বাঘের ডেরায় সাদা পোশাকে সিংহের কুপোকাত হওয়ার দিনটা
পোস্টটি ২১৮৭ বার পঠিত হয়েছেক্যালেন্ডারের পাতা উলটে বছর চারেক পেছনে ফেরা যাক। ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০১৬ এর ৩০ অক্টোবরে পৌঁছে গেলেই পাওয়া যাবে বাংলার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি দিন। ক্রিকেটের জন্ম দেয়া দেশটাকে লাল বলের খেলায় প্রথমবার হারিয়ে দেয়ার দিন। তবে এই স্বপ্নটা বাঙালিরা দেখেছিলো দেখছিলো ১৪ মাস পর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমে ইংলান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে। ২৪ অক্টবর কোটি বাঙালিকে নিরাশ করে ৬৪ রানে অপরাজিত থেকেই বাকি ১০ ব্যটসম্যানের কারণে সাব্বির রুম্মনও পথ ধরলেন সাজঘরের। জয়ের বন্দর থেকে মাত্র ২২ রান দূরে থেমে যায় সেদিন লাল-সবুজদের যাত্রা। মনে আক্ষেপ আর বুকে সাহস নিয়ে ২৮ তারিখ ২য় টেস্টে আবার মাঠে নামে সাকিব মুশফিকরা। নিজের ৫০ তম টেস্ট ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখার একটা ইচ্ছাতো মনের মধ্যে ছিলোই ক্যাপ্টেন মুশির।
তীরে এসে তরী ডুবানো আগের ম্যাচের দায় মোচন করতে হবে। দায়শোধের দায়টা হয়তো প্রকৃতিরই থাকে। প্রকৃতি দায়শোধের জন্য একটুও সময় নিলো না। দায়শোধ করে দিলো পরের টেস্টের ৩য় দিনেই। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেলো নতুন এক মহাকাব্য। যে মহাকাব্য কোটি ক্রিকেটখোরের স্মৃতিপটে থেকে যাবে ঠিক ততদিন, যতদিন ব্যাট হাতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ, যতদিন থাকবে এদেশের ক্রিকেটের অস্তিত্ব।
নতুন সেই মহাকাব্য লিখতে তখন প্রয়োজন আর ১ টা মাত্র উইকেট, আর একটা মাত্র ভালো বল যেটাতে পরাস্ত হবে ক্রিস ওকস বা ফিন। ৪র্থ ইনিংসের ৪৬ তম ওভারের ৩য় বলটা করে ফেললেন মিরাজ। ব্যাট পরাস্ত করে যেই না বল ব্যাটসম্যানের প্যাডে ওমনিই উইকেটের পেছন থেকে ২ হাত উঁচু করে আবেদন মুশির। তারপরেই সেই মহাকাব্যিক মুহূর্ত, কুমার ধর্মসেনা আঙুল উঁচিয়ে ধরার সাথে সাথে বাঘেরা প্রতিযোগিতায় নেমে পরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ২ প্রান্তের ৬ টি স্ট্যাম্প দখল করতে।
ম্যাচের শুরু থেকেই তবে কথা শুরু করা যাক। ২৮ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার। ঘড়িতে সকাল সাড়ে নয়টা। আগের ম্যাচের হারের আক্ষেপ নিয়ে টস করতে নামেন মুশফিকুর রহিম। সাথে প্রতিপক্ষের দলনেতা এলিস্টার কুক আর ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালে। আগের ম্যাচে টস হারলেও এই ম্যাচে আবার টস জয়। টস জিতে ব্যাটিং এ বাংলাদেশ।
সকাল যখন ঠিক ১০ টা নিয়ম মেনে তখনই মাঠে বাংলাদেশ দলের ২ ওপেনার। তামিম ইকবালের বিপরীতে বল হাতে ক্রিস ওকস। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস। দেখেশুনেই শুরু তামিমের, টেস্ট ম্যাচে যেমনটা হয়ে থাকে আরকি। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করেছে সবে মাত্র ৯ মিনিট হলো। উকসের শর্ট এন্ড ওয়াইড বলে ইমরুলের কাট। ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে বলটা লুফে নিতে একটুও বেগ পেতে হলোনা ইংলিশ ওপেনার ডাকেটের। সেবারের বাংলাদেশ সফরে উকসের ১ম উইকেট ছিলো সেটা। ২.২ ওভারেই বাংলাদেশের ১ উইকেট নেই। সংগ্রহ তখন মাত্র ১; সেটাও ইমরুল কায়েস সাগরেরই।
