• ফুটবল

পেপ গার্দিওয়ালা এবং বার্সেলোনার পজিশনাল প্লে (পার্ট ১)

পোস্টটি ২৫৮৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

পেপ গার্দিওয়ালা বার্সার কোচ ছিলেন ২০০৮/০৯ সিজন থেকে ২০১১/১২ সিজন পর্যন্ত। এই ৪ সিজনে বার্সেলোনা ৩ টি লিগ শিরোপা, ২ টি চ্যাম্পিয়ান্স লিগ শিরোপাসহ মোট ১৪ টি শিরোপা জিতে নেয়। গার্দিওয়ালার সেসময়কার তৈরী করা দলটি ইউরোপিয়ান ফুটবলে এককথায় অজেয় ছিলো। ২০০৮/০৯ সিজনে নিজের প্রথম সিজনেই হেক্সা জিতলেও পেপের ৪ বছরের বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল সিজন ছিলো ২০১০/১১ সিজন। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় স্পেন, যেখানে পেপ গার্দিওয়ালার তৈরী করা বার্সা দলেরই অবদান ছিলো সর্বাধিক। ২০১০/১১ সিজনের শুরুতেই হারকিউলসের সাথে ন্যূ ক্যাম্পে লিগ ম্যাচে হেরে লিগের শুরুর দিকটা মরিনহোর রিয়াল মাদ্রিদের থেকে পিছিয়ে থেকে শুরু করলেও সিজন যতোই আগাতে থাকে বার্সেলোনার খেলার উজ্জ্বলতা ততোই বাড়তে থাকে।

 

পজিশনাল প্লে 

প্রত্যেকটা মাস্টারপিসেরই একটা ক্যানভাসের প্রয়োজন হয়, আর পেপ গার্দিওয়ালার ক্যানভাস ছিলো পজিশনাল প্লে। পেপের প্লেস্টাইলে যেটা সবচেয়ে গুরুত্ব পেতো তা হচ্ছে যেকোন মূল্যে পজিশন ধরে রাখা এবং পজিশন লস করলে কুইক প্রেসিং করে পজিশন রিগেইন করা। গার্দিওয়ালার পজিশনাল প্লে ছিলো তিনটি স্পেসিফিক মডেল বেসড।

 

১। নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি : পেপ তার প্লেস্টাইলের ক্ষেত্রে নাম্বার বা স্পেসিফিক ফর্মেশনে বিশ্বাসী ছিলো না। প্লেয়ারদেরকে এমনভাবে ট্রেইন করা হতো যাতে তারা প্রতিটা পাস কিংবা মুভমেন্ট কমপ্লিট করার আগে নিজের বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে সেরা ডিসিশনটা নিবে, প্রতিটা মুভের আগে টিমমেটদের পজিশন সম্পর্কে অবগত থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো প্রত্যেকটা প্লেয়ার বল পায়ে দক্ষ হবে এবং সবার বল কন্ট্রোলিং ভালো থাকবে। একারণে খেলায় দেখা যেতো পিভট সেন্টারব্যাক রোলে চলে যেতো, উইংব্যাকদের রোল হয়ে যেতো উইঙ্গারদের মতো, উইঙ্গাররা স্পেসিফিক সিচুয়েশনে স্ট্রাইকারের রোল প্লে করতো আর স্ট্রাইকার হয়ে যেতো এটাকিং মিডফিল্ডার। এরকম প্লেস্টাইলের সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো বল মাঠের যেখানেই থাকবে সেখানেই কুইকলি নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি ক্রিয়েট করা। নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি জেনারেট করা শুরু হলে পজিশনাল প্লে স্টেবল হয়, প্রত্যেকটা প্লেয়ারের পাসিং অপশন বেড়ে যায়, যারকারণে গোলস্কোরিং চান্স ক্রিয়েট করতেও অনেক সুবিধা হয়। নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি থাকায় পজিশন লস করলেও এক্সট্রা ম্যান থাকার সুবিধা নিয়ে কুইক কাউন্টার প্রেসিং করে বল রিগেইন করা যায়।

1numerical

 

