অপয়া হাতে আমাদের স্বপ্ন!
পোস্টটি ৪৩৫২ বার পঠিত হয়েছেস্টিভ রোডসকে যেভাবে বিদায় দেয়া হল, তাতে স্পষ্ট এই বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরেও দেশের ক্রিকেটে সত্যিকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা শূন্য। ট্যাকটিক্যালি হয়ত রোডস ঠিক যাননা এই দলের সাথে, কিন্তু শুধু তাঁকেই যেভাবে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে, তাতে করে ভরাডুবির পেছনে আসল কারনগুলো ঢাকা পড়ে যাবে। ব্যর্থতার দায়টা শুধু কোচকেই কেন নিতে হবে, অধিনায়ক আর দলের অন্যরা কেন নিবেন না, সেই প্রশ্নটার উত্তর অবশ্য খোঁজার চেষ্টা করা হবেনা।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় কারন জবাবদিহিতার মারাত্মক অনুপস্থিতি। আনফিট ক্রিকেটাররা কিভাবে একাদশে জায়গা পায়, সেটা নিয়েও কারোর কাছে কোন জবাব নেই। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে ভরাডুবির পরে যেই পরিবর্তন দরকার ছিল মানসিকতায়, সেটার বিন্দুমাত্রও দেখা যায়নি পরের দিনগুলোতে। সেটা একটা বড় সতর্কবার্তা ছিল, কিন্তু অজানা কারনে সেটাকে খুব বেশি পাত্তা দিতে দেখা যায়নি কাউকে, নিজেদের স্কিলে ম্যাচ জেতার থেকে আমরা বোধহয় ভাগ্যের দয়া দাক্ষিণ্যের দিকেই বেশি মনযোগী থাকি সবসময়।
নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই দলে চোটের সমস্যা লেগে ছিল। কিন্তু সেই চোট নিয়েই মাশরাফী, সাইফুদ্দিনরা খেলে গেলেন প্রিমিয়ার লিগে। আবাহনীর হয়ে খেলার থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে ফুল ফিট অবস্থায় প্রতিনিধিত্ব করার যে গৌরবটা অবশ্য তারা অনুধাবন করতে পারেননি, সেটার দায় যেমন ক্রিকেটারের, তেমনি বোর্ডেরও। সুজন-পাপনদের কাছে দেশের স্বার্থের থেকে ক্লাবস্বার্থটা বেশি গুরুত্ব পায়, নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে এতটাই মরিয়া তাঁরা। সাইফুদ্দিন পুরো প্রিমিয়ার লিগেই ইঞ্জুরি নিয়ে খেলেছেন, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে যেটা ছিল স্রেফ হঠকারিতা। ইঞ্জুরি নিয়ে খেলার মাশুলটা গুনতে হয়েছে তাকে বিশ্বকাপেই, পুরোপুরি ফিট ছাড়াই খেলতে হয়েছে বিশ্বকাপটা, শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে তো ছিটকেই গেলেন। চোট লুকিয়ে খেলার দায় যেমন সাইফের,খেলতে বাধ্য করার দায়টাও কি সেইসব মহান বোর্ড কর্তাদের নয়কি?