এরপরের কিছু সময় জুড়ে গল্পটা বলতে গেলে শুধুই বাংলাদেশের, গল্পকার তামিম আর মুমিনুল। দুজন মিলে খেলে যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে । ইংলিশ শিবিরে চিন্তার ভাঁজ। ৬০ বলে অর্ধশতক তামিমের। ১ উইকেটে ১১৮ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরে এসেও স্টোকস, মঈনদের উপর ছুড়ি ঘুড়াতে থাকেন তামিম আর মিমি। ৭১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করে্ন মুমিনুল আর ১৩৯ বলে তামিমের শতক। ঠিকঠাক চলতে থাকা বাংলাদেশ ইনিংসে হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। মূলহোতা মঈন আলি। ৪২ তম ওভারের ১ম বলেই মঈনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে কাটা পরেন ৭২ রানে একবার জীবন পাওয়া তামিম ইকবাল। ভাঙলো ১৭০ রানের জুটি। ৩ ওভার পর মঈনের বলেই মুমিনুল বোল্ড। ম্যাচের ব্যাটনটা যেন ঠিক তখনই পরে গেলো বাংলাদেশের হাত থেকে। প্রথমদিনের বাকি সময়টা দুইদলেরই ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার।
রিয়াদ, সাকিব, সাব্বির, মিরাজরা যেন নিজেদের পিচ নিজেরাই বুঝতে পারলো না। মিরপুরের উইকেট যেন যেকোনো ঔপন্যাসিকের রহস্যময়ী নায়িকার থেকেও বেশি রহস্যে ভরা। ১ উইকেটে ১৭১ থেকে ২২০ রানে অলআউট বাংলাদেশ। মঈনের শিকার ৫।
১ম ইনিংসের স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ২২০/১০ (৬৩.৫ ওভার)
তামিম ইকবাল ১০৪ (১৪৭) মঈন আলী ৫/৫৭
মুমিনুল ৬৬ (১১১) ক্রিস ওকস ৩/৩০
জবাবে সাকিব-মিরাজ-তাইজুল ত্রয়ীতে সিংহেরা প্রকম্পিত হতে থাকে শুরু থেকেই। ২য় ওভারের ৫ম বলে সাকিবের ঘূর্ণিতে আসে বাংলাদেশের বল হাতে ম্যাচের প্রথম সাফল্য। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ইংলিশ ওপেনার ডাকেট। ১ম দিনের বাকি ১০ ওভারে মিরাজের বলে কাটা পরেন এলিস্টার কুক আর জিম্বাবুইয়ান বংশোদ্ভূত ইংলিশ ক্রিকেটার গ্যারি ব্যালেন্স। ১ম দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫০।
১৭০ রানের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আর ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২য় দিন শুরু করে ইংলিশরা। আগের দিনের শেষ যেখানে, সেখান থেকেই শুরু করলো মিরাজ-তাইজুলরা। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেই শুরু করে ২য় দিন। নিয়মিত বিরতিতেই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। সকালের প্রথম ৪ ওভারের মধ্যেই মিরাজ আর তাইজুলে পরাস্ত মঈন আর স্টোকস। এরপর কিছু সময় ওয়ান ডাউনে নামা জো রুটের সাথে বেয়ারস্টোর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা। তাদের ৪৫ রানের পার্টনারশিপের ইতি টানেন তরুণ মিরাজ। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যেতে হয় বেয়ারস্টোকে। অভিষিক্ত জাফর আনসারি ফিরে গেলে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাকি ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়া দেখা জো রুটও ফিরে যান প্রায় সাথে সাথেই। তাইজুলের বলে আউট হওয়ার আগে ১২২ বলে ৫৬ রান করে ইংলিশ শিবিরে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেয়ার চেষ্টা ছিলো জো রুটের।
রুটের ফিরে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১৪৪, হাতে আছে আর মাত্র ২ উইকেট। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে, এর থেকেও কম দূরত্ব মনে হয়েছিলো তখন ইংলিশদের অলআউট হওয়া। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই লিড নেয়ার স্বপ্নে বিভোর তখন কোটি টাইগার সমর্থক। কিন্তু গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো স্পিনার আদিল রশিদের সাথে ক্রিস ওকস। তাদের ৯৯ রানের জুটিতে ইংল্যান্ড পেয়ে যায় ২৪ রানের লিড। ২৪৪ এ অলআউট ইংল্যান্ড।
২য় ইনিংসের স্কোরকার্ড:
ইংল্যান্ড ২৪৪/১০ (৮১.৩ ওভার)
রুট ৫৬ (১২২) মেহেদি হাসান মিরাজ ৬/৮২
ক্রিস ওকস ৪৬ (১২২) তাইজুল ইসলাম ৩/৬৫
