• ক্রিকেট

সাকিব আল হাসানের বিকল্প

পোস্টটি ১৯০৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারতো অবশ্যই, এই মুহূর্তের বিশ্ব-ক্রিকেটেরও অন্যতম সেরা একজন। উইজডেনের শতাব্দীর সেরা টেস্ট আর ওডিআই ক্রিকেটারের তালিকাতেও আছেন সাকিব। সেই সাকিবের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কি আদৌ সম্ভব? পরীক্ষার খাতায় এই প্রশ্নটিকে “এক কথায় উত্তর দাও” ধরনের প্রশ্ন করলে উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না, “এক শব্দে উত্তর দাও” টাইপ প্রশ্ন হলে “না” লিখে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচবে পরীক্ষার্থীরা। তাহলে খুঁজে পাওয়া যখন সম্ভবই না তখন এই লেখাটির উদ্দেশ্য কি? “নেই কাজ তো খই ভাজ” নামক বাক্যটির প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসাই এই লেখাটির পেছনের একমাত্র কারণ। 

 

সাকিব আল হাসানের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না তা সবাই-ই জানি, জানার পাশাপাশি বিশ্বাসও করি। তবুও যদি প্রশ্ন করা হয়, “সাকিব না থাকলে সাকিবের রিপ্লেসমেন্ট কে হতে পারতো?” তবে অনেকেই অনেক উত্তর দেন। “সাকিবের সমান কেউ হতে পারেনি, তবে এ কিংবা ও কাছাকাছি যেতে পারতো” এমন উত্তর অনেকেই দেবেন। সেই এ কিংবা ও এর তালিকা করলে যে নামগুলো আসতে পারে সেগুলো যদি এক যায়গায় করি তবুও তালিকাটা খুব ছোটই থেকে যায়। “দেশের ক্রিকেটে সাকিবের রিপ্লেসমেন্ট কে হতে পারতো?” এর উত্তরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নামটা আসবে জোরেশোরে। এরপর যে নামগুলো আসতে পারে সেগুলো হলো নাইম, নাসির, মাঞ্জারুল ইসলাম রানা আর মোহাম্মদ রফিক। কেউ কেউ হয়তো মাশরাফি, ফরহাদ রেজা  কিংবা সোহাগ গাজির নামও টানবেন। অতিরিক্তভাবে যুক্ত করতে চাইলে হয়তো যুক্ত করা যাবে ১০ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করা অলরাউন্ডার আবুল হাসানের নাম।

 

এ তো গেলো অতিতের কথা। অতিতে যা হতে পারতো তবে হয়নি আর হবেও না, এমন কিছু। ভবিষ্যতে তো হতেই পারে। হ্যাঁ সেটা হতেই পারে। তবে আজ থেকে ৪০, ৮০ কিংবা ১০০ বছর কে হবে সেটা তো আর আমি এখান থেকে বলতে পারিনা, টাইম মেশিনের সন্ধানটা আমি এখনো পাইনি। টনি গ্রেইগের পর ইয়ান বোথাম যেমন পরপর এসেছেন ইংল্যান্ড দলে, তেমন টা চিন্তা করতে চাইলে সামনে আসবে মিরাজ, সাইফুদ্দিন আর আফিফের নাম। মোসাদ্দেক সৈকতের নামও টানতে পারেন কেউ কেউ। যদিও তারা একই সাথে খেলছে, কিন্তু নিজেদের ধরে রাখতে পারলে সাকিবের অবসরের পর তারা খেলতে পারবে আরও অনেক দিন। এদের নিয়েও কথা বলবো, আপাতত না হয় মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে শুরু করা যাক।

 

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বেশি সংখ্যক মানুষ উত্তর হিসেবে বেঁছে নিবেন হয়তো। সাকিবের মতো হতে না পারলেও সাকিবের সবথেকে কাছাকাছি আসতে পারতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- এমনটাই মনে করেন বেশিরভাগ ক্রিকেটখোর। কেউ কেউ বলেই ফেলতে পারেন নিয়মিত বোলিং এর সুযোগ পেলে হয়তো শন পোলক আর জ্যাক ক্যালিসের মতো একই সাথে একই দলে দুই সেরা অলরাউন্ডার হয়ে থাকতে পারতেন সাকিব আর রিয়াদ। নিয়মিত বোলিং করতে না পারার সাথে যুক্তি হিসেবে দাঁড়াবে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করা। যুক্তিটা শক্তও বটে।

