• ফুটবল

ফুটবল দ্য লাভ অব মিলিয়ন হার্টস

পোস্টটি ২৮২৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলায় চার অহ্মরের একটি শব্দ। শব্দটি শুনলেই কল্পনার চোখে ভেসে উঠে গোলাকার একটি বস্তু। 

আসলে শুধুই গোলাকার বস্তু বলে একে সজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। এর মহত্ম্য আরো অনেক বড়। 

আপনি ছেলে হোন অথবা মেয়ে, জীবনে হয়তো কারোর প্রেমে পড়েছেন? স্বাভাবিক ভাবেই আপনার প্রেম একসময় ভেস্তে গেছে। কিন্তু যদি কখনো ফুটবলের প্রেমে পড়ে থাকেন তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার এবং ফুটবলের মাঝের যে সম্পর্ক তৈরী হবে তা কখনোই ভেস্তে যাবার মত নয়। 

পৃথিবীতে আপনি এমন অগণিত ব্যক্তির দেখা পাবেন, যাদের জীবনের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে গেছে কিন্তু তারা ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন নিজের শেষ সম্বল হিসেবে। 

হতে পারে আপনিও এমনই একজন।

অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, 

কেন ফুটবল একজন মানুষের জীবনের শেষ সম্বল হতে যাবে? কি আছে এতে?

বিশ্বাস করুন, আপনি যদি একবার ফুটবলকে ভালোবেসে ফেলেন তবে আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান, সবচেয়ে প্রিয় কিছু অনুভূতির মাঝে আপনি ফুটবলকে স্থান দিতে বাধ্য। 

এখন আবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ফুটবলকে অনুভূতির মাঝে জায়গা দিবো কেন?

উত্তরটা হচ্ছে, ফুটবল দেখতে একটি গোল বন্তু ঠিকই কিন্তু এর জায়গা হয় অনুভূতি হিসেবে হৃদয়ের গভীরে।

 

কি ভাবছেন? আপনিও ফুটবলকে ভালোবাসেন?

তাহলে আপনিও আমার প্রত্যেকটি কথার সাথে একমত। 

"ফুটবল" এমন একটি খেলা, একটি নাম যা প্রতিদিন কোটি হৃদয়কে খুশির জোয়ারে ভাসাচ্ছে আবার কোটি হৃদয়ের খুশি কেড়ে নিয়ে কষ্টের সাগরে ছেড়ে দিচ্ছে।

এখন আপনি প্রশ্ন করবেন, ফুটবল যদি মানুষকে কাঁদায়, তাহলে এটা এত সুন্দর অনুভূতি কি করে হয়?

উত্তরটা হচ্ছে, আপনি যদি কাউকে মন থেকে ভালোবাসেন তবে একমাত্র তার জন্যই আপনার চোখ অশ্রুসিক্ত হবে।

ফুটবলই সেই একমাত্র বস্তু, যার প্রান নেই তবুও আপনাকে অশ্রুসিক্ত করে এবং আপনার জীবনে সবচেয়ে সেরা কিছু মুহূর্তও উপহার দেয়।

 

কেউ আপনাকে ইচ্ছা করলেই খুশি করতে পারেনা, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই একটি বস্তু হিসেবে ফুটবলের নিজস্ব ইচ্ছা না থাকা সত্বেও আপনার ইচ্ছাকেই ফুটবল খুশিতে রঙ্গিন করে তুলে। 

এতহ্মন ধরে আপনি ফুটবল নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু অভিমত পড়লেন, এতটুকু লিখা কখনোই ফুটবলকে পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করতে পারেনা। 

 

আচ্ছা আপনি কি লিভারপুলের সাবেক ম্যানেজার বিল শ্যাঙ্কলির বানীটি শুনেছেন? 

উনার একটি সংহ্মিপ্ত বানীই আপনাকে ফুটবল সম্পর্কে বিশাল ধারনা দিতে পারে।

চলুন দেখে নিই বিল শ্যাঙ্কলি কি বলেছেন ফুটবল সম্পর্কে। 

 

" কিছু লোক মনে করেন, ফুটবল হচ্ছে জীবন এবং মৃত্যুর ব্যাপার, আমি তাদের এই মনোভাব পছন্দ করিনা, আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, ফুটবল এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ন"  ।

 

IMG_20190630_220801 ছবিতে লিভারপুলের সাবেক কোচ বিল শ্যাঙ্কলি। 

 

যারা ফুটবলকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন তারা হয়তো এই বানীটি পড়ে একবার হলেও মনের অজান্তেই নিজেকে আশ্বস্ত করেছেন যে "হ্যা এটাই ফুটবল"। 

আচ্ছা বিল শ্যাঙ্কলির এই তিন লাইনের সংহ্মিপ্ত বানীটি কি আপনাকে ফুটবল সম্পর্কে অনেকটা ধারনা দেয়নি?