২। কোয়ালিটেটিভ সুপিওরিটি : নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি পাওয়ার পর টিমের প্রধান লক্ষ্য থাকে কুইকলি কোয়ালিটেটিভ সুপিওরিটি অর্জন করা। কোয়ালিটেটিভ সুপিওরিটি মানে হচ্ছে মাঠের যে সাইড আন্ডারলোডেড থাকবে অর্থাৎ অপোজিশন টিমের প্লেয়ার কম থাকবে সেদিক দিয়ে এটাক বিল্ডআপ করা এবং দলের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড এবং স্কিলফুল প্লেয়ারদের অপোনেন্টের তুলনামূলক দুর্বল প্লেয়ারদের সাথে ম্যাচ করানো। এই স্ট্রাটেজি ঠিকভাবে ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য অপোনেন্ট প্লেয়ারদের সম্পর্কে ডিপলি এনালাইসিস এবং রিসার্সের প্রয়োজন, যেকাজটা পেপ খুবই সাফল্যের সঙ্গে করে এসেছে।

2qualitative

 

৩।পজিশনাল সুপিওরিটি : পজিশনাল সুপিওরিটি অর্জনের জন্য প্লেয়ারদের ৪ টি স্পেসিফিক পয়েন্ট সবসময় মাথায় রাখতে হয়, বল কোথায় আছে, তাদের টিমমেটদের পজিশন, ফ্রি স্পেস এবং অপোনেন্ট প্লেয়ারদের পজিশন। এই চারটি পয়েন্ট মেনটেইন করতে পারলে প্লেয়াররা সম্পূর্ণভাবেই ম্যাচটি নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারে, ডিফেন্সিভলি এবং অফেন্সিভলি উভয় ক্ষেত্রেই। এই ফিলোসফিটি মেনটেইন করার জন্য পেপ মাঠকে স্পেসিফিক ২০ টি জোনে ভাগ করে দেয়।

3positional

পজিশনাল প্লে মেনটেইন করার জন্য জোন ৬-৭-৮-১৩-১৪-১৫ নিজেদের কন্ট্রোলে রাখা ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এই জোনগুলো মাঠের সেন্টার এরিয়ায় রয়েছে। দলের ক্রিয়েটিভ মিডিফিল্ডারদের পেপ জোন ৬-৮ এবং ১৩-১৫ তে অপারেট করতো, এর কারণ ছিলো এই জোনগুলো ছিলো হাফ স্পেস এবং এই জোনগুলোতে অপোনেন্টের ওভারলোড থাকতো না যেকারণে ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারদের বল নিয়ে ফ্রি ফ্লো করতে সুবিধা হয়।

4positional2

পজিশনাল সুপিওরিটি মেনটেইন করা এবং ম্যাচের ফ্রি ফ্লো কন্টিনিউ করার জন্য এই জোনগুলোকে কিছু স্পেসিফিক ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছিলো। ম্যাচের কখনোই একই হরিজন্টাল লাইনে ৩ জনের বেশি প্লেয়ার পজিশন নিতে পারবেনা এবং একই ভার্টিকাল লাইনে ২ জনের বেশি প্লেয়ার পজিশন নিতে পারবেনা। উদাহরণস্বরুপ পেদ্রো বল পায়ে জোন ১৬ তে পজিশন নিয়েছে, জাভি জোন ৭ এবং দানি আলভেস জোন ৮ এ রয়েছে। পেদ্রোর যদি জোন ১৫ তে কাট ইনসাইড করার প্রয়োজন হয়, দানি আলভেস তখনই জোন ১০ দিয়ে ওভারল্যাপিং রান নিয়ে জোন ১৬ এ যাওয়ার চেষ্টা করবে। এসময় জাভি দুজনকেই সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সেন্টার এরিয়া থেকে হাফ স্পেস জোন ৮ এ শিফ্ট করবে। ফলে জাভি পেদ্রো আলভেসের মধ্যে পাসিং ট্রায়েঙ্গেল ক্রিয়েট হয়ে যাবে। এরকম কুইকলি পজিশন জোন ইন্টারচেঞ্জ অপোনেন্টের ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশনকে নষ্ট করে দেয় এবং অপোনেন্ট ডিফেন্সলাইন আনলক করে গোলস্কোরিং সুযোগ তৈরী করে দেয়।

