• ক্রিকেট

আকর্ষণের ‘আকর্ষণীয়’-হীনা সিরিজ

পোস্টটি ৪১৮৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ২০০০ সালে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ খেলার সুযোগ দ্রুতই হলেও ভারতের মাটিতে তার সুযোগ হয় ২০১৭ তে গিয়ে, ১৭ বছর পর। শুধু তাই নয়, ভারতের মাটিতে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ এই বছর, ২০১৯ সালে। স্বভাবতই এই সিরিজের আকর্ষণ অন্য সব সিরিজ থেকে খানিকটা হলেও বেশি। তবে আকর্ষণের সেই সিরিজে বাংলাদেশ পাচ্ছে না তাদেরই আকর্ষণীয় দুই পারফর্মারকে- সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। ভারতের সাথে এওয়ে সিরিজে সাকিব আর তামিম এর না থাকাটা স্বভাবতই খাদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশকে খাদেই ফেলে দিয়েছে। তবুও ছোট ফর্ম্যাটের সিরিজে বাংলাদেশ নিজেদের পক্ষে কিছু আশা দেখতেই পারে। কেননা, টি-২০ তে যে নিজেদের দিনে জিততে পারে যে কেউই।

সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দলের অধিনায়ক করা হয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। সত্যি বলতে, ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান আর বোলার সাকিব আল হাসানের চাইতেও দল সবচেয়ে বেশি মিস করবে ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানকে।একটা ম্যাচে কিংবা একটা সিরিজে ব্যাটসম্যান সাকিব অথবা বোলার সাকিব ফ্লপ যেতেই পারতেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানের ফ্লপ যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অবশ্যই খারাপ পছন্দ নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় বিবেচনায় আর সাকিব আল হাসানের সাথে তুলনায় তিনি অবশ্যই বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়বেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের ড্রেসিংরুমে বারুদ সঞ্চার করা, ব্যাটিং অর্ডারে গ্যাম্বল করা, একাদশ নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সাহস দেখানো কিংবা ব্রেক থ্রুর খোঁজে বোলার চেঞ্জে ক্যারিশমা দেখানো.. একজন ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশ মিস করতে বাধ্য। 

টি-২০ ফর্ম্যাটে ওপেনিং পজিশনে লিটন দাসের থাকা নিশ্চিত। প্রশ্ন হল তার সাথে ইনিংস উদ্বোধনে নামবেন কে? সৌম্য সরকার আর নাঈম শেখ দুইটি অপশান। ক্রমাগত ব্যার্থ সৌম্য সরকারের দিকে টিম ম্যানেজমেন্টের পাল্লা ঝুঁকবে কিনা কিংবা আদৌ ঝোঁকা উচিত কিনা সেটিই আসলে মূখ্য প্রশ্ন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই ফর্ম্যাটে তিনি সাবলীল নন, বলার মত কোন পারফর্ম্যান্সই নেই। ৪৩ ম্যাচে বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করতে নেমে নট-আউট থাকতে পারেননি একবারও। করেছেন ৭২২ রান ,হাফ-সেঞ্চুরি মাত্র একটি। প্রতিপক্ষ ভারত হলে সেই পরিসংখ্যান হবে আরো নাজুক। ৬ ম্যাচ খেলতে নেমে ১০.৩৩ এভারেজে করেছেন ৬২ রান। স্ট্রাইক রেটটাও টি-২০ সুলভ নয়- মাত্র ১০১.৬৪ ! নিদেনপক্ষে ক্রমাগত ব্যার্থ সৌম্য যদি শেষ একটি সুযোগ পেয়েও যান, তবুও এটি সম্ভবত হতে যাচ্ছে তার জন্যে ডেডলাইন সিরিজ। ক্যারিয়ারকে তিনি খাদের কিনারেয়ায় নিয়ে গেছেন বহু আগেই, এই সিরিজে ব্যার্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলে হয়ত তাকে দলের বাইরে যেতে হতে পারে লম্বা সময়ের জন্যেই।