২৪ রানের ছোট্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেই ২য় ইনিংসে ব্যাটিং-এ নামে বাংলাদেশ। দেখেশুনেই শুরু তামিম-ইমরুলের। প্রথম ইনিংসের মতো শুরুতেই কোনো উইকেট এবার আর খোয়াতে হলো না বাংলাদেশকে। ইংলিশ বোলারদের কপালে রীতিমত ঘাম এনে দিয়েছিলেন তামিম আর ইমরুল। অভিষিক্ত জাফরের বলে ইনসাইড এজ হয়ে লেগ স্লিপে তামিম ৪০ রানে কাটা পরার আগে ওপেনিং জুটিতে ইমরুলের সাথে গড়েন ৬৫ রানের জুটি।
আগের ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল ১ রানে ফিরলেও মাহমুদুল্লাহর সাথে ইমরুলের আবারও ৮৬ রানের জুটি। মাহমুদুল্লাহ যখন আউট হয় তখন বাংলাদেশের লিড ১২৮ রানের। সেখানেই শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। এর মধ্যেই ৬১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন ইমরুল কায়েস।
৩য় দিন বা ওই টেস্টের শেষ দিনের শুরুটাও ভালোই হয়েছিলো সাকিব ইমরুলের ৪৮ রানের জুটিতে। ব্যক্তিগত ৭৮ এ ইমরুল আউট হলে দলপতি মুশফিকের সাথে সাকিবের ৩৮ রানের জুটিতে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩৮। হাতে ৫ উইকেট রেখেই মিরপুরের এই উইকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যনদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার মতো লিড ততক্ষণে হয়ে গেছে।
সাকিবের আউটের পর সাব্বির আর শুভাগত হোমের ৩০ রানের পার্টনারশিপ আর শেষ উইকেটে শুভাগত হোমের সাথে ম্যাচে খেলা বাংলাদেশ দলের একমাত্র পেসার কামরুল রাব্বির ২০ রানের পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে দেয় ২৭২ রানের লিড। শুভাগত হোম অপরাজিত থাকেন ২৫ রানে।
টার্গেটটা ২৭২ রানের। ইংলিশদের ১০ জন ব্যাটসম্যনের জন্য ২৭২ রান টপকাতে পরে আছে ২ টি পূর্ণদিনের সাথে ৩য় দিনের বাকিসময়। তবে উপমহাদেশের উইকেট আর সাকিব-মিরাজ-তাইজুলদের সামনে ব্যাপারটা সহজ না মোটেও।
২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট হাতে নেমে বাঙালির অন্তরে ভয়ের ভিতটা ভালোভাবেই গড়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ দুই ওপেনার। শুরুতেই এলিস্টার কুক আর বেন ডাকেটের ঠিক ১০০ রানের পার্টনারশিপ। ম্যাচটা তখন প্রায় পুরোটাই হেলে পরেছে ইংলিশদের দিকে। ম্যাচে থেকেও বাংলাদেশ যেন ম্যাচে নেই। এমন ভাবনা নিয়ে চা বিরতিতে দুই দল।
চা বিরতিতে যাওয়ার আগে যে দুশ্চিন্তা ভর করে বসেছিলো বাঙালি সমর্থকদের মস্তিষ্কে তা দূর করতে একদমই সময় লাগেনি বিরতির পর। বিরতি থেকে ফেরার পর প্রথম বলেই মিরাজের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে শতরানের জুটিতে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে গ্লাভস খুলেন ডাকেট। এর পর আর দাঁড়াতেই পারেনি জো রুট, বেন স্টোকসরা। বল ঘুরলো মিরাজ সাকিবদের, আর কপাল পুড়লো ইংলিশদের। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকলো সেটাই।
৬ বলের ব্যবধানে সাকিবের বলে ফিরে যান প্রথম ইনিংসে প্রতিরোধ গড়া জো রুট। কুক আর ব্যালেন্সের ১৯ রানের ছোট্ট জুটি ভাঙে মিরাজের বলে মিড অফে তামিমের হাতে ব্যালেন্সের লিডিং এজ হওয়া বল ধরা পরলে। এর পরই যেন আগের ম্যাচে অভিষিক্ত মেহেদি মিরাজ আরও একবার জ্বলে উঠেন বল হাতে। একে একে মঈন, কুক আর বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে অভিষেকের ২ ম্যাচেই ৩ বার ৫ উইকেট পূর্ণ করে ফেলেন মিরাজ।