 

মাহমুদুল্লাহর জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই সাকিব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলে ফেলেছিলো ৩৩ টি ওডিআই, ৩ টেস্ট আর ১ টি২০। ৩৩ ওডিআই এর ৩২ ইনিংসেই ব্যাট হাতে নেমেছেন সাকিব, ১ শতক আর ৫ অর্ধশতকে মোট রান করেছিলেন ৯৩৫ যা সাকিব আল হাসানের অভিষেকের পর থেকে মাহমুদুল্লাহর অভিষেকের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ২য় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। মাত্র ৪ রান বেশি নিয়ে শাহরিয়ার নাফিসের সংগ্রহ ছিলো সবার উপরে। সাথে ৩১ উইকেট নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক আর মাশরাফির পর ৩য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীও ছিলেন সাকিব।

 

ক্যারিয়ারটা বোলার হিসেবে শুরু করা রিয়াদের প্রথম ৩৩ ওডিআই এর ব্যাটিং পরিসংখ্যান দেখলে বিশ্বাস করেই নিতে পারেন সাকিবের বিকল্প কিংবা সমানে সমান হতেই পারতেন রিয়াদ। ৩৩ ম্যাচে মাত্র ২৭ ইনিংস খেলে রিয়াদের সংগ্রহ ছিলো ৫২৩ রান। কি ভাবছেন? ৯৩৫ আর ৫২৩ এর মধ্যে অনেক পার্থক্য? কিন্তু ৯৩৫ রান করতে সাকিব খেলেছিলেন ১৩৭৬ বল, যেখানে রিয়াদ লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করায় খেলেছেন মাত্র ৭৮৩ বল। রিয়াদের এই ৩৩ ম্যাচের সময়কালে সাকিবের সংগ্রহটা ৮৯৭ বলে ৬৬৪ রানের। গড়টা রিয়াদের বেশি ০.৯৫ এর ব্যবধানে।

 

বোলিং এ নজর দেয়া যাক এবার। সাকিবের থেকে বল হাতে বলও করেছেন রিয়াদ অনেক কম। সাকিবের প্রথম ৩৩ ম্যাচে যেখানে সাকিব বল ২৫১.২ ওভার বল করে নিয়েছিলেন ৩১ উইকেট; সেখানে রিয়াদের প্রথম ৩৩ ম্যাচে বল করেছেন ১৯১ ওভার। তবে এখানে উইকেটের দিক থেকেও তুলনামূলক পিছিয়েই রিয়াদ, উইকেট ছিলো ১৮ টি। রিয়াদ এই ১৮ উইকেট নিতে নিতে সাকিব নিজের ঝুড়িতে পুরেছিলেন আরও ৩৭ উইকেট। বোলিং এভারেজ সাকিবের তুলনায় মাহমুদুল্লাহর প্রায় দ্বিগুন।

 

সাকিব রিয়াদ নিয়ে তুলনা করতে থাকলে অনেক দূর যাওয়া যাবে, আবার বর্তমান কিংবা নিকট অতিতের পারফর্মেন্স চিন্তা করলে সাকিব থাকবে অনেক এগিয়ে, ব্যাটিং এ অবশ্যই, কারণ রিয়াদকে এখন আর বল হাতে দেখা যায় না। তাদের নিয়ে এই আলোচনার ইতি টানার কাছাকাছি চলে যেতে চাই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অভিষেকের পর থেকে ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেস্ট, ওডিআই আর টি২০ ক্রিকেটে ২ জনের পারফরমেন্স তুলে ধরে।

 

প্লেয়ার   -  ইনিংস  -  রান    -       বল     -   গড়     -   উইকেট - বোলিং গড় – ওভার     -  বোলিং স্ট্রাইকরেট 

সাকিব   -  ১১৩  -  ৩১৬৩ -    ৪৩৬৭  -  ৩০.৪১  -     ১৮৯     - ২৭.৮০      - ১৪৬৬.১ – ৪৬.৫

রিয়াদ    -   ৭৬  - ১৭৩৯  -   ২৭৩৪   -   ২৭.১৭ -      ৫৫      - ৪৫.৪১       -   ৫৪৯.০  - ৫৯.৮ 

 

