্ট বোল্ট প্রথম স্পেলে ভয়ানক হয়ে উঠবে৷ উইকেটে ঘাস থাকলে আর আকাশ মেঘলা হলে প্রথম স্পেলেই আমাদের ধসিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে ট্রেন্ট৷ এ ব্যাপারে আবশ্যক সতর্কতা নিতে হবে।  শুরুর স্পেল দেখেশুনে খেললে পরের দিকে বড় রান করা আর কিউই বোলার সামলানো দুটোই আমাদের জন্যে সহজ হবে। ২০১৭ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে ম্যাচটা আমরা জিতেছিলাম, সেখানেও আমরা দেখেছিলাম শুরুর স্পেলেই আমাদের ৪ উইকেট দ্রুত পড়ে গেছিল। মাঝেরদিকে সাকিব রিয়াদ অনায়াসেই কিউই পেসারদের সামলেছিল। গত সিরিজেও মাঝেরদিকে মিথুন কিউই বোলারদের অনায়াসে সামলেছে। 

 

কেন উইলিয়ামসন। ঐতিহ্যগতভাবে স্পিনে দুর্বল কিউই দলে একজন ব্যাটসম্যান যে কিনা সাবলীলভাবে স্পিন খেলতে পারে। কেন উইলিয়ামসনকে ফেরাতে হলে দলকে শক্ত পরিকল্পনা করতে হবে, নির্দিষ্ট বোলারকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে। দ্রুত টপ অর্ডার ফেরানো গেলেও উইলিয়ামসন যদি উইকেটে সেট হয়ে যায়, দিনটাই দুর্দিন হবে আমাদের জন্যে। 

 

এরপর যেটি সবচেয়ে জরুরী আমাদের জন্যে সেটি হল মনস্তাত্ত্বিক জয়। সাইকোলজির খেলাতে আমরা অনেক সময়ই ছোট ছোট ব্রেইনগেমে হেরে যাই৷ এই ভুলগুলো ম্যাচশেষে চোখে পড়ে না। এই ব্যাপারে তাই সতর্ক হওয়া দরকার৷ র‍্যাংকিং এর পঞ্চম সেরা রাবাদাকে সামলে আমরা যেন লকি ফার্গুসনের স্পিডোমিটার চেক করেই ঘাবড়ে না যাই। ম্যাট হেনরির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে স্ট্রেইট ডেলিভারিকে আমরা যেন আউট-সুইং না বানিয়ে দিই। 

 

দেশ ছাড়ার আগে নির্দিষ্ট চারটি ম্যাচকে আমরা 'মাস্ট উইন' ধরে নিয়েছিলাম। দল চারটির নাম উল্লেখের প্রয়োজন মনে করছিনা। এমন 'মাস্ট উইন' কিছু ম্যাচ প্রত্যেক দলই ধরে নিয়ে এসে বিশ্বকাপের 'রোড টু সেমিফাইনাল' ছক কষেছে সে কথা জানতে বিশারদ হতে হয়না।  এ কথা অনুমান করতেও কষ্ট হবার কথা নয় যে নিউজিল্যান্ড তাদের মাস্ট উইন ম্যাচের তালিকাতে বাংলাদেশ ম্যাচটি রাখবে৷ আর রাখবে বলেই এই ম্যাচ নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে, চাপও থাকবে৷ এই চাপের সুযোগ টিম বাংলাদেশকে নিতে হবে। যদিও নিউজিল্যান্ডকে হারানোটা সোজা হবেনা। 

 