বেয়ারস্টোর বিদায়ের পর স্টোকস আর উকসের ২২ রানের আরেকটা ছোট্ট জুটি। এবার রুদ্র মূর্তিতে আবির্ভাব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। নিজের ৪৩ তম ওভারের ৩য় বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টোকসকে বোল্ড করেন সাকিব আল হাসান। সাথে সেই মন-প্রাণ-চোখ জুরানো স্যালুট সেলেব্রেশন যা এখনো চোখের সামনে ভাসে সেদিন স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিন বা বাড়ির টিভি/মোবাইল কিংবা ম্যাচের পরে হাইলাইটস/নিউজে একবার হলেও দৃশ্যটা দেখে থাকা বাঙালিদের। পরের বলেই আদিল রশিদকে ফিরিয়ে জাগান হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা।
"Shakib Al Hasan is on a hat-trick and Bangladesh just two wickets away from one of the greatest moments in Bangladesh's cricket history." এমন একটা মুহূর্ত বাংলাদেশ তার টেস্ট ইতিহাসে মুলতান টেস্টের পর কবে পেয়েছিলো? ১ম টেস্ট জয়ের সময়? হয়তো আবার হয়তো বা না।
অভিষিক্ত জাফর আনসারি একটা বল টিকে গেলেও ওভারের শেষ বলে মুমিনুল আর ইমরুল দারুণ অ্যাফোর্টে ক্যাচ আউট হয়ে ৪৩ তম ওভারে সাকিবের ৩য় শিকার হয়ে ফিরে যান ঠিকই। বিতর্ক সাপেক্ষে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট সাকিবের এই ওভারটিকেও বলা যেতেই পারে। এর পরই সেই মুহূর্ত, সেই প্রতিক্ষা, আর একটা উইকেটের অপেক্ষা। ওকস আর ফিন মিলে জয়ের অপেক্ষাটা আরও ২ ওভার দীর্ঘায়িত করেন।
৪৬ তম ওভারের ৩য় বল। মিরাজের বলে ফিনের ফিরে যাওয়া। ধরা দিলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দেশের ইতিহাসের ৮ম টেস্ট জয়। আগের ৭ জয়ের ৫ টাই যেখানে জিম্বাবুয়ে আর ২ টা ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিম্ন সাড়ির দলের বিপক্ষে সেখানে ৮ম জয়টা একেবারে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। তাও আবার ১০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে। এ যেনো রূপকথার গল্পের দৈত্যের কবল থেকে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনার থেকেও বেশি আনন্দের। হীরক রাজার দেশ ঘুরার থেকেও বেশি তৃপ্তির। এ যেনো বিন্দু বিন্দু করে জমানো স্বপ্নের এক ছোট্ট বাস্তবায়ন।
এ জয়ের মাধ্যমে দেশের সাফল্যের ঝুড়ি ভারি হওয়ার সাথে ভারি হয় চান্দিকা হাথুরুসিংহের কোচিং ক্যারিয়ারের সফলতার পাল্লাটাও।
ধুঁকতে থাকা ফরম্যাটে ভবিষ্যৎ এর জন্য সাহস আর স্বপ্ন দেখানো এই ম্যাচটি ছিলো "রকেট টেস্ট সিরিজ" এর ম্যাচ। ২ ইনিংসেই ৬ উইকেট করে নেয়া ১৯ বছরের মিরাজই হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। ইতিহাসের ২য় প্লেয়ার হিসেবে ২ টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরাও মিরাজ।
ক্রিকেটের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে ঠিক ততদিনের জন্য বিসিবির হল অব ফেমে যায়গা করে নেয়া এই জয় দিয়ে বাংলাদেশ দেখেছিলো সাদাপোষাকে নতুন শুরুর স্বপ্ন। এর পর টাইগাররা জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। জয় পেয়েছে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচেও, লংকার মাটিতে লংকানদের হারিয়ে। ভবিষ্যতে আরও অনেক জয় পাবে, তবে সেদিনের শেষ বিকেলের সেই সোনালী রোদে ঝকমক করতে থাকা বাঙালিদের হাসিটা হয়তো এতটা তৃপ্তির হবে না।
শেষ ২ ইনিংসের স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ ২৯৬/১০ (৬৬.৫ ওভার)
ইমরুল কায়েস ৭৮ (১২০) রশিদ ৪/৫২
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৭ (৫৭) স্টোকস ৩/৫২
ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭২ রান।
ইংল্যান্ড ১৬৪/১০ (৪৫.৩ ওভার)
এলিস্টার কুক ৫৯ (১১৭) মিরাজ ৬/৭৭
বেন ডাকেট ৫৬ (৬৪) সাকিব ৪/৪৯
ফলাফল: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী।
- 0 মন্তব্য