মুমিনুল ভাল অধিনায়ক নন, হওয়ার কথা কি ছিল কখনও?
পোস্টটি ১১২২ বার পঠিত হয়েছেমুমিনুল হক শেষবার প্রেস কনফারেন্সে এসে বলেছেন শ্রীলঙ্কায় খেলার সম্বন্ধে তিনি ভাবছেন বাংলাদেশ বল করবে, শ্রীলঙ্কা ব্যাট করবে এবং ভাইস ভার্সা। ম্যাচের আগে দলের স্ট্রাটেজি নিয়ে কথা বলা দলের অধিনায়কের জন্যে পুরনো ট্রেন্ড। তবে অধিনায়ক চাইলে এড়িয়েও যেতে পারেন। আজকাল অবশ্য দিন পাল্টেছে। কোহলি-পেইনরা মাঝেমধ্যে স্ট্রাটেজির সাথে সাথে একাদশ সম্বন্ধেও একটা ধারণা দিয়ে যান। মাঝেমধ্যে তো জানিয়ে দেওয়া হয় আস্ত একাদশও।
তবে তাবৎ বিশ্বের আর কোন অধিনায়ক মনে হয়না গেম স্ট্রাটেজি নিয়ে মুমিনুলের মত হাস্যকর, শিশুসুলভ বক্তব্য রেখেছেন। তবে মুমিনুল যে এটা করলেন এর দায় কার? মুমিনুলের একার?
নাহ। মুমিনুল হক বাংলাদেশ দলের লিডিং এ থাকবেন এমনটা মনে হয় তিনি অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগ অব্দি ভাবতেও পারতেন না। সাদা পোশাকে মুমিনুলের জায়গাও তো নিশ্চিত ছিল না। অধিনায়ক হওয়ার আগে মুমিনুল নিউজিল্যান্ডে যে টেস্ট সিরিজটা খেলেন সেখানে দুই টেস্টের চার ইনিংসে তাঁর রান ছিল ১২,৮,১৫,১০। সেই সিরিজের আগেও ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের সাথে দুই টেস্টে মুমিনুলের রান ছিল ১১,৯,১৬১ আর ১। আমার স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে থাকে, সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ার আগে মুমিনুলকে নিয়ে আলোচনার প্রথম জিজ্ঞাসা ছিল-
"মুমিনুল কি দলে থাকতে পারেন?''
এই প্রশ্নটা ওঠাও যথেষ্ট সমীচিন ছিল। মুমিনুল হকের পারফরম্যান্স ঘর আর ঘরের বাইরে খুব একটা ভাল হচ্ছিল না। ঘরের মাঠে ফ্লাট ট্রাক ছাড়া তাঁর বলার মত কোন রানও হচ্ছিল না। স্বাভবতই মুমিনুল হয়তো নিজেও চাপে ছিলেন। সেই চাপে থাকা, দলে থাকতে পারেন কিনা প্রশ্ন ওঠা খেলোয়াড়টার ঘাড়ে হঠাৎ বিসিবি দিয়ে দিল সাদা পোশাকের নেতৃত্ব। মুমিনুল যেখানে সেটার জন্যে তৈরিই ছিলেন না।
অবশ্য এই তৈরি থাকার প্রশ্নে মুমিনুলের থাকারও সুযোগ ছিল না। এই না থাকার কারণ আমাদের দলের বিশেষ কোন দূরদর্শী প্লানিং নেই। আমরা ভবিষ্যত ভাবতে চাইনা। আপনি যদি ভারতের দিকে তাকান, মহেন্দ্র সিং ধোনি অধিনায়ক থাকার সময়ই বিরাট কোহলি লিডারশিপ গ্রুপের সাথে সময় কাটিয়েছেন। ধোনি অনুপস্থিত থাকার সময় দলে সিনিয়র রায়না, শেবাগ, যুবরাজ থাকাকালীনও বিসিসিআই অধিনায়কত্ব দিয়েছে বিরাট কোহলিকেই।
আমরা কি করেছি? আমরা আমাদের পাঁচ সিনিয়রের বাইরে লিডারশিপ গ্রুপে কাউকে চিন্তাই করতে পারিনি। সাকিব নয়ত মাশরাফি নয়ত রিয়াদ নয়ত তামিম-মুশি , একজনের অনুপস্থিতিতে একেকজন করে সামলেছেন ক্যাপ্টেন্সির ব্যাটন।
সাদা পোশাকে যে সাকিবের অনুপস্থিতিতে মুমিনুলকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হল, এটার জন্যে তো মুমিনুলকে আগে থেকে লিডারশিপ গ্রুপে রাখতে হবে। তাকে তো জানান দিতে হবে যে নিয়মিত টেস্ট অধিনায়ক না থাকলে সে হতে পারে প্রথম পছন্দ। আমরা কি সেটা করেছি? সাকিব না থাকলে আমরা অধিনায়ক বানিয়েছি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। আর আমাদের পাঁচজন সিনিয়রও কখনও লিডারশিপ গ্রুপে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতার গ্রুপে জুনিয়র কাউকে রাখেনি।
এভাবে তো ভবিষ্যৎ তৈরি হয়না। এভাবে তো ভাল অধিনায়ক পাওয়া যায়না। সবাই তো আর মহেন্দ্র সিং ধোনি নয় যে রেডিমেড হয়ে ক্যাপ্টেন্সির আর্মব্যান্ড পরে নেবে। অধিনায়ককে তাই তৈরি করতে হবে । এই যে নাজমুল শান্ত এইচপির নানা টিমে অধিনায়কত্ব করেছেন, তাকে নাকি ভাবা হয় পরবর্তী অধিনায়ক- জাতীয় দলে তিনি যে কয় ম্যাচেই খেলেন তাকে কি কখনও আমাদের সিনিয়রেরা লিডারশিপ গ্রুপে রেখেছে? মিরাজ ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক। কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অন দ্যা ফিল্ড বা অফ দ্যা ফিল্ডে কি মিরাজকে নিজেদের গ্রুপে নিয়ে গ্রুমিং করা হয়েছে?
যদি না করা হয়, অধিনায়কত্ব, ডিসিশান মেকিং এগুলো তাঁরা শিখবে কোথা থেকে? আর যদি না শিখে থাকে তবে প্রেস কনফারেন্সে এসে কথা তাঁরা বলবেন কিভাবে?
- 0 মন্তব্য