সৌম্য সরকারের যে একটি ডেডলাইন সিরিজ পাবার সম্ভাবনা জাগছে তারও কারণ নাঈম শেখের অনভিজ্ঞতা।ভারতের সাথে এওয়ে সিরিজে নাঈম শেখকে ডেব্যু করানো উচিত হবে কিনা সেটাও আলোচনার দাবি রাখে।হাতে প্রচুর স্ট্রোক আছে, খেলতে পারেন স্টেডিয়ামের চারপাশে।এরকম একজন সম্ভাবনাময় ওপেনারকে ভারতের সাথে এওয়ে সিরিজে ডেব্যু করালে ব্যার্থতার আশঙ্কা থাকে। টিম-ম্যানেজমেন্টের ভোট তাই ওপেনার বাছাইয়ে নাঈম শেখের দিকে নাও যেতে পারে। 

ওপেনিং পজিশনে সুযোগ না পেলেও নাঈম শেখকে সম্ভবত মাঠের বাইরে নাও থাকতে হতে পারে। ৩ নং পজিশনে টি-২০ তে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন খেলিয়েছে সাব্বির রহমানকে।এর আগে খেলেছেন সাকিব আল হাসান নিজেই।এবার এই সিরিজে দলে নেই দুজনের কেউই। তাই সৌম্য আর নাঈম শেখের একজনকে ওপেনিঙ্গয়ে রেখে আরেকজনকে ৩ নং-এ খেলালে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে ৩নং এ আরো খেলতে পারেন- মিথুন,সৈকত, আফিফ ।তবে সৈকত আর আফিফকে খুব সম্ভবত লোয়ার অর্ডার থেকে টপ অর্ডারে প্রমোট করা হবেনা। নাঈম শেখের অনভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে কপাল খুলতে পারে মিথুনেরও।

৪ আর ৫ নং পজিশনে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলছেন। এরপরের দুইটি পছন্দ খুব সম্ভবত মোসাদ্দেক সৈকত আর আফিফ হোসেন ধ্রুব।গত সিরিজে লোয়ার অর্ডারে জুটি বেঁধে ব্যাট করা এই দুজনের পজিশন তাই মনে হয় নড়চড় হবেনা ।ব্যাটসম্যান-অলরাউন্ডার দিয়ে ৭ জন বাছাইয়ের পর একাদশে হয়ত দেখা যাবে ৪ বোলারকে। 

ভারতকে নিয়ে কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের মজার একটি উক্তি আছে। তিনি ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে মজার ছলে বলেছিলেন, ‘ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্পিন খেলতে পারে’। কথাটি যে ফেলনা নয়, তা পরিসংখ্যান ঘাটলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ৪ বোলারের মধ্যে তাই ৩ পেসারের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত। একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার এর খোঁজে একাদশে আছেন ৩ জন- আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম আর আর আমিনুল বিপ্লব। আরাফাত সানি দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন আগে থেকেই। তাইজুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার পর। বাঁহাতি স্পিনার নিতে চাইলে দল ছুটবে আরাফাত সানির দিকে। আর সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে আরাফাত সানিও হয়ত দীর্ঘদিন পর দলে ফিরছেন। সেক্ষেত্রে হয়ত বাদ পড়বেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। বাদ পড়ার অবশ্য কারণও আছে। এখনোও লেগ স্পিনের সকল অস্ত্র রপ্ত না করা আমিনুলকে টিম ইন্ডিয়ার শক্ত ব্যাটিং অর্ডারের সামনে পাঠাতে হয়ত দল আত্মবিশ্বাসী হবেনা। সেদিক বিবেচনায় অভিজ্ঞ সানিই হয়ত টিকে যাচ্ছেন। অনেকে আমিনুলের ব্যাটিং-এর জন্যে একাদশে রাখার পক্ষে মত দিতে পারেন।কিন্তু ৭ ব্যাটসম্যানের পর ম্যাচ জিততে শুধুমাত্র ব্যাটিং বিবেচনায় আমিনুলকে হয়ত দলে রাখাটা সমীচিন নয়।কেননা,  ম্যাচ জিততে হলে তো ৮ নং এ আমাদের স্পেশালিস্ট বোলারই দরকার।