তামিমের টিকে থাকাটা জরুরী। প্রথমে ব্যাট করে বড় স্কোর বা চেজিং এ বড় রান তাড়া করা, দুটোতেই আমাদের তামিমকে লাগবে। উইকেটে সেট হয়ে ধরে খেললেও তাই কোন সমস্যা নেই। তবে সেটি যেন শেষে পুষিয়ে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও তামিমকে জানতে হবে। অন্তত ৪০ ওভার পর্যন্ত তামিম ক্রিজে টিকে থাকলে দলের রান অনেক বাড়বে। প্রথমত তামিম বড় স্কোর করে শেষেরদিকে রানকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দিতে পারবেন, দ্বিতীয়ত তামিম দ্রুত ফিরে না গেলে সৌম্য ফ্রি স্ট্রোক খেলার স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে। প্রথমদিকে এতে যেমন রানরেট উপরের দিকে থাকবে, শেষেরদিকেও এতে রানরেট অনেক উচ্চ হবে।  রানটা তখন হবে নিউজিল্যান্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

 

তবে সৌম্যকে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন দ্রুত উইকেট ছুড়ে না দেয়। ম্যাচটা যে ওয়ানডে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে৷ স্মার্ট ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেই স্ট্রাইকরেট  একশোর উপরে রাখা যায়,  তার জন্যে ম্যাচের শুরুতেই রিস্কি টি-২০ সুলভ শটস খেলার দরকার নেই, যে বলটি ওয়াইড 'হতে পারত' সেটি হুক করার দরকার নেই। 

 

সাকিব মুশফিক রিয়াদকে নিজেদের দায়িত্বটা আরো একবার পালন করতে হবে৷ আমরা বহুবারই দেখেছি, টপ অর্ডার ভেঙে পড়লে মিডল অর্ডার আমাদের উইনিং স্কোরের নিশ্চয়তা দিয়েছে৷ এশিয়া কাপই এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। আবার এই এশিয়া কাপেরই ফাইনালে আমরা দেখেছি টপ অর্ডার উড়ন্ত সূচনা এনে দিলে মিডল অর্ডার 'আউট অফ সিলেবাস' এর উত্তর করতে পারেনি, ফ্লপ গিয়েছে। মূলত 'বড় স্কোর গড়তে হবে' ধারণাতেই সবাই একের পর এক বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিওনে ফিরেছে। শুধু নিউজিল্যান্ড ম্যাচই না, পুরো ওয়ার্ল্ড কাপেই এই 'আউট অফ সিলেবাস' নিয়ে মিডল অর্ডারকে ভাবতে হবে। 

 

উইকেটে ঘাস থাকলে দলে রুবেলের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে আবার দল উইনিং কম্বিনেশনেও আস্থা রাখতে পারে। কি হবে সেটি বলা মুশকিল। ম্যাচ শুরুর আগে অব্দি অবধারিত ভাবে তাই বলা যাবেনা৷ তবুও রুবেলের অন্তর্ভুক্তি বোলিং লাইনআপ এ খুব বেশি মিরাকল ঘটানোর কথা নয়। পাওয়ার প্লে, মিডল ওভার, স্লগ- মুস্তাফিজ, মাশরাফি, সাউফুদ্দিন তিনজনই নিজ নিজ দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন। রুবেলকে খেলতে হলে তাই খেলতে হবে চতুর্থ পেসার হিসেবে।  সেক্ষেত্রে মিরাজকে হয়তো বসানোর কথা হতে পারে৷ কিন্তু নিউজিল্যান্ড দলে বেশ কিছু বাঁহাতি থাকায় আর কেনিংটন ওভালে খেলা হওয়ায় মিরাজকে হয়তো দল বেঞ্চড করবে না। অনেকেই মিথুনকে বেঞ্চড করে রুবেলকে খেলানোর কথা বলতে পারেন।সেক্ষেত্রে  মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন, মিরাজ, সাকিব মিলে ৫ বোলার পূর্ণ৷ অকেশনাল বোলার হিসেবে সৈকত কিংবা সৌম্য আছেই। এক ব্যাটসম্যান বসিয়ে তাই একজন ৮ম পুরোদস্তুর বোলিং অপশন নেওয়ার কোন মানে নেই। রানও তো করে হবে প্রচুর!  তবুও সিদ্ধান্ত নেবে দল। 

 

শেষকথাতে সেই সাইকোলজিক্যাল ব্যাটল। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়... আমরা যেন সেই দলে না ভিড়ি!