বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশনঃ টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা কতটুকু সঠিক?
পোস্টটি ১০৪৬ বার পঠিত হয়েছেটেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপটা এসেছে ভীনু মানকড় আর পঙ্কজ রায়ের কাছ থেকে। সেই ১৯৫৬ সালেই এরা দুজনে চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমে করেছিলেন ৪১৩ রান। হঠাৎ ভীনু আর পঙ্কজের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ এরা দুজনই ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিংয়ের পার্টনারশিপটা রাহুল দ্রাবিড় আর বীরেন্দর শেবাগের। ৪১০ রানের লাহোরের সেই পার্টনারশিপের দুই ব্যাটসম্যানই ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন আমি দ্বিতীয় আর তৃতীয় পার্টনারশিপের কথা বললেও সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের কথা বলিনি। নিল ম্যাকেঞ্জি আর গ্রায়েম স্মিথের সেই পার্টনারশিপে দুইজনই ছিলেন ভিন্ন হাতের ওরিয়েন্টেশনের। কিন্তু শুধু এই পার্টনারশিপটাই কি প্রমাণ করে যে টেস্ট ওপেনিংয়ে ভাল করতে চাইলে ভিন্ন হাতের ওরিয়েন্টেশনের ব্যাটসম্যান মাঠে নামাতে হবে?
নাহ, আদতে সেটা নয়। এমনকি আপনি যদি ওয়ানডে ওপেনিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের দিকে তাকান সেখানেও দেখবেন ফখর জামান আর ইমাম-উল হকের দুজনই ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আবার ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের ক্যাম্পবেল আর শাই হোপ ছিলেন ভিন্ন হাতের ওরিয়েন্টেশনের খেলোয়াড়।
টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা অন্যরকম। সর্বোচ্চ (হজরতুল্লাহ জাজাই-উসমান গণি) আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (অ্যারন ফিঞ্চ-ডিআর্সি শর্ট) পার্টনারশিপের সময় দুজন ছিলেন ভিন্ন হাতের ওরিয়েন্টেশনের ওপেনার। তবে একই হাতের ওরিয়েন্টেশনের ওপেনিং জোড় 'বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান' আর 'মার্টিন গাপটিল-কেন উইলিয়ামসন' আছেন চতুর্থ আর পঞ্চম সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপের রেকর্ডে।
এত এত কথা আর পরিসংখ্যান দেখানোর অর্থ আসলে একটাই। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট যে মরীচিকার মত ভিন্ন দুই হাতের ওরিয়েন্টেশন খুঁজে যাচ্ছে, আর সেটার জন্যে যে তাঁরা সাদমানের মত টেস্ট ওপেনারকেও বেঞ্চে বসিয়ে রাখতে পিছপা হচ্ছেনা সেটা যে খুব ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত নয় সেটা মনে করিয়ে দেওয়া।
ভিন্ন দুই হাতের ওপেনার যেটা করতে পারে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে বারবার ফিল্ডিং চেঞ্জে বাধ্য করতে পারে, এতে অধিনায়ক আর বোলারের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। কিন্তু এসবও আসলে পুরানো যুগের কথা। আজকাল ক্রিকেটাররা এত বেশি ম্যাচ খেলেন, বোলাররা ঘরোয়া-ফ্রাঞ্চাইজি-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে এত বেশি বল করেন যে সামান্য ফিল্ডিং পরিবর্তনে ব্যায়িত সময় তাঁদের পরিকল্পনা আর মনযোগে খুব কমই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আর তাই ব্যাটসম্যানেরাও বোলারের মনযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বাড়তি কোন সুবিধা পাবেন এমনটাও মনে করা আসলে ভুল ।
এর বাইরেও যেটুকু সুবিধা বাঁহাতি-ডানহাতি ওরিয়েন্টেশনে পাওয়া যায়, সেটাও খুব বেশি আহামরি হয় এমনটাও না। তাই বাংলাদেশ দল যত দ্রুত এই ভাবনা থেকে সরে আসবে, যত দ্রুত আধুনিক ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে, ততই দলের জন্যে মঙ্গল।
- 0 মন্তব্য