৯, ১০ আর ১১ তে দেখা মিলবে ৩ পেসারের। ৩ জনের একজন যে মুস্তাফিজুর রহমান তা বলার অপেক্ষা রাখছেনা । বাকি একজন হতে যাচ্ছেন আল আমিন হোসাইন। উইকেট-টেকিং এবিলিটি আর দারুণ ফিটনেসের কারণেই দীর্ঘদিন পর স্কোয়াডে ফিরেছেন তিনি। খুব সম্ভবত থাকবেন একাদশেও। তাকে রাখাটাও উচিত হবে। বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিন ধরেই একজন ডেডলি উইকেট টেকারের অভাব ।দেখা যায়, প্রত্যেকেই রান বাঁচাতে ব্যাস্ত। এতে যা হয়, প্রথম দিকের ইকোনমিটা ঠিকঠাক দেখায় ।কিন্তু এই সেট ব্যাটসম্যানেরাই শেষ ১০ ওভারে তুলে ফেলেন অতিমানবীয় রান। আখেরে লাভের খাতা এতে থাকে শূন্য। আল-আমিন আর তাসকিন তাই রান দিলেও নিয়মিত উইকেট নেয়।আর দলে এরকম একজনের থাকাটা খুবই জরুরী। অন্যদের রানে আটকে রাখার চাপে যে কিনা প্রতিপক্ষের উইকেট তুলে নেবেন। 

শফিউল আর রনির মধ্যে থেকে টিম-ম্যানেজমেন্ট হয়ত ঝুঁকবে শফিউলের দিকে । দীর্ঘদিন দলে আসা যাওয়ার পর গ্লামারলেস শফিউলকে আমরা হয়ত ফেলে দিয়েছি খরচের খাতাতেই। কিন্তু শফিউলের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স কিন্তু সে কথা বলছে না । সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তার পক্ষে তো কথা বলছেই, তারচেয়ে বেশি হয়ত কথা বলবে তার বোলিং । নতুন বল হাতে নিয়ে সুইং আদায়, প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করা আর উইকেট আদায়ে তিনি খুব সম্ভবত এখন স্ট্রাইক বোলার হিসেবে বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে শীর্ষেই থাকবেন। শফিউলই তাই হয়ত ৩ তারিখ লাল-সবুজ জার্সি গায়ে দিল্লীতে নেমে যাবেন।

 

সব মিলিয়ে সম্ভাব্য একাদশ-

১/  লিটন কুমার দাস

২/ সৌম্য সরকার/ নাঈম শেখ

৩/ সৌম্য সরকার/ নাঈম শেখ/মিথুন

৪/ মুশফিকুর রহিম’

৫/ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

৬/ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

৭/ আফিফ হোসেন

৮/ আরাফাত সানি

৯/ মুস্তাফিজুর রহমান

১০/ আল-আমিন হোসাইন

১১/ শফিউল ইসলাম

 

সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দল ডাক দিয়েছে একজন বাঁহাতি স্পিনারকে । ভাবনাটা স্পষ্ট । ব্যাটসম্যান সাকিবের অভাব বাকিরা মিলে পূরণ যদি করতেও পারে, বোলার সাকিবের অনুপস্থিতি নিয়ে দল ভাবছে বেশি। একাদশে থাকা বাকি বোলারদের তাই বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। বোলার নির্বাচনে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকেও থাকতে হবে সতর্ক। পরিচয় দিতে হবে বুদ্ধিমত্তার। প্রত্যেকে মিলে একটু একটু করে দায়িত্ব নিলে তাই বোলার সাকিবের অভাব পূরণ করা কঠিন হবার কথা নয় ।আর তা হলে ম্যচ জিততে পারে বাংলাদেশও !