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতার পরে সামান্য প্যারেড কিংবা র্যালি করেনি, কেন জানেন? ১৬ দিন পরেই অ্যাশেজে নেমে পড়তে হবে বলে। আর আমরা? আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার পরেই শুধু হয়ে যায় উদযাপন, কয়েকদিন পরের বিশ্বকাপে তাতে হয়ে যায় গৌন! তামিম চলে যান দুবাইতে ছুটি কাটাতে, মাশরাফী চলে আসেন দেশে। লেস্টারের ক্যাম্পটা তাই পূর্নতা পায়না কখনোই, যেই ক্যাম্পটা হতে পারত দারুন একটা প্রস্তুতির মঞ্চ, সেটা হয়ে যায় কেবলই অবকাশযাপনের অজুহাত।
মাশরাফী এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় খলনায়ক এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যেভাবে ইঞ্জুরি নিয়েই জোর করে খেলে গিয়েছেন সেটা ভাল কোন উদাহরণ সৃষ্টি করবেনা। হালকাপাতলা নিগলস নিয়ে খেলাই যায়, কিন্তু পঞ্চাশভাগ ফিট না থেকেও খেলা মানে আপনি দলকে পিছিয়েই দিচ্ছেন। স্রেফ এইটাই হয়েছে বিশ্বকাপে, আনফিট অবস্থায় খেলে কন্ট্রিবিউট তো করতেই পারেননি, বরঞ্চ এগারো জনের দলটাকে দশে পরিনত করেছেন। আবাহনীর হয়ে ইঞ্জুরি নিয়ে কেন প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন সেটার কোন সদুত্তর ম্যাশের কাছে থাকবেনা। সাইফকে নাহয় বাধ্য করা হয়, কিন্তু বিশ্বকাপের গুরুত্বটাতো মাশরাফী আপনার আমার থেকে খুব ভালভাবেই বোঝেন। ইঞ্জুরি নিয়েই আয়ারল্যান্ডে খেললেন, কিন্তু সেই সিরিজ শেষে আবার ফিরলেন দেশে। থাকলেন না লেস্টারের ক্যাম্পে, বিশ্বকাপে নামলেন একেবারেই ফিটনেসহীন অবস্থায়! বিশ্বকাপের জন্য আলাদাভাবে কি করেছেন মাশরাফী সেটা জানা নেই, দিনশেষে মাশরাফীর পারফর্ম করাটাই আসল কথা, অতীত গৌরব এখানে মূল্যহীন। অবশ্যই পারফরম্যান্সই শেষ কথা, ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসে এটা বুঝতে কি ভুলই না করলেন তিনি!
অন্যরা বিশ্বকাপ জেতার পরেও ছুটি পায়না, আর আমরা কিনা আফগানিস্তানের সাথে জেতার পরেই পাঁচ দিনের ছুটিতে পাঠিয়ে দেই দলকে! এই ছুটিতে পাঠানোর দায়টাও চাপানো হচ্ছে রোডসের কাঁধে, যদিও সত্যিটা যে ভিন্ন এটা সবাইই জানেন। আকরাম-সুজনরা ছিলেন সেখানে, বোর্ডের একগাদা পরিচালক ছিলেন, নির্বাচকরা ছিলেন, তাঁদের সবার অমতে পুরো দল ছুটি পাওয়ার কথা আকাশকুসুম কল্পনা! এই ছুটির চিন্তা যার মাথা থেকে তাঁকেই ছেঁটে ফেলা উচিত, কিন্তু বলির পাঁঠা তো হলেন রোডস। ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেটায় বিশ্বকাপ ভাগ্য পুরোটাই নির্ভর করছিল, তার আগে ক্রিকেটাররা ইউরোপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কতটা অপেশাদার হলে এটা সম্ভব ভাবা যায়!
ইঞ্জুরি ম্যানেজমেন্টে যে পাশ মার্কও তুলতে পারবেনা সাপোর্ট স্টাফরা সেটা নিশ্চিত। ফিটনেসের দায়ভার কিভাবে ক্রিকেটারদের উপর চাপিয়ে দেন তাঁরা, ভাবতেই অবাক লাগে। ফিটনেস নিশ্চিত করার জন্য একটা প্রসিডিওর থাকবে, যে সেটা উতরাতে পারবেন তিনি খেলবেন, আর যিনি পারবেন না তিনি ম্যাচে খেলবেন না- এটাইতো হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দলে ক্রিকেটাররাই ঠিক করেন তিনি ফিট কি আনফিট, বিশেষ করে তথাকথিত সিনিয়ররা! তাহলে আর দলে ফিজিওর দরকার কি?।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে এই বাজে ফলের দায়টা কেউ নিচ্ছেনা, বরঞ্চ বলা হচ্ছে আট নাম্বার হলেও নাকি অতটা খারাপ খেলিনি আমরা! এইরকম মানসিকতা থাকলে এই লেভেলে কিছু করা সম্ভব না, বড়জোর উইন্ডিজ শ্রীলঙ্কাকে ওদের খারাপ সময়ে হারিয়ে দেয়া যাবে, আর জিম্বাবুয়ে তো আছেই!, আফগানিস্তানও দিনদিন আমাদের ছাড়িয়ে যাবে, এই মানসিকতা কিভাবে একটা দারুন দলকে ডুবিয়ে দেয় এই বিশ্বকাপই সবচেয়ে বড় প্রমান!
আহা, বাংলাদেশের ক্রিকেট..দূর্ভাগা এক জাতি! কাদের হাতেইনা দেশের ক্রিকেট...
- 0 মন্তব্য