কমপ্যাক্ট স্ট্রাকচার বজায় রেখে পজিশনাল প্লে মেনটেইন করার জন্য টিমকে অবশ্যই কমপক্ষে ১৫ টিম পাস খেলে অপোনেন্ট থার্ডে আগাতে হয়। এক্ষেত্রে ডিফেন্সলাইন থেকে এটাকের জন্য লং বল দিলে পজেশনাল প্লে মেনটেইন করা যায়না, কেননা এক্ষেত্রে অপোনেন্ট ডিফেন্সলাইনের সামনে টিমের ফরোয়ার্ডরা আইসোলেটেড হয়ে যায়। টিমের সব প্লেয়ারকে বল ক্যারি করা প্লেয়ারের জন্য পাসিং সাপোর্ট করার সুবিধাজনকভাবে পজিশন নিতে হয় এবং কোন প্লেয়ার আইসোলেটেড হয়ে থাকলে তার মুভমেন্ট চেঞ্জ করে আইসোলেশন এভোয়েড করার চেষ্টা করা।

 

২০১০/১১ সিজনে এফসি বার্সেলোনা

বার্সেলোনার তখনকার সেই টিমটা ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকবে শুধুমাত্র শিরোপা জেতার জন্য নয়, বরং ফুটবল সঠিকভাবে খেললে তা দেখতে কতোটা সুন্দর আর আনন্দময় হয় সেটা বুঝতে শেখানোর জন্য। ২০১০/১১ সিজনে পেপ তার পজিশনাল প্লের মাধ্যমে বার্সেলোনাকে নিজেদের পার্ফমেন্সের সর্বোচ্চ লেভেলে নিয়ে যায়। পেপ সবসময় তার আইকনিক ৪-৩-৩ ফর্মেশন ব্যাবহার করতো, যেটা ম্যাচের সিচুয়েশন অনুযায়ী ৩-৪-৩ অথবা ৩-৩-৪ এ শিফ্ট করতো। দলের প্রত্যকটা প্লেয়ারকে স্পেসিফিক রোলে ভাগ করা ছিলো এবং তাদের কাজ ছিলো মাঠে নিজেদের স্পেসিফিক রোল ইমপ্লিমেন্ট করা।

5.2010-11

 *ভালদেস ছিলো একজন সুইপার কিপার হিসেবে যে পজিশনাল প্লের সময় এক্সট্রা বল হোল্ডারের রোল প্লে করতো। টিমমেটরা হাইলাইনে থাকলে উপরে উঠে অপোনেন্টের লং থ্রু বল ক্লিয়ার করতো।

* পিকে এবং মাশচেরানো/ পুয়োল ছিলো বল প্লেয়িং সেন্টারব্যাক রোলে যারা বিল্ডআপের শুরুতে ওয়াইডে স্প্লিট হয়ে যেতো সুবিধাজনক পাসিং এঙ্গেল ক্রিয়েট করার জন্য।

*আলভেস ছিলো এটাকিং মোডেড ফুলব্যাক বা উইংব্যাক রোলে। আবিদাল ফুলব্যাক রোলে খেললেও বেশিরভাগ সময় নিচে নেমে থার্ড সেন্টার ব্যাক রোল প্লে করতো এবং প্রয়োজন হলে ওভারল্যাপ করতো।

*বুসকেটস, দলের সিঙ্গেল পিভট যার স্পিড এবং ফিজিক্যালিটি কোনটাই তেমন ভালো না হলেও নিজের ধৈর্য্য আর দুর্দান্ত পজিশনিং এর কারণে দলের মিডফিল্ডে সবচেয়ে ভালোভাবে ম্যাচ করে গিয়েছিলো। স্পেসিফিকলি তার রোল ছিলো নিচ থেকে গেইম রিড করা এবং বল কুইকলি ইন্টারসেপ্ট করা।

*জাভি ছিলো টিমের মেইন কন্ট্রোলার যে প্রয়োজনমতো ম্যাচের টেম্পারমেন্ট সেট করে দিতো এবং পজিশন রিসাইক্লিং করে কম ওভারলোড এরিয়ায় পজিশন নিতে চেষ্টা করতো।

*ইনিয়েস্তার রোল ছিলো অনেকটা এটাকিং মিডফিল্ডারদের মতো যে বল ক্যারি করে সেন্টার দিয়ে অপোনেন্ট থার্ডে ফরোয়ার্ড রান নিতো এবং নিজের ড্রিবলিং স্কিল দিয়ে অপোনেন্ট ডিফেন্সলাইন ব্রেক করার চেষ্টা করতো।