এই ম্যাচ গুলোতে সাকিব নট আউট ছিলেন ১০ বার যেখানে রিয়াদ নিচে ব্যাট করায় থাকতে পেরেছেন ১৬ বার। সুযোগ পেলে রিয়াদ আরেক সাকিব হতেই পারতেন, তাই না? বোলিং পরিসংখ্যান অন্তত সেটা বলে না।

 

রিয়াদ তো ব্যাটিং এ তেমন সুযোগই পাননি। তাই না? প্রাপ্ত সুযোগই বা কতটা কাজে লাগিয়েছিলেন রিয়াদ? ব্যাটিং পজিশন ধরে আলোচনা করে বিতর্ক উস্কে দেয়া যাক। নিচের পরিসংখ্যানগুলোতে ক/খ হিসেবে প্রথমটি রিয়াদের আর পরেরটি সাকিবের এ যাবতকালের সকল আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরিসংখ্যান।

 

পজিশন   -   রিয়াদ/সাকিব ইনিংস  -       রান       -           গড়         

৩             -   ১১/৪৬                       - ২৮১/১৮২২  -  ২৮.১/৪৫.৫৫ 

৪             -   ৪৬/৬৪                      - ১৫৬২/১৭১৪- ৩৮.০৯/৩২.৯৬

৫             -  ৬৪/১৮৯                     - ১২৯৩/৫৯১১ – ২১.৯১/৩৫.১৮

৬             -  ৯৭/৫৪                       - ২৪০৮/১৭৮২ – ৩২.৯৮/৩৪.৯৪

৭              -  ৯২/২০                        - ২০৪১/৫১৩   - ৩১.৮৯/২৮.৫

৮              -  ২১/২                           - ৬৭৪/১০        - ৩৫.৪৭/৫.০০

৯               - ৪/০                              - ৫০/-             - ১৬.৬৬  

 

ব্যাটিং নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে, কিন্তু আগেই করা আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের বোলিং এও রিয়াদ, সাকিবের থেকে পিছিয়ে ছিলেন অনেকখানিই। নিয়মিত বোলিং করলে হয়তো রিয়াদও হতে পারতেন আরও একজন সেরা অলরাউন্ডার তবে আরেকজন সাকিব হয়তো হতে পারতেন না।

 

সাকিব-রিয়াদ তর্ক বা আলোচনা আপাতত স্কিপ করা যাক। বাকি যারা আছে তাদের নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। সাকিব জাতীয় দলে যার জায়গায় এসেছিলো সেই মাঞ্জারুল ইসলাম রানাকে নিয়েই অনেকে আশাবাদি হতে পারতেন। তবে একজনের আসাতে অন্যজন যখন স্কোয়াডেরই বাইরে চলে যায় তখন অন্তত সেই সময়ে সাকিব-রানা তুলনা করার মানে নেই। হয়তো পরিশ্রম করে ফিরে আসতে পারতেন, সাকিবের সাথে প্রতিযোগিতাও করতেন, তবে সৃষ্টিকর্তা সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছেন তখনই। আপাতত তাকে বাদ দিয়ে নাইম আর নাসিরে যাওয়া যাক।

Shakib Al Hasan

জাতীয় দলে সাকিব রিয়াদদের পরপরই নাইম ইসলামের আগমন জাতীয় দলে। ৮ টেস্ট, ৫৯ ওডিআই আর ১০ টি২০ খেলেই অঘোষিত ভাবে শেষ করতে হয়েছে ক্যারিয়ার। ৪৮ টি একদিনের ম্যাচে ২৯০.৩ ওভার বল করে উইকেট নিয়েছেন ৩৫ টি আর ১৪ টেস্ট ইনিংসে মাত্র ৯৫.৪ ওভার বল করে উইকেট নিয়েছেন ১ টি। জাতীয় দলে তারমানে বোলিং এর সুযোগ খুব একটা পাননি নাইম ইসলাম। ব্যাটিং এভারেজ টেস্ট, ওডিআই আর টি২০ তে ৩২.০, ২৭.০৭ আর ১৪.৪৪। জাতীয় দলে আসার জন্য বাংলাদেশের সবথেকে বেশি ইফেক্টিভ বয়সভিত্তিক দল, ঘরোয়া ক্রিকেট নয়। নাইমের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলা ১১ টি ম্যাচের স্ট্যাট তুলে আনা যাক। মোট ১১ ম্যাচে ২৬.৪০ গড়ে আর ৫৮.২৬ স্ট্রাইক রেটে মোট রান করেছেন ২৬৮। ফিফটি ১ টি, শূন্য রানে আউট ২ বার। অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও বোলিং এ নিয়মিত ছিলেন না, ৪৩.৪ ওভার বল করে ২৭.৭১ গড় আর ৩৭.৪ স্ট্রাইক রেটে উইকেট নিয়েছিলেন ৭ টি। ব্যাটিং বোলিং একসাথে কন্টিনিউ করলে কি হতো সেই প্রশ্ন যেমন আসে, আবার ব্যাটিং বোলিং এ একসাথে মনোযোগ দিতে গিয়ে নাসিরের মতো দুটো থেকেই ছিটকে যেতেন কি না সেই প্রশ্নও আসে। নাসির আবার যথেষ্ট সম্ভাবনা নিয়ে এসেও ব্যাটিং বোলিং দুই জায়গাতেই মনোযোগ দিতে গিয়ে নিজেকে শেষ করেছে নাকি ক্রিকেটের বাইরে মনোযোগ দিয়ে সেটাও আলোচনার বিষয়ই বটে। তবে নাইম, নাসির যেভাবেই ছিটকে পরুক না কেনো ব্যাটিং বোলিং দুটোতে একসাথে সাকিবের সাকিবের মতো ইফেক্টিভ যে হতে পারতো না তা অন্তত আমি বলবই।

