• ক্রিকেট

সমর্থকদের জানতে হবে, কোথায় তাঁদের থামতে হবে!

পোস্টটি ৮২১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
উইকেটের পেছনে ক্যাচ উঠেছিল। মুশফিক তা ধরতে গিয়ে নাসুমের সাথে ছোট একটা ধাক্কা লাগে । এরপর ক্যাচ ধরেই নাসুমকে মারতে উদ্যত হন তিনি।
 
এই ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায় দেশীয় মিডিয়া, সোশ্যাল প্লাটফর্ম থেকে শেষ অব্দি উইজডেন, ক্রিকইনফোর মত আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোতে।
 
সমালোচনা যখন হচ্ছিল বেশ জোরেশোরেই। তখনই মুশফিক দিয়ে দিলেন ফেসবুক স্ট্যাটাস- খেলার মধ্যে ভুল হয়েছে। পরে সব ঠিকও হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছিল মুশফিক ও নাসুমের হাস্যোজ্জ্বল মুখ।
এরপর আমরা মুশফিকের আচরণ বেমালুম ভুলেই গেলাম!
 
টপিকটা অবশ্যই খুবই পানসে। নানা প্লাটফর্মে এই ব্যাপারটা নিয়ে লেখালেখিও কম হয়নি। তবে আমি আজকে ঠিক শুধু এই ব্যাপারটা নিয়েই লিখব না! মুশফিক তো আর এমন আজকে নতুন করেননি!
 
যেকোন খেলাতে তিনটা ভিত্তি থাকে-
১. ডমেস্টিক সার্কিট
২.ঐ খেলা সংশ্লিষ্ট মিডিয়া
৩. সমর্থকেরা
 
এই তিন নম্বরটাতে আমাদের বড্ড সমস্যা রয়ে গেছে । সমর্থক হিসেবে আমরা জানিনা কোথায় আমাদের থামতে হবে আর কোথায় আমাদের শুরু করতে হবে।
 
এই সেদিনের ঘটনাটা দেখুন। মুশফিকের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসেই পুরো আলোচনাটা থেমে গেল। কিন্তু অতি আবেগী মুশির যে খামখেয়ালিপনা কিংবা ধরুন যাকে বলে 'সেন্টি খাওয়া' টা কমেনি তা কিন্তু বোঝা গেল চট্টগ্রামের সাথে কোয়ালিফায়ারের ম্যাচটাতে। যে বলটায় সৌম্য রান আউট হল, তাদের আগের বলে মুশফিক যেন বলটি ধরতে গা ই করলেন না। পুরো ম্যাচটাতেই মুশফিকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সমস্যা ছিল। তিনি ম্যাচটাতে ইনভলভড ছিলেন না। মুশফিককে দেখে মনে হয়েছে, তিনি ক্ষমাটা চেয়েছেন চাপে পড়ে। তিনি মনে করেন, নাসুমকে মারতে উদ্যত হওয়া খেলারই একটা অংশ আর সেই অংশ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় তিনি আর খেলায় 'পুরো অংশ' নেবেন না!
 
১৮ এরও কম বয়সে অভিষেক হওয়া একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করতে হয় বটে!
আচ্ছা, আরেকটা ঘটনা তুলে ধরা যাক। টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত হেরে গেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে । সেই ম্যাচের টিভির সামনে ছবি তুলে মুশফিক লিখেছিলেন, তিনি নাকি এবার শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, যিনি কিনা একটা দেশের অনেক ক্রিকেটারের আইডল, তিনি সরাসরিভাবে অন্য একটা দেশের বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
 
এরপর যেটা ঘটল, মুশফিক প্রচুর প্রশংসা পেলেন। এমনিতে আমাদের মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি বিদ্বেষটা প্রবল। সে সুবাদে মুশফিকের ঐ পোস্ট ছিল আগুনে ঘি ঢালার মতই।
 