 *পেদ্রোর রোল ছিলো ট্রেডিশনাল উইঙ্গারদের মতো, যে খেলাকে ওয়াইড রাখার জন্য অপোনেন্ট থার্ডে টাইচলাইন বরাবার পজিশন নিতো।

 *ভিয়া উইঙ্গার হিসেবে খেললেও তার রোল ছিলো অনেকটা সেকেন্ড স্ট্রাইকারদের মতো, যে ওয়াইড এরিয়ায় পজিশন নিলেও মেসি ডিপে ড্রপ করলে ওই ফ্রি স্পেস ধরে সেন্টার এরিয়ায় কাটইন করার চেষ্টা করতো এবং ফাইনাল এটেম্পট নিতো।

*মেসি ছিলো টিমের মেইনম্যান, যে ছিলো মূলত ফলস নাইন রোলে। মেসির নিজের ইচ্ছামতো ডিপে ড্রপ করা অথবা ওয়াইড এরিয়ায় মুভ করার স্বাধীনতা ছিলো।

বার্সেলোনার পজিশনাল প্লের ইঞ্জিন ছিলো তাদের মিডফিল্ড, যার মূল চালিকাশক্তি ছিলো বুসকেটস- জাভি - ইনিয়েস্তা ট্রায়ো। মেসিও বেশিরভাগ সময়ই ডিপে ড্রপ করে ডায়মন্ড শেপ তৈরী করতো, মিডফিল্ডকে ওভারলোডেড করে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি পাওয়ার জন্য। টিমের মেইন ফোকাস থাকতো সেন্টার এরিয়া ওভারলোডেড করে উইঙ্গারদের যতোটুক সম্ভব ফ্রি করে তাদের আইসোলেটেড করে দেওয়া। পেপের কাছে ফুটবল হচ্ছে অনেকগুলো ১ ভার্সেস ১, ২ ভার্সেস ২, ৩ ভার্সেস ৩ এরকম ক্ষুদ্রক্ষুদ্র ব্যাটেলের মতো, যেখানে প্রত্যেকটা স্টেজে জয় ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্লেয়ারদের পজিশনাল অর্গানাইজেশন ঠিক না রেখে মুভমেন্টের স্বাধীনতা দেওয়া হতো সবসময় নিউমেরিক্যাল এবং পজিশনাল সুপিওরিটি পাওয়ার জন্য।

ফলস নাইন রোলে মেসি :

পেপ গার্দিওয়ালার পজিশনাল প্লে বেজড ফুটবলে বড় ধরণের বৈচিত্র্য এনেছিলো ফলস নাইনের উদ্ভব। মেসি কখনোই ট্রেডিশনাল ফরোয়ার্ডদের মতো ছিলো না, সে লাইন হোল্ড করে রাখার চেয়ে সবসময় নিচে ড্রপ করে বিল্ডআপে কন্ট্রিবিউট করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতো। পেপ মেসির গোলস্কোরিং এবিলিট, চান্স ক্রিয়েটিং, ড্রিবলিং এবং বলে টাচ না করেই গেমে ইনভলব থাকা এইসব গুণাবলির জন্য মেসির জন্য এমন একটা রোল তৈরী করলো যেটা মেসিকে তার টিমমেটদের জন্য অপোনেন্ট থার্ডে স্পেস ক্রিয়েট করতে সাহায্য করেছে এবং সেন্টার প্লেতে মেসির ডেস্ট্রাক্টিভ রোল মেসিকে এক অন্য উচ্চতায় পৌছে দিয়েছে।

6 false nine

মেসি ফলস নাইন রোলে খেললে অপোনেন্ট ডিফেন্ডাররা একরকম উভয়সংকটে পড়তো। যখন মেসি মিডফিল্ডে ড্রপ করবে তখন ডিফেন্ডারের রোল কি হবে? যদি সে মেসিকে মার্ক করে মিডফিল্ডে চলে আসে সেক্ষেত্রে পেদ্রো, ভিলা, জাভি কিংবা ইনিয়েস্তার জন্য সেই স্পেস এক্সপ্লয়েট করে অপোনেন্ট বক্সে ফরোয়ার্ড রান নেওয়ার সুযোগ হবে। যদি সেই ডিফেন্ডার মেসিকে ফলো না করে তবে মেসি মিডফিল্ডে ফ্রি হয়ে যাবে এবং কুইক সলো রান করে ডিফেন্সলাইনকে বিট করার চেষ্টা করবে অথবা জাভি ইনিয়েস্তার সাথে পজিশন রিসাইক্লিং করে বিল্ডআপ করবে। কিন্তু দুইক্ষেত্রেই বিপদের খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