 

বাকিদেরর মধ্যে আছেন মাশরাফি, ফরহাদ রেজা, সোহাগ গাজি, আবুল হাসানরা। মাশরাফি বারবার ইনজুরড না হলে হয়তো মাঝে মধ্যে ব্যাটিং এ কিছু ভালো ইনিংস দিয়ে বোলিং এর মাধ্যমে এখনকার রশিদ খানের মতো ভালো অলরাউন্ডার তকমা পেতে পারতেন, তবে ব্যাটিং বোলিং দুটোতেই সমান কার্যকরী হতে পারতেন না কখনোই। সাকিব এই যায়গাতেই সবার থেকে এগিয়ে, সবার থেকে অনন্য। বাকি ৩ জনকে নিয়ে সে আশা করা যায় কি না জানিনা।

 

যাক সে কথা। জ্যাক ক্যালিস, শন পোলকের মতো একই সময়ে ২ সেরা অলরাউন্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা যে শুধু রিয়াদকে নিয়ে ক্ষীণ পরিমাণে ছিলো; আর কাউকে নিয়েই ছিলো না সেটা মানার মতো। গ্রেইগের পর বোথাম যেমন এসেছিলেন তেমনি ভাবে সাকিবের অবসরের পর কেউ কি আসতে পারবে? উত্তর করতে গেলে আফিফ আর মিরাজের নাম আসবে সবার আগে। মিরাজ দুর্দান্ত অলরাউন্ডার, অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সবাই তা দেখেছে। আফিফও যথেষ্ট পটেনশিয়াল অলরাউন্ডার। কিন্তু হলে কি হবে, যতদূর সম্ভব বিসিবির লক্ষ্য তো আফিফকে ব্যাটসম্যান বানানোর আর মিরাজকে বোলার। মিরাজ ব্যাটিং এ যেটুকু সুযোগ পান সেখানে সে নিজেও নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবে ভাবতে পারেন না বলেই মনে হয়। আগের প্লেয়াররা আউট হলে ব্যাটিং এ সুযোগ টা পাওয়া গেলেও দল না চাইলে আফিফ বোলিং এ সুযোগ পাবেন না। সাকিব হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো ছিলো, তবে এভাবে এগুতে থাকলে আশার গুড়ে বালি। সাকিব একক আর অনন্যই থেকে যাবেন। অন্তত অবসরের পরপরই যে অন্য কেউ তার যায়গা নিতে পারবে না সেটা ভোরের সূর্যের মতো পরিষ্কার। মিরাজ আর আফিফকে নিয়েই যদি সম্ভাবনা না থাকে সেখানে মোসাদ্দেককে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই ইংরেজিতে “লেট এলোন” টার্মটির উৎপত্তি হয়তো। তবে ব্যাটিং বোলিং দুই জায়গাতেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

 