দেখুন, সমর্থকদের মধ্যে নির্দিষ্ট একটা দলের প্রতি বিদ্বেষ থাকতেই পারে। সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার যখন সেই বিদ্বেষটাকে আরো রঙ চড়িয়ে দেন। আর এর চাইতেও বড় সমস্যা হল, সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের বিদ্বেষ ছড়ানোটাকে সমর্থকেরা যখন বাহ্বা দেয়! একটা খেলার তিনটে ভিত্তির একটাই সেই মুহুর্তে শেষ হয়ে যায়!
আরেকটা ঘটনা তুলে ধরি, নিউজিল্যান্ডের সাথে উনিশ বিশ্বকাপে কেন উইলিয়ামসনের রান আউটের সময় আগেই স্ট্যাম্পে হাত ছুঁইয়ে দেন মুশফিক। এত বছর ধরে কিপিং করে আসা কেউ কিভাবে এমন হাস্যকর আর বাচ্চাদের মত ভুল করে আমি সে আলোচনায় যাব না। সেই রান আউট মিসে মুশফিক যে গোটা বিশ্বকাপের সেমিতে যাওয়ার সুযোগটাই ফেলে দিলেন, সে আলোচনাও নাহয় করলাম না। কিন্তু, একটা আলোচনা করা যাক। সে ম্যাচের পরদিন দেখা যায়, বেলকনিতে মাথা নিচু করে মুশফিক গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
 
ব্যাস, সেই দৃশ্য দেখে আমরা গোটা ভুলটাই মাফ করে দিলাম, সমালোচনা থামিয়ে দিলাম। ক্রিকেট খেলাতে আবেগ থাকবেই, তবে সেই আবেগকে পুঁজি করা যাবেনা যেটি কিনা মুশফিক দিনের পর দিন করছেন। একটা বিশ্বকাপের যে ম্যাচটাতে টিম ম্যানেজমেন্ট এর টার্গেট ছিল জেতার, সেই ম্যাচটা দলকে একা হাতে হারিয়ে দিয়ে তিনি পুরো বিষয়টার দায় এড়িয়ে গেলেন একটা কান্না কান্না করা ছবিতে।
 
আর আমরা, সমর্থকেরা সেই আবেগেই গা ভাসিয়ে দিলাম। খেলাটার উন্নতি, দলটার উন্নতি কি এভাবে হবে? এই ইমোশনের জোয়ারে ক্রিটিসিজম বন্ধ করে? মুশফিককে গ্লাভস ছাড়তে বললে তিনি ছাড়েন না, এক অংশ সমর্থকেরা এসে আবার গ্লাভস হাতে তিনি কি কি করেছেন তা দেখিয়ে যান। এভাবে হয়না আসলে কিছুই!
 
সমর্থকেরা যে শুধু এই ক্ষেত্রগুলোয় সমালোচনা করতে জানেনা তা কিন্তু নয়। তারা কিছু ক্ষেত্রে উগ্র সমালোচনাও করে থাকেন!
এই মাশরাফির ব্যাপারটা ধরা যাক। তিনি নির্বাচনে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই অনেক সমর্থক তার ব্যাপারে উগ্র সমালোচনা করেছেন। মাশরাফি নির্বাচন করবেন নাকি করবেন না, সেটা তো ব্যাক্তি মাশরাফির সিদ্ধান্ত। আপনি তো আর ব্যাক্তি মাশরাফির সমর্থক হননি, হয়েছিলেন ক্রিকেটার মাশরাফির সমর্থক। তাহলে ব্যাক্তি মাশরাফি কি করছেন না করছেন তা নিয়ে তো আপনার মাথা না ঘামালেও চলে!
 
এভাবেই সাকিব, তাসকিন অনেকের ব্যাপারেই সমর্থকেরা উগ্র সমালোচনা করেছেন, যেটা কিনা কখনই উচিত না।
প্রথমে বলা কথাটা আবার বলি। একটা খেলার ভিত্তি তিনটে, তার একটা হল এর সমর্থকেরা। সমর্থক হিসেবে আমরা যদি উন্নত না হই, মিডিওকোর থেকে যাই, এই দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটারদের মেন্টালিটিও ততদিন মিডিওকোর থেকে যাবে। সমর্থকেরা উন্নত হলেই খেলার খেলোয়াড়দের সেটা পুশ করে, তারা আরো ভাল কিছু করতে যান।
 
মনে রাখবেন!