 

তাহলে এবার আসুন কিছু বাস্তব উদাহরন পড়ে দেখি, যা আপনাকে আরো ধারনা দিবে। 

 

১৯৬৯ সাল, সদ্য স্বাধীন হওয়া নাইজেরিয়াতে চলছে রক্তহ্ময়ী গৃহযুদ্ধ, বায়াফ্রার যুদ্ধ নামে সেই গৃহযুদ্ধে নিহত হয় ১০ লহ্ম মানুষ।

সেই বছর নাইজেরিয়া জাতীয় দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নাইজেরিয়াতে যায় ফুটবল সম্রাট পেলের ক্লাব সান্তোস।

ফুটবল সম্রাটের আগমনী বার্তা অল্প সময়েই গোটা নাইজেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ফুটবলপ্রেমী মানুষগুলো কি আর ফুটবল সম্রাটকে সামনে থেকে খেলতে দেখার সুযোগ হারাতে চাইবেন? কখনোই না।

ফুটবল সম্রাটের খেলা দেখতে তখন  ৪৮ ঘন্টার জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষনা দেয় নাইজেরিয়া।

রক্তহ্ময়ী যুদ্ধ থামিয়ে সবাই ফুটবল উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

IMG_20190630_220957ছবিতে নাইজেরিয়ায় খেলতে যাওয়া সান্তোস ফুটবল টিম।

 

আচ্ছা এই ঘটনাটি পড়ে আপনার কি মনে হচ্ছে পেলের কারনে সেদিন ৪৮ ঘন্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষনা দিয়েছিলো নাইজেরিয়া?

যদি এমনটা ভেবে থাকেন তবে আপনি সম্পুর্নই ভুল ভাবছেন, সেদিনের রক্তহ্ময়ী যুদ্ধবিরতির কারন ছিলো শুধুই ফুটবল এবং ফুটবলের সাথে মানুষের প্রেমময় সম্পর্ক। 

যদি প্রশ্ন করেন,  "সেদিনতো পেলের খেলা দেখার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করেছিলো নাইজেরিয়া, তাহলে ক্রেডিট কেন পেলেকে দেওয়া হইনি? কেন ফুটবল ক্রেডিট পেলো" ? 

 

উত্তরটি হচ্ছে, পেলে ফুটবল খেলেছেন বলেই সবাই তাকে চিনেন, যদি তিনি কখনোই ফুটবল না খেলতেন তবে তিনি সেদিন নাইজেরিয়া সফরে গেলে, কেউ জানতেই পারতোনা সেদিন নাইজেরিয়াতে কে এসেছিলো। 

অবশ্যই এই ঘটনাটি ফুটবলের মহত্ম প্রকাশ করে।

ফুটবল শুধুই একটি খেলা নয়, কোটি মানুষের হৃদয়ের ভাতৃত্ব গড়ে দেয় এই ফুটবল। 

অবশ্য এটিই ফুটবলের এমন একমাত্র ঘটনা নয়, এমন দু একটা ঘটনা আপনাকে ফুটবলের মহত্ম্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে ঠিকই, কিন্তু কখনোই লিখা অথবা বলার মাধ্যমে সম্পুর্ন ফুটবলকে সংজ্ঞায়িত করা যাবেনা।

ফুটবল আপনাকে আনন্দ দেয় আবার দুঃখও দেয়, কারন ভালোবাসার মাঝে এই দুটোই জরুরি। 

প্রিয় দলের জয় আপনাকে আনন্দ দেয় আবার প্রিয় দলের হার আপনাকে কাঁদায়, কিন্তু আপনি কি এই দুটো অনুভুতি পৃথিবীর অন্য কিছুকে ভালোবেসে পেয়েছেন?

শুধুমাত্র ফুটবলে যা সম্ভব তা আপনি অন্য কিছুতেই খুজে পাবেন না।

এটা একটা অনুভূতি, ভালোবাসা যা ই বলিনা কেন ফুটবল সবই। কারন একজন ফুটবল প্রেমিকের হৃদয়টাই ফুটবলময়। 

আরো অনেক মহান ঘটনার সাহ্মী আপনাদের করতে পারি, তবে তা নাহয় অন্য কোনোদিন হবেন । আমি  একবারে এত লিখে আপনার বিরক্তির কারন হতে চাইনা।

ভালোবাসুন ফুটবলকে, উপভোগ করুন এবং সবার সাথে উপভোগ্য মুহূর্তের স্মৃতি বন্টন করুন।  বিশ্বাস করুন আপনি অকৃত্রিম আনন্দের সাহ্মী হবেন।

 

আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, ভালো থাকুন আপনি ফুটবলকে ভালোবেসে। 

এতটুকু পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 

[প্যাভিলিয়ন ব্লগে এটিই আমার প্রথম লেখা, আশা করি ভুলত্রুটি হ্মমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]