সাইফুদ্দিন এখন পর্যন্ত ২২টি একদিনের ম্যাচ খেলে অর্ধশতক করেছেন ২ টি। ৮৬.০৫ স্ট্রাইক রেট আর ৩২.২২ গড়ে তার মোট রান ২৯০। শুরুর মাহমুদুল্লাহর মতো তাকেও ব্যাটিং করতে হয়  ৭, ৮, ৯ নম্বর পজিশনে। ২২ টি ম্যাচের মধ্যে ব্যাট হাতে নামতে পেরেছিলেন মাত্র ১৩ বার। এই ২২ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩১ টি। ১৫টি টি২০ খেলে ২১.৪ স্ট্রাইক রেটে উইকেট ১৪ টি। ব্যাট হাতে নেমেছেন মাত্র ৯ ইনিংস, সেখানে ৩ বার নট আউটে ১৮ গড়ে আর ১১৩.৬৮ স্ট্রাইক রেটে মোট রান ১০৮। এখানেও ব্যাটিং পজিশন সেই ৭, ৮ এই। সাইফুদ্দিনকে মাহমুদুল্লাহ বানাতে না চাইলে বেন স্টোকস বানানো সম্ভব, তবে বাঙালি ফাস্ট বোলার হিসেবে ফিটনেস কতটা ধরে রেখে ইনজুরিমুক্ত হয়ে খেলতে পারেন সেটা তখন দেখার বিষয় হবে। তবে রঙিন পোশাকে সুযোগ পেলে আর পরিশ্রম করলে সাকিবের পর তিনি হতেও পারেন দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। টেস্টে সেই যায়গাটা মিরাজের প্রাপ্য। তবে সাকিব যে ৩ ফরমেটেই সমান, সেখানে কি আদৌ পৌঁছানো সম্ভব?

shakib al hasan 2

অতীত আর ঘটমান বর্তমান নিয়ে এই বিষয়ে যা যা বলার ছিলো সবই বলে দিয়েছি। বিশ্ব ক্রিকেটেই যেখানে এখন সাকিবের সাথে পাল্লা দেয়ার মতো অলরাউন্ডার তেমন কেউ নেই, সেখানে সাকিবের বিকল্প এদেশে খুঁজে পেতে গেলে অবস্থাটা হবে লেগ স্পিনার খুঁজতে খুঁজতে সাব্বির রুম্মনকে লেগ স্পিনার হিসেবে চালানোর মতো। ওহ হ্যাঁ, ভুলেই গেছিলাম, সাব্বিরও তো অলরাউন্ডার। তবে আজ তাকে নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। সৌম্যও না হয় আজ আলোচনার বাইরে থাকুক। সাকিবের বিকল্প খুঁজতে চাইলে বেন স্টোকসকে দলে নেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে, মোহাম্মদ নবীও চলবে না। জেসন হোল্ডার? দেখেন চেষ্টা করে নিতে পারেন কি না দলে? ক্রিকেটের ন্যাশনাল টিমের ট্রান্সফার উইনডো খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, এই যা। তবে আপাতত তাহলে সাকিবের বিকল্প নেই।

 

হয়তো গ্রেইগের পর বোথাম হয়ে কেউ আসছেন না আপাতত এদেশে, তবে হালকা বিরতি দিয়ে এন্ড্রু ফ্লিনটফ আসবেন নাকি কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি আর গ্যারি সোবার্সের মতো নিজ দেশের একমাত্র সেরা অলরাউন্ডার হয়ে থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে। সর্বশেষ বিশ্বকাপের পারফরমেন্স নিয়েই যদি ফিরতে পারেন নিষেধাজ্ঞার পর, গ্রেট হিসেবে অবসরে যাওয়া থেকে আটকানো সম্ভব না, আর যদি এই এক বছরের ব্রেকটাকে নিজের এনার্জি রিগেইন হিসেবে নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন তবে তো কথাই নেই। উইজডেনের এই শতকের এখন পর্যন্ত দেয়া সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় থাকাটা তারই পূর্বাভাস। টিরিগিরি টক্কার সাথে এগারো যোগ করে তাকে ভো ভো দ্বারা গুন করে বাঘ-ভাল্লুকদিয়ে ভাগ দেয়ার যেমন কোনো মানে নেই, সাকিবের বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করাও তেমনই, কোন মানে নেই। একদম অপ্রয়োজনীয় একটা কাজ সেরে ফেলে এটাই বলতে চাই, সাকিব সাকিবই, তার কোনো বিকল্প নাই। স্বয়ং “নিখিল বাংলা সাকিব হেটার্স সংঘ”-এর আহবায়কও এটা মেনে নিয়েছেন।