মেসি নিচে ড্রপ করলে কি মিডফিল্ডারের মেসিকে মার্ক করা উচিত? যদি অপোনেন্ট মিডফিল্ডার মেসিকে ম্যান মার্ক করে তবে জাভি ইনিয়েস্তার জন্য পজিশন হোল্ড করে ফরোয়ার্ড মুভমেন্ট নিতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে মেসির বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্ট অপোনেন্ট থার্ডে টিমমেটদের ফরোয়ার্ড মুভ করতে সুবিধা করে দিবে এবং গোলস্কোরিং চান্স তৈরী করতে পারবে।

 

এটাকিং সিস্টেম 

ফার্স্ট ফেজ : বার্সেলোনার বিল্ডআপের শুরুটা হয় বিল্ডআপ ফ্রম দ্যা ব্যাকলাইন থেকে। এক্ষেত্রে ডিফেন্ডার এবং গোলকিপারকে টেকনিক্যালি ফ্লুয়েন্ট এবং বল পায়ে কনফিডেন্ট হতে হয়।

১। অপোনেন্টের দুইজন ফরোয়ার্ড পিকে এবং মাশচেরোনাকে প্রেস করলে তারা কুইকলি ওয়াইডে স্প্লিট হয়ে যায় এবং এসময় বুসকেটস নিচে নেমে আসে। এসময় সাথে সাথে ৩ ভার্সেস ২ সিচুয়েশন তৈরী হয়। এই কনসেপ্টটিকে "Salida Lavolpiana"  বলা হয়। 

7scene1.1

 

২। এক্ষেত্রে ডিফেন্সিভ হাফে অপোনেন্টের ৫ জন ম্যান প্রেসিং করে, ২ জন আলভেস এবং আবিদালকে, ২ জন পিকে এবং মাশচেরানোকে এবং ১ জন বুসকেটসকে। এক্ষেত্রে ভালদেসের কোন মার্কার না থাকায় সে ৬ ভার্সেস ৫ সিচুয়েশন তৈরী করে পাসিং চ্যানেল ক্রিয়েট করে।

8 scene 2

 

৩। এক্ষেত্রে অপোনেন্টের ৬ জন প্লেয়ার প্রেসিংয়ে অংশ নেয় এবং ভালদেসকেও মার্ক করে। এটাকে কাউন্টার করার জন্য দুই সেন্টারব্যাক ওয়াইডে স্প্লিট হয়ে যায় এবং দুইজন মিডফিল্ডার নিচে নেমে আসে তাদের পাসিং অপশন ক্রিয়েট করার জন্য। এরপর ভালদেস পিকেকে পাস দেয় এবং পিকে কুইকলি জাভিকে পাস দেয়। জাভি তখন ফ্রি স্পেসে আলভেসকে থ্রু বল দেয় এবং আলভেস ফরোয়ার্ড রান নেয়। এক্ষেত্রে অপোনেন্টের প্রেসকে বিট করতে ওয়াইড এরিয়ায় কুইকলি ট্রায়েঙ্গেল ক্রিয়েট করা হয় যেটা নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি এনে প্রেসকে বিট করতে সাহায্য করে।

9 scene 3

 

৪। এক্ষেত্রে অপোনেন্টের ৫ জন মিলে প্রেস করতে শুরু করে। এসময় পিভট রোলে থাকা বুসকেটস একদিকে সড়ে গিয়ে একজন মার্কারকে নিজের দিকে ড্রাগ করে নেয় এবং জাভি তখন নিচে ড্রপ করে ভালদেসের জন্য পাসিং অপশন তৈরী করে। 

10 scene 4

 

তথ্যসূত্র: ব্রেকিং দ্যা লাইন, ফুটবল ব্লাডি হেল, বার্সেলোনা এনালাইসিস, টোটাল ফুটবল এনালাইসিস।